X
বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪
১৯ বৈশাখ ১৪৩১

এক টাকায় ডিম চপ!

বিপুল সরকার সানি, দিনাজপুর
১৪ জুলাই ২০১৬, ১৯:৪৫আপডেট : ১৪ জুলাই ২০১৬, ১৯:৪৯

দিনাজপুর চপের দোকান

পিয়াজু, বেগুনী, আলুর চপ এমনকি ডিপ চপ- এমন মুখরোচক খাবার পাওয়া যায় মাত্র এক টাকায়। দুর্মূল্যের এই বাজারে যা রীতিমত অবিশ্বাস্য! কিন্তু এই ধরনের একটি দোকান রয়েছে দিনাজপুরে। মাত্র এক টাকায় এসব মুখরোচক খাবার খেতে আসে দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন, ক্রয় করেন লাইন দিয়ে।

দিনাজপুর শহরের বস্তান সিনেমা হলের গলিতে বিকেল ৫টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বসে এই মুখরোচকের দোকান। তবে সন্ধ্যার পরেই দোকানের বেচাবিক্রি ভাল জমে। ওই সময়টাতেই বন্ধু-বান্ধব নিয়ে অনেকেই আসেন। গল্পের সঙ্গে চলে মুখরোচক খাবার গ্রহণ। ৪০ বছর ধরে চলে আসছে এই দোকানের কার্যক্রম। এখানে ৯ ধরনের মুখরোচক খাবার পাওয়া যায়, আর শীতকালীন সময়ে সময়ে তা বেড়ে যায় ১৩ থেকে ১৪টিতে।

সরেজমিনে এই দোকানে গিয়ে দেখা যায়, ক্রেতারা লাইন দিয়ে ক্রয় করছেন মুখরোচক খাবার। সেখানে নেই কোনও বসার জায়গা,  নেই পানীয় জলের ব্যবস্থা। তারপরও ক্রেতাদের ভিড় বেশ লক্ষ্যনীয়। এখানে পিয়াজু, ডিমচপ, মরিচ চপ, কালাই বড়া, বেগুনী, রসুন, সবজি চপ, মাশরুম চপ, আলুর চপ পাওয়া যায়। প্রতিটির দাম মাত্র একটাকা।

তবে ব্যতিক্রম রয়েছে সাত মিশালীতে। সাতমিশালীর সর্বনিম্ন দর ৫ টাকা। তবে বর্তমানে দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় মাশরুম চপ ও রসুন প্রতিটি ২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

এই দোকানের মালিকের নাম নুর ইসলাম। তার সাথে সহযোগী বা কর্মচারী হিসেবে রয়েছেন শাহ আলম, রমজান আলী ও সুমন নামে আরও ৩ জন। বেচাবিক্রি ও কাজের ফাঁকে কথা বলার সময় তার নেই। এরই মধ্যে কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি জানান, গত ৪০ বছর ধরে তিনি এই দোকানের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। তখন থেকেই তার মধ্যে চিন্তা আসে কম দরে মুখরোচক খাবার বিক্রির, যাতে করে লাভ কম হলেও বেচাকেনা বেশি হবে। আর তখন থেকেই শুরু যা চলছে অদ্যাবধি। তবে প্রথম ১০ বছর তৈরি করতেন শুধুমাত্র সাতমিশালী।

তিনি জানান, এখন ৮ প্রকারের মুখরোচক খাবার তৈরি করেন তিনি। তবে শীতকালীন সবজি বাজারে আসছে তা আরও বেড়ে যায়। ওই সময়ে ফুলকপি চপ, সীম চপ, পটল চপসহ অন্যান্য সবজির চপ তৈরি করেন তিনি। সবকিছুর দাম রেখেছেন এক টাকা করে। তবে বর্তমানে রসুনের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় রসুন ২ টাকা করে বিক্রি করতে হচ্ছে। আর মাশরুম বাজারে সচরাচর না পাওয়ায় সেটির দাম ২ টাকা করা হয়েছে।

দিনাজপুর চপের দোকান-১

তিনি জানান, তার বাড়ি শহরের কাঞ্চন কলোনি এলাকায়। এই দোকান করেই তিনি স্বচ্ছলতার সাথে সংসার পরিচালনা করছেন। তার চার মেয়ে। লেখাপড়া শিখিয়ে ৩ মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। আর ছোট মেয়ে এসএসসি পাশ করে ভর্তি হয়েছে কলেজে। আয় রোজগারের বিষয়ে তিনি বলেন,  প্রতিদিন এখানে ৫ হাজার টাকার বেচাকেনা হয়। এতে যে লাভ আসে তা ৩ কর্মচারীকে দিয়েও স্বচ্ছলভাবে সংসার পরিচালনা করতে পারেন তিনি। 

