X
মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪
১৭ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষক হিসেবে নিজ প্রতিষ্ঠানে কেন নিয়োগ পাচ্ছে না জবির শিক্ষার্থীরা?

সুবর্ণ আসসাইফ, জবি প্রতিনিধি
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৯:১৩আপডেট : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ২০:০৮
image

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) প্রতিষ্ঠার ১৪ বছর পার হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের  শিক্ষার্থীরা শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাচ্ছে না। দীর্ঘ এ সময়ে জবিতে ভর্তি হয়েছে ১৪টি ব্যাচ। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেছে ৮-৯ টি ব্যাচ। পড়াশোনা শেষ করে বিভিন্ন পেশায় জড়িয়ে পড়েছেন অনেকে। কিন্তু নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন মাত্র ৩২ জন শিক্ষার্থী। যা মোট শিক্ষকের প্রায় ৫ শতাংশেরও কম।

অভিযোগ উঠেছে জবি থেকে প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরাও নিজ বিভাগের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাচ্ছে না। অপর দিকে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাক বেঞ্চাররাও শিক্ষক নিয়োগ পাচ্ছেন। স্বর্ণপদক জয়ীদের বেশ কয়েকজন অভিযোগ করে বলেন, বিশেষ একটি অঞ্চল বা বিশেষ একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী না হওয়ায় আমরা নিয়োগে বঞ্চিত হয়েছি। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত এক শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমার যাবতীয় যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। ইচ্ছা ছিল জবিতে থেকে যাব কিন্তু এখন আর এখানে থাকার কোনও সম্ভাবনা নেই। একজন ছাত্র যদি সেই অনুষদের সর্বোচ্চ রেজাল্ট করেও সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে না পারে তবে এর চেয়ে কষ্ট আর কি হতে পারে।’

জানা যায়, ২০১৪, ২০১৫,২০১৬ ও ২০১৭ সালের জবির ২৮ জন শিক্ষার্থী ‘প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক’ পেলেও শুধুমাত্র মার্কেটিং বিভাগের মেহজাবীন আহমেদ ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের মার্জিয়া রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। বাকিদের কেউই শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাননি।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়েল বর্তমান শিক্ষক সংখ্যা ৬৫৪ জন। এদের মধ্যে জবি শিক্ষার্থী আছেন মাত্র ৩২ জন। এছাড়াও বর্তমান উপাচার্যের সময়ে চার শতাধিক শিক্ষক নিয়োগ হলে জবি শিক্ষার্থী নিয়োগ পেয়েছেন মাত্র ২৮ জন। যা মোট নিয়োগের ৬ শতাংশ মাত্র। যাদের মধ্যে উদ্ভিদ বিজ্ঞানে ১ জন, মনোবিজ্ঞানে ১ জন, অর্থনীতিতে ২ জন, গণিতে ৫ জন, কম্পিউটার সাইন্সে ২ জন, পদার্থ বিজ্ঞানে ২ জন, আইন বিভাগে ১ জন, ইসলামিক স্টাডিজে ১ জন, সমাজবিজ্ঞানে ৩ জন, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতায় ১ জন, দর্শণে ১ জন, মার্কেটিংয়ে ২ জন, ফিন্যান্সে ২ জন, ম্যানেজমেন্টে ৩ জন, অ্যাকাউন্টিং এ ১ জন, এবং নৃবিজ্ঞানে ১ জন শিক্ষার্থী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন।

এছাড়া বেশ কিছু পুরোনো বিভাগে অদৃশ্য কারণেই কোনও শিক্ষার্থীকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এর মধ্যে রয়েছে প্রাণীবিজ্ঞান, ভূগোল ও পরিবেশ, অর্থনীতি, পরিসংখ্যান, সমাজকর্ম, লোক প্রশাসন, ইসলামের ইতিহাস, বাংলা, ইতিহাস বিভাগ। যদিও এসব বিভাগ থেকে বেশ কিছু শিক্ষার্থী বাইরের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। 
এবিষয়ে বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. আরজুমন্দ আরা বানুর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা শিক্ষক নিয়োগে যে রিকোয়ারমেন্ট চাই, সেই রিকোয়ারমেন্ট আমাদের ছাত্ররা পূরণ করতে পারে না।’

