চলছে বর্ষাকাল। এই মৌসুমে শিশুকে মশার আক্রমণ থেকে রক্ষা করার চিন্তায় বাবা-মায়ের ঘুম হয়ে যায় হারাম। ঘুমের সময় না হয় মশারি ব্যবহার করলেন। কিন্তু বাকি সময়? ঘরে বাইরে শিশুকে মশা থেকে কীভাবে সুরক্ষা দেবেন জেনে নিন তার কয়েকটি টিপস।
পোশাক বাছাই করতে হবে বুঝেশুনে
পোশাকের মাধ্যমে শরীরের বেশির ভাগ অংশ ঢেকে রাখুন। শিশুকে ফুল হাতা জামা-পায়জামা পরালে মশা থেকে সুরক্ষা দেওয়া সম্ভব হবে অনেকটাই। তবে এই গরমে সুতি পোশাক পরাতে হবে যেন বাতাস চলাচল করতে পারে। পোশাক বেশি আঁটসাঁট হলে যেমন গরমে কষ্ট পাবে শিশু, তেমনি মশা কামড়ানোর সুযোগও বাড়বে। কাজেই ঢিলেঢালা পোশাক বেছে নিন। গাঢ় রঙ ও ফুলেল নকশা মশাদের আকৃষ্ট করে, এজন্য ডেঙ্গুর এই মৌসুমে শিশুদের একদম হালকা রঙের পোশাক পরানোই ভালো।
বয়স অনুযায়ী মশা প্রতিরোধক ব্যবহার
বাজারে এখন অনেক ধরনের মশা প্রতিরোধক পাওয়া যায়। স্প্রে, লোশন, রোল অন, স্টিকার নানাভাবে এইগুলো ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এগুলো সাধারণত দুই থেকে পাঁচ ঘন্টা পর্যন্ত মশা থেকে শিশুকে সুরক্ষা দিতে পারে বলে ধারণা করা হয়। তবে ব্যবহারের আগে অবশ্যই জেনে নিন সেটি আপনার শিশুর বয়সের উপযোগী কিনা। কারণ মশা তাড়াতে এগুলোতে নানা ধরনের রাসায়নিক মেশানো হয়। সব রাসায়নিক সব বয়সের উপযোগী নাও হতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে শিশুর বয়স দুই মাস হওয়ার আগে কোনও ধরনের রাসায়নিক মশা প্রতিরোধক ব্যবহার করা উচিত নয়। বরং তাকে যতটা সম্ভব মশারির নিচে রাখুন। দুই মাস পেরোলে ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যে মশা প্রতিরোধকে রাসায়নিকের ঘনত্ব কম, সেটিই অভিভাবকদের বেছে নেওয়া উচিত। আর ব্যবহারের আগে অবশ্যই ব্যবহারবিধি জেনে নিতে হবে।
প্রাকৃতিক মশা প্রতিরোধক
ত্বক সংবেদনশীল হলে প্রাকৃতিক মশা প্রতিরোধক হতে পারে সবচেয়ে ভালো সমাধান। কিছু অ্যাসেনশিয়াল অয়েল যেমন লেমনগ্রাস, সিট্রোনেলা, নিম, ল্যাভেন্ডার,ইউক্যালিপটাস, সিডার, সয়াবিন ইত্যাদি মশা প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। এই তেলের সুগন্ধযুক্ত মোমবাতি ঘরে জ্বালিয়ে রাখলে ঘরময় একটি সুন্দর ঘ্রাণও ছড়িয়ে থাকবে আর মশাও থাকবে দূরে।
শ্বাসকষ্টের সমস্যা না থাকলে বাড়িতে ধূপ জ্বালিয়েও মশাকে দূরে রাখতে পারেন। তবে জলন্ত ধূপ, কয়েল, মোমবাতি কিংবা আগরবাতি ছোট্ট শিশুর কাছে আকর্ষণীয় বস্তু। না বুঝে আগুনে হাত দিলেই ঘটতে পারে অঘটন। তাই মোমবাতি কিংবা ধূপ জ্বালালে তা রাখুন শিশুদের নাগালের বাইরে।
