X
শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫
১৪ আষাঢ় ১৪৩২

ওয়াজ মাহফিল কীভাবে প্রভাব ফেলছে, শ্রোতা কি বাড়ছে?

সালমান তারেক শাকিল
২৩ মার্চ ২০১৯, ১৫:২২আপডেট : ২৩ মার্চ ২০১৯, ১৬:৫৬

ওয়াজ মাহফিল কীভাবে প্রভাব ফেলছে, শ্রোতা কি বাড়ছে? মানুষের ঘরে-ঘরে দ্বীন-ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে দেওয়ার গুরুত্ব থেকে ওয়াজ মাহফিল করা হয়ে থাকে। তবে শব্দদূষণ, বক্তাদের মধ্যে ধর্মের নামে বিভিন্ন উপ-দল ও শোবিজ তারকাদের নিয়ে বিষোদ্গার, নারীদের পর্দা করা নিয়ে কটূক্তিসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে এই আয়োজনকে ঘিরে। আলেমদের মতে, ওয়াজ মাহফিলের ইতিবাচক-নেতিবাচক দুই ধরনের প্রভাব আছে। অনেকের মন্তব্য, মাহফিলের শ্রোতা দিনে দিনে কমছে।
দেশের আলেমরা বলছেন, ইসলামি মাহফিলের সামাজিক গুরুত্বের জায়গা থেকে মাইক ব্যবহার এড়ানো যায় কিনা তা বিবেচনায় নেওয়া দরকার। কারণ অনেক সময় গভীর রাত পর্যন্ত মাইকে উচ্চ শব্দের কারণে শিশু-বৃদ্ধ নির্বিশেষে সবশ্রেণির মানুষের ঘুমে ব্যাঘাত ঘটে।  এ মাইকগুলোই ব্যবহার করা হয়

মাহফিলে অত্যধিক মাইক ব্যবহার প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌসের মন্তব্য, ‘কেউ মনে করতেই পারেন যে— এই এলাকায় শতভাগ মুসলিম থাকেন, কাজেই এখানে মাইক যতক্ষণ খুশি বাজতেই পারে। মুসলমান মাত্রই সব বিষয় পছন্দ করবে বা মেনে নেবে তা কিন্তু নয়। কারণ তাদের মধ্যে অসুস্থ মানুষও থাকতে পারে।’

ওয়াজের জন্য মাইক ব্যবহারকে বিরক্তির কারণ হিসেবে দেখছেন তরুণ আলেম ও লেখক সালাউদ্দীন। তিনি জানান, আগে ওয়াজ করার প্রবণতা কম ছিল। কোনও এলাকায় বছরে একটা মাহফিল হতো। ফলে একটা দিন মানুষ ওয়াজ মাহফিলকে উৎসব হিসেবে বরণ করে নিতো। এখন একই এলাকায় ওয়াজের মৌসুমে দশটা মাহফিল হচ্ছে। দুই-চার দিন পরপরই এ-পাড়া, ও-মহল্লায় প্যান্ডেল টাঙিয়ে, দশ-বিশটা মাইক বসিয়ে রাতব্যাপী বিকট শব্দে ওয়াজ হচ্ছে।

জামিয়া রাহমানিয়ার হাদিসের একজন শিক্ষক নিজের নাম প্রকাশ না করা শর্তে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জোর করে মানুষকে ওয়াজ শোনানোর কথা তো ইসলামে নেই। প্যান্ডেলের চারপাশের ২০০ মিটার এলাকাজুড়ে মাইক বসিয়ে লোকদেখানো মাহফিল দিয়ে ইসলামের কোনও ফায়দা হয় না।’

রাজধানীর মিরপুরের একটি মাদ্রাসার শিক্ষক মুফতি নূরুল ইসলাম। তিনি মনে করেন, বিভিন্ন কারণে ওয়াজের নিমগ্ন শ্রোতা কমেছে। তার প্রশ্ন, ‘উচ্চস্বরে শব্দের কারণে কে বিরক্ত হয় না? সবাই হয়। এ কারণে মাহফিলে শ্রোতার সংখ্যা কমছে। প্রতি বছর গ্রামে-মহল্লায় একাধিক মাহফিলের আয়োজন করা হচ্ছে। কিন্তু শ্রোতা কমছে। বয়ানের প্রতি মানুষের মনোযোগ আর আগ্রহ কমে যাচ্ছে।’

