X
রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫
১৫ আষাঢ় ১৪৩২

তুমি ছাড়া কে আমাকে সাধুসঙ্গে ডাকে

ওয়াহিদুর রহমান শিপু
১৪ ডিসেম্বর ২০২২, ১৬:৩০আপডেট : ১৫ ডিসেম্বর ২০২২, ০০:২৫

আমি তোমাকে খুঁজে পাই

আমি তোমাকে খুঁজে পাই আমার প্রতিচিন্তার আশ্রয়ে,
পাখিপ্রাণের কলরবে আমি তোমাতেই বিলীন হয়ে যাই।
যেমন নদী ভাঙনের করাল তাণ্ডবে
হারিয়ে যায় কত জনপদ।
গৌড়বঙ্গের শতবর্ষী বৃক্ষ-ডালে মধুরাত্তিরে গহীন সঙ্গমে মত্ত রাতচরা পাখিরা ঠিক তখনও!
জলপ্রণয়ী পাখিদের সাঁতারেও তোমাকে খুঁজে পাই।
আমার ভিতরের মৌতাত তোমাকেই খোঁজে বারংবার।
এই সেই অন্তরেখা ধূসর প্রস্তরলিপি,
হায়ারোগ্লিফিক্সে তোমার নাম খুঁজে পাই।
প্রাগৈতিহাসিক যুগের প্রাইমেট মানবীর নাভীমূলে তোমার নাভীমূলের প্রতিচ্ছবি।
কৃষকের লাঙল ঘেষা রুখু রেখাহীন হাতে তোমাকেই খুঁজে পাই।
দোজলা ফোরাতের মোহনায় কুড়িয়ে পাই অ্যান্টিক দুটি ঝুমকো।
আমি অন্তর চক্ষু দিয়ে দেখলাম সেখানেও তুমি ঝুমকো দুলিয়ে দুলিয়ে গপ্প করছো।
আমার স্কচের গ্লাসে পলেস্তরা খসে পড়ে, সেখানেও তোমাকে দেখতে পাই।
মধ্যরাত্রে মিটিমিটি আলো জ্বেলে যায় জোনাক পোকা,
তোমার ব্লাউজের জরির মতো।
অবিরাম তোমাকে খুঁজে পাই।
আমি যেখানেই যাই তুমি থেকে হয়ে ওঠো তুমিময়। অবশ্য আমি তোমাকে খুঁজি ঢের।

অনঙ্গ বৌ

ব্রেকে পা দাও দীনবন্ধু! থামাও তোমার গাড়ি।
দ্যাখো, ঐ যে বেশ্যালয়! ওইখানে থাকে আমার অনঙ্গ বৌ!
শোনো! পূণ্যসলিলা পদ্মার ঘুম ছেঁড়া গর্জন!
তোমার সতীশ ধোপার মেয়ে মায়াকে মনে আছে?
দ্যাখো মুসমুস করে বাতাস বইছে, দ্যাখো বাঙ্ময় পদ্মার ওপর ধুমালী আকাশে তামাটে প্রশ্নেবোধক চিহ্ন!
আরে ঐ যে! আমার প্রেমিকা মায়া! ওর বুকে আছে ইলিশের গন্ধ!
আছে কচ্ছপের পেটের মতো ছলছলে পিঠ; তার ওপর নাচে মৌমাছির চাকের মতো খোঁপা।
শ্রাবণদহা চোখগুলো দেখেছো মায়ার দীনবন্ধু?
দেখছো ওর পায়ের গোড়ালি আর কোমরের বিছা!
হাঁপাতে হাঁপাতে দীনবন্ধুর গাড়ি থামে,
নাও একটা সিগারেট জ্বালাও!
ঝুপড়ির হড়কানো চৌকাঠের কাছে দাঁড়িয়ে মায়া,
করছে দরকষাকষি, করছে শরীরের দরদাম,
দীনবন্ধু বললো, এখানে রোদাটাই কেমন দুর্গন্ধযুক্ত! এখানে নিশ্বাসে কষ্ট হয়!
আমি ডাকিতেছি সারা পৃথিবীর গোলাপি প্রসাধন মাখা মায়াকে।
মায়া খিলখিলিয়ে হাসে, দাদা! ও দাদা!
মায়ার হাতে কন্ডমের প্যাকেট!
-এইটা ক্যাম্বা কইরি লাগাইতে হয় জানো দাদা?
আমি সুচতুরভাবে এড়িয়ে হেঁটোমুখে হাঁটতে হাঁটতে উঠে যাই রেললাইনের ওপর।.
একটা কায়া ট্রেন হড়হড়িয়ে চলে যায় আমার শরীরের ওপর দিয়ে ভেঙেচুরে…
আমার অনঙ্গ বৌ! আমার মায়া! দাঁড়িয়ে থাকে বজ্রাহত বৃক্ষ হয়ে... লাইনের অপরপ্রান্তে!
দীনবন্ধু গাড়ির সেল্ফ স্টার্টারে মোচড় দিয়ে বলে ওঠে,
চলো বন্ধু, এই তো জীবন! পাঁচতারা হোটেলের প্রেসিডেন্ট স্যুট কিংবা দৌলতদিয়া বেশ্যালয়!
হয়... হয়... বন্ধু!? দাও তবে এবার একটা সিগারেট জ্বালাই...
ধোঁয়ার কুণ্ডলী ছেড়ে তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস! অনঙ্গমোহিনী মায়া রে আমার... আমার অনঙ্গ বৌ।

