X
মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪
২৩ বৈশাখ ১৪৩১

‘সাফল্য দাবি করেই ব্যর্থতার প্রমাণ দিলেন সিইসি’

এমরান হোসাইন শেখ
২১ জানুয়ারি ২০১৭, ২২:৫৩আপডেট : ২২ জানুয়ারি ২০১৭, ০২:৫০

নির্বাচন কমিশন আগামী মাসের ৮ তারিখে শেষ হচ্ছে বর্তমান কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের (ইসি) মেয়াদ। ইতোমধ্যেই ইসির গত ৫ বছরের দায়িত্ব পালনকালে সাফল্য-ব্যর্থতার চুলচেরা বিশ্লেষণ শুরু হয়েছে রাজনৈতিক ও নির্বাচন বিশ্লেষক মহলে। তাদের মতে, এই কমিশনের সাফল্যের চেয়ে ব্যর্থতার পাল্লাই ভারী। বিশেষ করে ২০১৪ সাল থেকে মেয়াদের শেষ ৩ বছর গেছে নানা ধরনের বিতর্কের মধ্য দিয়েই। সামগ্রিকভাবে সফল নির্বাচনের নজির কেবল সদ্য অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনসহ কয়েকটি সিটি নির্বাচন। এছাড়া প্রতিটি স্তরের নির্বাচনই ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। এসবের পরও শুক্রবার কুমিল্লায় এক অনুষ্ঠানে ইসির কোনও ব্যর্থতা নেই বলে দাবি করেছেন সিইসি। তার এই দাবি প্রসঙ্গে নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জাতির কাছে সত্যতা স্বীকার না করে সিইসি প্রতারণা করেছেন। এর চেয়ে ব্যর্থতার দায় ব্যাখ্যা দিলে ভবিষ্যৎ কমিশনের জন্য তা  সহায়ক হতো।

উল্লেখ্য, সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন শুক্রবার কুমিল্লা আঞ্চলিক সার্ভার স্টেশন উদ্বোধন করেন। এ সময় তিনি তার নেতৃত্বাধীন কমিশনের ৫ বছর মেয়াদের মূল্যায়ন করতে গিয়ে নিজেদের কোনও ব্যর্থতা নেই বলে  দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘পাঁচ বছরে আমাদের কোনও ব্যর্থতা নেই। প্রতিটি নির্বাচন আমরা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করেছি। ইসির সফলতার সবকিছু রেকর্ডে আছে। আমাদের দেশে রেওয়াজ আছে, যে দল বা যারা হারে, সে দল ফল মেনে নেয় না। ইসি সবাইকে সন্তুষ্ট করতে পারে না।’

সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে ব্যর্থতার জন্য এককভাবে ইসিকে দায়ী না করলেও সিইসির ‘সফলতা’র দাবিকে কমিশনের ‘সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা’ বলে মনে করছেন নির্বাচন বিশ্লেষক ড. তোফায়েল আহমেদ। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,  ‘সফল না ব্যর্থ, এটা কমিশনের দাবি করার কিছু নেই। সামগ্রিক বিবেচনায় জাতি এই কমিশনের অধীনে কোনও ভালো নির্বাচন পায়নি।’  তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালের পর থেকে দেশে ভালো নির্বাচন হয়নি। এ জন্য এককভাবে সরকার বা কমিশনের দায়ভার নেই। এর জন্য কমিশন, সরকার, ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল, বিরোধী দল—সবারই ব্যর্থতা রয়েছে। তবে নির্বাচন পরিচালনাকারী সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ইসির একটি বড় দায় রয়েছে। অথচ তাদের অনেক ব্যর্থতা থাকার পর নিজেদের সফল দাবি করাটাই তাদের বড় ব্যর্থতার প্রমাণ।’

অতীতের নির্বাচনগুলোর তুলনা করে তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘এটা ঠিক কোনও ইসির হাতেই সব নির্বাচন সফল হয় না। কিন্তু এই কমিশনের এত দৃশ্যমান ব্যর্থতা থাকার পর কী করে সাফল্য দাবি করে তা বোধগম্য নয়। বরং তারা নিজেদের গুণবিচার করে প্রকৃত অবস্থা বিশ্লেষণ করে কী কারণে সফল হতে পারেনি, কার কতটুকু দায়ভাব ছিল, সেটা তুলে ধরলে তাদের প্রতি জাতির আস্থা ফিরে আসত। জনগণ প্রকৃতও চিত্র জানতে পারতো। কিন্তু তা না করে কমিশনের সফলতার দাবি করাতে মানুষ মনে করবে তারা জেনে বুঝেই মিথ্যা দাবিটা করছে। আর এটা করে তারা জাতির সঙ্গে প্রতারণা করলো। তাদের মধ্যে যে কোনও অনুশোচনা নেই, তারই প্রমাণ দিলো।’

