X
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪
২০ বৈশাখ ১৪৩১

আগুনের ঝুঁকিতে ঢাবি, কলাভবনের কোনও অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের মেয়াদ নেই

ওয়ালিউল বিশ্বাস
২৩ মার্চ ২০১৯, ১২:১৮আপডেট : ২৩ মার্চ ২০১৯, ১২:৫৬

মেয়াদহীন সিলিন্ডার পুরান ঢাকার চকবাজার অগ্নিকাণ্ডের পর আগুনের ঝুঁকি নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। নেওয়া হচ্ছে নানা পদক্ষেপ। কিন্তু দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে উদাসীন। প্রায় এক বছর ধরে কলাভবনের অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র মেয়াদ উত্তীর্ণ অবস্থায় থাকলেও সেদিকে লক্ষ্য নেই কর্তৃপক্ষের। এগুলো পরিবর্তনের কোনও ব্যবস্থাও নেওয়া হয়নি। বিশেষজ্ঞদের মতে, মেয়াদহীন অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র মূলত অকার্যকর।

শিক্ষার্থী সংখ্যায় ঢাবির সবচেয়ে বড় অনুষদ ভবন কলাভবন। এখানে ৩২টি বিষয়ে স্নাতক, স্নাতোকত্তর ও বেশ কয়েকটি বিভাগে সান্ধ্যকালীন কোর্সের ক্লাস হয়। শিক্ষক, শিক্ষার্থী মিলিয়ে দৈনিক এখানে কয়েক হাজার মানুষের আসা-যাওয়া। 

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ৬ তলা বিশিষ্ট কলাভবনে প্রায় ৭০-৮০টি অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র রাখা আছে। এগুলোর কোনোটিরও মেয়াদ নেই। গত বছরের জুনে এগুলোর মেয়াদ শেষ হয়েছে। এরপর ৯ মাস পার হলেও তা পরিবর্তন করা হচ্ছে না।

মেয়াদহীন সিলিন্ডার এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাবি প্রোক্টর গোলাম রব্বানী বলেন,  ‘আসলে প্রত্যেকটা ভবন কারও না কারও আন্ডারে থাকে। ভেতরের দেখভালের দায়িত্বও তাদের। আমার দায়িত্ব কিন্তু ভবনের ভেতরে না, বাইরে। তবু বিষয়টি আমি জানলাম। আগে তো আগুন নিয়ে এত পরিকল্পনা আমাদের সামনে ছিল না। এখন এ বিষয় নিয়ে কাজ করতে হবে।’

আগুন লাগলে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র কীভাবে ব্যবহার করতে হয় তা জানা নেই কলাভবনের কেয়ার টেকারদের। ভবনে উপস্থিত কর্মচারীদের এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তারা বিষয়টি বলতে পারেননি।

এ বিষয়ে কলা অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. আবু দেলোয়ার হোসেন বলেন,  ‘মেয়াদউত্তীর্ণ সিলিন্ডার আপাতত পরিবর্তনের দরকার নেই। এগুলো লাগানোর সময় আমরা ফায়ার ব্রিগেড কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বলেছেন, সিলিন্ডারগুলো দুই থেকে আড়াই বছর যাবে। তাই মেয়াদ পার হলেও এগুলো পরিবর্তনের কোনও প্রয়োজন নেই। আর আধুনিক যন্ত্রপাতি নিয়ে আপাতত ভাবছি না। পলাশী বাজারের কাছেই ফায়ার সার্ভিস ইউনিট আছে। আগুন লাগলে তারা দ্রুত গতিতে এখানে পৌঁছাতে পারবে। এর আগেও এরকম দেখেছি। তাই আগুনের ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব হবে বলে মনে করি।’

মেয়াদহীন সিলিন্ডার অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের মেয়াদউত্তীর্ণের তারিখ ঢাকতে সিলিন্ডারের কাগজও ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। বিশেষ করে কলাভবনের সামনের দিকের করিডরগুলোর বেশিরভাগ সিলিন্ডারের মেয়াদ লেখার স্থানটির কাগজ ছেড়া। 

অনুষদের সান্ধ্যকালীন বিভাগের ছাত্র মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আগুনসহ যেকোনও দুর্ঘটনা ঘটলেও কর্তৃপক্ষ কখনও এ বিষয়গুলো আমলে নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। আগুন নেভানোর জন্য যে স্প্রেগুলো (বোতল) রাখা হয়েছে তার মেয়াদের কাগজ ছেড়াও দেখেছি। এ হাস্যকর কাণ্ড।’

আগুনের মতো গুরুতর বিষয়টির অবহেলা নিয়ে ক্ষুব্ধ আরেক ছাত্র সামিউল বলেন, ‘মেয়াদ আছে কিনা, তা জানি না। কিন্তু মেয়াদ থাকলেও আমাদের উদ্ধার প্রক্রিয়া বা ব্যবহারটা কেমন হবে তা আমরা জানি না। দুই বছরের বেশি সময় ধরে এখানে পড়াশোনা করছি, কিন্তু কখনও প্রশিক্ষণেরও আয়োজন করা হয়নি।’

