X
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪
২০ বৈশাখ ১৪৩১

জল-পাথরের তিন্দুতে...

ফারুখ আহমেদ
২৪ অক্টোবর ২০১৬, ১৮:১১আপডেট : ২৪ অক্টোবর ২০১৬, ১৮:২৮
image

শরতেও আকাশ কালো হয়, মেঘ জমে। বৃষ্টি নামে অঝোরধারায়। প্রকৃতির সে রূপ দেখে মুগ্ধ হয় কিছু ভ্রমণপ্রিয় মানুষ! আজ সেসব কিছুর গল্প হবে। যে গল্পের শুরু ঢাকা থেকে হলেও প্রকৃত শুরু বান্দরবান শহর থেকে!

জল পাথরের তিন্দু

জল পাথরের তিন্দু

শেষ পর্যন্ত আসবো না আসবো না করে বান্দরবান পর্যন্ত চলেই এলাম। এসেই যখন পড়েছি তখন কেবলই সামনে এগিয়ে চলা। সেই সকালে তাই সবার সঙ্গে থানচিগামী বাসে চেপে বসলাম। ফোন করলাম সংবাদকর্মী ফারাবী হাফিজকে। এই ঝড়-বৃষ্টিতে রেমাক্রি যাচ্ছি শুনে সে আঁতকে উঠলো। তখনও বান্দরবানে বৃষ্টি শুরু হয়নি। ফারাবীর কথায় যেন বৃষ্টির চেতনা এল। প্রথমে ঝিরঝির শুরু, কিছুক্ষণে সেই ঝিরিঝিরি অঝোরধারার রূপ পেল। আমরা খুশিতে লাফিয়ে উঠলাম, পাহাড়ে বৃষ্টি না হলে কি জমে! এভাবেই বৃষ্টি মাথায় ঘুমাবো ঘুমাবো করেও না ঘুমিয়ে প্রকৃতির সমস্ত সৌন্দর্য দেখতে দেখতে চলে এলাম থানচি শহরে, তারপরই শুরু হল বৃষ্টির দানবীয় কর্মকাণ্ড! বৃষ্টির প্রতিজ্ঞা সে থামবে না, আমরাও ছুটবো প্রতিজ্ঞা করেই নেমেছি, তাই তো ঝড়বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে সাঙ্গুর জলে ভেসে ভেসে চলে যাই রেমাক্রি। দুইদিন রেমাক্রি কাটিয়ে এক ঝকঝকে সকালে চলে আসি পাথর রাজ্য তিন্দুতে।

পাথর আর সবুজের সমাবেশ

জল পাথরের সৌন্দর্যে ভরপুর তিন্দু

অনেকেই সৌন্দর্যের অনেক রকম সংজ্ঞা দেবেন, কিন্তু তিন্দুর সামনে সবকিছুই আমার কাছে মলিন মনে হয়। একেবারে খাঁটি সত্য হলো এমন ঘুম ঘুম সুন্দর যায়গা পৃথিবীতে আরেকটি নেই, আমরা সেই তিন্দুতে। তিন্দু বাজারের সামনের পাহাড়টা যেভাবে দাঁড়িয়ে, তা দেখি আর ভাবি নিশ্চিত এ তার উদযাপনের ভঙ্গিমা! প্রকৃতির সামনে সব কিছু তুচ্ছ বোঝাতেই হয়তো তার এমন উদযাপন। তিন্দু ইউপি ভবনের পুরো তৃতীয় তলা আমাদের জন্য বরাদ্ধ হলেও সারারাত খরস্রোতা নদীর পারে বসেই কাটিয়ে দিলাম আমরা। আকাশে ছিল আধ ফালি চাঁদ, গান ছিল, পানও ছিল। ঘুরে দেখি এখানকার মারমা সম্প্রদায়ের ঘরবাড়ি। এভাবেই চলে আসি কিয়োথৈ মো আর লামাচিং মারমার বাড়ি। সে অনেক বড় গল্প যা আজকের লেখায় বলে শেষ হবে না। তবু একটু বলি, আসলে মারমা নৃ-গোষ্ঠীর আতিথিয়েতার তুলনা তিন্দুর মতোই তারা নিজেরা। আজ শুধু এইটুকু থাক, এই গল্প তুলে রেখে চলুন শুনি তিন্দুর সেই ভোরের গল্প।

এখানে ভোর নামে মেঘের চাদর পরে

স্থানীয় শিশুরা

চোখের সামনে রাতের অন্ধকার ভেদ করে সূর্য উদয় হলো, আহা কতদিন এভাবে ভোর দেখা হয় না! কেউ দেখে না আমাদের নগরে এভাবে, আমি, চঞ্চল বা বাবুভাইসহ কেউ না। শুধু কি তাই, আমার সঙ্গীরা কেউ স্বপ্নেও ভাবেনি সেই ভোরে তারা পাথুরে নদী সাঙ্গুর শীতল জলে ঝাঁপিয়ে পড়বে!

