নানান স্বাদের খাবার খেতেও অনেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ঘুরে বেড়ান। দারুণ সব খাবার পরিবেশনের মাধ্যমে পর্যটকদের মন জয় করার স্বীকৃতিও মেলে। প্রতি বছরের মতো পৃথিবী গ্রহে খাবারের জন্য সেরা রেস্তোরাঁগুলোর তালিকা প্রকাশিত হলো।
এ বছরের ওয়ার্ল্ড’স ফিফটি বেস্ট রেস্টুরেন্ট অ্যাওয়ার্ডসে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ইতালির মোদেনা শহরের ‘ওস্তেরিয়া ফ্রান্সেসকানা’। ইউরোপের সেরা রেস্তোরাঁর খেতাবও পেয়েছে এটি। সেখানকার প্রধান শেফ মাসিমো বোতোরা। ২০১৬ সালের পর আবারও ‘ওস্তেরিয়া ফ্রান্সেসকানা’কে শীর্ষে তুললেন তিনি। তার এই রেস্তোরাঁ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯৫ সালে।
সম্প্রতি স্প্যানিশ বন্দরনগরী বিলবাওয়ের পালাসিও এয়ুসকালদোনা মিলনায়তনে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে সমকালীন রন্ধনশিল্পীদের অবদানকে গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করেন শেফ মাসিমো বোতোরা। এ সময় সেখানে ছিলেন রান্নাবান্নায় পাঁচ মহাদেশের মাস্টারমাইন্ডরা।
ওয়ার্ল্ডস ফিফটি বেস্ট রেস্টুরেন্ট অ্যাওয়ার্ডসের গ্রুপ এডিটর উইলিয়াম ড্রু জানান, ১ হাজার বিচারকের ভোটের মাধ্যমে বিজয়ী তালিকা চূড়ান্ত হয়েছে। রেস্তোরাঁ শিল্পের ‘অস্কার’তুল্য এ পুরস্কারে দেখা গেছে ইউরোপের খাবার দোকানগুলোর জয়জয়কার।
গত বছর তিন নম্বরে থাকা স্পেনের জিরোনা শহরের ‘এল সেইয়ের দে কান রকা’ এবার উঠে এসেছে দুইয়ে। ২০১৫ সালে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল রেস্তোরাঁটি। এর খাবারগুলো রান্না করেন তিন ভাই নির্বাহী শেফ জোয়ান রকা, প্যাস্ট্রি শেফ জর্দি ও সোমেলিয়ার ইওসেফ।
২০১৭ সালে চারে থাকা ফ্রান্সের মঁতো শহরের ‘মিরাজুর’ এবার আছে তিন নম্বরে। ইতালিয়ান সীমান্তের কাছে ফরাসি উপকূলে এটি চালান আর্জেন্টাইন-ইতালিয়ান শেফ মাওরো কোলাগ্রেকো।
গতবারের বিজয়ী যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক সিটির ‘ইলেভেন ম্যাডিসন পার্ক’ নেমে গেছে চার নম্বরে। তবে এটি পেয়েছে উত্তর আমেরিকার সেরা রেস্তোরাঁর খেতাব। সেখানকার প্রধান শেফ সুইস বংশোদ্ভূত ড্যানিয়েল হাম। গত বছর বেশ কিছুদিন সংস্কারের জন্য বন্ধ ছিল এটি।
এবার পাঁচ নম্বর স্থান পাওয়া থাইল্যান্ডের রাজধানীর ব্যাংককের ‘গাগান’ এশিয়ার সেরা রেস্তোরাঁ হয়েছে। শেফ গগন আনন্দ ২০১০ সালে এটি চালু করেন।
