X
শনিবার, ০৪ মে ২০২৪
২০ বৈশাখ ১৪৩১
ট্রাভেলগ

বংশী নদীর তীরে সরিষা ফুলের রাজ্যে

সোহেলী তাহমিনা
০৯ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০আপডেট : ১১ জানুয়ারি ২০১৯, ২২:৫৮

বংশী নদীর তীরে সরিষা ফুলের রাজ্যে বিশ্বজুড়ে নতুন ইংরেজি বছরকে স্বাগত জানানো হয়েছেন নানান আয়োজনে। বাড়ির ব্যালকনি বা ছাদে দাঁড়িয়ে আকাশে আতশবাজির প্রদর্শনী দেখেই এখন থার্টিফার্স্ট নাইট কাটে। অনেকে অবশ্য দেশের বাইরে বেড়াতেও যায়। অত সৌভাগ্য আমার এখনও হয়নি। তবে স্বল্প সময় ও অর্থ ব্যয় করে ঢাকার অদূরে নতুন বছরকে বরণ করেছি। সেই গল্পটাই চলুন করি।

২০১৭ আমার জন্য ভ্রমণের বছর হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। আরও বিভিন্ন কারণে আমার কাছে গত বছরটা ছিল ‘বিশেষ’। তাই দুই হাজার আঠারোকে বিদায় জানানোর জন্য ভিন্ন কিছু করতে চেয়েছিলাম। সুযোগও পেয়েছি। রাতে তাঁবুতে থাকা, ফানুস ওড়ানো, বার-বি-কিউ, পৌষমেলা, রাতভর গান-বাজনা আর সরিষা ফুলের রাজ্যে বিচরণ— এমন অনেক সুযোগ পেলেও পরিকল্পনা অনুযায়ী অনেক কিছুই হয়নি। তবে নতুন অনেক কিছুই হয়েছিল। এটি ছিল আমার পরিচিত একটি ট্রাভেল গ্রুপের বার্ষিক আয়োজন।

বংশী নদীর তীরে সরিষা ফুলের রাজ্যে ভেন্যু ছিল সাভারের নবীনগর থেকে কিছুটা পথ রিকশায় গিয়ে গণস্বাস্থ্য অধিদফতরের অধীনস্থ পিএইচএ রিসোর্ট। অনুমতি নিয়ে তবেই এখানে যেকোনও ধরনের অনুষ্ঠান করা যায়। আমার পরিচিত গ্রুপ নিয়মিতই সেখানে বিভিন্ন অনুষ্ঠান করে থাকে। থার্টিফার্স্ট নাইটের জন্য অন্যদের মতোই আগে থেকেই বুকিং দিয়েছিলাম। তাই নির্ধারিত দিনে বিকালে নিজের মতো করে রওনা দিই। এই অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার জন্য সবাইকে যার যার মতো যাতায়াত করতে হয়েছে।

শ্যামলী মোড় থেকে বিআরটিসি বাসে যাত্রা শুরু করি। বেশ আরামেই যাচ্ছিলাম। কিন্তু নবীনগর পর্যন্ত যাওয়ার কথা থাকলেও হঠাৎ বেশ আগেই থেমে যায় বাসটি। যাত্রীদের জানিয়ে দেওয়া হলো, এর বেশি আর যাওয়া হবে না। মেজাজ যেমন বিগড়ে গেলো, তেমনি ভয়ও করছিল। সন্ধ্যা ৭টা তখনও বাজেনি। তবুও এই জায়গা আমার পুরোপুরি অপরিচিত। কিন্তু আমার মতোই আরেকজন নবীনগর যাচ্ছিল। সাহস এলো মনে। ছেলেটি বয়সে বেশ ছোট হলেও তার দায়িত্বজ্ঞান আমাকে অবাক করেছে। প্রায় আধঘণ্টা হাঁটার পর আমরা বাস পেলাম। এরকম কিছু মানুষের জন্যই এখনও মেয়ে হয়েও একা ভ্রমণের সাহস পাই।