সেদিন আমরা বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চলে যাই লাংলুক ঝিরি। সেখান থেকে চলে আসি পাথর রাজ্যে। ছোট-বড় কত্ত কত্ত পাথর। পুরো বিষয়টাই স্বর্গীয় মনে হচ্ছিল আমাদের কাছে। এ যেন বিশাল এক পাথর বন। এখানে দেখা পাই রাজা পাথর ও বড় পাথরসহ প্রচুর পাথরের। এমন এক পাথর বন দেখে কারো কারো মুখে কথাই ফোটে না! কেউ কেউ আবার বলে জীবনে এমন অসাধারণ দেখে না বাঁচলেই বা কী! আমাদের সঙ্গীরা বেশীর ভাগ সাঁতার না জানায় সঙ্গে লাইফ জ্যাকেট নিয়ে এসেছিল। এরমধ্যে একজন সাঙ্গুর জলে ভেসে যায়। জামান ভাই সময় মত ঝাঁপিয়ে পড়ায় তার রক্ষা হয়। তিন্দুর অনেক সুখস্মৃতির মধ্যে এই দুর্ঘটনাটাও মনে থাকবে বহুদিন।

ছোট-বড় পাথরের ছড়াছড়ি এখানে

প্রয়োজনীয় তথ্য
তিন্দু বান্দরবানের থানচি উপজেলার একটি ইউনিয়ন। যেকোনও ছুটিছাটায় ঢাকা থেকে বাসে বান্দরবান চলে যান। তারপর থানচি থেকে রেমাক্রি খাল বেয়ে উপরের দিকে ট্রলার বেয়ে উঠতে উঠতে ঠিক দুই ঘন্টা পর তিন্দু চলে আসবেন। তিন্দু খুব মজার জায়গা। শীত-বর্ষায় সমান জনপ্রিয় এটি। তিন্দুতে থাকার যায়গা নিয়ে ভাবতে হবে না। এখানকার বাসিন্দা মারমাদের দোকান ও বসতি একসঙ্গে। মাথাপিছু ১০০ টাকায় সেখানে রাত্রিযাপন করা যায়। নবনির্মিত ইউপি ভবনে রাত্রিযাপনের ব্যবস্থা রয়েছে। এখানে রুমপ্রতি ভাড়া ৭০০ টাকা। খাবার নিয়েও নির্ভাবনায় সময় কাটাতে পারেন। মারমাদের দোকানে বলে দিলে তারা খাবারের ব্যবস্থা করবে। এর বাইরে আপনি নিজে থানচি থেকে বাজার করে এনে নিজেরাই রান্না করে খেতে পারবেন। তিন্দু থেকে ডানে গেলে পাবেন লংলক ঝিরি, বাজার ঘেঁষে আছে মাউক ঝিরি। বড় পাথর এলাকা একটু সামনে গেলে পেয়ে যাবেন। তারপর, আসলে তার আর পর নেই! শুধু মনে হবে আপনি রয়েছেন স্বপ্নের ভেতর, ঘোর লাগা যে স্বপ্নের দৃশ্য চোখ থেকে কোনও দিন মুছবে না!

সাঙ্গুর জলে...

সচেতনতা
পানি পথে যাতায়াতে একটু বাড়তি সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে। সম্ভব হলে সঙ্গে লাইফ জ্যাকেট রাখবেন। শুকনা খাবার এবং প্রয়োজনীয় কিছু ওষুধ সঙ্গে রাখবেন। একটা বিষয় খেয়াল রাখবেন আপনার বা আপনার ভ্রমণ সঙ্গীদের দ্বারা পরিবেশ হুমকিতে পড়ে এমন কোনও কিছু যেন না হয়। পলিথিন বা প্লাস্টিকের বোতলসহ পরিবেশ বিপন্ন হয় এমন কিছু ফেলে আসবেন না।

ছবি: লেখক

 

/এনএ/  

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সবজির কেজি এখনও ৬০ টাকার বেশি, ২০০ ছাড়িয়েছে ব্রয়লার
সবজির কেজি এখনও ৬০ টাকার বেশি, ২০০ ছাড়িয়েছে ব্রয়লার
পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চলে বাস দুর্ঘটনায় নিহত অন্তত ২০
পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চলে বাস দুর্ঘটনায় নিহত অন্তত ২০
মুক্তির পর থেকেই মামুনুল হককে ঘিরে অনুসারীদের ভিড়
মুক্তির পর থেকেই মামুনুল হককে ঘিরে অনুসারীদের ভিড়
কেমন থাকবে আগামী কয়েকদিনের আবহাওয়া?
কেমন থাকবে আগামী কয়েকদিনের আবহাওয়া?
সর্বাধিক পঠিত
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
কামরাঙ্গীরচরে নতুন ভবন নির্মাণের অনুমতি দিলো ডিএসসিসি
কামরাঙ্গীরচরে নতুন ভবন নির্মাণের অনুমতি দিলো ডিএসসিসি
কুমিল্লায় বজ্রাঘাতে ৪ জনের মৃত্যু
কুমিল্লায় বজ্রাঘাতে ৪ জনের মৃত্যু
আরও কমলো সোনার দাম
আরও কমলো সোনার দাম
ব্যর্থতার অভিযোগে শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে আইনি নোটিশ
ব্যর্থতার অভিযোগে শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে আইনি নোটিশ