X
বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪
১৯ বৈশাখ ১৪৩১

‘আল্লাহ যে কী ঘুম দিছে সেই রাতে!’

জাকিয়া আহমেদ
২৮ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৭:৩০আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৭:৪৫

ধর্ষণ জয়পুরহাটের নির্যাতিত মেয়েটিকে আজ  বুধবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে পোস্ট অপারেটিভ থেকে আইসিইউ (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র)তে স্থানান্তর করা হয়েছে। গত ৫ দিন ধরে তার জ্ঞান না ফিরলেও চিকিৎসকরা বলছেন, তাকে নিয়ে শঙ্কার কিছু নেই। ভালো পরিবেশ এবং বেটার কেয়ারের জন্য তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার (২৩ ডিসেম্বর) দিবাগত রাতে ঘরে ঢুকে ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে কালাই উপজেলার বানদিঘী গ্রামের দশম শ্রেণির ওই স্কুলছাত্রীকে কুপিয়ে জখম করে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। গুরুতর আহত অবস্থায় মেয়েটিকে শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) ভোরে বগুড়ার শহীদ জিয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে শনিবারই রাত দেড়টার দিকে ঢাকার আগারগাঁও নিউরো সায়েন্স হাসপাতাল ইনস্টিটিউট হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হয়। পরে মেয়েটিকে স্থানান্তর করা হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে। গত সোমবার (২৬ ডিসেম্বর)দুপুর ১টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত তার অপারেশন হয়। সেদিন সকালেই তাকে দেখতে  হাসপাতালে আসেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক। সেদিন তিনি গণমাধ্যমে মেয়েটির নাম এবং ছবি প্রকাশ না করার জন্য উপস্থিত সাংবাদিকদের অনুরোধও করেন।
গত সোমবার (২৬ ডিসেম্বর) ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে এ প্রতিবেদককে মেয়েটির মা বলেন, ‘সন্ধ্যার পর ঘুম ধরলো খুব, কিন্তু সেই ঘুম যে আমার এমন কাল হইবো, সেইটা জানলে আমি ঘুমাইতাম না।’ কথা বলতে বলতে খানিকটা সময়ের জন্য থেমে যান তিনি। তারপর ধীরে ধরে বলেন, ‘আমি সন্ধ্যারাতেই ঘুমায় গেলাম। পাশের ঘরে মেয়ে ঘুমায়, বাহিরে আলো জ্বলতেছিল।’
ভোর ৪টার দিকে ঘুম ভাঙলে অনেক চেষ্টা করেও ঘরের ছিটকিনি খুলতে পারছিলেন না বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ভেতর থেকে টানতিছি, কিন্তু খুলতেছে না,বাইরে থেকে লক করে দিছে। তখন চিৎকার দিলে বাড়ির অন্যরা এসে দরোজা খুলে। মেয়ের ঘরের দিকে তাকাইতেই দেখলাম, ঘরের দরোজা খোলা, মেয়ে আমার রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। একটা বালিশ, লেপ, বিছানার চাদর সব রক্তে ভরে গেছে। আমি দৌড়ায়ে গিয়ে মাথাটা কোলে তুলে নিলাম, কেবল একবার চোখ মেলে আমাকে আম্মু বলে ডাকলো, আর কোনও খোঁজ নেই। মেয়ে যে আমার জ্ঞান হারাইলো, সেই জ্ঞান এখনও ফিরলো না।

মেয়েটির মা বলেন, তখনই বাড়ির সবাই মিলে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় জিয়া মেডিক্যালে (বগুড়ার শহীদ জিয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল )। ওখানে তিন ব্যাগ রক্ত আর স্যালাইন দেওয়া হয়। ওইখানকার ডাক্তাররা আমার মেয়ের খুব যত্ন নিছে। তারা আমাদেরকে ঢাকায় আসতে বলে। এরপর ২৪ তারিখ রাতে ঢাকার নিউরো সায়েন্স হাসপাতালে ভর্তি হই, কিন্তু ছুটি থাকায় ডাক্তার পাচ্ছিলাম না, পরে চলে আসি এখানে (ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে)। আমি যদি একটু শব্দ পাইতাম তাইলে আজ  আমার মেয়ের এ অবস্থা হতো না। কোনও রকমে যদি একবার একটু চিৎকার দিতেও পারতো। আল্লাহ যে কী ঘুম দিছে সেই রাতে!

