X
মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪
২৩ বৈশাখ ১৪৩১

উচ্চশিক্ষিত শিক্ষকের অভাব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে

রশিদ আল রুহানী
২৩ অক্টোবর ২০১৮, ১২:০৪আপডেট : ২৩ অক্টোবর ২০১৮, ১৫:১০

ইউজিসি

দেশের বেশিরভাগ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসন ও চিকিৎসা সমস্যা রয়েছে। শিক্ষকদের জন্য পৃথক বেতন স্কেল নেই, নেই গবেষণার জন্য পর্যাপ্ত ল্যাবরেটরি। আবার বেশিরভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সার্ভিস রুল নেই। আর এসব কারণেই উচ্চশিক্ষিত, দক্ষ, যোগ্য ও মেধাবী শিক্ষকরা সুযোগ পেলেই অন্য প্রতিষ্ঠানে চলে যাচ্ছেন। ফলে এ স্তরে দক্ষ ও যোগ্য শিক্ষকের অভাব দেখা দিচ্ছে, যা উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এখন থেকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা না গেলে ২০৪১ সালের লক্ষ্য অর্জন কঠিন হবে বলে মনে করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।

ইউজিসি’র ‘৪৪তম বার্ষিক প্রতিবেদন-২০১৭’-তে এমন চিত্র ওঠে এসেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদের কাছে এই বার্ষিক প্রতিবেদনটির মাধ্যমে উচ্চ শিক্ষাস্তরের মানোন্নয়নের জন্য বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরেছে ইউজিসি। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় (১৮ অক্টোবর) ইউজিসি’র চেয়ারম্যান  অধ্যাপক আবদুল মান্নানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির কাছে এ প্রতিবেদন পেশ করেন।

শিক্ষকতায় আগ্রহ হারাচ্ছে মেধাবীরা

দেশের সরকারি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া  অন্যান্য সরকারি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষিত শিক্ষক-শিক্ষিকার অভাব দেখা দিচ্ছে।  বিশেষ করে জাতীয়, উন্মুক্ত ও বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিষয়ক নতুন সরকারি ও অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক উচ্চতর ডিগ্রিধারী শিক্ষক সংকট বিরাজ করছে বলে মনে করে ইউজিসি। এই সব বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রধানত প্রভাষক ও জুনিয়র শিক্ষকদের দিয়ে  শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।

ইউজিসি’র বার্ষিক প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আবাসন ও চিকিৎসা সমস্যা বিরাজ করছে। বড় বড় শহরগুলো ছাড়া অন্যান্য শহরগুলোতে ভালো স্কুল ও কলেজের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ল্যাবরেটরি সুবিধা নেই। শিক্ষকদের জন্য পৃথক বেতন স্কেল ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নেই। শুধু তাই নয়, দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পক্ষে প্রয়োজনীয় উচ্চডিগ্রী সম্পন্ন জনবল তৈরি করাও সম্ভব হচ্ছে না। কারণ, শিক্ষকদেরকে বর্তমানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করতে হচ্ছে, ফলে উচ্চতর গবেষণা পরিচালনা করার জন্য যে সময়ের প্রয়োজন তা তারা পাচ্ছে না। এছাড়া, দেশের বেশিরভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের জন্য এখনও সার্ভিস রুল প্রণীত হয়নি। ফলে শিক্ষকদেরকে চাকরির স্থায়ীত্ব নিয়ে অনিশ্চয়তায় থাকতে হয়। আর এসব কারণে মেধাবী ও দক্ষ শিক্ষকরা সুযোগ পেলেই দেশ ত্যাগ, অথবা অন্য প্রতিষ্ঠানে চলে যাচ্ছে। এতে উচ্চশিক্ষিত শিক্ষকের অভাব দেখা দিচ্ছে উচ্চ শিক্ষাস্তরে।

শিক্ষক সংকটের এমন সব কারণ উল্লেখ করে তা সমাধানে রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদের কাছে এ বিষয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সুপারিশ করেছে ইউজিসি। প্রতিবেদনের সুপারিশে বলা হয়েছে— নতুন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চতর পদগুলোতে স্থায়ীভাবে শিক্ষক নিয়োগ নিশ্চিতকরণের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে। অভিজ্ঞ শিক্ষকরা যেন অপেক্ষাকৃত নবীন বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদানে আগ্রহী হন, সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এখন থেকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা না গেলে ২০৪১ সালের লক্ষ্য অর্জন অত্যন্ত কঠিন হবে।

কর্মক্ষেত্র উপযোগী বিভাগ খোলা প্রয়োজন

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। ইউজিসি আরও উল্লেখ করেছে—এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভালোভাবে চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। কারণ, তারাই ভবিষ্যতের মানবসম্পদ তৈরিতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব বহন করবে।  জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পাস কোর্সে ছাত্র-ছাত্রীরা ভর্তি হতে অনীহা প্রকাশ করছে, ফলে সিট খালি থাকছে। এ কারণে পাস কোর্সের সিট কমিয়ে বাংলাদেশের কর্মক্ষেত্রের জন্য যে বিষয়গুলো পড়ানো দরকার, সেইসব বিষয়ে বিভাগ খোলা প্রয়োজন বলেন মনে করে ইউজিসি। এসব বিশ্ববিদ্যালয়েও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক উচ্চতর ডিগ্রিধারী শিক্ষক সংকট বিরাজ করছে— যা কাটানো জরুরি বলে মনে করে ইউজিসি।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ভালো দিক হলো সরকারি ও বেসরকারি উভয়ক্ষেত্রেই প্রকৌশল ও প্রযুক্তি শিক্ষার দিকে ছাত্র-ছাত্রীদের আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে বিজ্ঞান শিক্ষার দিকে আগ্রহ কম বলে প্রতীয়মান হচ্ছে— যা কিনা ভবিষ্যতে নতুন নতুন উদ্ভাবনের জন্য প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে। গত বছরের তুলনায় এ বছর সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিদেশি ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা বেড়েছে।

