সম্প্রতি রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবিপ্রবি) উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) আইন অনুষদের অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল ফারুক। তবে চবির ডিন নির্বাচনেও হলুদ দলের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে অংশ নিচ্ছেন তিনি।
উচ্চশিক্ষার এই প্রতিষ্ঠান ‘কাশিমবাজার কুঠি’তে পরিণত হয়েছে—অভিযোগ তুলে নিজের প্রতিদ্বন্দ্বিতা প্রত্যাহার করেছেন অনুষদের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক অধ্যাপক জাকির হোসেন।
মঙ্গলবার (২৯ মার্চ) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ও ডিন নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার অধ্যাপক এস এম মনিরুল হাসানকে দেওয়া এক পত্রে এই তথ্য জানান তিনি। এতে সহকর্মীদের নিজেকে ভোট না দিতে আহ্বান জানান জাকির হোসেন। আজ ডিন নির্বাচন চলছে।
প্রত্যাহারপত্রের বিষয়টি স্বীকার করে ডিন নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার ও রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) এস এম মনিরুল হাসান বলেন, অধ্যাপক জাকির হোসেন ডিন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে প্রত্যাহার চেয়ে একটি আবেদন দিয়েছেন। আমি আবেদনটি গ্রহণ করেছি। কিন্তু এটা প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নয়, সেই সুযোগও নেই। কারণ গত ২০ মার্চ প্রত্যাহারের শেষ সময় ছিল। ফলে তার প্রার্থিতা বহাল থাকবে। যারা ইচ্ছুক, তারা উনাকে ভোট দিতে পারবেন।’
প্রতিদ্বন্দ্বিতা প্রত্যাহারপত্রে অধ্যাপক জাকির হোসেন বলেন, গত ২৩ মার্চ রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলরের অনুমোদনক্রমে অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল ফারুককে রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। তারপরও উপাচার্য হিসেবে যোগদান না করে আইন অনুষদের ডিন নির্বাচনে প্রার্থিতা বহাল রেখেছেন তিনি।
কাউকে উপাচার্য নিয়োগের আগে তার কাছ থেকে জীবনবৃত্তান্ত চাওয়া হয়। চাহিদা অনুযায়ী জীবনবৃত্তান্ত জমা দেওয়ার মানে, তিনি নিয়োগে প্রাথমিক সম্মতি দিয়েছেন। তাই নিয়োগের রাষ্ট্রীয় প্রজ্ঞাপন জারির পর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি তা গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ বরাবর লিখিতভাবে না জানানোর আগ পর্যন্ত তিনি এই নিযোগ গ্রহণ করেছেন বলে পরিগণিত হয়। ২৪ ও ২৮ মার্চ দুটি পত্রিকায় চট্টগ্রাম বিশ্বদ্যিালয়ের রেজিস্ট্রার হিসেবে এই বিষয়ে আপনার বক্তব্য প্রকাশিত হয়েছে। আপনি পত্রিকা দুটিকে জানিয়েছেন, অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল ফারুক আপনাকে জানিয়েছেন, তিনি রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে যোগদান করবেন না। এতে প্রতীয়মান হয়, উপাচার্য হিসেবে যোগদানের চেয়ে ডিন পদ অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল ফারুকের কাছে অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ।
জাকির হোসেন বলেন, ‘আমি ও অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল ফারুক বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত শিক্ষকদের ফোরাম হলুদ দলের সদস্য। হলুদ দল আমাকে ডিন নির্বাচনের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিলে অধ্যাপক ফারুক দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র (বিদ্রোহী) প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সিদ্ধান্ত নেন। এতেও প্রমাণিত হয়, ভিন্ন পদের প্রতি অধ্যাপক ফারুকের গভীর ভালোবাসা ও মমত্ববোধ রয়েছে। ডিন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আইন আনুষদের সহকর্মীদের মধ্যে ভয়ংকর বিভেদ, বিদ্বেষ ও শত্রুভার এমন এক অসহনীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, যেখানে সহকর্মীদের মধ্যে ওয়ার্কিং রিলেশনও হুমকির মুখে পড়েছে। অনুষদের সহকর্মীদের সম্পর্কের বুনন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কয়েকজন সহকর্মী তাদের বিব্রতকর অবস্থা ও মনোকষ্টের কথা আমাকে জানিয়েছেন। সহকর্মীদের মাঝে সালাম-শুভেচ্ছা ও কুশল বিনিময়েও বিভেদ-বিদ্বেষের প্রভাব দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে।
তিনি আরও বলন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদ বাংলাদেশের মধ্যে একটি অনন্য আইন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সহকর্মীদের মাঝে বিদ্বেষে বিষাক্ত পরিবেশের কারণে অনুষদের শিক্ষার পরিবেশ মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হওয়ার আশংকা সৃষ্টি হয়েছে। যে নির্বাচন সহকর্মীদের একে অপরের শত্রুতে পরিণত করে, আইন শিক্ষার অনন্য উচ্চতার প্রতিষ্ঠানকে ‘কাশিম বাজার কুঠি’তে রূপান্তর করে, কোনও বিবেকবান মানুষ সেই নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন না। তািই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা আমি সমীচীন মনে করি না। আইন অনুষদের বৃহত্তর স্বার্থে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে সকল বিভেদ-বিদ্বেষ-শত্রুতা ও বিব্রতকর অবস্থা অবসানের লক্ষ্যে এবং শিক্ষার সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশের স্বার্থে ডিন নির্বাচন থেকে আমি সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সহকর্মীদের আমাকে ভোট না দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।