প্রসাধনীর ব্যবহারে সতর্কতা
ছোটদের প্রসাধনীতে অনেক সময় ফুল ও ফলের সুগন্ধিমুক্ত মিশ্রণ থাকে যা কিনা মশা ও পোকামাকড়দের আকৃষ্ট করে। শিশুদের লোশন, সাবান, তেল তাই সুগন্ধিমুক্ত কেনার চেষ্টা করুন।
মশা তাড়ানোর গ্যাজেট
শিশুর রাসায়নিক সংবেদনশীলতা ও অ্যালার্জির সমস্যা থাকলে মশা তাড়াতে আল্ট্রাসোনিক ও ইলেকট্রোম্যাগনেটিক র্যাকেট ব্যবহার করতে পারেন। তাছাড়া ঘরে মশা কম থাকলে লিকুইড ভ্যাপারাইজারও কাজে দেয়। তবে মশার আধিক্য থাকলে এটি কার্যকরিতা হারায়।
পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে কঠোর হওয়া জরুরি
সবচেয়ে জরুরি বিষয় যেটা তা হলো মশার প্রজনন ক্ষেত্র নিয়মিত পরিষ্কার করা। ডেঙ্গুর জন্য দায়ী এডিস মশা স্থির পানিতে বংশবৃদ্ধি করে। খুব অল্প পরিমাণ পানিতেই তারা ডিম পাড়তে পারে যা ফুটতে সময় লাগে মাত্র সাত থেকে দশ দিন। এজন্য বাড়িতে থাকা ট্যাঙ্ক, ড্রাম ও বালতিতে পানি রাখলে এমনভাবে ঢেকে রাখা উচিত যেন সেখানে মশা ঢুকতে না পারে। তাছাড়া এয়ার কুলার, এসি ট্রে ও টবে পানি জমতে দেওয়া যাবে না। ফুলদানী কিংবা অন্য কোনও পাত্রের জমা পানি প্রতিদিন ফেলে দিতে হবে। বাড়ির আশেপাশে খোলা ড্রেন, ছোট ডোবা কিংবা স্থির পানির উৎসে সপ্তাহে অন্তত একদিন কয়েক ফোঁটা কেরোসিন তেল ঢেলে দিন। কেরোসিন তেল পানির ওপর একটা পাতলা আস্তর গঠন করে মশার বংশবৃদ্ধি রোধ করে।
বাড়িতে থাকা অপ্রয়োজনীয় জিনিস ফেলে দিন। কারণ ঘরের কোণ ও জিনিসের স্তুপ মশার লুকিয়ে থাকার প্রিয় জায়গা। খাটের নিচ, ঘরের প্রতিটি কোণা ও যেখানে জিনিসপত্র বেশি আছে সেখানে প্রতিদিন অন্তত একবার মশারোধক তেল স্প্রে করুন। জিনিসগুলো নাড়াচাড়া করুন। এতে করে মশা সেখানে ঘাপটি মেরে বসে থাকতে পারবে না। বাড়ির নিচে কিংবা ছাদে বাগান থাকলে গাছপালার আগাছা নিয়মিত ছাঁটার ব্যবস্থা করুন।
ঘরোয়া টোটকায় অন্ধ বিশ্বাস নয়
ইন্টারনেট কিংবা এর ওর কাছ থেকে শুনে ঘরোয়া টোটকা পরখ করে দেখতেই পারেন। তবে এগুলোর ওপর অন্ধবিশ্বাস রাখাটা বোকামি হবে। নিজের শিশুর সুরক্ষায় ঘরোয়া টোটকার পাশাপাশি মশা তাড়ানোর প্রমাণিত যে ব্যবস্থাগুলো আছে সেগুলো গ্রহণ করুন। সম্ভব হলে বাড়ির জানালা ও দরজায় নেট বা মসকিউটো স্ক্রিন লাগানোর ব্যবস্থা করুন।
তথ্যসূত্র: বেবি সেন্টার
