সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল
গাছ সিরিজ
কোথায় পাও এতো আশ্চার্য সবুজ!
ব্রা'র আড়ালে পাখিপ্রেম, মুগ্ধতা-
শীতল ছায়া, লুকিয়ে রাখো স্নিগ্ধতা।
এতো ফুল, গন্ধ। ঘুম আসে না-
তুমি কি ধারণ করবে মানব সন্তান?
গাজী লতিফ
বিভ্রম
জন্ম জন্মান্তরে যাই তোমাকে নিয়ে
রাজবংশী রাখাইন গারো বা হাজং
হুন জৈন মনিপুরী মারমা মাহাতো
শাখ শিখ সাঁওতাল আদিবাসী যতো
পাহাড়ে বা সমতলে অনন্ত অনেক
মুণ্ডা মালী ভূঁইমালী ভূমিজ খাসিয়া
তুমি নইলে আমি খুঁজি একের আরেক
আর, জন্ম বা যাপনের একটাই রঙ!
যেন 'ক্ষ্যাপা খুঁজে ফেরে পরশ পাথর'
কণ্ঠে গান, চোখে জল; অশ্রুমালাফুল!
হিন্দু বৈদ্য মুসলমান বৈষ্ণব বাউল
শূন্যযান শূন্যমান, শূন্যে আসে যায়
বিভ্রমের ছায়াশূন্যে দু'হাত বাড়ায়
জন্মে জন্মে যেন কার প্রতীক্ষাকাতর!
মোস্তফা তারিকুল আহসান
রাগ
খুব রাগ হলে আমি ছোটবেলায় বাড়ির পেছনের জঙ্গলের দিকে ছুটে যেতাম
সেখানে সারি সারি আম জাম মেহগনি আর শিরিষ ছিলো আর ডানপাশে ছিলো
এক ঝাড় বাঁশবাগান। উত্তর দিক থেকে হাওয়া আসতো অঘ্রানের সকালে অথবা বিকেলে
আমার রাগ পড়ে যেত বাবলার ডালে ঘুঘুর ডাক শুনে; সাতবায়লার ঝগড়া শুনে
আমার হাসি পেতো আর পেঁচার ডাক শুনে; আমার পুলক লাগতো মনে
মা পেছন পেছন আসতো জানতে পারলে অথবা অনেকক্ষণ খুঁজে না পেলে
এখন রাগ হলে নিজের মাথায় ঘুসি মারি; কাপ পিরিচ ঘড়ি মোবাইল সব মেঝেতে আছড়ে
ফেলতে থাকি; ভ্রু কুচকে যায়, গা কাঁপতে থাকে, চোখ লাল হয়ে যায়;
রাগ কমানোর কোনো চিকিৎসা পাই না।
আশেপাশে যেদিকে তাকাই শুধু সুউচ্চ বিল্ডিং; কোনো বাগান নেই যে আমি ঢুকে পড়বো।
মিন্টু হক
চাঁদের কেলিকদম
একে অপরের দূরত্ব সীমাহীন- চাঁদ আর মাটি
মাটির সাথে চাঁদের কোলাকুলি- অন্তরঙ্গ-হৃর্দ্য
নদীর মোহনা গাঢ় নীল বা আকাশি রঙের জলে
ঢেউয়ে কূল প্লাবিত- বুকে চুপিচুপি জলকেলি খেলা।
ভেজা মাটি সোঁদা গন্ধে আকুল চাঁদ জোছনা ঢালে
দ্যুতি ছড়ায় সোনালি আভা, বালুকণার মাঝে
চূর্ণ-বিচূর্ণ হীরক-অণু ছড়ানো-ছিটানো তটে
প্রেমাস্পদ শিশির- এ যেন কোমল আদুরে ত্বক।
নিয়ন্ত্রিত আয়োজন- চাঁদের কেলিকদম- প্রেম।