বংশী নদীর তীরে সরিষা ফুলের রাজ্যে বাস থেকে নামতেই আমার গ্রুপের একদল সদস্যকে দেখতে পাই। তাদের একজনকে নিয়ে একটি রিকশায় চড়ে রিসোর্টের দিকে এগোই। কনকনে শীত আর এবড়োথেবড়ো রাস্তায় ঠিক কতক্ষণ রিকশায় ছিলাম মনে নেই। কিন্তু মনে হচ্ছিল যেন অনন্তকাল ধরে চলেছি! শেষ পর্যন্ত যখন রিসোর্টে পৌঁছালাম, খিদে ততক্ষণে চরমে পৌঁছেছিল। তাই হাতের কাছে গ্রুপের পক্ষ থেকে দেওয়া সামান্য শুকনো খাবার পেয়েই খিদে মেটাতে শুরু করি। পৌঁছেই জানতে পারলাম তাঁবু সংকট চলছে। তবে আগে থেকে বলে রাখায় আরেকজন সদস্যের সঙ্গে শেয়ার করার জন্য একটি তাঁবু আমার ভাগ্যেও জুটে যায়। কিন্তু ব্যবস্থাটা আমার পছন্দ হচ্ছিল না। তাই জীবনে প্রথমবার ক্যাম্পিং করার সুযোগ পেলেও রিসোর্টের রুমেই ছিলাম।

বংশী নদীর তীরে সরিষা ফুলের রাজ্যে মোটামুটি সবাই চলে আসার পর প্রায় রাত ৯টার দিকে আমরা বেশ কয়েকজন মিলে রিসোর্টের পাশেই ঘোড়াপীরের মাজারে চলে যাই। যদিও তখন বার্ষিক ওরস শরিফ চলছিল। আমাদের লক্ষ্য ছিল মাজারের ঠিক পেছনের এলাকায় চলতে থাকা পৌষ মেলায় যাওয়া। আমার জন্য এই মেলার মূল আকর্ষণ ছিল বাংলার ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন ধরনের শুকনো মিষ্টি জাতীয় মুড়ি-মুড়কি খাবার। কিন্তু সেখানে পেঁয়াজুর দোকান দেখে অবাক হয়েছি। একাধারে প্রায় ১০টি টিনশেড দেওয়া পেঁয়াজুর দোকান চোখে পড়লো। দোকানি স্বামী-স্ত্রী মিলে পেঁয়াজু ভাজতে ব্যস্ত। কেজি হিসেবে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজু। শীতের সন্ধ্যায় গরম-গরম ভাজা মচমচে পেঁয়াজুর তুলনা খুব কম জিনিসের সঙ্গেই সম্ভব। মেলায় এসব দোকান থেকে আমরা বেশকিছু শুকনো মিষ্টি জাতীয় খাবার ও পেঁয়াজু কিনে চায়ের সন্ধানে টংদোকানে চলে যাই।

বংশী নদীর তীরে সরিষা ফুলের রাজ্যে রাতে মুরগি, সবজি, পোলাও ইত্যাদি খাওয়া শেষে শুরু হয় নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর প্রস্তুতি। ওড়ানো হলো ফানুস। এরপর একদিকে চলে গান-বাজনা, অন্যদিকে বার-বি-কিউ। প্রায় রাত ৩টা পর্যন্ত এভাবে উদযাপন করে রুমে গিয়ে ভোর পর্যন্ত গল্প করে কাটাই।

২০১৮ সালের প্রথম দিনের ভোর ছিল ঘন কুয়াশার চাদরে মোড়া। বেশ অনেকক্ষণ ধরে সূর্যের দেখা পাওয়া যায়নি। এরমধ্যে অনেকেই কাজের টানে ভোরবেলায় ঢাকায় ফিরে গেছেন। একটু আলো ফুটলে রিসোর্টের আশপাশে ঘুরে বেড়াতে আমরা ক’জন বের হই। সকালে গরম সবজি-খিচুড়ি আর ডিম ভুনা দিয়ে নাশতা সেরে সবাই ফিরতি যাত্রার জন্য প্রস্তুত হতে থাকি।

