X
বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪
৫ বৈশাখ ১৪৩১
নতুন বইয়ের খবর

‘হাতিটা উধাও’ গ্রন্থের অনুবাদকের কথা

অভিজিৎ মুখার্জি
০৫ আগস্ট ২০২১, ০৭:৫৯আপডেট : ০৫ আগস্ট ২০২১, ১০:১৫

গত ২ আগস্ট প্রকাশিত হয়েছে হারুকি মুরাকামির গল্পের বই ‘জো-নো-শোমেৎসু’-এর বাংলা অনুবাদ ‘হাতিটা উধাও’। অনুবাদ করেছেন অভিজিৎ মুখার্জি, অনুরাধা চট্টোপাধ্যায়, রীমা রায় এবং শুভা বসু। প্রকাশ করেছে যাদবপুর ইউনিভার্সিটি প্রেস, প্রচ্ছদ করেছেন কৌস্তভ চক্রবর্তী, ২৭৯ পৃষ্ঠার বইটির মুদ্রিত মূল্য ৪৫০ ভারতীয় রুপি।  

পৃথিবীর গভীর গভীরতর অসুখ এখন;
মানুষ তবুও ঋণী পৃথিবীরই কাছে

সভ্যতার যে কোনো পর্যায়েই মানুষকে তার নিজের অস্তিত্বের নানা বিপন্নতার সার্বিক চিত্রটার মুখোমুখি হতেই হয়। খুঁজে বের করতে হয় আবহমান কালের মানুষী সত্যের পরিপ্রেক্ষিতে তার সেই সময়কার চাহিদা ও চেতনার পরিস্থিতিটা কী। প্রাণীজগতে বিবর্তনের পথে মানুষের উদ্ভব হওয়া ইস্তক সভ্যতার নানা পর্যায় পার হয়ে আসতে আসতে মানুষ অর্জন করেছে তার স্বভাবের কিছু প্রাথমিক দিক, যা দু’চার সহস্রাব্দ সময়ের বা ভৌগলিক দূরত্বের প্রভাবের ঊর্ধ্বে। স্বভাবের এই প্রাথমিক দিকগুলোর হদিস যেমন নৃতাত্ত্বিকরা দেন, মনস্তত্ত্ববিদরা দেন, দার্শনিকরা দেন, ইতিহাসের কিছু কালজয়ী প্রজ্ঞার রেখে যাওয়া বাণীও সেগুলোর সঙ্গে মানুষের পরিচয় করিয়ে দেয়। নানা সভ্যতার ধারার সম্মিলিত এক অখণ্ড প্রবাহের গর্ভ থেকে উঠে এসে, দৈনন্দিন জীবনধারণে ব্যস্ত সাধারণ মানুষের কাছে সেইসব মানুষী সত্য পৌঁছে যাওয়ার চেষ্টা করে সাহিত্যের হাত ধরে। কি উপন্যাস, কি ছোটগল্প, একেকটা ছোটো ছোটো জানালা খুলে দেয়, কিছুটা কিছুটা করে সেই সত্য যাতে মানুষের গোচরে আসে, নিজের সভ্যতার, সমাজের বর্তমান রূপটিকে বিচার করতে শেখে মানুষ আবহমানের পরিপ্রেক্ষিতে। বর্তমান সময়ের বিশ্বসাহিত্যের পাঠকের বৃহত্তম অংশের কাছে ঘনিষ্ঠতম হয়ে ওঠার গৌরব, তর্কসাপেক্ষে হলেও, যে জাপানি সাহিত্যিকের ওপর ন্যস্ত হতে পারে, তাঁর নাম মুরাকামি হারুকি। ২০২১ সালে, এই অনুবাদ প্রকাশের সময় আর নতুন করে মুরাকামি সম্বন্ধে নানা তথ্য পাঠকদের জানানোর তেমন প্রয়োজন নেই। নিজস্ব আখ্যানশৈলিতে আবহমান কালের মানুষী সত্যের সঙ্গে এই শতাব্দীর মানুষী বিপন্নতার মুখোমুখি দেখা করিয়ে দেওয়াই তাঁর জনপ্রিয়তার ভিত্তি বলে অনেকেই মনে করেন। উপন্যাস ও ছোটগল্প উভয়ক্ষেত্রেই অনায়াস বিচরণকারী এই লেখকের প্রথম ছোটগল্প সংকলন ‘জো-নো-শোমেৎসু’, এ-যাবৎ প্রকাশিত হওয়া তাঁর সমস্ত গল্পসংকলনের মধ্যে সবচেয়ে সমাদৃতও বটে। সাহিত্যের ভূমিকার যে সংজ্ঞা দিয়ে এই লেখাটা শুরু করেছি, সেটিকে সর্বাংশে সার্থক হয়ে উঠতে দেখা যায় এই সংকলনের গল্পগুলোতে। ২০০৫ সাল থেকে শুরু করে, মাঝখানে বেশ দীর্ঘ সময়ের ব্যবধান রেখে রেখে এই সংকলনের কিছু গল্প অনুবাদ করেছিলাম বিভিন্ন পত্রপত্রিকার জন্য। প্রত্যাশাতীত সাড়া পেয়ে, মনে একটা ইচ্ছে তৈরি হয়েই ছিল পুরো সংকলনটাই অনুবাদ করে ফেলার।