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘আমাদের দুভার্গ্য যে, উচ্চশিক্ষিত ও উচ্চপদে অধিষ্ঠিত ব্যক্তিরা সত্য বলতে পারছেন না। এই  ইসি যে ব্যর্থতার দায় অস্বীকার করলো, সেটাই তাদের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা। তারা যদি তাদের অপরাগতাটা স্বীকার করতো, তাহলে সংশোধনের উদ্যোগ নিতে পারতো। রোগ স্বীকার না করলে তো সেই রোগের চিকিৎসা সম্ভব নয়।’ তিনি বলেন, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার একজন শিক্ষিত,  বুদ্ধিমান মানুষ। তার মুখে এমন বক্তব্য শুনে অবাক হয়েছি। এই পর্যায়ের ব্যক্তিরা কী করে এত অন্ধ হতে পারেন?

নির্দেশনা অমান্য করায় সম্প্রতি আদালতে কমিশনের মাফ চাওয়ার প্রসঙ্গ টেনে সুজন সম্পাদক বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন তাদের ব্যর্থতা ও অযোগ্যতার জন্য আদালতে গিয়ে ক্ষমা চেয়েছে। নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে জাতিকে অন্ধকারে ঠেলে দেওয়ার জন্য জাতির সামনে তাদের ক্ষমা চাওয়া উচিত ছিল।’

জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদের (জানিপপ) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, কমিশন তাদের দায়িত্ব পালনে সব চেষ্টাই করেছে। এই কমিশনের হাতে বেশ কিছু স্থানীয় সরকার নির্বাচন ত্রুটিমুক্ত ও সন্তোষজনক ছিল। কিছু ক্ষেত্রে বক্সে টিক দেওয়ার মতো নিয়ম রক্ষার কাজ ইসি করেছে। সার্বিক বিবেচনায় বলা যেতে পারে, এই ইসি সর্বাত্মক চেষ্টা করেছে। তবে ইসি পুরোপুরি সফল, এ কথা বলার কোনও সুযোগ নেই।’

আরও পড়ুন:   ৫ বছরে নির্বাচন কমিশনের কোনও ব্যর্থতা নেই: সিইসি

/এমএনএইচ/

 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
টেকনাফে ছাত্রলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা
টেকনাফে ছাত্রলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা
ঝড়ে গাছ ভেঙে পড়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক বন্ধ ছিল এক ঘণ্টা
ঝড়ে গাছ ভেঙে পড়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক বন্ধ ছিল এক ঘণ্টা
‘স্বাভাবিক পরিবেশে বাঁচতে প্রত্যেককে গাছ রোপণ করতে হবে’
‘স্বাভাবিক পরিবেশে বাঁচতে প্রত্যেককে গাছ রোপণ করতে হবে’
ভিটামিন ডি কমে গেলে কীভাবে বুঝবেন?
ভিটামিন ডি কমে গেলে কীভাবে বুঝবেন?
সর্বাধিক পঠিত
মিল্টনের আশ্রমের দায়িত্ব যার হাতে গেলো
মিল্টনের আশ্রমের দায়িত্ব যার হাতে গেলো
চাসিভ ইয়ার ঘিরে হাজার হাজার সেনা জড়ো করছে রাশিয়া
চাসিভ ইয়ার ঘিরে হাজার হাজার সেনা জড়ো করছে রাশিয়া
যেভাবে অপহরণকারীদের কাছ থেকে পালিয়ে এলো স্কুলছাত্র
যেভাবে অপহরণকারীদের কাছ থেকে পালিয়ে এলো স্কুলছাত্র
আজও ঝোড়ো হাওয়াসহ শিলাবৃষ্টির আভাস
আজও ঝোড়ো হাওয়াসহ শিলাবৃষ্টির আভাস
যে শিশুকে পাচারের অভিযোগে মিল্টনের বিরুদ্ধে মামলা
যে শিশুকে পাচারের অভিযোগে মিল্টনের বিরুদ্ধে মামলা