ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রীলঙ্কায় জরুরি ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দিতে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জাহাজ ‘বঙ্গবন্ধু’ মঙ্গলবার (৩১ মে) যাত্রা শুরু করেছে। ঘূর্ণিঝড়, ভূমিধসসহ আকস্মিক বন্যায় সৃষ্ট মানবিক বিপর্যয়ের কারণে বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে ১০০ টন জরুরি ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে শ্রীলঙ্কার উদ্দেশে রওনা দিয়েছে জাহাজটি।
বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী রাষ্ট্রের দুর্যোগের এই মুহূর্তে বাংলাদেশ সরকার শ্রীলঙ্কার পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে এই ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে বিএনএস বঙ্গবন্ধু কলম্বোর উদ্দেশে চট্টগ্রাম ছেড়ে যায়। মঙ্গলবার দুপুর ১টায় শ্রীলঙ্কার উদ্দেশে চট্টগ্রাম নৌ জেটি ত্যাগ করে।
এ সময় উপস্থিত ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল মোহাম্মদ কবির তালুকদার, এয়ার কমডোর এ এইচ এম ফজলুল হক ও সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের সামরিক ও বেসামরিক দফতরের মহাপরিচালক কমডোর নাজমুল হাসান এবং শ্রীলঙ্কান হাইকমিশনার ইয়াসুজা গুনাসেকারাসহ নৌবাহিনীর ঊর্দ্ধতন কর্মকতারা জাহাজটিকে বিদায় জানান।
নৌ জেটি ছেড়ে যাওয়ার আগে এরিয়া কমান্ডার চট্টগ্রাম নৌ অঞ্চল রিয়ার এডমিরাল আখতার হাবীব উপস্থিত সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, বানৌজা ‘বঙ্গবন্ধু’ দ্রুততম সময়ে প্রায় ১৪’শ নটিক্যাল মাইল সমুদ্রপথ অতিক্রম করে আগামী ৩ জুন শ্রীলঙ্কা পৌঁছাবে। শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোয় অবস্থান করে পরবর্তী তিন দিন ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করবে। ত্রাণ সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে- বিশুদ্ধ পানি, ওয়াটার পিউরিফায়ার, জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, বস্ত্র, তাঁবু, জেনারেটর ইত্যাদি।
এছাড়া যেকোনও পরিস্থিতির কারণে সময় বাড়ানোর প্রয়োজন হলে তা মোকাবেলার সক্ষমতা জাহাজটির রয়েছে।
ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ শেষে জাহাজটি আগামী ১০ জুন বাংলাদেশে ফিরে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রতিবেশী রাষ্ট্রের যেকোনও দুর্যোগের মুহূর্তে বাংলাদেশ অতীতে বরাবরই এগিয়ে এসেছে। এই কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা দুই দেশের মধ্যকার পারস্পারিক সৌহার্দ্য ও কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদার হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত ১৯ মে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু শ্রীলঙ্কার ওপর দিয়ে ভারতের পূর্ব উপকূল হয়ে বাংলাদেশ ও মায়ানমারে আঘাত হানে। এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় শ্রীলঙ্কা। এ সময় দেশটিতে গত ২৫ বছরের মধ্যে সর্বাধিক বৃষ্টিপাতের রেকর্ড করা হয়। এর ফলে শ্রীলঙ্কার ২৫টি জেলার মধ্যে ১৯টি জেলাই বন্যা কবলিত হয়ে পড়ে। অতিবৃষ্টিতে ভূমিধসসহ আকস্মিক বন্যায় শতাধিক লোকের প্রাণহানি ঘটে। এছাড়া হাজার হাজার মানুষ তাদের ঘর-বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হন।
শ্রীলঙ্কার সরকারি পরিসংখ্যান মতে এই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ষোল হাজার কোটি টাকারও বেশি। এই ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধসে দেশটিতে মানবিক বিপর্যয়ের প্রেক্ষিতে ২৫ মে শ্রীলঙ্কার সরকার আন্তর্জাতিক সহায়তার আহ্বান জানায়।
আরও পড়ুন-
একদিনে তিন ঘটনায় ১০ জনের মৃত্যুদণ্ড
মাহির বিয়ের সংখ্যা নয়, ছবি প্রকাশ গুরুত্ব পাচ্ছে পুলিশের তদন্তে
/এফএস/