শ্রোতা কী আসলেই কমছে? এমন প্রশ্ন ছিল মানিকগঞ্জ ধামরাই উপজেলা বাজারের উলামা পরিষদের নেতা মুফতি আতিকুর রহমানের কাছে। তার উত্তর, ‘শ্রোতাদের সংখ্যা কমছে কিনা সেই প্রসঙ্গে যাবো না। তবে আমরা মাইকের সংখ্যা কমানোর কাজ শুরু করেছি। খুব সীমিত আকারে এ বছর উদ্যোগটি নিয়েছি। সাউন্ড বক্স ব্যবহার করে মাহফিল আয়োজনের বিষয়ে কথা বলেছি।’

বিশ্ব ইজতেমার উদাহরণ টেনে মুফতি আতিকুর রহমান বলেন, ‘ইজতেমায় তো লাখ-লাখ মানুষ অংশ নেয়। কিন্তু মাঠের বাইরে শব্দ যায় না। মাহফিলেও আমাদের এমন ব্যবস্থা করা দরকার।’

কারণ হিসেবে ধামরাইয়ের উলামা পরিষদের এই নেতা বলেন, ‘মাইক যদি উচ্চস্বরে বাজানো হয়, তাহলে অনেকে দোকানে বসেই ওয়াজ শুনতে চাইবেন। মাইকের অধিক ব্যবহারের কারণে দেখা যাচ্ছে, প্যান্ডেলে শ্রোতা নেই। যারা শুনতে পাচ্ছে, তারা প্যান্ডেলে আসবে কেন?’

মজলিসে দাওয়াতুল হকের অনুসারী মানিকগঞ্জ জেলার ঘিওর উপজেলার জামিয়াতুল আবরার মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা ফখরুদ্দীন বলেন, ‘রাস্তাঘাট বন্ধ করে মাহফিল হলে মানুষ দুর্ভোগে পড়ে। তাদের যেন ভোগান্তি না হয়, রাতের ঘুমে যেন ব্যাঘাত না ঘটে সেজন্য সঠিক সময়ে মাহফিল করা ভালো। মানুষকে কষ্ট দেওয়া হারাম।’

চিকিৎসকরা বলছেন, অত্যধিক শব্দে মাইক ব্যবহারের ক্ষতি অনেক ধরনের। এটি আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়। বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫-এর ক্ষমতাবলে শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা-২০০৬ প্রণয়ন করা হয়। বিধিমালার আওতায় নীরব, আবাসিক, মিশ্র, বাণিজ্যিক ও শিল্প এলাকা চিহ্নিত করে শব্দের মানমাত্রা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। আইন অমান্য করলে প্রথমবার অপরাধের জন্য এক মাস কারাদণ্ড বা অনধিক পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড এবং পরবর্তী অপরাধের জন্য ছয় মাসের কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার বিধান রয়েছে।

স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজের নাক-কান-গলা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মনি লাল আইচ লিটু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘উচ্চ শব্দে মাইক ব্যবহারের একটি আইন আছে। এটি পরিবেশ আইনে বিদ্যমান। সাধারণত ৫০ ডেসিমেলের ওপর বা বেশি হলে কানের সেল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। হেয়ারসেল নষ্ট হয়। উচ্চ রক্তচাপ বাড়ে। কাজের প্রতি মনোযোগ বাধাগ্রস্ত হয়। সবকিছুই জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। কাজেই পরিবেশ আইনে বিদ্যমান আইনে নির্ধারিত ডেসিমেলের অধিক জোরে মাইক বাজানো ঠিক নয়।’
নৃবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞান বিষয়ক অভিজ্ঞরা, সংস্কৃতিকর্মী আর ধর্মীয় শিক্ষাবিদরা বলছেন, ‘ওয়াজ মাহফিলের মাধ্যমে সামাজিক প্রভাবের বলয় তৈরি হয়। এটি ক্ষেত্রবিশেষে একইসঙ্গে ইতিবাচক ও নেতিবাচক। সামাজিক আচার-আচরণের মধ্য দিয়ে এসব দৃশ্যমান হয়। মানুষের মধ্যে তুলনামূলক ধর্মবিরোধ, রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধি ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে প্রভাবের বিষয়টি যেমন উল্লেখযোগ্য, তেমনই ধর্মীয় আবহ তৈরিতেও ভূমিকা রাখে ওয়াজ মাহফিল।’

অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস জানান, অতীতে ওয়াজের মধ্যে সামাজিক বিষয় উঠে আসতো। যদিও এটি অনেকটা ধর্মকেন্দ্রিক ছিল। এখন আলোচনার ধরন অনেকটা পাল্টেছে বলে মনে করেন তিনি, ‘এখন বক্তা মাঝে মধ্যে গান গেয়ে উঠছেন। এমনকি আদি রসাত্মক বিষয়ে আলোচনা করছেন। এর কারণ হতে পারে চাহিদা পাল্টেছে, শ্রোতা পাল্টেছে। আগে মানুষ যা শুনতে ওয়াজে যেত, এখন তারা অন্যকিছু শুনতে চায়।’

আলেমরা বলছেন, ‘তুলনামূলক ধর্মবিরোধ’ বিষয়টি বাংলাদেশের বক্তাদের মধ্যে লক্ষণীয়। প্রায় সব মাহফিলে মতাদর্শিক দৃষ্টিভঙ্গিগত বিরোধ নিয়ে চড়াও হন তারা। দাঁড়িয়ে দরুদ পড়া বা কিয়াম করাকে কেন্দ্র করে কওমি আলেম ও আলিয়াপন্থী আলেমদের দ্বন্দ্ব দেশের বহু অঞ্চলে মুসলমানদের মধ্যে আত্মীয়স্বজনভেদে বিভক্তি তৈরি করে রেখেছে। এই বিভক্তি থেকে কখনও কখনও সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। গত কয়েক বছরে সিলেট অঞ্চলে এ সংক্রান্ত মতবিরোধে প্রাণ হারিয়েছে কয়েকজন মানুষ।

মাহফিলে বিভিন্ন ধারা-উপধারা ও উপ-দলের পারস্পরিক বিরোধ ও বিষোদ্গার প্রসঙ্গে মাওলানা সালাউদ্দীন জাহাঙ্গীর বলেন, ‘ধর্মের নামে দল বা বিভক্তির শেষ নেই। এটা একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। সবসময়ই ধর্মের নামে বিভিন্ন দল-উপদল থাকে, বিশ্বাসের ভেদ-প্রভেদ থাকে। কিন্তু সেই ভেদ-মারেফত প্রকাশের মাধ্যমে একদল যদি অন্য দলের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বিষোদ্গার করে, তাহলে তা আর ধর্মরক্ষার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না।’

মাওলানা সালাউদ্দীন জাহাঙ্গীরের অভিযোগ, ‘বর্তমানে বহু বক্তার ওয়াজের প্রধান হাতিয়ার হচ্ছে ধর্মের নামে বিভিন্ন উপ-দলের বিষোদ্গার করা। হানাফি, সালাফি, আহলে হাদিস, দেওবন্দি, হেফাজতি, জামাতি, পীর-মুরিদি— এমন আরও বিভিন্ন উপ-দলের ভিন্ন মতকে জায়গা না দেওয়ার ঠিকাদারি যেন নিয়েছেন বক্তারা। ওয়াজের মধ্যে যাচ্ছেতাই ভাষায় একদলের বক্তা আরেক দলকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করছেন, অশ্রাব্য ভাষায় হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন, ‘ইহুদি-নাসারাদের দালাল’, ‘নাস্তিক-মুরতাদদের দোসর’— এমন আরও বিভিন্ন বিষোদ্গারে বিষিয়ে তুলছেন সাধারণ মানুষের মন।”