বংশী নদীর তীরে সরিষা ফুলের রাজ্যে তখনও অনেক বড় আকর্ষণ বাকি ছিল—সরিষা ক্ষেত ভ্রমণ। বেশ কিছুক্ষণ অনিশ্চয়তার মধ্যে কাটলেও শেষ পর্যন্ত আমরা বেশ কয়েকজন স্থানীয় অটোতে চড়ে প্রায় মিনিট বিশেক চলার পরে পৌঁছাই নলাম গ্রামে। কিছু দূর হেঁটেই আমরা পেয়ে যাই্ বংশী নদী। বেশ কিছু সাহিত্যে এই নদীর উল্লেখ থাকলেও বাস্তবে দেখে বেশ হতাশ হয়েছি, কষ্টও পেয়েছি। এমনিতেই শীতকালে নদী শুকিয়ে যায় বলে গভীরতা ছিল অনেক কম। আর পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন শিল্প কারখানা থেকে নির্গত বর্জ্য পদার্থের কারণে নদীর পানি ছিল পুরোপুরি কালো।

বংশী নদীর তীরে সরিষা ফুলের রাজ্যে মাত্র ৫ টাকা খরচ করেই ছোট্ট ডিঙি নৌকায় একজন মানুষ এই নদী পার করে অন্য পাড়ের গ্রামে নিয়ে যায়। আমরাও উঠলাম। তারপরেই দিগন্ত বিস্তৃত সরিষা ক্ষেত। হলুদ ফুলের এই রাজ্যে ঢোকা মাত্রই মনে অন্যরকম একটা আনন্দ আর উচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয়েছে তা বলা বাহুল্য। যতই ছবি তুলি বা যতই দেখি না কেন কিছুতেই মন ভরে না! আরও অনেককেই সরিষা ক্ষেতের সৌন্দর্য উপভোগের জন্য জড়ো হতে দেখেছি।

নদীতীরে লেখক ইচ্ছেমতো ছবি তুলে আমরা আবারও রিসোর্টে ফিরে আসি। এরপর একইভাবে ঢাকায় ফিরি। আমার এই ট্রিপের মোট খরচ ছিল ২ হাজার টাকার নিচে।

সরিষাক্ষেত ভ্রমণ শীতকালে ঘুরে বেড়ানোর আবশ্যক অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে খেয়াল রাখবেন, ছবি তুলতে গিয়ে যেন কোনোভাবেই শস্যের কোনও ক্ষতি না হয়। একইসঙ্গে স্থানীয়দের আপত্তির কারণ ঘটে এমন কিছু করবেন না।

ছবি: লেখক

/জেএইচ/চেক/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
১২ বছর পর মুম্বাইয়ের মাঠে কলকাতার জয়
১২ বছর পর মুম্বাইয়ের মাঠে কলকাতার জয়
বেড়িবাঁধে উন্নত নিরাপত্তা ও গতিশীলতা: মেয়র আতিকুল ইসলামের কাছে ইউল্যাবের আবেদন
বেড়িবাঁধে উন্নত নিরাপত্তা ও গতিশীলতা: মেয়র আতিকুল ইসলামের কাছে ইউল্যাবের আবেদন
মিল্টনের আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রিতদের এখন কী হবে
মিল্টনের আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রিতদের এখন কী হবে
মেধাসম্পদ সুরক্ষা মানে দেশ ও জাতিকে রক্ষা করা
মেধাসম্পদ সুরক্ষা মানে দেশ ও জাতিকে রক্ষা করা
সর্বাধিক পঠিত
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
যশোরে আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
যশোরে আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
২৫ জেলার সব মাধ্যমিক স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা শনিবার বন্ধ
২৫ জেলার সব মাধ্যমিক স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা শনিবার বন্ধ
কেমন থাকবে আগামী কয়েকদিনের আবহাওয়া?
কেমন থাকবে আগামী কয়েকদিনের আবহাওয়া?
নদীতে ধরা পড়ছে না ইলিশ, কারণ জানালেন মৎস্য কর্মকর্তা
নদীতে ধরা পড়ছে না ইলিশ, কারণ জানালেন মৎস্য কর্মকর্তা