X
মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪
২৪ বৈশাখ ১৪৩১
ট্রাভেলগ

সোনাইছড়িতে অ্যাডভেঞ্চার

মাসুদ সরকার রানা
১৫ মার্চ ২০১৯, ২৩:০০আপডেট : ১৫ মার্চ ২০১৯, ২৩:৩৩

যাত্রা শুরুর সময় ভ্রমণসঙ্গীরা যাত্রার দুই দিন আগেও যাওয়ার ইচ্ছে ছিল না। হুট করেই মামুন ভাই বললেন, ‘চল মাসুদ, সোনাইছড়ি ট্রেইলে।’ কয়েক মুহূর্ত ভেবে ঠিক করলাম যাবো। নির্দিষ্ট দিনে আমাদের ৩৫ জনের দল ঢাকা থেকে যাত্রা শুরু করলো। রাত ২টার দিকে কুমিল্লা থেকে সবার সঙ্গে যোগ দিলাম। সারারাত বাসের জানালা গলে কনকনে ঠাণ্ডা হাওয়া গায়ে লাগলো।

সকালে পৌঁছালাম মীরসরাই। সতেজ হওয়ার জন্য বাস থামানো হলো একটি ফিলিং স্টেশনে। সেখানে নাশতা সেরে ট্রেইলের উদ্দেশে যাত্রা শুরু হলো। সকাল ৯টার দিকে আমরা পৌঁছালাম গাইডের বাড়িতে। যারা সোনাইছড়ি ট্রেইলে যান তারা হোটেল হিসেবেও ব্যবহার করে থাকেন এই বাড়ি। সেখানে ব্যাগ রেখে সবাই ট্রেকিংয়ের জন্য প্রস্তুত। যদিও ৩৫ জনের বিশাল দল বলে রওনা দিতে প্রায় ঘণ্টাখানেক লাগলো।

কিছুক্ষণ গাড়ির পথ শেষে শুরু হলো পদযাত্রা। বাকিটা হেঁটেই যেতে হবে। পাঁচ মিনিট পর এলো ঝিরি পথ। স্বচ্ছ জল আর নিচে ছোট ছোট পাথর ওপর থেকে দেখতে দারুণ লেগেছে। ঝিরি ধরেই ট্রেইল শেষ করতে হবে। পথটি ক্রমে সাপের মতো প্যাঁচাতে প্যাঁচাতে পাহাড়ে ঢুকে পড়েছে। শীতকালেও ঝিরিতে এত পানি দেখে অবাক লাগলো।

আরও সামনে যেতেই খালি পায়ে হাঁটা কষ্টসাধ্য করে তুললো পিচ্ছিল পাথর। ভাগ্যিস পায়ে ট্রেকিং স্যান্ডেল ছিল। হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছালাম খাঁড়া একটি ঢালে। গাইড এগিয়ে যাচ্ছেন। পিছু পিছু আমরাও পাহাড় বেয়ে উঠতে লাগলাম। খাঁড়া বেয়ে উঠতে উঠতে কিছুটা ক্লান্তি ভর করলো। পাহাড়ের ওপরে চোখে পড়ে সমতল পথ।

দুর্গম পথে হামাগুঁড়ি দিয়ে ওঠা আরেকটু সামনে গিয়ে বোঝা গেলো কতটা উপরে উঠেছি। গভীর খাদ অনেক নিচে নেমে গেছে। পুরোটাই শক্ত পাথরের দেয়াল। একটু পা হড়কালেই বেঁচে থাকার আশায় গুঁড়েবালি! এমন ভয়ঙ্কর জায়গা দেখে মনে কিছুটা আতঙ্ক ভর করলো। বিশাল দলটার অগ্রভাগে আমরা চারজন। পেছনে ফিরে দেখি বাকিদের সাড়াশব্দও নেই। তারা খুব একটা ট্রেকিং করে না। এজন্য কিছুটা ধীরগতির। তাই সেখানে বসে অনেকক্ষণ বিশ্রাম নিতে হলো।

পাহাড় ছেড়ে আমরা আবারও ঝিরি পথ দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। দু’দিকেই কালো পাথুরে দেয়াল উপরে উঠে গেছে। সেই কালো দেয়াল থেকে যেন সৌন্দর্যের আভা ছড়াচ্ছে। একটু পরপরই আমাদের পথ রোধ করে দাঁড়াচ্ছে বিশাল বিশাল পাথরের বোল্ডার। সেগুলোর বিশালতার কারণে কখনও কখনও হামাগুঁড়ি দিয়ে পার হতে হয়েছে।

দু’দিকের পাথুরে দেয়াল মিলে গুহার মতো পরিবেশ ট্রেইলে বহমান স্রোত না থাকলেও যথেষ্ট পানি ছিল। বেশ পরিষ্কার। সুঁই পড়লে যেন খুঁজে বের করা যাবে। স্বচ্ছ জলের নিচে কখনও কালো, কখনও বিবর্ণ, আবার কখনও ধূসর পাথর। পাথরের ওপর জমে থাকা চিকচিক করা বালি এখনও চোখে ভাসে। যেন কোনও সৌন্দর্যের পূজারীর বানানো মুগ্ধকর শিল্পকর্ম! পথের দু’ধারে পাহাড়ের তরুলতা সেই সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে আরেকটু।

পথ যত এগোচ্ছে ততই মুগ্ধতা বাড়ছে। একইসঙ্গে মাথার ওপরে সূর্যের আলোর তেজও বেড়ে যাচ্ছে প্রতি মুহূর্তে। আমরা অগ্রজ দল একটু হাঁটলেই দেখি পেছনের দল অনেক পেছনে পড়ে যায়। তাই একটু পরপর জিরানোর সুযোগ মিললো।

