জঙ্গিবাদ দমনে সরকারের গৃহীত বেশ কিছু পদক্ষেপসহ ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘বিপথগামী কোনও সদস্য জঙ্গিবাদের পথ থেকে ফিরে এলেই তাকে আইনি সহায়তাসহ পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে।’ বুধবার জাতীয় সংসদে সরকার দলীয় সংসদ সদস্য কামাল আহমেদ মজুমদারের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বুধবার সংসদের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্ন-উত্তরসহ সব প্রশ্নোত্তর টেবিলে উত্থাপিত হয়।
বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের সুষম উন্নয়ন ও নিরাপত্তার জন্য সন্ত্রাস, সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদ হুমকিস্বরূপ। এদেশের মানুষ সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদকে ঘৃণা করে।’
জঙ্গিবাদ বন্ধে সরকারের পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে সংসদ নেতা বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বেশ কিছু সফল অভিযানের শীর্ষস্থানীয় জঙ্গি নেতাসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সদস্য গ্রেফতার ও নিহত হয়। এসময় বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়। এ সব অভিযানের ফলে বর্তমানে জঙ্গি তৎপরতা বহুলাংশে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে। জঙ্গি দমনে এ সাফল্য আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে সক্ষম হয়েছে। একাদশ আসেম সম্মেলন ও ৭১তম জাতিসংঘ সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের নেতারাও বাংলাদেশের জঙ্গিবাদবিরোধী অবস্থানের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জঙ্গিবাদবিরোধী ব্যাপক প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির ফলে উল্লেখযোগ্য হারে জঙ্গি সদস্য ইতোমধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। তাদের মোটিভেশন ও সহযোগিতার মাধ্যমে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন সন্দেহভাজন নিখোঁজ ব্যক্তি এবং পলাতক জঙ্গিদের সঠিক তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা অব্যাহত আছে। ইতোমধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নিখোঁজ ব্যক্তির খোঁজ পাওয়া গেছে। অনেকে তাদের ঘরে ফিরে এসেছেন।’
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জঙ্গি সংগঠনগুলোর অনলাইন ভিত্তিক প্রচারণার দিকে গোয়েন্দা নজরদারি আরও বাড়ানো হবে। যেন জনগণের মধ্যে জঙ্গিবাদী মতাদর্শের র্যাডিক্যালাইজেশন না ঘটে সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মাধ্যমে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। জঙ্গিবাদবিরোধী ব্যাপক প্রচারণার মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন, মসজিদের ইমাম, আলেম সমাজ, শিক্ষক-ছাত্র সমাজ, অভিভাবক, বুদ্ধিজীবী, ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন ও সর্বস্তরের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে জঙ্গিবাদ ও উগ্র সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। ভবিষ্যতে যেসব বিপথগামী জঙ্গিবাদের পথ থেকে ফিরে আসবে, তাদের আইনি সহায়তাসহ পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ সন্ত্রাসী ও জঙ্গি কর্মকাণ্ড তাৎক্ষণিকভাবে মোকাবিলার জন্য একটি যুগোপযোগী Standard Operating Procedure (SOP) তৈরি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও প্রধানমন্ত্রী জানান।
নরসিংদী-২ আসনের কামরুল আশরাফ খানের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী সড়ক দুর্ঘটনা রোধে ২২৭টি ব্ল্যাক স্পট চিহ্নিত করে তার প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা, বেশ কিছু মহাসড়ক ৪লেনে উন্নীতকরণ, চালকদের প্রশিক্ষণ, ফিটনেটবিহিন গাড়ি নিষিদ্ধ, জনগণকে সচেতনতামুলক কর্মকান্ডসহতার সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা জানান। এছাড়া মোটরযান দুর্ঘটনায় আঘাতপ্রাপ্ত, ক্ষতিগ্রস্ত বা আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করলে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য প্রণয়নাধীন সড়ক পরিবহন আইনে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব যুক্ত করার কথা জানান।
আরও পড়ুন: যান চলাচল শুরু
/ইএইচএস/এমএনএইচ/