তিনি বলেন, মেয়ের যদি জ্ঞান ফেরে তাহলে আমি শেষ দেখে ছাড়বো, সুবিচার আমি নেবই প্রশাসনের কাছ থেকে। আমার মেয়ের এ অবস্থা যারা করছে তাদেরকে আমি আইনের আওতায় আনতে চাই, তাদের বিচার দেখতে চাই।

আজ  বুধবার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. অসিত চন্দ্র সরকার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, মেয়েটিকে নিয়ে সবাই অ্যালার্ট রয়েছি, হাসপাতালের পরিচালক সাহেব নিজে এ বিষয়ে খোঁজ রাখছেন। ঢামেকের নিউরো সার্জারি, গাইনোকলজি, জেনারেল সার্জারি এবং ওসিসি (ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টার)এর কনসালটেন্টদের নিয়ে ৫ সদস্যের একটি মেডিক্যাল বোর্ডও গঠন করা হয়েছে আজ  সকালে। নির্যাতিত মেয়েটি ডা. অসিত চন্দ্র সরকারের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তিনি আরও বলেন, ওর অবস্থা ডিটিরিওরেট করেছে বলে আইসিইউতে নেওয়া হয়নি। আমরা ওকে আরও  ভালো পরিবেশ এবং আরও  উন্নত চিকিৎসা দেওয়ার জন্যই আইসিইউর একটা বেডে নিয়ে এসেছি। সে আগের মতো স্থিতিশীল আছে, তবে এখনও আশঙ্কামুক্ত নয়। তার চিকিৎসায় গঠিত বোর্ড যেভাবে নির্দেশনা দেবে, সেভাবেই চিকিৎসা চলবে।

মেয়েটির জ্ঞান ফিরেছে কিনা জানতে চাইলে ডা. অসিত চন্দ্র সরকার বলেন, জ্ঞান এখনও সেভাবে আসেনি। কারও সঙ্গে কমিউনিকেটও করতে পারছে না, তবে সে নিজে নিজে কিছুটা শব্দ করছে।

নির্যাতিত মেয়েটির ফুপা আজ  বুধবার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ওর অবস্থার কোনও পরিবর্তন হয়নি। আজ  সকাল সাড়ে ১১টার দিকে তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়েছে। তবে চিকিৎসকরা আমাদের  বলেছেন, ঘাবড়ানোর কিছু নেই। বেটার কেয়ারের জন্য তাকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে।

/এএআর /আপ-এইচকে/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
চীনের দক্ষিণাঞ্চলে সড়ক ধসে নিহত ৩৬
চীনের দক্ষিণাঞ্চলে সড়ক ধসে নিহত ৩৬
লাউ খেলে মিলবে এই ৮ উপকারিতা
লাউ খেলে মিলবে এই ৮ উপকারিতা
রাশিয়ার বিরুদ্ধে রাসায়নিক অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘনের অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্রের
রাশিয়ার বিরুদ্ধে রাসায়নিক অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘনের অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্রের
কেনিয়ায় বন্যায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৮১
কেনিয়ায় বন্যায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৮১
সর্বাধিক পঠিত
শিশু ঝুমুরকে ধর্ষণ ও হত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে চোখ মুছলেন র‌্যাব কর্মকর্তা
শিশু ঝুমুরকে ধর্ষণ ও হত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে চোখ মুছলেন র‌্যাব কর্মকর্তা
মিল্টন সমাদ্দার আটক
মিল্টন সমাদ্দার আটক
আজও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে, পথচারীদের জন্য শরবত-পানির ব্যবস্থা
আজও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে, পথচারীদের জন্য শরবত-পানির ব্যবস্থা
একজন অপরাধীর গল্প বলতে চেয়েছিলেন তিশা
একজন অপরাধীর গল্প বলতে চেয়েছিলেন তিশা
সিয়াম-পরীর গানের ভিউ ১০০ মিলিয়ন!
সিয়াম-পরীর গানের ভিউ ১০০ মিলিয়ন!