X
রবিবার, ২৬ মে ২০২৪
১২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আস্তে আস্তে নির্বাচনের দিকে চলে গেছে’

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
১৬ অক্টোবর ২০১৮, ২২:৪৪আপডেট : ১৬ অক্টোবর ২০১৮, ২২:৫৬

‘ঐক্যে বিভক্তি’ শীর্ষক বৈঠকি নবগঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আগামী একাদশ জাতীয় নির্বাচনের দিকে চলে গেছে। আওয়ামী লীগও তা-ই চাইছিল। আর ঐক্যে কমবেশি বিভক্তি ও দল ভেদে নীতিগত অবস্থান ভিন্ন হলেও এর ইতিবাচক দিকও রয়েছে। সেটি হলো সবাই যে নির্বাচন চায়, ঐক্য গঠনের মধ্য দিয়ে তা প্রতীয়মান হয়।

দেশের শীর্ষস্থানীয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত ‘ঐক্যে বিভক্তি’ শীর্ষক বৈঠকিতে এমন অভিমত দেন বক্তারা।

মুন্নী সাহার সঞ্চালনায় মঙ্গলবার (১৬ অক্টোবর) বিকাল সাড়ে ৪টায় শুরু হয় বাংলা ট্রিবিউনের সাপ্তাহিক এ আয়োজন। রাজধানীর পান্থপথে বাংলা ট্রিবিউন স্টুডিও থেকে এ বৈঠকি সরাসরি সম্প্রচার করে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এটিএন নিউজ। পাশাপাশি বাংলা ট্রিবিউনের ফেসবুক ও হোমপেজে লাইভ দেখানো হয় এ আয়োজন।


‘ঐক্যে বিভক্তি’ শীর্ষক বৈঠকিতে অংশ নেন দৈনিক ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, বিকল্পধারা বাংলাদেশের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি চৌধুরী, গণফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্য এ কে এম জগলুল হায়দার আফ্রিক, আওয়ামী লীগের উপ দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া এবং বাংলা ট্রিবিউনের সম্পাদক জুলফিকার রাসেল।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, ‘পুরো জিনিসটি (ঐক্য গঠন) কিন্তু নির্বাচনকে সামনে রেখে হচ্ছে। আমি এটাও বিশ্বাস করি, আওয়ামী লীগ চায় না আরেকটা নির্বাচন বিএনপিকে ছাড়া হোক। আমি মনে করি, বিএনপিকে আওয়ামী লীগের ছকের নির্বাচনে নিয়ে এসেছে একটি পক্ষ, গণফোরাম, রব এবং মান্নার ঠেলায়। এখানে পেছন থেকে নেপথ্যে কেউ খেলেছেন। এই ছকের মাধ্যমে পুরো জোট কিন্তু আস্তে আস্তে নির্বাচনের দিকে চলে গেছে। আওয়ামী লীগের সাজানো ছকের নির্বাচনে ইতোমধ্যে ঢুকে গেছে।’

তিনি বলেন, ‘পুরো বিষয়টিতে আমি দেখি একটি ইতিবাচক দিক। মাহী বি চৌধুরীদের কোনোভাবেই এই জোটে যাওয়া সম্ভব না। কারণ, বিএনপির নেতৃত্বে এখন আছেন তারেক রহমান, তিনি লন্ডন থেকে দলটি চালাচ্ছেন। তারেক রহমানের যে সমীকরণ, যেভাবে সে রাজনীতিকে গড়ে তুলছে তার সঙ্গে বিকল্পধারা কোনোভাবেই যেতে পারে না। ফলে উনাদের যে ধোঁকা দেওয়া হয়েছে, উনারা অনেক পরে বুঝতে পেরেছেন ড. কামাল হোসেনের বাসায় গিয়ে। বিবিসিকে দেওয়া মির্জা ফখরুলের বক্তব্য শুনলে বোঝা যায় বিকল্পধারাকে বাদ দিয়ে কেউ একজন খেলা খেলছেন।’

আওয়ামী লীগের উপ দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া বিশিষ্ট এই সাংবাদিক বলেন, ‘আমাদের দেশে নির্বাচনকে নানাভাবে বিশ্লেষণ করা হয়। যেখানে বড় একটি রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ না করে সেখানে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়। আরেকটি নির্বাচন, যেটা চাচ্ছিল সরকার সেটা হলো, একটা ডিজাইনের মধ্যে আপনারা ইতোমধ্যে পা দিয়ে দিয়েছেন। এখন পেছন থেকে স্লো মোশনে ঠেলবে গণফোরাম, মান্না, রব।’