প্রথম দেখা

বিস্ময় বিহ্বল বিচলন চিত্তে প্রথম যেদিন দেখলাম তোমায়,
সেইদিন তুমি আমায় দেখেছিলে কি?
দেখলে বুঝতে।
ভীতু-থীতু হরিণের মতো ক্যামন হয়েছিলাম।
মনস্য শরীরে প্রেম জাগলে কি এমনই হয়,
নিশিদিন শুধু সেই চকিতচাহনি,
কেনোই বা ঘুর্ণনযোগ্য লাটিমের মতো ঘোরে আমার নয়নতারায়,
অতঃপর অজস্র ভর্ৎসনা আর অবহেলা নীরবে সর্বংসহা সয়ে যাওয়া,
শুধু প্রথম দেখাকে ভুলতে পারিনি বলেই।
কালো আঙ্গুরের মতো কোঁকড়া চুলের স্তবকগুলো নাড়িয়ে নাড়িয়ে আমায় কতই না অপমান করো তুমি।
কিন্তু আমি কবিতা লিখি এটাই আমার অপরাধ।
আমি বৈষয়িক নই এই তো?
কবিতার মতো নিষিদ্ধপল্লী আমার শেষ আশ্রয়স্থল, এই বললুম তোমায়,
কিন্তু আমি কবিতা লিখি বলেই তো অমন গাঢ় চোখে তাকাতে।
কেন আমাকে আমার হাত ছুঁয়ে বলেছিলে, ‘তোমাকে ভালোবাসি তোমার কবিতাকে ভালোবাসি?’
আর আজ উচ্চস্বরে চেঁচিয়ে বলো, ‘কবিতা আমার সতীন।’
প্রিয়তমেষু, আমি তো বলেছি নদী, নারী, পাখি ও কবিতা ভালোবাসি।
অথচ দ্যাখো সেই কবিতাগন্ধী মেয়েটি গৃহিণী হয়েছো বটে,
প্রথম দেখার কথাও আর মনে নেই।
ভাগ্যের কী নির্মম ঠাট্টা তোমাকে প্রথম দেখাই কবিতার বিষয়বস্তু।

তোমার দৃষ্টি যে আমায় কোথায় নিয়ে যায়

তোমার দৃষ্টি আমায় হাওয়ায় উড়িয়ে নিয়ে যায়,
সপ্ত আসমানে...কিছুতেই বুকের কোটরে থাকে না আত্মা।
এক কথায় আমি মরেই যাই,.
তোমার দৃষ্টি যে আমায় কোথায় নিয়ে যায়।
ঠিক যেমন দড়ি ছেঁড়া গৃহবন্দি ষাঁড় তেড়ে আসে...
টর্নেডো, ভূ-ধ্বসে হারিয়ে যায় জনাকীর্ণ জনপদ যেমন।

আমি যে কোথায় যাই।
তোমার আগুন-চাবুকে চোখের অক্ষিগোলকের অক্ষিবিভ্রমে!
তোমার দৃষ্টি যে আমায় কোথায় নিয়ে যায়।
তোমার দৃষ্টি আমাকে শূন্যে...মহাশূন্য হতে ফের সবাক হয়ে ওঠে জেগে
দেহহীন বোধিপ্রায় দেহের মোড়কে তোমার সব সোনাবরণ।
তোমার দৃষ্টি যে আমায় কোথায় নিয়ে যায়।
আমায় নিয়ে যায়, পাখি আর পাখিরা দ্যাখাদেখি করে।
তোমার দৃষ্টি যে আমায় কোথায় নিয়ে যায়
নিআব্রু, নিপাট, শাদা সমাজসর্বস্ব যেখানে কেবলই শরীর আর মন্থন।
তোমার দৃষ্টি যে আমায় কোথায় নিয়ে যায়।
চুষেনি মৃণালের রস অলীক, আরেক সোনালু শৈশব,
তোমার দৃষ্টি যে আমায় কোথায় নিয়ে যায়।
তোমার দৃষ্টি আমাকে নিয়ে যায় যেখানে ক্ষীণতর নদী দাঁড়ায় হাটু জলে,
কাশের বনে রক্তজমাট কালো চিহ্ন কিছু মুখরিত হয়ে আছে,
তোমার দৃষ্টি আমাকে নিয়ে যায় কত না সাধুদের ধুমায়িত আখড়ায়।
তুমি ছাড়া কে আমাকে সাধুসঙ্গে ডাকে,
তোমার দৃষ্টি যে আমায় কোথায় নিয়ে যায়।
ছোরায় শান দেয়ার ছেঁচা শব্দে সচকিত মৃগয়া যেখানে ছুটে।
তোমার দৃষ্টি আমাকে নিয়ে যায় সেই শ্মশানে, যেখানে নির্বিশঙ্ক চণ্ডাল তার
মাথা গোঁজার ঠাঁই ভেবে গড়িয়ে দেয় উর্বর সে বীজতলার স্বপ্নকে অবলীলায়।

