X
শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫
২০ আষাঢ় ১৪৩২

রক্ষিত বনভূমির ৭০০ একর জায়গা বরাদ্দের আদেশ স্থগিত

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
১১ অক্টোবর ২০২১, ১৯:৪৬আপডেট : ১১ অক্টোবর ২০২১, ১৯:৪৬

সরকারি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ অ্যাকাডেমি নির্মাণের জন্য রক্ষিত বনভূমির ৭০০ একর জায়গা বরাদ্দের আদেশ তিন মাসের জন্য স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ওই বরাদ্দের আদেশ কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত। মন্ত্রিপরিষদ সচিব, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিব, ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিবকে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

এ সংক্রান্ত এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে সোমবার (১১ অক্টোবর) বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিঞা ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন রিটকারী আইনজীবী মনিরুজ্জামান কবির।

শুনানিতে রিটকারী আইনজীবী আদালতকে বলেন, ৭০০ একর বনভূমির মালিক বন বিভাগ। সেই বন বিভাগের আপত্তি উপেক্ষা করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে এ ভূমি বরাদ্দ দিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়। যদিও এই বনভূমির মালিক ভূমি মন্ত্রণালয় নয়। পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা রক্ষার জন্য দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায় রয়েছে। সেখানে সরকারের একটি বিভাগ ৭০০ একর বনভূমি ধ্বংস করে সেখানে প্রশিক্ষণ অ্যাকাডেমি নির্মাণের জন্য এই জমি বরাদ্দ নিয়েছে। যদি এখানে অ্যাকাডেমি করা হয়, তাহলে ভয়াবহ পরিবেশগত বিপর্যয় নেমে আসবে।

এর আগে গত ৫ সেপ্টেম্বর একটি জাতীয় দৈনিকে ‘৭০০ একর বনভূমি প্রশাসন অ্যাকাডেমির জন্য বরাদ্ধ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য আরেকটি প্রশিক্ষণ অ্যাকাডেমি নির্মাণ করতে ‘রক্ষিত বনভূমির’ ৭০০ একর জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভসংলগ্ন ঝিলংজা বনভূমির ওই এলাকা প্রতিবেশগতভাবে সংকটাপন্ন। বন বিভাগ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির আপত্তি উপেক্ষা করে ভূমি মন্ত্রণালয় এই জমি বরাদ্দ দিয়েছে। বন বিভাগের দাবি, এই জমি তাদের।

কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এই জমি বরাদ্দ নিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, প্রতিবেশগতভাবে সংকটাপন্ন এ বনভূমিতে কোনও ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করা নিষেধ। এ কারণে বন বিভাগ থেকে ‘এই ভূমি বন্দোবস্তযোগ্য নয়’ উল্লেখ করে বিভিন্ন দফতরে চিঠি দেওয়া হয়। ভূমি মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দপত্রে দেশের অন্যতম জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ বনভূমিকে অকৃষি খাসজমি হিসেবে দেখানো হয়েছে। ভূমি মন্ত্রণালয় বলেছে, বরাদ্দ দেওয়া জমির ৪০০ একর পাহাড় ও ৩০০ একর ছড়া বা ঝরনা। তারা জমির মূল্য ধরেছে ৪ হাজার ৮০৩ কোটি ৬৪ লাখ ২৩ হাজার ৬০০ টাকা। কিন্তু অ্যাকাডেমির জন্য প্রতীকী মূল্য ধরা হয়েছে মাত্র এক লাখ টাকা।

১৯৩৫ সালে ব্রিটিশ সরকার এটিকে রক্ষিত বন ঘোষণা করে। বন বিভাগ এত বছর ধরে এটি রক্ষণাবেক্ষণ করছে। বিপন্ন এশীয় বন্য হাতিসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ বন্য প্রাণীর নিরাপদ বসতি এই ঝিলংজা বনভূমি। বন আইন অনুযায়ী, পাহাড় ও ছড়াসমৃদ্ধ এই বনভূমির ইজারা দেওয়া বা না দেওয়ার এখতিয়ার কেবল বন বিভাগের।

বন বিভাগ ভূমি মন্ত্রণালয়কে লেখা তাদের চিঠিতে বলেছে, ১৯৯০ সালে জারি করা ভূমি মন্ত্রণালয়েরই একটি পরিপত্রে চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড় ও পাহাড়ের ঢাল বন্দোবস্তযোগ্য নয় এবং ওই জমি মূলত বন বিভাগ বনায়নের জন্য ব্যবহার করবে। বন আইন অনুযায়ী, এ ধরনের রক্ষিত বনে কোনও ধরনের স্থাপনা করা নিষিদ্ধ।

পরে প্রতিবেদনটি সংযুক্ত করে হাইকোর্টে জনস্বার্থে রিট দায়ের করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শেখ মো. মনিরুজ্জামান কবির। সেই রিটের শুনানি নিয়ে রুলসহ আদেশ দিলেন হাইকোর্ট।

/বিআই/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
‘বিভাগীয় শহরে হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ হলে ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে’
বাংলাদেশ সমঅধিকার পার্টিকে নিবন্ধন দিতে হাইকোর্টের নির্দেশ
অন্তর্বর্তী সরকারের বৈধতা চ্যালেঞ্জ: লিভ টু আপিল শুনানি ১৬ জুলাই
সর্বশেষ খবর
সমস্যা মানেই অসুখ নয়: মেডিক্যালাইজেশন কি বাংলাদেশের নতুন ব্যাধি?
সমস্যা মানেই অসুখ নয়: মেডিক্যালাইজেশন কি বাংলাদেশের নতুন ব্যাধি?
দুই ভাইয়ের বিরোধে মুরাদনগরের সেই ঘটনার ভিডিও ছড়ানো হয়: র‌্যাব
দুই ভাইয়ের বিরোধে মুরাদনগরের সেই ঘটনার ভিডিও ছড়ানো হয়: র‌্যাব
গাজায় যুদ্ধবিরতির নতুন প্রস্তাবের নিশ্চয়তা চায় হামাস
গাজায় যুদ্ধবিরতির নতুন প্রস্তাবের নিশ্চয়তা চায় হামাস
জুলাই আন্দোলনে নিহত ৬ সাংবাদিক: কেমন আছে তাদের পরিবার
জুলাই আন্দোলনে নিহত ৬ সাংবাদিক: কেমন আছে তাদের পরিবার
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের দ্বিতীয় সংশোধন উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের দ্বিতীয় সংশোধন উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন
এনবিআর নিয়ে ‘কঠোর’ সরকার, আতঙ্কে শীর্ষ কর্মকর্তারা
এনবিআর নিয়ে ‘কঠোর’ সরকার, আতঙ্কে শীর্ষ কর্মকর্তারা
সচিবালয়ে দখলের দ্বন্দ্ব : আন্দোলনের নেতৃত্বে বিভক্তি
সচিবালয়ে দখলের দ্বন্দ্ব : আন্দোলনের নেতৃত্বে বিভক্তি
খেলাপিতে ধসে পড়ছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান: বিপদে আমানতকারীরা
খেলাপিতে ধসে পড়ছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান: বিপদে আমানতকারীরা
প্রশ্নপত্রে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ির গল্প, পরীক্ষা বাতিল
প্রশ্নপত্রে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ির গল্প, পরীক্ষা বাতিল