X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

মেয়াদোত্তীর্ণ প্রতিনিধিদের নিয়েই বসছে জাবির সিনেট অধিবেশন

ওয়াজহাতুল ইসলাম, জাবি প্রতিনিধি
২৪ জুন ২০২২, ১১:৪৬আপডেট : ২৪ জুন ২০২২, ১১:৫২

তিন বছর পর শুক্রবার (২৪ জুন) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ৩৯তম সিনেট অধিবেশন। দীর্ঘ সময় পর ঘোষণা আসলেও এই অধিবেশন মেয়াদোত্তীর্ণ প্রতিনিধিদের নিয়ে বসবে। সুযোগ থাকার পরও সিনেটে নতুন প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারেনি প্রশাসন। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ অংশীজনরা।

বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট ১৯৭৩-এর ১৯(১) ধারা অনুযায়ী সিনেট সদস্যরা হলেন—বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য (এক বা একাধিক), কোষাধ্যক্ষ, সরকার মনোনীত পাঁচ জন সরকারি কর্মকর্তা, স্পিকার মনোনীত পাঁচ জন সংসদ সদস্য, আচার্য মনোনীত পাঁচ জন শিক্ষাবিদ, সিন্ডিকেট মনোনীত পাঁচ জন রিসার্চ বডির প্রতিনিধি, অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল মনোনীত পাঁচজন কলেজ অধ্যক্ষ, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড ঢাকার চেয়ারম্যান, রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েটদের মধ্য থেকে ২৫ জন নির্বাচিত প্রতিনিধি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্য থেকে নির্বাচিত ৩৩ জন শিক্ষক প্রতিনিধি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচিত পাঁচ জন ছাত্র প্রতিনিধি।

অ্যাক্ট অনুসারে সিনেট অধিবেশনের মোট সদস্য ৯২ জন (উপ-উপাচার্য একজন হলে)। তবে এবারের সিনেটে রয়েছেন ৮২ জন। বাকি আসনগুলো শূন্য রয়েছে।

অ্যাক্টের ১৯(২) ধারায় বলা হয়েছে, ছাত্র প্রতিনিধি ছাড়া অন্যান্য সিনেট সদস্যরা তিন বছরের জন্য দায়িত্বে থাকবেন। ছাত্র প্রতিনিধিরা থাকবেন এক বছরের জন্য। তবে তারা পরবর্তী প্রতিনিধি নির্বাচিত, মনোনীত অথবা নিযুক্ত হওয়া পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করতে পারবেন।///

এদিকে জাবির সিনেটে ১৯(১-আই) ধারার রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েটদের মেয়াদ ২০২১ সালের জানুয়ারি ও ১৯(১-জে) ধারার শিক্ষক প্রতিনিধিদের মেয়াদ ২০১৮ সালের অক্টোবরে শেষ হলেও, পরে সুযোগ থাকলেও নতুন প্রতিনিধি নির্বাচনে নেওয়া হয়নি কোনও উদ্যোগ। সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধি নির্বাচন ও ২০১৫ সালের ১১ অক্টোবর শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া বিগত তিন দশক ধরে নেই ছাত্র প্রতিনিধি। এতে শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছে তাদের নায্য অধিকার আদায়ে।

করোনা মহামারির পর গত বছরের নভেম্বরে সশরীরে ক্লাস-পরীক্ষা শুরু করে জাবি প্রশাসন। এই সময়ের মধ্যে শিক্ষক সমিতির নির্বাচন, কর্মকর্তা-কর্মচারী সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও হয়নি সিনেটে মেয়াদ উত্তীর্ণ পর্ষদগুলোর প্রতিনিধি নির্বাচন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক ধারা বজায় রাখতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠনগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ পর্ষদগুলোর নির্বাচনের দাবি জানালেও, প্রথমে করোনার অজুহাত ও পরে উপাচার্য পরিবর্তনের কারণ দেখিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তা এড়িয়ে যায়। এছাড়া সঠিক সময়ে নির্বাচন করতে না পারায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তা দায় চাপিয়েছেন সাবেক ও বর্তমান উপাচার্যের ওপর।