তোমার নিদ্রাতুর চোখে যেদিন প্রথম নোঙর পুঁতেছিলুম

প্রথম নোঙর পুঁতেছিলাম তোমার চোখের তীরে,
তীর হারা মাঝি আমি হাজার বছর চাই না প্রেমহীন হয়ে বাঁচতে।
মধ্য সমুদ্রে খেলছিলুম আমি উন্মাতাল তরঙ্গের সাথে
নোঙর পোঁতা মাত্রই শূন্যতায় ঢেকে গেলো সমস্ত সূর্যালোক
যেন তুমি যাবে আদি মানবের ডাকে যাচ্ছো কোনো নিঝুম দ্বীপপুঞ্জে।
যেখানে রবে দুটো আদিম মানব-মানবী।
যেখানে সুনসান নীরবতা, যেখানে স্বর্গবিতাড়িত তুমি আর এডাম মুখোমুখি তাৎক্ষণিকা।
আরও নিকষ পিনপতন নীরবতা।
ওগো দৃষ্টিমোহিণী আমি নোঙর পুঁতেছিলাম তোমার আবর্তিত পদ্মিনী নাভিমূলে।
ভাবছো আমি নৈর্ব্যক্তিক যৌনাতাকে প্রাধান্য দিয়েছিলুম?
ও কিছু না! মনের গহিনে দুই-একটি ধ্যানমগ্ন পানকৌড়ি আর ফেননিভ লবণের শাঁস।
পাকা মাঝিরা কিন্তু অন্য ঘাটেও নোঙর পোঁতে...
অথচ আমি সেই যে নোঙর পুঁতেছিলাম
আর ওঠাতে পারলুম না এই জনমে!

/জেড-এস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
জীবিত মাকে মৃত দেখিয়ে ছেলের ওয়ারিশ সনদ সংগ্রহ, মায়ের সংবাদ সম্মেলন
জীবিত মাকে মৃত দেখিয়ে ছেলের ওয়ারিশ সনদ সংগ্রহ, মায়ের সংবাদ সম্মেলন
নেতানিয়াহুর দুর্নীতি মামলায় ইসরায়েলি প্রসিকিউটরদের তীব্র সমালোচনা ট্রাম্পের
নেতানিয়াহুর দুর্নীতি মামলায় ইসরায়েলি প্রসিকিউটরদের তীব্র সমালোচনা ট্রাম্পের
চরম অচলাবস্থায় বাণিজ্য, প্রতিদিন ২৫০০ কোটি টাকার ক্ষতির শঙ্কা
আজও এনবিআরে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’চরম অচলাবস্থায় বাণিজ্য, প্রতিদিন ২৫০০ কোটি টাকার ক্ষতির শঙ্কা
বজ্রঝড়ের পর ৯ মিনিটের গোল উৎসবে কোয়ার্টার ফাইনালে চেলসি
বজ্রঝড়ের পর ৯ মিনিটের গোল উৎসবে কোয়ার্টার ফাইনালে চেলসি
সর্বাধিক পঠিত
খুলনা প্রেসক্লাবে প্রেস সচিবকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ
খুলনা প্রেসক্লাবে প্রেস সচিবকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ
বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকেছিলেন অফিস সহকারী হয়ে, বেরোলেন এমবিএ’র সনদ নিয়ে
বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকেছিলেন অফিস সহকারী হয়ে, বেরোলেন এমবিএ’র সনদ নিয়ে
সরকারি গাড়িতে দাওয়াতে গেলো ইউএনও’র পরিবার
সরকারি গাড়িতে দাওয়াতে গেলো ইউএনও’র পরিবার
মুরাদনগরে গলায় ছুরি ধরে নারীকে ধর্ষণ, থানায় মামলা
মুরাদনগরে গলায় ছুরি ধরে নারীকে ধর্ষণ, থানায় মামলা
‘সরকার দেশবিরোধী কর্মকাণ্ড বন্ধ না করলে আন্দোলন ঘোষণা করবো’
‘সরকার দেশবিরোধী কর্মকাণ্ড বন্ধ না করলে আন্দোলন ঘোষণা করবো’