X
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

কক্সবাজারে সামুদ্রিক মাছের জাদুঘর

আবদুল আজিজ, কক্সবাজার
২০ জুলাই ২০১৮, ১৯:৪১আপডেট : ২০ জুলাই ২০১৮, ২১:৩৪

অ্যাকুরিয়ামে বিচরণ করছে মাছ বঙ্গোপসাগরে থাকা বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ সংরক্ষণের লক্ষ্যে কক্সবাজারে গড়ে তোলা হয়েছে রেডিয়েন্ট ফিশ ওয়ার্ল্ড অ্যাকুরিয়াম। অচেনা ও বিলুপ্তপ্রায় অনেক মাছ রয়েছে এই অ্যাকুরিয়ামে। সাগরের বিভিন্ন প্রাণী ও বিলুপ্ত মাছ সংরক্ষণের পাশাপাশি বিনোদনের জন্য জাদুঘরের আদলে এটি তৈরি হয়েছে। শুধু বিনোদনের জন্যই নয়, সাগরের জীববৈচিত্র্য ও প্রাণী সম্পর্কে জানার একটি শিক্ষাকেন্দ্রও এই অ্যাকুরিয়াম।

গত বছরের ৩০ নভেম্বর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে এর যাত্রা শুরু হয়। এখন এই ফিশ ওয়ার্ল্ড অ্যাকুরিয়ামের সুনাম দেশের গণ্ডি পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়ছে দেশের বাইরে। এ কারণে কক্সবাজার পর্যটন শিল্পে এই অ্যাকুরিয়াম যোগ করেছে নতুন মাত্রা। প্রতিদিন দেশি-বিদেশি অসংখ্য পর্যটক এই অ্যাকুরিয়াম দর্শনে এসে মুগ্ধ হন। প্রবেশমূল্য সহজলভ্য হওয়ায় পর্যটকদের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে।

অ্যাকুরিয়ামের মধ্যে নানা উদ্ভিদ ও প্রাণী সরেজমিন দেখা যায়, অ্যাকুরিয়ামে রয়েছে নানারকম সামুদ্রিক মাছের আবাসস্থল। পাঁচতলাবিশিষ্ট ভবনজুড়ে রয়েছে নান্দনিকতার ছোঁয়া। শিল্পীর তুলিতে সাজানো হয়েছে সবকিছু। সাগরের পাহাড়, গুহা, তলদেশ, উঁচু নিচু আর এলোমেলো সাগর পথ তৈরি করা হয়েছে অ্যাকুরিয়ামে। দেখতে দেখতে যে কেউ ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় পার করে দিতে পারেন অনায়াসে। অ্যাকুরিয়ামে রয়েছে নানা প্রজাতির মাছ, ডান-বামে মাছের বিচরণ। অর্ধশতাধিক প্রজাতির মাছের ভিতর দিয়ে পথ চলতে হবে। তবে হঠাৎ হাঙ্গর সামনে এসে উপস্থিত হয়ে যেতে পারে। মানুষখেকো মাছ পিরানহা ধারালো দাঁত খুলে হা করে ছুটে আসতে পারে। গায়ে লেগে যেতে পারে কুচিয়া, কচ্ছপ, কাঁকড়া, আউসসহ সাগরের তলদেশের নানা কীটপতঙ্গ। এরমাঝে সাগরের তলদেশের গাছপালা, লতাপাতা, গুল্ম, ফুল গায়ে পরশ লাগিয়ে দেবে। পর্যটকদের জন্য এই রোমাঞ্চকর পরিবেশ তৈরি করেছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রেডিয়েন্ট গ্রুপ।

অ্যাকুরিয়ামে মাছের বিচরণ জানতে চাইলে রেডিয়েন্ট ফিশ ওয়ার্ল্ড অ্যাকুরিয়ামের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলহাজ শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পকে এগিয়ে নিতে দুই বছর আগে রেডিয়েন্ট ফিশ সেন্টারের নির্মাণকাজ শুরু হয়। কারণ, আমাদের দেশে ইট-পাথর আর কংক্রিটে আবদ্ধ জীবন থেকে এখানে এসে খানিকটা হলেও স্বস্তির নিঃশ্বাস ও বিনোদনের স্বাদ পাবে দেশি-বিদেশি পর্যটকসহ শহরবাসী।’

অ্যাকুরিয়ামে ঘুরছে শিশুটি অ্যাকুরিয়াম প্রতিষ্ঠাতা আরও বলেন, ‘প্রায় ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত রেডিয়েন্ট ফিশ ওয়ার্ল্ড অ্যাকুরিয়ামকে মোট ৮টি জোনে গড়ে তোলা হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে থ্রি-নাইন ডি মুভি দেখার নান্দনিক স্পেস, দেশি-বিদেশি নানা প্রজাতির পাখি, ছবি তোলার আকর্ষণীয় ডিজিটাল কালার ল্যাব, শপিং স্পেস, লাইভ ফিশ লাইফ রেস্টুরেন্ট, ইবাদতখানা, শিশুদের জন্য খেলাধুলার ব্যবস্থা, বিয়ে বা পার্টি করার কনফারেন্স হল ও ছাদে প্রাকৃতিক পরিবেশ উপভোগ করার পাশাপাশি আয়োজন থাকবে বার-বি কিউর।’