বিকল্পধারা বাংলাদেশের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি চৌধুরী বলেন, ‘আজকে যে ঐক্য হয়েছে সেখানেও কনভেনিয়েন্স আছে নাকি— এই প্রশ্নটা অবাস্তব নয়। তবে এটা ভুলে গেলে চলবে না যে আওয়ামী লীগ নূর হোসেন দিবস পালন করে, সেই আওয়ামী লীগ আবার জাতীয় পার্টিকে সরকারে রাখে আবার বিরোধী দলে। প্রধান দুটি দলই নীতি-আদর্শকে বাইরে রেখে পলিটিক্স অব কনভিনিয়েন্টের চর্চা করে যাচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষ ২০১৪ সালের মতো নির্বাচন দেখতে চায় না। এটাও সত্য, এ দেশের মানুষ মাগুরা কিংবা ঢাকা ১০-এর মতো নির্বাচনও দেখতে চায় না। বাংলাদেশের মানুষ ব্যাংকে রাখা সোনা তামা হয়ে যাবে— সেই দুর্নীতি আর দেখতে চায় না। বাংলাদেশের মানুষ খাম্বা ব্যবসার নামে হাজার হাজার কোটি টাকার পাচার দেখতে চায় না।’

তিনি বলেন, ‘সেজন্যই পরিবর্তনের কথা বলছি, একটা জাতীয় বৃহত্তর ঐক্য হবে। আমরাও কিন্তু কিছু সুনির্দিষ্ট অভিযোগে বিএনপি থেকে বেরিয়ে বিকল্পধারা বাংলাদেশ করেছিলাম। আমরা বলেছিলাম একদিকে হাওয়া ভবন, আরেকদিকে প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে দেশ পরিচালিত হতে পারে না। আজকে যখন জাতীয় স্বার্থে একটি নির্বাচন আদায় করতে হবে, আমিও বিশ্বাস করেছিলাম একটি জাতীয় কিংবা বৃহত্তর ঐক্যে পরিণত হবে একই দাবিতে। আজকে বিএনপির মতো দলকে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতায় ক্ষমতায় বসানো যাবে না— এই বিষয়গুলোর সঙ্গে ড. কামাল হোসেন এবং আমরা একমত হয়েছিলাম।’

বিকল্পধারা বাংলাদেশের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি চৌধুরী মাহি বি চৌধুরী বলেন, ‘আমি আজকের ওই ঐক্যকে সাধুবাদ জানাতে পারছি না সুনির্দিষ্ট তিনটি কারণে। আমি মনে করি, এই ঐক্যফ্রন্ট শুরুতেই বিতর্কিত হয়েছে, একটি অনৈতিক ঐক্যতে পরিণত হয়েছে। দুইজন সিনিয়র এসে জাতীয় স্বার্থে যে দলিল স্বাক্ষর করেছেন, এখানে ড. কামাল হোসেন চুক্তিভঙ্গ করেছেন। আমি আশা করি, ড. কামাল হোসেন যে ট্র্যাপে পড়েছেন, সেই ট্র্যাপ থেকে তিনি বেরিয়ে আসবেন এবং বেরিয়ে আসলে জাতিকে সুন্দর স্বপ্ন দেখাতে হবে।’

ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত আওয়ামী লীগের উপ দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, ‘এটা জাতির কল্যাণের বিপরীত একটি ঐক্য। এখানে আছে বিএনপি, তাদের রাজনৈতিক দর্শন, সেটা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী, স্বাধীনতাবিরোধীদের রাজনীতি করার লাইসেন্স এই দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান দিয়েছেন। সন্ত্রাসবাদের রাজনীতি লালন করছে বিএনপি। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ের পর বিএনপির একটি রাজনৈতিক ঢালের প্রয়োজন ছিল। ড. কামাল হোসেন প্রকারান্তরে যারা বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে হত্যা করেছিল, যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা আদালতে চলমান রয়েছে, তাদের নিয়ে জাতীয় ঐক্য মানে ড. কামাল হোসেনরা যেনতেনভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা গ্রহণ করতে চান। এই যে ঐক্য করেছেন তারা, এটা নিয়ে কোনও ধরনের চাপ আমাদের ওপর নেই।’

তিনি বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বার বার ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছে। আমরা কোনও ষড়যন্ত্র করি না। ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে আমাদের জাতির পিতাকে হত্যা করা হয়েছে। সেই ষড়যন্ত্রের রাজনীতির বৈধতা দিতে, খুনের রাজনীতির বৈধতা দিতে, খুনিদের শনাক্ত করার জন্য এই ঐক্য রচিত হয়েছে; বাংলাদেশের জনগণ অবশ্যই গ্রহণ করবে না।’

