মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় কিশোরগঞ্জের অ্যাডভোকেট শামসুদ্দিন আহমেদসহ চারজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ফাঁসিতে ঝুলিয়ে বা গুলি করে তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আদেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। মামলার বাকি চার আসামি হলেন, শামসুদ্দিনের ভাই সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন মো. নাসিরউদ্দিন আহমেদ, রাজাকার কমান্ডার গাজী আবদুল মান্নান, আজহারুল ইসলাম ও হাফিজ উদ্দিন। শামসুদ্দিন ছাড়া বাকি চারজনই পলাতক রয়েছেন।
পাঁচজনের বিরুদ্ধে থাকা সাতটি অভিযোগই প্রমাণিত হয়েছে। এর মধ্যে ১, ২, ৩ ও ৫ নম্বর অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আর ৪ নম্বর অভিযোগে আজহারুল ইসলামকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার বিচারপতি মো. আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনালের এ রায় ঘোষণা করেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন, বিচারপতি মো.শাহীনুর ইসলাম ও বিচারপতি মো.সোহরাওয়ার্দী।
অভিযোগগুলো হলো: ১ নম্বর অভিযোগ, কিশোরগঞ্জে করিমগঞ্জ থানায় বিদ্যানগর ও আইলা গ্রামে ৮ জন হত্যা। পাঁচজনের বিরুদ্ধেই এ অভিযোগটি প্রমাণিত হয়েছে। ২ নম্বর অভিযোগ, আইলা গ্রামে মিয়া হোসেনকে হত্যা। এ অভিযোগে নাসিরুদ্দিন আহমেদ দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। ৩ নম্বর অভিযোগ, একই উপজেলার মো. গফুরকে অপহরণ ও হত্যার দায়ে কাজী মো. মান্নান ছাড়া বাকি চারজন দোষী প্রমাণিত। ৪ নম্বর অভিযোগ, করিমগঞ্জ ডাকবাংলোতে শান্তি কমিটির কার্যালয়ে মো. ফজলুর রহমানকে অপহরণ করে হত্যার অভিযোগে ৫ জনই দোষী সাব্যস্ত। ৫ নম্বর অভিযোগ, রামনগর গ্রামে পরশ চন্দ্র সরকারকে হত্যা। এ অভিযোগে শামসুদ্দিন দোষী সাব্যস্ত। ৬ নম্বর অভিযোগ, পূর্ব নবাইদ কালিপুর গ্রামে আবু বকর সিদ্দিক ও রুপালি মিয়াকে অপরহরণ, নির্যাতন ও হত্যা। এ অভিযোগে গাজী মো. মান্নান দোষী সাব্যস্ত। ৭ নম্বর অভিযোগ, আতকাপাড়া গ্রামে হামলা চালিয়ে ২০-২৫টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ। এ অভিযোগে গাজী মান্নান দোষী প্রমাণিত হয়েছেন।
আরও পড়ুন: নিজামীর রিভিউ আবেদনের শুনানি শেষ, আদেশ ৫ মে
গত ১১ এপ্রিল উভয় পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে ট্রাইব্যুনাল মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখেন। শামসুদ্দিন আহমেদের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মাসুদ রানা। বাকিদের পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আবদুস শুক্কুর খান শুনানি করেন।
২০১৫ সালের ১৩ মে ওই পাঁচ অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমন ও রেজিয়া সুলতানা চমন।
এর আগে, শামসুদ্দিন বাদে ৪ জনকে আত্মসমর্পণ করতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। ২০১৫ সালের ১৫ এপ্রিল কিশোরগঞ্জের মামলায় তদন্তের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালে দাখিল করা হয়।এর আগে গত ১৩ এপ্রিল এ প্রতিবেদন প্রসিকিউশনে জমা দেয় ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।
আরও পড়ুন: বিশেষ সুবিধার ঋণ এখন নজরদারিতে
উল্লেখ্য, মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার আসামি অ্যাডভোকেট শামসুদ্দিনকে ২০১৪ সালের ২৭ নভেম্বর রাত সাড়ে ৮ টার দিকে ময়মনসিংহের নান্দাইল থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আদালতে হাজির করার সময় তার পক্ষে কোন আইনজীবী ছিলেন না।
মুক্তিযুদ্ধের সময় কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার আয়লা গ্রামের মিয়া হোসেন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তার ছেলে গোলাপ মিয়া বাদী হয়ে ২০১০ সালের ২ মে মামলাটি দায়ের করেন।
এ মামলার তদন্ত শুরু হয় ২০১৩ সালের ৬ জুন ও শেষ হয় ২৪ নভেম্বর। মোট ১ বছর ৫ মাস ১৮ দিন তদন্ত শেষে ৪টি ভলিউমে ৪৫০ পৃষ্ঠার চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। তদন্ত চলাকালে এলাকার মোট ৬০ জনের জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়।
/ইউআই/এসটি