কম মূল্যে মুখরোচক খাবার পাওয়া ছাড়া এমন কি আছে যাতে করে ক্রেতারা এখানে ভিড় জমায়?  এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বর্তমান বাজারে এক টাকায় এমন মুখরোচক খাবার পাওয়া সম্ভব না। তাছাড়া আরেকটি দিক হলো এখানে যে তেলে এসব জিনিস ভাজা হয় তা মানসম্মত ও একদিনের তেল পরের দিন ব্যবহার করা হয় না। যার ফলে এসব ভাজাপোড়া খেলে মানুষের যে গ্যাস ও পেটের সমস্যা হয় তা হবে না। আর এই দিকটি দেখেই অনেকেই দূর-দূরান্ত থেকে আসেন এখানে।

দোকানের কর্মচারি শাহ আলম জানান, এখানে এসব জিনিস ভেজে ক্রেতাদের দেয়ার সময় পাওয়া যায় না। এরপরেও লাইন লাগিয়ে ক্রেতারা এখানে ভিড় জমান।

দিনাজপুর চপের দোকান-২

অপর কর্মচারি রমজান আলী জানান,  একটি ডিমকে ১০ থেকে ১২টি ভাগ করে চপ তৈরি করা হয়। আকারে ছোট হলেও তবে বেশ সুস্বাদু হওয়ায় ক্রেতাদের মধ্যে এই ডিম চপের চাহিদা এখানে অনেক বেশি। তিনি জানান, দিনের অর্ধেক সময়ে এখানে কাজ করে যা পান তা অনেক বেশি। অন্য কোথাও এই পরিমাণ পারিশ্রমিক পাওয়া যাবে না। তাই নিজের মতো করে কাজ করেন এখানে।

এ সময় কথা হয় কয়েকজন ক্রেতার সাথে। বশির নামে এক ক্রেতা জানান, তিনি সুইহারী এলাকা থেকে এসেছেন। কাজ থাকলে এদিকে আসা হয়, আর আসলেই নুর ইসলাম মামার এসব ভাজাপোড়া কেনা হয়। তিনি বলেন, নিজে তো খাই, যাবার সময় বাড়ির লোকজনের জন্যও নিয়ে যাই।

রফিকুল ইসলাম নামে এক ক্রেতা জানান, অন্য জায়গাতে এসব ভাজাপোড়া খেলে পেটের সমস্যা হয়। কিন্তু এখানে খেলে নিশ্চিত থাকা যায় যেকোনও সমস্যা হবে না। তাছাড়া প্রতিটির পিস এক টাকা, যা একটি আকর্ষণীয় ব্যাপার বলে জানান তিনি।

দিনাজপুর চপের দোকান-৩

তার সঙ্গে যোগ দিয়ে তার বন্ধু ইব্রাহিম জানায়, শুধু তারা নয়। অন্য জেলা কিংবা ঢাকা থেকে কোন বন্ধু বা আত্মীয় আসলে তাদেরকে এখানে নিয়ে আসেন। এসব খাবার খেয়ে তারাও মুগ্ধ হন। তবে দোকানের পরিসর বৃদ্ধি করা হলে ক্রেতাদের সুবিধা হতো বলে জানান তিনি।

দিনাজপুর চপের দোকান-৫

/এফএএন/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
চীনের দক্ষিণাঞ্চলে সড়ক ধসে নিহত ৩৬
চীনের দক্ষিণাঞ্চলে সড়ক ধসে নিহত ৩৬
লাউ খেলে মিলবে এই ৮ উপকারিতা
লাউ খেলে মিলবে এই ৮ উপকারিতা
রাশিয়ার বিরুদ্ধে রাসায়নিক অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘনের অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্রের
রাশিয়ার বিরুদ্ধে রাসায়নিক অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘনের অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্রের
কেনিয়ায় বন্যায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৮১
কেনিয়ায় বন্যায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৮১
সর্বাধিক পঠিত
শিশু ঝুমুরকে ধর্ষণ ও হত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে চোখ মুছলেন র‌্যাব কর্মকর্তা
শিশু ঝুমুরকে ধর্ষণ ও হত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে চোখ মুছলেন র‌্যাব কর্মকর্তা
মিল্টন সমাদ্দার আটক
মিল্টন সমাদ্দার আটক
আজও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে, পথচারীদের জন্য শরবত-পানির ব্যবস্থা
আজও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে, পথচারীদের জন্য শরবত-পানির ব্যবস্থা
একজন অপরাধীর গল্প বলতে চেয়েছিলেন তিশা
একজন অপরাধীর গল্প বলতে চেয়েছিলেন তিশা
সিয়াম-পরীর গানের ভিউ ১০০ মিলিয়ন!
সিয়াম-পরীর গানের ভিউ ১০০ মিলিয়ন!