প্রশ্ন: আমার বয়স ২৪ বছর। ১৮ বছর বয়সে বাবা মা ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে দিয়ে দেন। স্বামী বেকার, যদিও তার বাবার অবস্থা ভালো। আমার একটা বাচ্চা আছে ২ বছরের। আমি খুব মানসিক অশান্তি নিয়ে সংসার করছি। স্বামী আমার কোনও ইচ্ছাই পূরণ করে না। কোথাও ঘুরতে যাওয়া বা শৌখিন কোনও জিনিস কেনার কথা বলাই যায় না। আমাকে পড়াশোনাও কন্টিনিউ করতে দেয়নি। যেহেতু পরিবারের সাপোর্ট নেই, ফলে আমার কিছুই করার ছিল না। স্বামী কথায় কথায় আমাকে খরচের খোঁটা দেয়। আমার বাচ্চা হয়েছিল সিজারে, সেই খোঁটা এখনও শুনতে হয়। আমার মনে হয় মানসিকভাবে আমি মরে গেছি। কীভাবে এই পরিস্থিতি থেকে বের হবো?
উত্তর: ১) স্কিল ডেভেলপমেন্ট: নতুন স্কিল শিখুন বর্তমান বাজারে যার চাহিদা আছে। বিভিন্ন অনলাইন কোর্স প্ল্যাটফর্ম যেমন Coursera, Udemy, Google Digital Garage, HubSpot Academy, SEMrush Academy এবং LinkedIn Learning থেকে কোর্স করতে পারেন। ব্লগ পোস্ট, আর্টিকেল, ওয়েবসাইট কনটেন্ট ইত্যাদি লেখার কাজ করতে পারেন। লোগো ডিজাইন, ব্যানার ডিজাইন, সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট ডিজাইন ইত্যাদি গ্রাফিক ডিজাইনের জন্য Adobe Photoshop, Illustrator ইত্যাদি সফটওয়্যার শিখতে পারেন। ওয়েব ডেভেলপমেন্টের কাজ করতে HTML, CSS, JavaScript এবং বিভিন্ন ফ্রেমওয়ার্ক যেমন React, Angular ইত্যাদি শিখতে পারেন। ডিজিটাল মার্কেটিং যেমন, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, SEO, SEM, ইমেইল মার্কেটিং ইত্যাদি শিখতে পারেন। ভিডিও এডিটিং ও প্রোডাকশন শিখতে পারেন। Adobe Premiere Pro, Final Cut Pro ইত্যাদি সফটওয়্যার ব্যবহার করতে পারেন।
২) অনলাইন কাজ: ফ্রিল্যান্সিং, কনটেন্ট রাইটিং, গ্রাফিক ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, ডাটা এন্ট্রি ইত্যাদি কাজ অনলাইনে করতে পারেন। ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্ম যেমন Upwork, Fiverr, এবং Freelancer-এ কাজ খুঁজে পেতে পারেন। ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস যেমন Upwork, Fiverr, Freelancer, এবং PeoplePerHour-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন। আপনার কাজের নমুনা বা পোর্টফোলিও তৈরি করুন। বিভিন্ন প্রজেক্টের জন্য প্রপোজাল পাঠান। ফ্রিল্যান্সিং কমিউনিটিতে যুক্ত হন এবং অন্যান্য ফ্রিল্যান্সারদের সাথে যোগাযোগ করুন। ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট অর্থাৎ বিভিন্ন প্রশাসনিক কাজ যেমন ইমেইল ম্যানেজমেন্ট, ক্যালেন্ডার ম্যানেজমেন্ট, ডাটা এন্ট্রি ইত্যাদি করতে পারেন।
৩) ক্ষুদ্র ব্যবসা শুরু করা: আপনি যদি কোনও নির্দিষ্ট দক্ষতা বা পণ্য তৈরি করতে পারেন, তাহলে ছোট পরিসরে ব্যবসা শুরু করতে পারেন। এটি হতে পারে হস্তশিল্প, পোশাক, খাবার বা অন্য কোনও পণ্য। ফেসবুক পেজের মাধ্যমে আপনি আপনার ব্যবসা পরিচালনা করতে পারেন তেমন কোনও বিনিয়োগ ছাড়াই। বাংলাদেশে অনেক সংস্থা আছে যারা মহিলা উদ্যোক্তাদের সহায়তা করে। তাদের থেকে পরামর্শ ও অর্থনৈতিক সহায়তা নিতে পারেন।