কলাভবনের থাকা অগ্নিনির্বাপক সিলিন্ডার আগুন সচেতনতায় প্রশিক্ষণ বা মহড়া সম্পর্কে কলাভবনের কয়েকজন ছাত্ররা জানান, এমন কোনও কার্যক্রমের কথা তারা কখনোই শোনেননি।

রাজিন নামের এক ছাত্র পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, ‘এমন মহড়া বিশ্ববিদ্যালয় কখনও করেছে নাকি? আমি কখনও দেখিনি বা অংশও নেইনি।  আসলে দুর্ঘটনার সময় হয়তো অনেকে এগুলো নিয়ে চিন্তা করে, কিন্তু বাস্তবে তা কখনই হয় না।’

যদি আগুন লাগে সেক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা কতটুকু প্রস্তুত, এছাড়া কোনও প্রস্তুতিমূলক মহড়া হয় কিনা, কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বতন্ত্র বা কেন্দ্রীয় কোনও আগুন প্রতিরোধ ইউনিট আছে কিনা- এমন বিষয়ে প্রোক্টর বলেন, ‘আমাদের ক্যাম্প ফায়ার হয়। তবে কতদিন পর হয় এটা জানা নেই। এগুলো করতে আমাদের বিএনসিসি, রোভার স্কাউট টিম আছে। প্রত্যেকটিরই তিনটি করে বাহিনী আছে। তারা ক্যাম্প ফায়ার করে। প্রায় ৬০০ সদস্য এখানে কাজ করে। তবে এটা ঠিক প্রয়োজনের তুলনায় পুরো বিশ্ববিদ্যালয় কাভার করার মতো সংখ্যা নয়। সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে মহড়া হয়নি এটাও ঠিক। এগুলো নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে।’

কলাভবনের থাকা অগ্নিনির্বাপক সিলিন্ডার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান অবস্থাটি তুলে ধরা হয় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) মেজর এ কে এম শাকিল নেওয়াজের কাছে। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, সামগ্রিকভাবে প্রায় সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেরই অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত দুর্বল। অগ্নিনির্বাপক সিলিন্ডার ছাড়া আর কোনও প্রস্তুতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আছে কি? দেখবেন, কোনও অগ্নিনির্বাপক স্ট্যান্ড নেই, ওয়াটার রাইজার নেই, পাম্প নেই। এমনকি বিকল্প রাস্তা আছে কিনা সেটাও প্রশ্ন। আর সিলিন্ডার ব্যবহারের নিয়ম হলো, আগুন লাগলে তা এক মিনিট ও ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে ব্যবহার করতে হবে। এটা হলো প্রাথমিক পর্যায়ের ব্যবস্থাপনা। এটা করার মতো প্রশিক্ষিত জনবলেও সংকট আছে।’

মেয়াদউত্তীর্ণ অগ্নিনির্বাপক সিলিন্ডারের বিষয়টিতে সুনির্দিষ্ট করে এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘মেয়াদউত্তীর্ণ সিলিন্ডার বিস্ফোরক হিসেবে কাজ করবে না, এটা ঠিক। কিন্তু এটা দিয়ে আদতে কোনও কাজই হবে না। হয়তো দেখা যাবে সিলিন্ডারে যে প্রেশার দরকার তা নেই বা তা ফেটে যাবে। সুতরাং যেটুকু বাঁচার সুযোগ থাকে, এগুলোর মেয়াদ না থাকলে তাও সম্ভব নয়। বরং এগুলোতে কালক্ষেপণ ও ঝুঁকি বেড়ে যাবে।’

 

 

 

/এম/এসটি/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
যশোরে আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
যশোরে আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষে ফিরেছে অস্ট্রেলিয়া
টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষে ফিরেছে অস্ট্রেলিয়া
গাজায় ৪০০ ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশের অনুমতি দিলো ইসরায়েল
গাজায় ৪০০ ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশের অনুমতি দিলো ইসরায়েল
সবজির কেজি এখনও ৬০ টাকার বেশি, ২০০ ছাড়িয়েছে ব্রয়লার
সবজির কেজি এখনও ৬০ টাকার বেশি, ২০০ ছাড়িয়েছে ব্রয়লার
সর্বাধিক পঠিত
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
কামরাঙ্গীরচরে নতুন ভবন নির্মাণের অনুমতি দিলো ডিএসসিসি
কামরাঙ্গীরচরে নতুন ভবন নির্মাণের অনুমতি দিলো ডিএসসিসি
কুমিল্লায় বজ্রাঘাতে ৪ জনের মৃত্যু
কুমিল্লায় বজ্রাঘাতে ৪ জনের মৃত্যু
আরও কমলো সোনার দাম
আরও কমলো সোনার দাম
ব্যর্থতার অভিযোগে শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে আইনি নোটিশ
ব্যর্থতার অভিযোগে শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে আইনি নোটিশ