ছয় নম্বরে আছে পেরুর রাজধানীর লিমার ‘সেন্ট্রাল’। দক্ষিণ আমেরিকার সেরা রেস্তোরাঁর খেতাব গেছে এর ঘরে। সেখানকার শেফ ভিরজিলিও মার্তিনেস ভেলিস। সাত নম্বরে আছে লাতির আমেরিকার দেশটির আরেক রেস্তোরাঁ ‘মাইদো’। এর শেফ মিতসুহারু সুমুরা পেরু ও জাপানের খাবারের সম্মিলন ঘটিয়ে সুনাম কুড়িয়েছেন।
তালিকায় আট থেকে দশ নম্বরে রয়েছে যথাক্রমে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে ১৯৮৬ সালে শেফ অ্যালো পাসার গড়া ‘আরপেজ’, স্পেনের সান সেবাস্তিয়ানের ‘মুগারিৎজ’ (শেফ আন্দোনি লুই আদুরিস) ও এক্সপে শহরে কাঠে পোড়ানো বারবিকিউর জন্য বিখ্যাত ‘আসাদর এতসেবারি’।
এ বছর সবচেয়ে বড় লাফ দিয়েছে জাপানের রাজধানীর টোকিওর ‘ডেন’। এটি উঠে এসেছে ১৭ নম্বরে। একই শহরের ‘নারিসাওয়া’ ২২ নম্বরে ও ‘নিহনরিওরি রিগিন’ রয়েছে ৪১ নম্বরে।
তালিকায় নতুন ঢুকেছে স্পেনের বার্সেলোনার ‘দিসফ্রুতা’ (১৮), সিঙ্গাপুরের ‘ওডেট’ (২৮), নরওয়ের ওসলো শহরের ‘মামো’ (৩৫), লন্ডনের “লাইল’স” (৩৮), তুরস্কের রাজধানীর ইস্তাম্বুলের ‘মিকলা’ (৪৪), সুইজারল্যান্ডের ফঁসতুনো শহরের ‘স্লোস শোয়েনস্টাইন’ (৪৭) ও স্লোভেনিয়ার কোবারিদ শহরের ‘ইজা ফ্রাঙ্কো’ (৪৮)।
সেরা প্যাস্ট্রি শেফ পুরস্কার পেয়েছেন ফ্রান্সের সিদ্রিক গোহলে। টেকসই রেস্তোরাঁ পুরস্কার গেছে স্পেনের লারাবেটু শহরের ‘আজুরমেন্দি’র ঘরে। ৫০ নম্বরে স্থান পাওয়া দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনের ‘টেস্ট কিচেন’ আফ্রিকার সেরা রেস্তোরাঁর স্বীকৃতি পেয়েছে।
আজীবন সম্মাননা পুরস্কার পেলেন পেরুর শেফ গাস্তন আকুরিও। পেরুর লিমায় অবস্থিত তার ‘এস্ত্রিদি গাস্তন’ আছে ২০১৮ সালের সেরা ৫০ রেস্তোরাঁ তালিকার ৩৯ নম্বরে।
ওয়ার্ল্ড’স ফিফটি বেস্ট রেস্টুরেন্ট অ্যাওয়ার্ডস অনুষ্ঠানের এবারের আসরের শুরুতে গত বছর মারা যাওয়া রন্ধন কিংবদন্তিদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। তাদের মধ্যে রাখা হয় ইতালির গুয়ালেতিয়েরো মারকেজি, ফ্রান্সের পল বোকুজ ও অ্যান্থনি বুরডেইনকে।
এদিকে বিজয়ী তালিকায় নারীদের সংখ্যা কম হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন লন্ডনের কোর রেস্তোরাঁর শেফ ক্লেয়ার স্মাইথ। তিনি বলেন, ‘আমার কাছে অনেকে জানতে চান—নারী শেফের অভাব কেন, রন্ধনশিল্পে শীর্ষ পর্যায়ে নারীদের স্থান না পাওয়ার কারণ কী, কেন শেফের ক্ষেত্রে জাতিগত বৈচিত্র্য নেই। আমার কাছে এসবের উত্তর নেই।’ রান্নাঘরে নারীরা উপেক্ষিত মন্তব্য করে তিনি বলেছেন, ‘এমন উন্নত কর্মপরিবেশ ও রেস্তোরাঁ গড়া দরকার, যেখানে নারী-পুরুষ উভয়ে অনেক মানবিক কর্মক্ষেত্র পাবে।’
সূত্র: সিএনএন