X
সোমবার, ০৬ মে ২০২৪
২৩ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যক্তি আমি কে– সেটা বড় করে দেখি না কখনো : সেলিনা হোসেন

.
১৪ জুন ২০১৬, ১০:৫৭আপডেট : ১৪ জুন ২০১৬, ১২:৪৪

ব্যক্তি আমি কে– সেটা বড় করে দেখি না কখনো : সেলিনা হোসেন আমি মনে করি, জন্মদিনেও আমার লেখালেখির একটা মূল্যায়ন ধরা পড়ে। আমি এই লেখালেখির জায়গাটা বড় করে দেখি। ব্যক্তি আমি কে– সেটা বড় করে দেখি না কখনো। আমার লেখালেখির নিশ্চয় মূল্যায়ন হচ্ছে, তা না হলে তাঁরা আমাকে কেনো তুলে ধরবেন তাদের সাহিত্য পাতাগুলোতে। তার মানে লেখক হিসেবে আমি তাদের সেই জায়গাটা ছুঁতে পেরেছি

আজ থেকে ৬০-৭০ বছর আগে বাচ্চাদের জন্মদিন কেউ পালন করতো বলে আমার মনে হয় না। আর মধ্যবিত্ত পরিবারে তো কল্পনাও করা যায় না! শৈশবে আমার জীবনে কখনো জন্মদিন পালন হয়নি, সুতরাং জন্মদিনের স্মৃতি না থাকাটাই স্বাভাবিক। তাই না? এখন আমার পাঠকরা জন্মদিন পালন করে, পারিবারিকভাবে আমার ছেলেমেয়েরাও একটু-আধটু অংশগ্রহণ করে। কিন্তু ওই অর্থে ফর্মালি কখনোই জন্মদিন পালন হয়নি আমার। সাহিত্য সম্পাদকরা আমার জন্মদিনের তারিখটা মনে করছেন, আমাকে নিয়ে বিশেষ সংখ্যাও প্রকাশ করছেন, এটা দেখে আমি খুবই আপ্লুত। পাঠক-শুভাকাঙ্ক্ষী কিংবা লেখকরাই আমার জন্মদিনের কথা স্মরণে এনে দিচ্ছেন। নিজের থেকে তো কখনো করিনি এটা, এমনকি আমি বলবো আমার আত্মীয়-স্বজনরাও করেনি। আমার মনে হয়, যারা লেখালেখির জগতে আছেন, এবং শুধু পাঠকরাই মনে করছেন। কয়েক বছর ধরে একটি রীতি আমার ক্ষেত্রে হয়ে আসছে। ব্যাপারটা হল, ১৪ জুন এলেই পাঠকরা বা সম্পাদক কিংবা চ্যানেলের লোকরা ফুল নিয়ে আসে আমার বাড়িতে।

একবার হল কী, চ্যানেল আই আমাকে ডাকলো। লাইভ প্রোগাম করে বড় একটা কেক কাটল। কিছু কেক আমাকে দিয়েও দিল। এটা আমাকে খুব টাচ করেছিল। এই রীতিটা প্রথম চালু করেছিল চ্যানেল আই। এই আনন্দটা বেশ উপভোগ করেছিলাম আমি। যদিও এখানে আনন্দটা মুখ্য, তবুও আরেকটি মুখ্য বিষয় হল স্মরণ করার একটা জায়গা আমাকে নিয়ে প্রথম তৈরি করেছিল চ্যানেল আই। প্রথমে ওরা আমাকে কী কারণে নিয়ে যাচ্ছে বলেইনি। পরে তাদের এই আয়োজন দেখে আমি খুব সারপ্রাইজড হয়েছিলাম। অনুষ্ঠানটি দুপুরের দিকে লাইভ প্রচার হয়েছিল। তারপর দেখি বিকালের দিকে ফুল নিয়ে আসছে অনেকেই। বলা যায়, ওরাই প্রথম এই রেওয়াজটি শুরু করেছিল, পরে হয়ত অনেকে করেছে। এবারও তো যেসব সাহিত্য পাতাগুলো আমাকে নিয়ে সংখ্যা করলো, আমার ভালো লেগেছে ভীষণ। এর আগেও অনেকে করেছে আমার লেখার মূল্যায়ন করে। এসব তো আর একদিনে হয়নি। লেখালেখিকে আকড়ে ধরে রাখতে পেরেছিলাম বলেই তো এই প্রাপ্তি।