তাহলে কি নিজেদের শিক্ষাদানের প্রতি বিশ্বাস নেই? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘শুধু শিক্ষক ভালো হলে বা পড়ালে হবে না, শিক্ষার্থীকেও সেই মানের  হতে হবে। বাংলা অনেক বর্ণনামূলক সাবজেক্টে শিক্ষার্থীরা নাম্বার পায় না। এছাড়া আরও বিষয় থাকে। অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে সেগুলো আছে বলে নিয়োগ পাচ্ছে।’

জবির সাবেক শিক্ষার্থী ও বর্তমানে গণিত বিভাগের প্রভাষক জাকির হোসেন বলেন, ‘আমাদের গণিত বিভাগে ৫ জন শিক্ষার্থীকে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আমি চাইবো এখন থেকে প্রত্যেক বিভাগই নিয়োগের ক্ষেত্রে গণিত বিভাগকে অনুসরণ করুক।’

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ও অধ্যাপক ড. মো. মনিরুজ্জামান  বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের যে বয়স তাতে এখন থেকে সব শিক্ষক নিয়োগ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই পাওয়া উচিত। সেক্ষেত্রে শতভাগ নিয়োগ যেন শিক্ষার্থীরা পায়, এদিকেটি বিবেচনা করতে হবে।’ 

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে জবির অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নারায়গঞ্জ-২ এর এমপি নজরুল ইসলাম বাবু বলেন, ‘প্রতিটি শিক্ষার্থীর স্বপ্ন থাকে নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়া। সেখানে জবিতে কেন ব্যতিক্রম হবে। আমাদের পক্ষ থেকে জোর দাবি যেন শতভাগ নিয়োগ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষর্থীরা পায়।’ 

জানতে চাইলে জবি রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী ওহিদুজ্জামান বলেন, ‘তাদের কেন নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না এটা নিজ নিজ বিভাগই ভালো বলতে পারবে। তবে আমি মনে করি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে সাবেক শিক্ষার্থীদের নিয়োগ দেওয়া উচিৎ।’

জবির শিক্ষার্থীদের আরও কেন সব বিভাগে নিয়োগ দেওয়া  যাচ্ছে না জানতে চাইলে জবি ভিসি ড. মীজানুর রহমান বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় নতুন। আমরা এখানকার শিক্ষার্থীদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া শুরু করেছি। ভবিষ্যতে আরও বাড়বে। এটা নির্ভর করে শিক্ষকদের মানের উপর। এখন ধীরে ধীরে আমাদের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মান বাড়ছে। ভবিষ্যতে এটা আরও বাড়বে। তখন বেশি করে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে।’

/এনএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
টেকনাফে ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে হত্যা, গ্রেফতার ৬
টেকনাফে ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে হত্যা, গ্রেফতার ৬
সিলেটে ভবন থেকে পড়ে যুবকের মৃত্যু
সিলেটে ভবন থেকে পড়ে যুবকের মৃত্যু
এক ফ্রেমে এত ‘সুন্দরী’, স্মৃতিকাতর সকলেই!
এক ফ্রেমে এত ‘সুন্দরী’, স্মৃতিকাতর সকলেই!
ফোরাম থেকে ব্যারিস্টার খোকনের অব্যাহতির আদেশ প্রত্যাহার
ফোরাম থেকে ব্যারিস্টার খোকনের অব্যাহতির আদেশ প্রত্যাহার
সর্বাধিক পঠিত
এসি কেনার আগে মনে রাখতে হবে এই ৭ বিষয়
এসি কেনার আগে মনে রাখতে হবে এই ৭ বিষয়
জালিয়াতির মামলায় সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তার ২৬ বছরের কারাদণ্ড
জালিয়াতির মামলায় সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তার ২৬ বছরের কারাদণ্ড
মঙ্গলবার দুই বিভাগের সব, তিন বিভাগের আংশিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে
মঙ্গলবার দুই বিভাগের সব, তিন বিভাগের আংশিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
ফালুর বিরুদ্ধে দুদকের চার্জশিট অনুমোদন
ফালুর বিরুদ্ধে দুদকের চার্জশিট অনুমোদন