ঐতিহাসিক কারণেই বাঙালি সাহিত্যমোদীর সঙ্গে পশ্চিমী সাহিত্যের যতটা ঘনিষ্ঠ পরিচয়, জাপানি সাহিত্যের সঙ্গে ঠিক অতটা নয়। কিন্তু অতি-সাম্প্রতিক কালে তরুণ প্রজন্মের বাঙালি পাঠকদের একাংশের মধ্যে একেবারে এইসময়কার জাপানি লেখকদের গল্প উপন্যাস ইংরিজি অনুবাদে পড়ার ঝোঁক চোখে পড়ার মতো বেড়ে গিয়েছে। সেটা লক্ষ করেই মনে হলো যে ‘জো-নো-শোমেৎসু’ সংকলনটা অনুবাদে প্রকাশ করার একটা দায়িত্ব স্পষ্টতই তৈরি হয়েছে। সংকলনের গল্পগুলোর প্রাসঙ্গিকতা ও আবেদন এই দেড় দশকে এতটুকুও হ্রাস পায়নি, বরং কিছু ক্ষেত্রে সম্ভবত বেড়ে গিয়েছে।

কলকাতায় যেসব তরুণ তরুণীরা জাপানি ভাষা শেখেন, ভাষাগত দক্ষতার একটা পর্যায়ে পৌঁছে তাঁরা যদি জাপানি সাহিত্য অনুবাদে আগ্রহী হন, পাঠকেরা প্রভূতভাবে এই সমৃদ্ধ সাহিত্যের স্বাদ গ্রহণ করে আনন্দিত ও উপকৃত হবেন। সেই কারণে আমার মনে হয়েছিলো, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে জাপানি ভাষার শিক্ষক হিসেবে যাঁদের ছাত্রছাত্রী হিসেবে পেয়েছি, তাঁদের মধ্য থেকে কেউ কেউ দু’একটা করে গল্প অনুবাদ করার অভিজ্ঞতা অর্জন করলে, অনতিদূর ভবিষ্যতে নিজেরাই অনুবাদের কাজে হাত দেওয়ার ব্যাপারে ক্রমেই আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠতে পারবেন। আমার তিন ছাত্রী, শ্রীমতি শুভা বসু, শ্রীমতি রীমা রায় ও শ্রীমতি অনুরাধা চ্যাটার্জি এই সংকলনের মোট সতেরোটা গল্পের মধ্যে, একেকজন দু’টি করে, মোট ছ’টা গল্প অনুবাদ করেছেন। প্রস্তাব দেওয়ামাত্র, কর্মব্যস্ততার মধ্যেও নির্দ্বিধায় অনুবাদের দায়িত্ব নিতে রাজি হয়েছেন বলে তাঁরা আমার ধন্যবাদার্হ।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে যে হাই-ভোল্টেজ ল্যাবরেটরি আমার কর্মক্ষেত্র, তার থেকে দশ কি পনেরো গজ দূরত্বে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনার যে দপ্তর, সেখানকার পরিবেশ, যাঁরা নিবিষ্ট হয়ে কাজ করে যাচ্ছেন বলে সর্বদা দেখা যায়, তাঁদের নিষ্ঠা, যোগ্যতা, এতটাই আমার ভরসার জায়গা যে আলস্যের শিকার না হয়ে বেশ কিছুদিন টানা পরিশ্রমে আমারও উৎসাহ আদ্যন্ত বজায় ছিলো। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনার ডিরেক্টার অধ্যাপক অভিজিৎ গুপ্ত, আর যাঁরা পাণ্ডুলিপিকে মুদ্রণযোগ্য পর্যায়ে উপনীত করাতে আন্তরিক নিষ্ঠা নিয়ে কাজ করেছেন, সেই শুচিস্মিতা ঘোষ, কৌশিক আনন্দ কীর্তনীয়া, এঁদের কারুকেই ঠিক ধন্যবাদ দেব না, কারণ আমরা একসঙ্গে কাজ করে এই বইটাকে একটা রূপ দিয়েছি, পাঠকের ভালো লাগলে, আমরা এই ক’জন তৃপ্ত।

/জেডএস/
সম্পর্কিত
ভুটানি ভাষায় বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন
সাঙ্গ হলো প্রাণের মেলা
২৫০ শিশু লিখলো ‘আমাদের জাতির পিতা, আমাদের শ্রেষ্ঠ মিতা’
সর্বশেষ খবর
হেলমেটের মান নির্ধারণ হবে কবে?
হেলমেটের মান নির্ধারণ হবে কবে?
ঝালকাঠিতে নিহত ১৪ জনের পরিবার পাচ্ছে ৫ লাখ টাকা করে
ঝালকাঠিতে নিহত ১৪ জনের পরিবার পাচ্ছে ৫ লাখ টাকা করে
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ‘আসমানে যাইও নারে বন্ধু’ গানের স্রষ্টা
সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ‘আসমানে যাইও নারে বন্ধু’ গানের স্রষ্টা
সর্বাধিক পঠিত
‘ভুয়া ৮ হাজার জনকে মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে’
‘ভুয়া ৮ হাজার জনকে মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে’
এএসপি বললেন ‌‘মদ নয়, রাতের খাবার খেতে গিয়েছিলাম’
রেস্তোরাঁয় ‘মদ না পেয়ে’ হামলার অভিযোগএএসপি বললেন ‌‘মদ নয়, রাতের খাবার খেতে গিয়েছিলাম’
হজ নিয়ে শঙ্কা, ধর্ম মন্ত্রণালয়কে ‍দুষছে হাব
হজ নিয়ে শঙ্কা, ধর্ম মন্ত্রণালয়কে ‍দুষছে হাব
এবার নায়িকার দেশে ‘রাজকুমার’ 
এবার নায়িকার দেশে ‘রাজকুমার’ 
মেট্রোরেল চলাচলে আসতে পারে নতুন সূচি
মেট্রোরেল চলাচলে আসতে পারে নতুন সূচি