সিনেটের রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আলমগীর কবীর বলেন, ‘নির্বাচনগুলো নির্দিষ্ট সময় ও নিয়মের মধ্যেই হওয়া উচিত। রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট নির্বাচন প্রক্রিয়া কিছুটা কঠিন ও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার হলেও প্রশাসন চাইলে তা পারে। সবার আন্তরিকতা থাকলে নির্দিষ্ট সময়ে তা করা সম্ভব।’

সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট জাবি শাখার সভাপতি আবু সাঈদ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে কোনও ছাত্র প্রতিনিধি নেই। পাশাপাশি রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট ও শিক্ষক প্রতিনিধিদের মেয়াদ অনেক আগেই শেষ হয়েছে। মেয়াদ শেষ হওয়া সদস্যদের নিয়ে সিনেট অধিবেশন অনেকটা জোর করে কার্যক্রম চালানোর মতো। অধিবেশনে যারা উপস্থিত হবে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি দায়বদ্ধতা, আন্তরিকতা ও ভালোবাসা কতটুকু তা স্পষ্ট নয়।’

সিনেটের শিক্ষক প্রতিনিধি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক সোহেল রানা বলেন, ‘উপাচার্যকে বলা হয়েছিল সিনেটসহ সব পর্ষদের নির্বাচন সম্পন্ন করার জন্য। বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর পরই এই কার্যক্রম সম্পন্ন করা যেতো। মাঝখানে সমস্যা ছিল শুধু নতুন ভিসি কে হবেন তা নিয়ে। এরপর নতুন ভিসি প্রথম একমাস প্রজ্ঞাপনে দায়িত্ব সম্পর্কে কিছু উল্লেখ না থাকায় কাজ করতে পারেননি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে মেয়াদোত্তীর্ণ পর্ষদগুলোতে নিয়মিত নির্বাচন হওয়া দরকার।’

সময় পাওয়ার পরও সিনেটে নতুন প্রতিনিধি নির্বাচনে কেন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি—এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলমের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও পাওয়া যায়নি।

উল্লেখ্য, গত ১৭ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সরকারি সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার এক প্রজ্ঞাপনে জাবির উপাচার্য হিসেবে অধ্যাপক নূরুল আলমকে সাময়িকভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়। উপাচার্যের দায়িত্ব গ্রহণের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে মেয়াদোত্তীর্ণ সব পর্ষদে দ্রুত নির্বাচনের আশ্বাস দেন। দায়িত্ব গ্রহণের পর দুই মাসের বেশি সময় অতিবাহিত হলেও তার একটিও বাস্তবায়ন করতে পারেননি।

/এসএইচ/
সম্পর্কিত
জাবি ছাত্রলীগের সেই ৩ কর্মীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের সুপারিশ 
এবার শিক্ষকের বিরুদ্ধে ফেসবুকে জাবি শিক্ষার্থীর যৌন হয়রানির পোস্ট
তদন্ত কমিটির সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে অবন্তিকার মা‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আগে আন্তরিক হলে হয়তো মেয়েকে হারাতে হতো না’
সর্বশেষ খবর
ভারতের নিখিলের হ্যাটট্রিকে ঊষার বড় জয়
ভারতের নিখিলের হ্যাটট্রিকে ঊষার বড় জয়
বাংলাদেশে আইসিটির ভবিষ্যৎ কেন হুমকির মুখে?  
বাংলাদেশে আইসিটির ভবিষ্যৎ কেন হুমকির মুখে?  
মস্কোতে কনসার্টে হামলা: ৯ সন্দেহভাজনকে আটক করলো তাজিকিস্তান
মস্কোতে কনসার্টে হামলা: ৯ সন্দেহভাজনকে আটক করলো তাজিকিস্তান
চট্টগ্রামে জুতার কারখানায় আগুন
চট্টগ্রামে জুতার কারখানায় আগুন
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