তুষার প্রসূন
রূপ ও রূপক
যখন দেখা হয়, স্বরচিত ঘাসের কার্পেটে উথলে পড়ে উচ্ছলতা, জড়ো হয় বাদামের
খোসা, মুখভর্তি অনুভূতির বর্ণিল নিদর্শন। মুখোমুখি মানে চোখের মার্বেলে পৃথিবীর
দুরন্ত খেয়াল। নতুন আগামী। এতটাই মাদকতা ওই সীমান্তের উঠোনে- অপ্রেমের
দিনেও পুর্ণিমার রূপে মেখে থাকে অপরূপ পবিত্রতা।
দূর থেকে ভালোলাগা হেঁটে আসে। মাটির পাটিতে শুয়ে মোহন বাঁশিতে তাকে আরও
কাছে ডাকি, গন্ধে টেনে নিই, স্পর্শে নাচিয়ে তুলি, খেলা করি, গান গাই, দিন ভেসে
যায়। মাতাল রাতে রূপ দেখে সম্পূর্ণ ভুলে যাই, স্বর্ণলতা সে-ও এক মায়াবী
জটিলতা। ক্ষুদ্র পৃথিবীতে তবু ঘর বেধে থাকি।
আঁধারের গভীরতা ঘুরতে থাকে। তোমাকে খুঁজতে থাকে ভোরের রুপালী কুয়াশা
আমারই রূপ ধরে। প্রতিদিন তবু তোমার রূপান্তরিত অবয়ব প্রকাশ করে তোমাকে।
আজীবন আমি সেই রূপ অনুবাদ করি রূপকে রূপকে।
জিনাত জাহান খান
ভীতিজনক চেহারার আয়তন
আমার শৈশবে তুমি এসেছিলে, উড়ন্ত কাছিম। স্কুল ব্যাগে রেখে, হারমোনিয়াম জুড়ে
বাজিয়েছি ঢেউ ঢেউ সুর সেই সমস্ত বিকাল। তোমায় আড়াল করি। ব্যাগের অন্ধকার
ঘষে ঘষে মুছে দিই দৈনন্দিন ইরেজারে। তবুও এখন, নির্জনতার দাগ ধরে ধরে-
ভয়ে ভয়ে পা ফেলে সাবধানে উঠে আসো আমার আশ্চর্য রান্নাঘরে
রূপম রোহান
প্রেমের অসুখ
দূরে গেলে বোঝা যায়
কতটা আপন ছিল আঙিনার ধুলো,
কেমন সকরুণ চোখে চেয়ে থাকে
আঙিনার ঝরা ফুলগুলো!
যতই দূরে যাও তুমি
ততই কাছে পাই- এ বুকের গহীনে
অমলিন স্পর্শগুলো অবিকল
টের পাই নিঃসঙ্গতম দিনে।
প্রেমের দূরত্ব সে-তো
আরও বেশি কাছে পাওয়া সুখ-
তোমাকে হারিয়ে খোঁজা;
সে আমার প্রিয়তম প্রেমের অসুখ!
সজল আহমেদ
বেলুনভর্তি শব্দদূষণ
নাগরিক শব্দের কাছে
মাটির আগুনের আছে ঋণ;
গতকাল হাতের মুঠোয় জন্ম নেওয়া
এক একটি হাততালির শব্দদূষণ
মনে করিয়ে দেয়-
বাড়ির ছাদের উপরে একটা
খোলা আকাশ আছে।
কেউ কেউ নিজস্ব বেলুনে জমিয়ে রাখে
না বলা পুরনো কথার শব্দদূষণ
স্নানঘরে বরফভর্তি জলের অভিমান
তোমাকে-আমাকে শিখিয়ে যায়
ভুল বানানের অস্পষ্ট দূরত্ব।
তুমি যে অপেক্ষা করো নারী
দরজার ঐ পাশে-
সে অপেক্ষা কি প্লাস্টিক কাঠের?