বিভিন্নজনের লেখায় পড়েছিলাম, সোনাইছড়ি ট্রেইল নাকি অনেক ভয়ঙ্কর। কিন্তু এখন পর্যন্ত তেমন কষ্ট হয়নি। অন্যদের কাছে হয়তো এই সহজ ট্রেইলই অনেক কঠিন। তবে অনেক জায়গায় ট্রেইলের পাথরগুলো ভয়ানক পিচ্ছিল। আমার ট্রেকিং স্যান্ডেলও কয়েকবার পিছলে গিয়েছিল।

ট্রেইলজুড়ে এমন স্বচ্ছ জলের দেখা মেলে হঠাৎ মনে পড়লো রাতে ভালো ঘুম হয়নি। পাথরে ব্যাগটা বিছিয়ে বালিশ বানিয়ে শুয়ে পড়লাম। কতক্ষণ ঘুমিয়েছি জানি না। ঘুম ভাঙলো মামুন ভাইয়ের ডাকে। উঠে দেখি পুরো টিম চলে এসেছে।

এদিকটায় পানি কম, পাথরগুলোও ছোট ছোট। সবার জন্যই পথচলা সহজ হয়ে গেলো। হাঁটার গতি বাড়লো আপনাআপনি। তখন এক গাইড জানালেন, পথ আর বেশি বাকি নেই। তাই অন্যদের পেছনে ফেলে একাই তার সঙ্গী হলাম। ট্রেইলের এদিকটায় দেখার মতো তেমন কিছু নেই।

টানা মিনিট দশেক হাঁটার পর গাইড জানালেন, শেষ মাথায় চলে এসেছি। সামনে তাকিয়ে দেখি পাহাড় বেয়ে নেমে এসেছে একটি ঝরনাধারা। খুবই অল্প পানি পড়ছে নিচে। বৃষ্টি হলে হয়তো এই ঝরনা হয়ে ওঠে রূপবতী!

ট্রেইল শেষে বিজয়ীর বেশে ভ্রমণসঙ্গীরা কিছুক্ষণ চারদিকের পরিবেশ দেখে বাকিদের পথ দেখিয়ে নিয়ে আসতে পাঠালাম গাইডকে। পরে আসা ভ্রমণসঙ্গীদের দায়িত্ব দিলাম আশেপাশের শুকনা পাতা আর লাকড়ি সংগ্রহ করার। সব স্তূপ করা হলো ঠিকই, কিন্তু কারও কাছে আগুন জ্বালানোর মতো কিছু নেই। এবার একটা দিয়াশলাইয়ের জন্য অপেক্ষা। প্রায় ২০ মিনিট পর মূল দল নিয়ে গাইড ফিরে এলেন। তার কাছে মিললো লাইটার।

কিন্তু তখন বাঁধলো আরেক বিপত্তি। শুকনো পাতায় কিছুতেই আগুন ধরে না। শেষ পর্যন্ত কাগজে আগুন ধরিয়ে ক্যাম্প ফায়ার করতে সক্ষম হই। বাতাসে ধোঁয়া ছড়িয়ে যাচ্ছে চারদিকে। সেখানে সবাই মিলে অনেকক্ষণ গল্প করে ফিরতি পথ ধরলাম। ফেরাটা অবশ্য পাহাড়ের ওপর দিয়ে সংক্ষিপ্ত পথে।

ছবি: বিল্লাহ মামুন

/জেএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় কলকাতায় নামতেই পারলো না কেকেআরের বিমান!
দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় কলকাতায় নামতেই পারলো না কেকেআরের বিমান!
রাজধানীতে মাদকদ্রব্যসহ একদিনে গ্রেফতার ২৪
রাজধানীতে মাদকদ্রব্যসহ একদিনে গ্রেফতার ২৪
উপজেলা নির্বাচনে প্রথম ধাপে ৪১৮ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন
উপজেলা নির্বাচনে প্রথম ধাপে ৪১৮ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন
দক্ষিণ আফ্রিকায় ভয়াবহ ভবন ধস, আটকা পড়েছে অনেকে
দক্ষিণ আফ্রিকায় ভয়াবহ ভবন ধস, আটকা পড়েছে অনেকে
সর্বাধিক পঠিত
মিল্টনের আশ্রমের দায়িত্ব যার হাতে গেলো
মিল্টনের আশ্রমের দায়িত্ব যার হাতে গেলো
চাসিভ ইয়ার ঘিরে হাজার হাজার সেনা জড়ো করছে রাশিয়া
চাসিভ ইয়ার ঘিরে হাজার হাজার সেনা জড়ো করছে রাশিয়া
যে শিশুকে পাচারের অভিযোগে মিল্টনের বিরুদ্ধে মামলা
যে শিশুকে পাচারের অভিযোগে মিল্টনের বিরুদ্ধে মামলা
যেভাবে অপহরণকারীদের কাছ থেকে পালিয়ে এলো স্কুলছাত্র
যেভাবে অপহরণকারীদের কাছ থেকে পালিয়ে এলো স্কুলছাত্র
ছাত্রলীগ সহসভাপতি সাদ্দামের বছরে আয় ২২ লাখ, ব্যাংকে ৩২ লাখ, উপহারের স্বর্ণ ৩০ ভরি
হরিরামপুর উপজেলা নির্বাচনছাত্রলীগ সহসভাপতি সাদ্দামের বছরে আয় ২২ লাখ, ব্যাংকে ৩২ লাখ, উপহারের স্বর্ণ ৩০ ভরি