বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কিছু মনোরম সেতুকে এককথায় বলা যায় শিল্প। চারপাশের প্রকৃতির সৌন্দর্যের ওপর নির্ভর করে স্থপতিরা সাজিয়েছেন এসব সেতু। বিস্ময়কর এসব স্থাপত্য দেখলে শিহরিত হবেন যে কেউ। এমন কিছু সেতু নিয়ে ‘বাংলা ট্রিবিউন জার্নি’র এ আয়োজন। আজ রইলো আমেরিকার কয়েকটি আকর্ষণীয় সেতু।
হাই ট্রেসটেল ট্রেইল ব্রিজ
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল আইওয়া অঞ্চলে ‘ডেস ময়েন’ তথা কান্ট্রি মাইনাস নদীর ওপর তৈরি হয়েছে ‘দ্য হাই ট্রেসটেল ট্রেইল’ নামের এই সেতু। এর দৈর্ঘ্য ৪০ কিলোমিটার। বিশ্বের অন্যতম দীর্ঘ সেতুর তালিকায় রয়েছে এটি। এর ওপরের অংশের ডিজাইন দেখলে মনে হবে, ছোট ছোট চতুর্ভুজ আঁকাবাঁকা হয়ে চলে গেছে সেতুটির একেবারে শেষ প্রান্তে।
গ্রীষ্মকালে রাত সাড়ে ১০টা ও শীতে রাত ৯টা পর্যন্ত রঙিন বাতি জ্বলতে থাকে সেতুর ওপর। স্বাভাবিকভাবেই অন্যরকম আলোছায়ার পরিবেশ তৈরি হয় সেখানে। এসব বাতির জন্য সেতুটি দৃষ্টি এড়ায় না অনেক মাইল দূর থেকেও! ২০১৫ সালে ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থা বিবিসির দৃষ্টিতে বিশ্বের বিস্ময়কর আটটি সেতুর তালিকায় স্থান পায় ‘হাই ট্রেসটেল ট্রেইল ব্রিজ’।
নিউ রিভার জর্জ ব্রিজ
পশ্চিম ভার্জিনিয়ায় ১৯৭৭ সালের ২২ অক্টোবর চালু হয় ‘নিউ রিভার জর্জ ব্রিজ’। একটি স্প্যানের ওপর বানানো ধনুক আকৃতির দীর্ঘ সেতুগুলোর মধ্যে এটি রয়েছে চার নম্বরে। এর উচ্চতা নিউ রিভার নদী থেকে ৮৭৬ ফুট ওপরে। প্রতিদিন ১৬ হাজার ২০০ যানবাহন এই সেতুতে চলাচল করে। ২০১৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ঐতিহাসিক স্থানের তালিকায় নিবন্ধন করা হয় ‘নিউ রিভার জর্জ ব্রিজ’।
ভেরাজানো-ন্যারোস ব্রিজ
ইতালিয়ান প্রকৃতি আবিষ্কারক জিওভান্নি দা ভেরাজানোর নামে এই সেতুর নামকরণ হয়। ব্রুকলিন থেকে শুরু হয়ে ‘ভেরাজানো-ন্যারোস’ সেতুর ব্যাপ্তি স্ট্যাটেন দ্বীপ পর্যন্ত। এতে রয়েছে মোট ১৩টি লেন—ওপরের অংশে ৭টি আর নিচের অংশে ৬টি। ‘ভেরাজানো-ন্যারোস’ সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয় ১৯৫৯ সালের ১৩ আগস্ট। ১৯৬৪ সালের ২১ নভেম্বর এর ওপরের অংশ আর ১৯৬৯ সালের ২৮ জুন চালু হয় নিচের অংশ। এটি তৈরিতে ব্যয় হয় প্রায় সাড়ে ৩২ কোটি ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় ২ হাজার ৭৬১ কোটি ৯৮ লাখ টাকা।
বিক্সবি ক্রিক ব্রিজ
একপাশে সুউচ্চ পাহাড়, অন্যপাশে সমুদ্রের নীল জলরাশি। এর মাঝে বিক্সবি ক্রিক সেতু। নান্দনিক নকশার সুবাদে ক্যালিফোর্নিয়ার ২৮০ ফুট উচ্চতার এই সেতুতে গেলেই ছবি তুলতে ইচ্ছে করে সবার! ১৯৩২ সালের ২৭ নভেম্বর চালু হয় এটি। বিশ্বের একক স্প্যানের কংক্রিটের লম্বা সেতুগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম।
গোল্ডেন গেট ব্রিজ
ক্যালিফোর্নিয়ার সান ফ্রান্সিসকোকে সারাবিশ্ব গোল্ডেন গেট ব্রিজের জন্যই বেশি চেনে। আমেরিকান সোসাইটি অব সিভিল ইঞ্জিনিয়ার্সের দৃষ্টিতে আধুনিক বিশ্বের বিস্ময়গুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। এত দর্শনীয় সেতু বিশ্বে আর নেই বলে মনে করেন ভ্রমণকারীরা। এর ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় মেঘের সঙ্গে হয় মিতালী! ১৯৩৭ সালের ২৭ মে চালু হয় স্টিলের তৈরি ৭৪৬ ফুট উঁচু সেতুটি।
মার্গারেট হান্ট হিল ব্রিজ
টেক্সাসের ডালাসে মার্গারেট হান্ট হিল ব্রিজের মূল আকর্ষণ ধনুকের মতো বেঁকে যাওয়া শ্বেত-শুভ্র স্তম্ভ। এই স্তম্ভ থেকে অনেক তার ছড়িয়ে পড়েছে পুরো সেতু জুড়ে। ট্রিনিটি নদীর ওপর গড়ে তোলা সেতুটি চালু হয় ২০১২ সালের ২৯ মার্চ। মার্কিন জনদরদী মার্গারেট হান্ট হিলের নামে এর নামকরণ হয়েছে। এটি ডিজাইন করেছেন স্প্যানিশ স্থপতি সান্তিয়াগো কালাট্রাভা।