বৃক্ষ ছাড়া এইসব নাগরিক টিস্যু কান্না
মনে করিয়ে দেয় দেয়ালের ভিতর
একটি ইটের পাশে আর একটি ইটের
বালিভর্তি শক্ত দূরত্ব।
শাড়ির নিচে পুরুষ তুমি যে নারীকে দেখতে চাও
তার অর্ধেক তোমার বোন
অর্ধেকটা তোমার মায়ের
মাংসভর্তি শরীর।
আর শাড়ির উপরে যে নারী থাকে
সেই তোমার বিছানার পাশে শুয়ে থাকা স্নিগ্ধ স্ত্রী।
অরবিন্দ চক্রবর্তী
সাবান বিয়োগের কসরত
টিনেজ স্কুলের মাঠে চাঁদ দেখাদেখির পিরিয়ডে আপনি ফিজিক্সের অধ্যাপক
প্রাণিজগৎ বিষয়েও আপনার ব্যাপক আগ্রহ,
ব্রহ্মাণ্ডের কেউ ছিলেন না বলে দীর্ঘশ্বাসরোগীর পাশে তালগোল মানত করেন
সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, মন খারাপের দিনগুলো একমাত্র বউকে আর বুঝতে দেবেন না
যাবেন কচিকাচার আসরে। দেখলেন সেখানে একগুচ্ছ বউসমাজ
ছেলেমেয়েদের মতো খেলছে, আপনি দুধভাত হয়ে যেতে চাইলেন।
একমাঠ হাসাহাসি হলো। আঁচ করলেন, পুকুরে তারা সাবান হারাতে পারদর্শী।
জ্যোতিষশাস্ত্রে আপনার বেসরকারি দখল থাকায়
বুঝে নিলেন, পুকুরে মাছ নেই, সুযোগ রয়েছে চাষের, এক পশলা বরগা পেলে হয়।
একাকার স্বভাবে একদিন বন্যা এল, ঘরে ঘরে বর্ষা। সে বছরেই আপনি শরীরশাস্ত্র সহায় করে
‘ছোট্ট কোথায় টেনিস বল...ছোট্ট কোথায় টেনিস বল...’ বন্দীশ করতে করতে সাবান খুঁজতে নেমে গেলেন।
খালেদ চৌধুরী
ঘন লিকার
পেছন বাড়িতে চিলের ঠোঁট
গাবপাতা ভয়
বাঁশঝাড়ের চিরলে- খোরলের গাম্ভীর্য
স ব কি ছু ফে লে
নারীর অঙ্গসৌষ্ঠব মিশে রাজধানীতে
বনতুলসির সুরভিত রস
ঘন লিকারে নতুন আস্বাদ।
শহর প্রকৃত অর্থে একটা বাজার
যেখানে সুদসমেত টিকে থাকতে হয়।
অপু মেহেদী
বনবিহারীর জার্নাল
সূর্যাস্তই পাখিদের বাড়িফেরার একমাত্র সংকেত। পাখিরা বাড়িফেরে পালকভরা গোধুলির
স্পর্শে। নিঃশব্দে পিছু নিয়েছি পাখির, গন্তব্যহীন। ঘাসের সবুজ বুক কেটে যেতে যেতে
জলজ ভাবনায় লীন। এইসব উদ্দেশ্যহীনতাও এক ধরণের উদযাপন। কেননা সকল
উন্মূখতাই সমান সম্ভাবনাময়। এই ভাবালুতা নিয়ে শিবসার জলে পা রাখি। সে তার
বিস্তীর্ণ বুকের নাচ থামিয়ে বলে- ডানে বঙ্গোপসাগর, ওখানে এখন বর্ষা, নবোঢ়া
মাছের গর্ভকাল। আর বামে, তোমরা যাকে বলো রামপাল, সেখানে এখন আগুনকাল।
পুড়তে চাইলে যাও!
আরও পড়ুন-