প্রবাসী কর্মীদের দেশে ও বিদেশে সব ধরণের সহায়তা দিতে নতুন আইন করছে সরকার। এই আইনে প্রবাসী নারী কর্মীদের বিশেষ সুবিধা দেওয়া হবে। বিদেশে কোনও অপরাধ ও দুর্ঘটনার শিকার, অসুস্থতা বা অন্য কোনও কারণে দুর্দশাগ্রস্থ হলে সব ধরণের সহায়তা দেওয়া হবে। এমনকি বিদেশে ‘সেফহোম’ প্রতিষ্ঠা করা হবে নারী কর্মীদের জন্য। এছাড়া দেশে ফেরার পর নারী অভিবাসী কর্মীদের সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে পুনর্বাসন করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (মিশন ও কল্যাণ) মোহাম্মদ আজহারুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘‘দেশে বিদেশে কর্মীদের পরিবার-পরিজনকে সাহায্য-সহযোগিতা দেওয়া কিংবা উদ্ভুত সমস্যা সমাধানের জন্য এ আইনটি করা হচ্ছে। ‘প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান নীতি’ থাকলেও আইন নেই। তাছাড়া ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড রয়েছে বিএমইটি’র আওতায়। এসব কারণে নতুন আইন করা হচ্ছে প্রবাসীদের কল্যাণে।’’
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বিদেশে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি ও শ্রম ও অভিবাসন খাতকে গতিশীল ও সুসংহত করতে ‘প্রবাসী কল্যাণ বোর্ড আইন’ নামের নতুন আইন করা হচ্ছে। এর আগে ১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) আওতায় ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ তহবিল গঠন করা হয়। পরবর্তীতে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড হিসেবে তা পরিচালিত হয়ে আসছে। দীর্ঘদিন পর ২০১৬ সালে ‘প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান নীতি’ প্রণয়ন করে সরকার। কিন্তু সুনির্দিষ্ট আইন না থাকায় প্রবাসী কর্মীরা দেশ-বিদেশে সুবিধা বঞ্চিত হচ্ছেন। নতুন এই আইনের খসড়ায় ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ তহবিল বা বোর্ড বিলুপ্ত হয়ে নতুন করে ‘প্রবাসী কল্যাণ বোর্ড’ গঠিত হবে। বিদ্যমান ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিবের নেতৃত্বে পরিচালিত হয়। এছাড়া বোর্ড গঠন হয়েছে স্বরাষ্ট্র, আইন, অর্থ, পররাষ্ট্র, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন, বাংলাদেশ ব্যাংক, বিএমইটি এবং বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজ (বায়রা) –এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে।
আর প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে, ‘প্রবাসী কল্যাণ বোর্ড’ আইনে বোর্ড পচিালিত হবে পরিচালনা পর্ষদের মাধ্যমে। পরিচালনা পর্ষদের প্রধান থাকবেন চেয়ারপারসন। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব চেয়ারপারসন হিসেবে প্রধান দায়িত্বে থাকবেন। ১৫ সদস্যের বোর্ডে মহাপরিচালক হবেন সদস্য সচিব। এছাড়া জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো’র মহাপরিচালক, আইন, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান, পররাষ্ট্র, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা সদস্য থাকবেন। এছাড়া বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেডের (বোয়েসেল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজ (বায়রা) -এর সভাপতি, সরকার মনোনীত বিদেশ থেকে প্রত্যাগত দুই জন অভিবাসী কর্মী (একজন নারীসহ) সদস্য থাকবেন। এই পরিচালনা পর্ষদে কমপক্ষে তিনজন নারী থাকা বাধ্যতামূলক।
নতুন আইনে প্রবাসী কল্যাণ বোর্ডের কাজের মধ্যে রয়েছে, বিদেশগামী কর্মীদের জন্য প্রাক-বহির্গমন ব্রিফিং সেন্টার স্থাপন ও পরিচালনা, বিমানবন্দরে প্রবাসী কর্মীদের আগমন এবং বিদেশ গমনের আগে বিভিন্ন কল্যাণমূলক কাজে সহায়তা এবং বিমানবন্দরে প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক স্থাপন ও পরিচালনা।
প্রবাসী ও তাদের উপর নির্ভরশীলদের কল্যাণে প্রকল্প নেওয়া, তহবিল থেকে অর্থ বরাদ্দ, বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোর মাধ্যমে প্রবাসীদের কল্যাণে ব্যবস্থা নেওয়া, প্রবাসী কর্মীদের মৃতদেহ দেশে আনা বা প্রয়োজনে সৎকারে আর্থিক ও অন্যান্য সহায়তা দেওয়ার দায়িত্ব পালন করবে বোর্ড। এছাড়া অসুস্থ, আহত ও শারীরিকভাবে অক্ষম প্রবাসী কর্মীদের দেশে আনা ও প্রয়োজনে চিকিৎসা সহায়তা দেওয়া, বিদেশে মারা গেলে নির্ভরশীলদের আর্থিক অনুদান দেওয়া, বিদেশে মারা যাওয়া কর্মীর মৃত্যুজনিত ও পেশাগত কারণে অসুস্থতায় ক্ষতিপূরণ, বকেয়া বেতন, ইন্স্যুরেন্স ও সার্ভিস বেনিফিট আদায়ে সহায়তার কাজ করবে বোর্ড।
কর্মীদের পরিবার ও তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় বোর্ড প্রবাসী কর্মীদের মেধাবী সন্তানদের শিক্ষাবৃত্তি, প্রবাসী কর্মীদের আইনগত সহায়তা, প্রবাসী কর্মীদের বহির্গমন এবং কল্যাণমূলক কাজ পরিচালনার জন্য ব্যুারো প্রস্তাবিত প্রকল্প ও কর্মসূচীতে অর্থায়ন করা, স্বদেশে প্রত্যাগত অভিবাসী কর্মীদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক পুনর্বাসনের জন্য প্রকল্প ও কর্মসূচি হাতে নেওয়ার কাজ করবে।
/এসএমএ/এসএনএইচ/