লেখালেখি বিষয়টা আমাকে খুব স্পর্শ করে। আমি মনে করি, জন্মদিনেও আমার লেখালেখির একটা মূল্যায়ন ধরা পড়ে। আমি এই লেখালেখির জায়গাটা বড় করে দেখি। ব্যক্তি আমি কে– সেটা বড় করে দেখি না কখনো। আমার লেখালেখির নিশ্চয় মূল্যায়ন হচ্ছে, তা না হলে তাঁরা আমাকে কেনো তুলে ধরবেন তাদের সাহিত্য পাতাগুলোতে। তার মানে লেখক হিসেবে আমি তাদের সেই জায়গাটা ছুঁতে পেরেছি। গত কয়েক বছর ধরে হুটহাট করে পাঠক-শুভাকাঙ্ক্ষী-সম্পাদকরা বাসায় চলে আসছেন জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে। এরমধ্যে আবার অনেক পাঠক চলে আসছেন আমাকে না জানিয়েই। মাঝে মাঝে আমি অপ্রস্তুত হয়ে যাই, তাদেরকে কেক খাওয়াতে পারবো কিনা এ বিষয়েও কনফিউজড হয়ে পড়ি। কেউ কেউ হয়ত শেষের দিকে এসে কেক না পেয়েও হাসিমুখে শুভেচ্ছা জানায়। এসব আমাকে খুব উচ্ছ্বাসিত করে তোলে। প্রেরণা যোগায়। পাঠকদের মধ্যে বেঁচে থেকে আরও ভালো লেখা উপহার দিতে উৎসাহবোধ করি তখন।
এবারে চন্দ্রাবতী একাডেমি আমাকে উপলক্ষ করে ১৪ জুলাই অনুষ্ঠান করবে। ১৪ জুন রোজা হওয়াতে ডেটটা পরে নির্ধারিত করেছে ওরা।
সবশেষে পাঠকদের জন্য বলি, আজ আমার ৭০ বছরের জীবনে পাঠকদের কারণেই এই জন্মদিন পালন। পাঠক আর সম্পাদকরা যদি এই জায়গাটা তৈরি না করতেন তা না হলে হয়তো জন্মদিনের কোনো আবেগ বা উচ্ছ্বাস আমার মধ্যে থাকতো না। সেইজন্যে পাঠকদের আবারও বলি, যারা আমার জন্য জন্মদিনের প্ল্যান করেছেন তাদের কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ।
শ্রুতিলিখন : মিলন আশরাফ

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
লাইসেন্সবিহীন টিভি চ্যানেল বন্ধে কার্যক্রম শুরু
লাইসেন্সবিহীন টিভি চ্যানেল বন্ধে কার্যক্রম শুরু
হামাসের রকেট হামলার জবাবে রাফাহ শহরে ইসরায়েলি অভিযান
হামাসের রকেট হামলার জবাবে রাফাহ শহরে ইসরায়েলি অভিযান
সুন্দরবনে আগুন লাগা স্থানে ধোঁয়া দেখলেই পানি দেওয়া হচ্ছে
সুন্দরবনে আগুন লাগা স্থানে ধোঁয়া দেখলেই পানি দেওয়া হচ্ছে
আজও ঝোড়ো হাওয়াসহ শিলাবৃষ্টির আভাস
আজও ঝোড়ো হাওয়াসহ শিলাবৃষ্টির আভাস
সর্বাধিক পঠিত
‘টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন, জানালেন হারুন
‘টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন, জানালেন হারুন
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
অভিযোগের শেষ নেই মাদ্রাসায়, চলছে শুদ্ধি অভিযান
অভিযোগের শেষ নেই মাদ্রাসায়, চলছে শুদ্ধি অভিযান
কোন পথে এগোচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ?
কোন পথে এগোচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ?