X
শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫
২০ আষাঢ় ১৪৩২

কেন ‘স্যরি স্যার’?

উদিসা ইসলাম
১৮ মে ২০১৬, ১৮:০১আপডেট : ১৮ মে ২০১৬, ২২:১৪

কান ধরে প্রতিবাদ নারায়ণগঞ্জে স্কুলের প্রধান শিক্ষককে লাঞ্ছিত ও পরে সংসদ সদস্যের উপস্থিতিতে তাকে কান ধরে উঠবসের ঘটনায় দেশব্যাপী চলছে প্রতিবাদ। বরাবরের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাড়া ফেলেছে ‘স্যরি স্যার’, ‘আই অ্যাম স্যরি স্যার’, ‘উই আর স্যরি স্যার’ হ্যাশট্যাগ এবং সঙ্গে নিজেদের কানে ধরে তোলা ছবি। যারা ছবি দিয়েছেন তারা নিজের জায়গা থেকে প্রতিবাদ হিসেবে হাজির করেছেন এই প্রতীকী ছবি।

ইতোমধ্যে এই কর্মসূচি পড়েছে সমালোচনার মুখেও। কিন্তু কেন এই ‘স্যরি স্যার’। যারা কানে ধরে দাঁড়িয়েছেন তারা মনে করেন, সবার জীবনে শিক্ষক আছেন। চোখের সামনে শ্যামল কান্তির জায়গায় সেইসব শিক্ষকের অসহায় চেহারা চলে আসছে এবং সেই অসহায়ত্ব থেকেই তারা স্যারের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। স্যারের সঙ্গে যে অন্যায় করা হয়েছে সেখানে কিছু করতে না পারার ক্ষোভেরই বহিঃপ্রকাশ এই কানে ধরা ছবি। আরা সমালোচকরা বলছেন, নিজেরা স্যরি বলার আগে দোষীদের উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক। যা ঘটেছে তা আমাদের দেশীয় আইনে অপরাধ।

আরও পড়ুন: নারায়ণগঞ্জে শিক্ষক লাঞ্ছনায় কেন ব্যবস্থা নয়: হাইকোর্ট

গত ১৬ মে প্রথম কানে ধরে ছবি দেন আশা নাজনীন। এরপর একে একে শুরু হয় স্যারকে উদ্দেশ্য করে দুঃখ প্রকাশ করে বলা- ‘আই অ্যাম স্যরি স্যার’ হ্যাশট্যাগ। কেন ‘স্যরি স্যার’, আর কেনইবা কানে ধরে ছবি তুলে দেওয়া বলতে গিয়ে প্রথম যিনি ছবি পোস্ট করেছিলেন সেই প্রবাসী বাংলাদেশী আশা নাজনীন লিখেছেন, বহু ভেবে-চিন্তে দেখলাম আমার কিছু করার ক্ষমতা নাই, তাই অসহায়ত্বের জায়গা থেকে, প্রতিবাদ হিসেবে এবং ওই শিক্ষকের পাশে দাঁড়ানোর চিন্তা থেকে আমি নিজের ছবি দিয়েছি কান ধরে। এর পরপরই একে একে শুরু হয় কানে ধরে প্রতীকী প্রতিবাদের ছবি দেওয়া। সোমবার রাতে একে একে বদলে যেতে থাকে দেশে বিদেশে থাকা বাংলাদেশীদের প্রোফাইল পিকচারগুলো।

এরপর গতকাল মঙ্গলবার এতো অসম্মান কাঁধে নিয়ে শিক্ষক শ্যামল কান্তির বহিস্কারাদেশের সংবাদ আসার পর সেলিয়া সুলতানা সাংবাদিক পরিসরে কানে ধরে ছবি দেওয়ায় অগ্রসর ভূমিকা রেখেছেন। তিনি তার অবস্থান নিয়ে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা শিক্ষকদের ওপর নানারকম হামলা দেখেছি। শ্যামল কান্তি স্যারকে যে অভিযোগে অভিযুক্ত করা হলো, প্রচার করে নাজেহাল করা হলো এবং সেটার সঙ্গে একজন সংসদ সদস্য জড়িত সেটা লজ্জার। কেবল শিক্ষক নন, এটা যেকারোর জন্যই অবমাননাকর। তিনি বলেন, আমার মনে হয়েছে প্রতিউত্তর দেওয়ার অন্যতম রাস্তা ফেসবুক। তিনি এও বলেন, গত এক সপ্তাহজুড়ে স্যারের ছবি এতোবেশি ব্যবহার করা হয়েছে যে তিনি সামাজিকভাবে আগামীতে আরও হেনস্তা হবেন। সেই ছবির বিপরীতে আমরা আমাদের ছবি দিয়ে আমাদের কস্টের প্রতিবাদের জায়গাটা উপস্থাপন করতে চেয়েছি।

আরও পড়ুন: ‘আমার এখন দেহ আছে, প্রাণ নেই’

তিনি পেশাগত জায়গা থেকে বেরিয়ে এসে ছাত্র হিসেবে ক্ষোভ প্রকাশের কানে ধরা ছবি ফেসবুকে দিয়ে লিখেছেন, একটু আগে শ্যামল কান্তি স্যারকে বরখাস্ত করা হয়েছে, আপনাকে- আমাকে -শিক্ষামন্ত্রী- আইনমন্ত্রীকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে, এখনও যদি প্রতিবাদের ভাষার সমালোচনা না করে আপনি চুপ থাকেন, তাহলে নিজের মাথায় পানি ঢালেন। মাননীয় সরকার মহোদয়, সেলিম ওসমানকে বলেন শ্যামল কান্তি ভক্তের ক্লাসে একদিন আদব কায়দার ক্লাস করার জন্য, নয়তো আদব কায়দা কাকে বলে তা সরকার মহোদয়কে দেখাতে, কোটি কোটি ছাত্র ছাত্রী শিক্ষকরা পথে নামতে বেশি দেরি নাই। আর সরকারের যে নেতারা বলছেন ক্ষমা চাইতে কিন্তু ক্ষমা তখনই হয়, যখন কেউ তার ভুল বুঝতে পারেন, আর ওসমানরা ক্ষমা চায় বন্দুকের নলে, সেটা বাংলাদেশের সবাই জানেন।

সমালোচনা বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গীতিআরা নাসরিন মনে করেন, যে কোনওভাবে প্রতিবাদ হওয়া জরুরি। তিনি তার ফেসবুকে লিখেছেন, শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে মিথ্যে প্রচারণা চালিয়ে নির্যাতন ও কান ধরে উঠবস করানোর অপমানের প্রতিবাদে অনেকে ফেসবুকে নিজের কান-ধরা ছবি দিয়েছেন। এই ফটো-সর্বস্বতা নিয়ে আবার অন্য অনেকে তিক্তবিরক্ত। আমি না। নিশ্চুপ অসাড়ত্বের চেয়ে কোনও না কোনওভাবে তো সাড় প্রকাশ পাচ্ছে। কিছু হলেও অপমান-লাঞ্ছনাবোধ এখনও তাহলে আছে। শাহবাগে দাঁড়িয়ে মানববন্ধন, বক্তব্য-সর্বস্বতার বিপক্ষেও অনেক তিক্তবিরক্তি দেখেছি। প্রতিবাদের সেই দাঁড়ানোটাও কিন্তু এখন দুর্লভ। আপনি যেভাবে চান, সেভাবেই প্রতিবাদ করুন।

ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘ক্রিমিনাল ইন্টিমিডেশন’ এবং ‘ইনহিউমিন অর ডিগ্রেডিং পানিশমেন্ট’ আমাদের দেশীয় আইনে অপরাধ। সেই অপরাধের চাক্ষুষ প্রমাণ থাকতে কেন সুস্পষ্ট বিচার ও শাস্তির দাবি উঠছে না? সেটা অনেক বেশি জরুরি।

আরও পড়ুন: তদন্ত প্রতিবেদন পেলে সেলিম ওসমানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে জাতীয় পার্টি

এপিএইচ/আপ-এজে

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
দুই ভাইয়ের ‘দ্বন্দ্বে’ প্রতিশোধ নিতে মুরাদনগরের সেই ঘটনার ভিডিও ছড়ানো হয়: র‌্যাব
দুই ভাইয়ের ‘দ্বন্দ্বে’ প্রতিশোধ নিতে মুরাদনগরের সেই ঘটনার ভিডিও ছড়ানো হয়: র‌্যাব
গাজায় যুদ্ধবিরতির নতুন প্রস্তাবের নিশ্চয়তা চায় হামাস
গাজায় যুদ্ধবিরতির নতুন প্রস্তাবের নিশ্চয়তা চায় হামাস
জুলাই আন্দোলনে নিহত ৬ সাংবাদিক: কেমন আছে তাদের পরিবার
জুলাই আন্দোলনে নিহত ৬ সাংবাদিক: কেমন আছে তাদের পরিবার
কুমিল্লায় বিদেশি পিস্তলসহ বিএনপি নেতা গ্রেফতার
কুমিল্লায় বিদেশি পিস্তলসহ বিএনপি নেতা গ্রেফতার
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের দ্বিতীয় সংশোধন উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের দ্বিতীয় সংশোধন উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন
এনবিআর নিয়ে ‘কঠোর’ সরকার, আতঙ্কে শীর্ষ কর্মকর্তারা
এনবিআর নিয়ে ‘কঠোর’ সরকার, আতঙ্কে শীর্ষ কর্মকর্তারা
সচিবালয়ে দখলের দ্বন্দ্ব : আন্দোলনের নেতৃত্বে বিভক্তি
সচিবালয়ে দখলের দ্বন্দ্ব : আন্দোলনের নেতৃত্বে বিভক্তি
খেলাপিতে ধসে পড়ছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান: বিপদে আমানতকারীরা
খেলাপিতে ধসে পড়ছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান: বিপদে আমানতকারীরা
প্রশ্নপত্রে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ির গল্প, পরীক্ষা বাতিল
প্রশ্নপত্রে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ির গল্প, পরীক্ষা বাতিল