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘আওয়ামী লীগ আজকে আত্মরক্ষায় আছে। এটা ২০১৮ সাল, ২০১৪ সাল নয়। এটা আওয়ামী লীগকে মনে রাখতে হবে। জনগণ আওয়ামী লীগকে ছাড়বে না।’

বাংলা ট্রিবিউনের সম্পাদক জুলফিকার রাসেল মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘১৯৯৮ সালে দলের (বিএনপির) সেকেন্ডম্যান ছিলেন বি. চৌধুরী সাহেব। সে সময় চারদলীয় জোটে যখন জামায়াতকে নেওয়া হয়, সে সময় কিন্তু তিনি কোনও বিরোধ করেননি। এমনকি একসঙ্গে নির্বাচন করেছিলেন। তিনি রাষ্ট্রপতিও হয়েছিলেন তাদের সবার ভোটের মাধ্যমেই। এত বছর একসঙ্গে ছিলেন, এই মুহূর্তে এসে কেন এমন করছেন। ওনার পরামর্শেই খালেদা জিয়া জামায়াতকে সঙ্গে নিয়েছেন।’

গণফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্য এ কে এম জগলুল হায়দার আফ্রিক বলেন, ‘এখানে বলা হয়েছে ড. কামাল হোসেন ট্র্যাপে পড়েছেন, আমি দুইজনেরই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে বলতে চাই, ড. কামাল তাহলে সঠিক পথে আছেন।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের ঘোষণা অত্যন্ত স্পষ্ট। আমরা ঐক্য করেছি বিএনপির সঙ্গে, যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে। আমরা মনে করছি, বর্তমানে যারা ক্ষমতায় আছে, তারা বিগত সময়ে যে নির্বাচন করেছে, সেই নির্বাচনগুলো থেকে আমাদের তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে। দলীয় সরকারের অধীনে এদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। সেই অবস্থান থেকে আমরা বলছি, একটা জাতীয় ঐক্য হওয়া প্রয়োজন। অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আজকের বৃহত্তর ঐক্য এবং ঐক্যের মাধ্যমে আন্দোলনে যাওয়া।’

সাংবাদিক মুন্নী সাহা বাংলা ট্রিবিউনের সম্পাদক জুলফিকার রাসেল বলেন, ‘আমি মনে করি এই ঐক্যে আওয়ামী লীগের খুশি হওয়া উচিত। এই ঐক্যের মাধ্যমে বিএনপি নির্বাচনে গেলো খালেদা জিয়াকে পাশে রেখে। খালেদা জিয়ার ইস্যুটা কিন্তু এখানে আর রাখলো না বিএনপি। তারা খালেদা জিয়ার ইস্যুকে বাদ দিয়ে ঐক্যের মাধ্যমে নির্বাচনে গেলো এবং ড. কামালকে বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে দেখালো।’

জুলফিকার রাসেল বলেন, ‘সরকারের কী দরকার? সরকারের একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দরকার। সেই গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে কয়েকটা দল অংশগ্রহণ করলেই হয়। সেখানে ড. কামালের জোট নির্বাচনে এলে গ্রহণযোগ্য হবে বলে মনে করা হয়।’ 

 



 



 



 



/এসও/এনআই/এইচআই/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
মালয়েশিয়াকেও হারাতে চায় বাংলাদেশ
মালয়েশিয়াকেও হারাতে চায় বাংলাদেশ
প্রত্যয় স্কিম প্রত্যাখ্যান রাবি শিক্ষকদের, কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি
প্রত্যয় স্কিম প্রত্যাখ্যান রাবি শিক্ষকদের, কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি
রিমাল ভিন্নপথ ধরায় এলএনজি সরবরাহ শুরু
রিমাল ভিন্নপথ ধরায় এলএনজি সরবরাহ শুরু
৮১ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করবে চসিক
৮১ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করবে চসিক
সর্বাধিক পঠিত
এমপি আনার হত্যা: কে এই সিলিস্তা রহমান?
এমপি আনার হত্যা: কে এই সিলিস্তা রহমান?
ঘূর্ণিঝড় রিমাল: পায়রা ও মোংলায় ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত
ঘূর্ণিঝড় রিমাল: পায়রা ও মোংলায় ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত
বেনজীরের বাঁচার উপায় কী
বেনজীরের বাঁচার উপায় কী
জলোচ্ছ্বাসে তলিয়ে গেলো সুন্দরবন
জলোচ্ছ্বাসে তলিয়ে গেলো সুন্দরবন
সান ফার্মার নতুন কারখানা উদ্বোধন করলেন সালমান এফ রহমান
সান ফার্মার নতুন কারখানা উদ্বোধন করলেন সালমান এফ রহমান