৪) ব্লগিং বা ইউটিউব: আপনি যদি লেখালেখি বা ভিডিও তৈরি করতে পছন্দ করেন, তাহলে ব্লগিং বা ইউটিউব চ্যানেল শুরু করতে পারেন। এটি থেকে বিজ্ঞাপন ও স্পন্সরশিপের মাধ্যমে আয় করতে পারেন। ব্লগিংয়ের এমন একটি বিষয় নির্বাচন করুন যা আপনার আগ্রহের এবং যার উপর আপনি নিয়মিত মানসম্মত কনটেন্ট তৈরি করতে পারবেন। সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন (SEO) শিখুন এবং আপনার ব্লগ পোস্টগুলোতে প্রয়োগ করুন। ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম ইত্যাদি প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আপনার কনটেন্ট শেয়ার করুন। আকর্ষণীয় থাম্বনেইল তৈরি করুন। ইউটিউব SEO শিখুন এবং আপনার ভিডিওর টাইটেল, ডেসক্রিপশন, এবং ট্যাগে প্রয়োগ করুন।
প্রশ্ন: আমি স্বাভাবিক ছেলেদের মতো না। আমি ছেলে হয়েও ছেলেদের উপর আগ্রহ বোধ করি। এটা নিয়ে সবসময় হীনমন্যতা কাজ করে। এরপর একটা ছেলের সাথে সম্পর্ক ছিল দুই বছরের। সেই সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার পর আমি মানসিকভাবে আরও ভেঙে পড়েছি।
উত্তর: ১) নিজের প্রতি সহানুভূতিশীল হোন: আপনার সকল আবেগ-অনুভূতি, বৈশিষ্ট্য আপনারই অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই এদেরকে ভালো বা মন্দ এরকম বিচার না করে নিরপেক্ষভাবে আপন করুন। নিজের মধ্যে তথাকথিত নেতিবাচক চিন্তাভাবনা বা আবেগ অনুভূতি তৈরি হলে সেটাকে ঠিক সেভাবেই গ্রহণ করুন কোনও রকম বাধা না দিয়ে আনন্দের সাথে এবং ভালোবাসার মাধ্যমে। অপরাধবোধ আমাদের মানসিক শান্তি নষ্ট করে, অন্যের সাথে সুসম্পর্ক তৈরি করতে বাধা দেয় এবং কর্মদক্ষতা কমিয়ে দেয়। অপরাধবোধ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য নিজেদের সকল কৃতকর্মকে প্রাকৃতিক নিয়মে সংঘটিত হয়েছে, এরকম মনে করুন। অনুশোচনা থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পারলেই কেবলমাত্র আমরা অন্যদের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে পারবো।
২) মাইন্ডফুলনেস মেডিটেশন: আপনি এই মুহূর্তে যেখানে আছেন, যে কাজ করছেন, সেখানে থাকার এবং সেই কাজ করার মাধ্যমেই আপনি মাইন্ডফুল মেডিটেশন করতে পারেন আলাদা সময় ব্যয় না করেই। আপনার দৈনন্দিন কাজগুলো করার সময় বর্তমান মুহূর্তে থাকার চেষ্টা করুন। যেমন খাওয়ার সময় খাবারের স্বাদ ও গন্ধ উপভোগ করুন, হাঁটার সময় চারপাশের দৃশ্য লক্ষ্য করুন। চারপাশে যা ঘটছে তা লক্ষ্য করুন। আপনার শরীরের সাথে মেঝে, চেয়ার, আসবাবপত্র বা অন্য যা কিছু স্পর্শ করে আছে সচেতনভাবে সেসব উপলদ্ধি করুন। আপনার শরীরে রোদ বা বাতাসের স্পর্শ অনুভব করুন। পায়ের মাটির স্পর্শ এবং পোশাকের স্পর্শ অনুভব করুন।
৩) শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম: নাক দিয়ে লম্বা শ্বাস নিন এবং ১ থেকে ৪ পর্যন্ত গুনুন। শ্বাস ধরে রাখুন এবং ১ থেকে ৪ পর্যন্ত গুনুন। শ্বাস ছাড়ুন এবং ১ থেকে ৬ পর্যন্ত গুনুন, পেট ভেতরের দিকে টানুন। কয়েকবার পুনরাবৃত্তি করুন। এটি আপনার মনকে শান্ত করবে।
৪) প্রকৃতির সাহচর্য: প্রতিদিন কিছু সময় প্রকৃতির মাঝে কাটানোর চেষ্টা করুন। ১৫ থেকে ৩০ মিনিট খালি পায়ে ঘাস বা মাটির উপর হাঁটুন বা দাঁড়ান। দুই হাতের তালু দিয়ে বড় কোনও গাছের কান্ড জড়িয়ে ধরে রাখুন (ট্রি হাগিং) কিছু সময়ের জন্য।