অ্যাকুরিয়ামে চিংড়ির বিচরণ শফিকুর রহমান চৌধুরী আরও বলেন, ‘এই অ্যাকুরিয়াম মালয়েশিয়ার টেকনিক্যাল প্রকৌশলীর সহায়তায় নির্মাণ করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক মানের এই অ্যাকুরিয়াম শুধু কক্সবাজারের জন্য নয়, বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পে বড় ভূমিকা রাখবে। কারণ, এই অ্যাকুরিয়ামে বঙ্গোপসাগরে থাকা বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ সংক্ষণ করা হয়েছে। অচেনা এবং বিলুপ্তপ্রায় অনেক মাছও রয়েছে। সাগরের বিলুপ্ত মাছ বিভিন্ন প্রাণী সংরক্ষণে একটি জাদুঘরও করা হচ্ছে। এটা শুধু বিনোদনের জন্য নয়, এটি সাগরের জীববৈচিত্র্য ও প্রাণী সম্পর্কে জানার একটি শিক্ষাকেন্দ্র।’

অ্যাকুরিয়ামে বিরচণ করছে মাছ কক্সবাজারের জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. আবদুল আলীম জানান, কক্সবাজারে স্থাপিত এটিই হচ্ছে দেশের প্রথম সামুদ্রিক ফিশ অ্যাকুরিয়াম। বর্তমান প্রজন্মকে গ্রাস করছে ইন্টারনেট। এতে শিশুদের নৈতিক অবক্ষয় ঘটছে। পাশাপাশি বিনোদনের উৎস খুঁজে না পেয়ে অনেকেই বিপথগামী হচ্ছে। এছাড়া অধিকাংশ শিশু-কিশোর সমুদ্র ও মিঠাপানির মাছ সম্পর্কে অজ্ঞ। তাই বিলুপ্ত হওয়া প্রাণীসহ বিভিন্ন মাছ সম্পর্কে ধারণা দিতে এটিই দেশের প্রথম আন্তর্জাতিক মানের অ্যাকুরিয়াম। অ্যাকুরিয়ামটি পর্যটনে নবদিগন্তের সূচনা করেছে।

অ্যাকুরিয়ামে বিচরণ করছে মাছ অ্যাকুরিয়ামের তত্বাবধায়ক সমুদ্র বিজ্ঞানী মো. নুরুল বাকি বলেন, ‘এ্যাকুরিয়ামে রাখা হয়েছে সামুদ্রিক শৈল মাছ, হাঙ্গর, পিতম্বরী, আউস, শাপলা পাতা, সাগর কুচিয়া, বোল, পানপাতা, বোল, পাংগাস, চেওয়া, কাছিম, কাঁকড়া, জেলি ফিসসহ অর্ধশতাধিক প্রজাতির মাছ। কিছু বিরল প্রজাতির মাছও এখানে রয়েছে।’

এদিকে, জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উপলক্ষ্যে সারাদেশের মতো কক্সবাজারে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে জেলা মৎস্য অধিদপ্তর। কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় ১৮ জুলাই থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত প্রচার-প্রচারণা, র্যা লি, আলোচনা সভা, পোনা মাছ অবমুক্তকরণ, প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন, মৎস্য মেলা, মৎস্য চাষ ও মৎস্য উন্নয়নবিষয়ক উদ্ধুদ্ধকরণ সভা, মৎস্য আইন প্রয়োগে ভ্রম্যমাণ আদালত ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানসহ নানান কর্মসূচি পালিত হবে।

 

/আইএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
উত্তর কোরিয়া সফর করলেন রুশ গোয়েন্দা প্রধান
উত্তর কোরিয়া সফর করলেন রুশ গোয়েন্দা প্রধান
ঈদে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে চলবে ১৫ ফেরি, ২০ লঞ্চ
ঈদে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে চলবে ১৫ ফেরি, ২০ লঞ্চ
ট্রলারের ইঞ্জিন বিস্ফোরণে চার জন অগ্নিদগ্ধ
ট্রলারের ইঞ্জিন বিস্ফোরণে চার জন অগ্নিদগ্ধ
সর্বাধিক পঠিত
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
এবার চীনে আগ্রহ বিএনপির
এবার চীনে আগ্রহ বিএনপির
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
গাজীপুর থেকে বিমানবন্দর যেতে সময় লাগবে ৪৪ মিনিট
গাজীপুর থেকে বিমানবন্দর যেতে সময় লাগবে ৪৪ মিনিট