গবেষণার পর্যাপ্ত সুযোগ সৃষ্টি

সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণা কার্যক্রম কিছুটা বাড়লেও আশানুরূপ হয়নি। অন্যদিকে, গবেষণা খাতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বরাদ্দ কিছুটা বেড়েছে— যা সার্বিক দিক থেকে ইতিবাচক বলছে ইউজিসি। এছাড়া, ইউজিসি আরও বলছে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ইতোমধ্যে গবেষণা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। তবে তা আরও বৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে। ২০২১, ২০৩০, এবং ২০৪১ সালের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে গবেষণাখাতে বরাদ্দ বাড়ানোর বিকল্প নেই।

সুপারিশে ইউজিসি বলেছে, বাংলাদেশের যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আধুনিক ল্যাবরেটরি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেসব প্রতিষ্ঠানে যাতে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষকরা যৌথভাবে গবেষণা পরিচালনা করতে পারেন, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। এছাড়া, অভিন্ন শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা এবং প্রণীত ‘স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যান ফর হায়ার এডুকেশন ২০১৮-২০৩০’ বাস্তবায়ন করা গেলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণা কার্যক্রমে আরও গতিশীলতা আসবে বলে মনে করে ইউজিসি। এছাড়া, শিক্ষক ও গবেষকদের জন্য আকর্ষণীয় আর্থিক সুবিধাসহ অন্যান্য চাহিদা পূরণের সুযোগ থাকতে হবে।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গোটা জাতির গড়ে ওঠার মূল স্তম্ভ হলো শিক্ষক। আজকে যারা সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবী, ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার, রাজনীতিবিদ, আমলা সবাই এই পজিশনে এসেছেন শিক্ষককের সান্নিধ্য থেকেই। ভবিষ্যতেও তাই হবে। ফলে একজন শিক্ষক যত বেশি দক্ষ ও মেধাবী হবেন, একজন শিক্ষার্থীও তত মেধাবী ও দক্ষ হবে। কিন্তু দেশের উচ্চ শিক্ষাস্তরে মেধাবী শিক্ষকের অভাব দেখা দিচ্ছে। এমনটি হতে থাকলে দেশের উচ্চ শিক্ষার মানোন্নয়ন সম্ভব হবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘ইদানিং দেখা যাচ্ছে, মেধাবী শিক্ষকরা এ পেশায় থাকতে চান না। সুযোগ পেলে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন অথবা দেশ ত্যাগ করছেন। ফলে তাদেরকে ধরে রাখতে হলে সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা জরুরি। গবেষণার পর্যাপ্ত সুযোগ সৃষ্টি করাও জরুরি।’

স্কুল-কলেজ পর্যায় পর্যন্ত শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকলেও উচ্চ শিক্ষাস্তরের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের সুযোগ নেই উল্লেখ করে ইউজিসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘স্কুল-কলেজ পর্যায় পর্যন্ত শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকলেও উচ্চ শিক্ষা স্তরের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের সুযোগ নেই। দক্ষ শিক্ষক গড়ে ওঠতে প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই। ফলে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষকদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থার জন্য কয়েকবছর ধরে বলে আসছি। আর এসব বাস্তবায়ন করতে পারলেই শিক্ষাস্তর তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাবে।’

 

/আরএআর/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ
সেন্ট জোসেফ স্কুলে তিন দিনব্যাপী লিট ফেস্টিভ্যাল শুরু
২৫ জেলার সব মাধ্যমিক স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা শনিবার বন্ধ
সর্বশেষ খবর
টেকনাফে ছাত্রলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা
টেকনাফে ছাত্রলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা
ঝড়ে গাছ ভেঙে পড়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক বন্ধ ছিল এক ঘণ্টা
ঝড়ে গাছ ভেঙে পড়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক বন্ধ ছিল এক ঘণ্টা
‘স্বাভাবিক পরিবেশে বাঁচতে প্রত্যেককে গাছ রোপণ করতে হবে’
‘স্বাভাবিক পরিবেশে বাঁচতে প্রত্যেককে গাছ রোপণ করতে হবে’
ভিটামিন ডি কমে গেলে কীভাবে বুঝবেন?
ভিটামিন ডি কমে গেলে কীভাবে বুঝবেন?
সর্বাধিক পঠিত
মিল্টনের আশ্রমের দায়িত্ব যার হাতে গেলো
মিল্টনের আশ্রমের দায়িত্ব যার হাতে গেলো
চাসিভ ইয়ার ঘিরে হাজার হাজার সেনা জড়ো করছে রাশিয়া
চাসিভ ইয়ার ঘিরে হাজার হাজার সেনা জড়ো করছে রাশিয়া
যেভাবে অপহরণকারীদের কাছ থেকে পালিয়ে এলো স্কুলছাত্র
যেভাবে অপহরণকারীদের কাছ থেকে পালিয়ে এলো স্কুলছাত্র
যে শিশুকে পাচারের অভিযোগে মিল্টনের বিরুদ্ধে মামলা
যে শিশুকে পাচারের অভিযোগে মিল্টনের বিরুদ্ধে মামলা
আজও ঝোড়ো হাওয়াসহ শিলাবৃষ্টির আভাস
আজও ঝোড়ো হাওয়াসহ শিলাবৃষ্টির আভাস