মাহফিলে মতবিরোধের আরেকটি বড় ক্ষেত্র কওমি ও জামায়াতি (মওদুদিপন্থী) আদর্শের বক্তাদের মধ্যে দেখা যায়। জামায়াতের আক্বিদা ও মওদুদিবাদ চর্চা নিয়ে কওমিদের সঙ্গে দ্বন্দ্বের বিষয়টি ঐতিহাসিক। ১৯৯১ সালে মাওলানা মোহাম্মদউল্লাহ হাফেজ্জি হুজুরের নেতৃত্বে চার শতাধিক আলেম ‘মওদুদিবাদ’ নিয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন। তাদের অবস্থান ছিল, মওদুদিবাদ ফেতনা। মুসলমানদের এসব থেকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়েছিল। এই বিরোধ এখনও চলছে। কওমিপন্থী বক্তারা জামায়াত ঘরানার বক্তাদের মন্তব্য নিয়ে সমালোচনা করেন।

অনেকের অভিযোগ, ইসলামের পর্দার বিধান সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে নারীদের উদ্দেশ্য করে ‘কটূক্তিমূলক’ শব্দ-বাক্য ব্যবহার করা হয়। এ প্রসঙ্গে লালবাগ জামিয়া কোরআনিয়া আরাবিয়ার মাদ্রাসার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খ্যাতনামা একজন মুফতি বলেন, ‘পর্দার বিধান সম্পর্কে অবশ্যই বলা যাবে। কিন্তু তা কটূক্তিমূলক যেন না হয়, সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে। তা না হলে নারীরা, যারা হয়তো পর্দার ক্ষেত্রে ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলেন না, তারা মানসিকভাবে আঘাত পান। ইসলামের দাওয়াত দিতে গিয়ে কাউকে জোর-জবরদস্তি করা যাবে না।’

সামাজিকভাবে মাহফিলের প্রভাব নিয়ে সংস্কৃতিকর্মীদের মধ্যে নানান মত আছে। অনলাইন পোর্টাল উম্মাহ ডটকমের সম্পাদক মাওলানা মুনির আহমেদ মনে করেন, ‘ইতিবাচক সামাজিক প্রভাব তো অবশ্যই রয়েছে। ওয়াজ মাহফিলে ইসলামের বিধি-বিধান, মুসলিম ঐতিহ্য এবং ব্যক্তি, পরিবার ও সামাজিক জীবনের সমস্যা ও সম্ভাবনার ওপর ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে আলোচনা হয়। এতে করে বয়স্ক নারী-পুরুষের পাশাপাশি শিশু-কিশোরদের মধ্যেও কম-বেশি প্রভাব পড়ে।’ মাওলানা মুনির আহমেদ

ওয়াজের ইতিবাচক কিছু দিক খুঁজে পেয়েছেন মুনির আহমেদ। তার পর্যবেক্ষণ বলছে, ‘ওয়াজ-মাহফিলকে কেন্দ্র করে স্থানীয় পর্যায়ে বিশাল জমায়েত হয়। এতে মুসলিম ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ববোধের চর্চা হয়। শিশু-কিশোরদের মধ্যে ওয়াজ মাহফিল ধর্মীয় উৎসব হিসেবে যেমন একটা আমেজ তৈরি করে, তেমেই ইসলামি সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হওয়া ও চর্চার একটা সুযোগ করে দেয়। ওয়াজ মাহফিলের দিন পুরো এলাকায় একটা ধর্মীয় আবহ বিরাজ করে। মানুষের মনে খারাপ কাজ পরিহার ও সৎভাবে জীবনধারণের একটা আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়। যারা ধর্মভীরু ও ইসলামসম্মত জীবনযাপন করেন, তাদের মনে উৎসাহ ও প্রেরণা যোগায় এসব আয়োজন।’

মাহফিলের প্রভাবের বিষয়টিকে শায়রুল কবির খান দেখছেন ভিন্নভাবে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংসদের এই সহ-সভাপতির পর্যবেক্ষণ, ‘বাংলাদেশে শীতের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ওয়াজ মাহফিল ও যাত্রা অনুষ্ঠিত হওয়ার সংস্কৃতি ছিল। মাদ্রাসা-মসজিদ ভিত্তিক ওয়াজ মাহফিল ও কলেজ-স্কুলভিত্তিক যাত্রাপালাসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড হতো। মাহফিলে দূর-দূরান্ত থেকে বক্তারা আসতেন। এমনকি ওয়াজ যেখানে আয়োজন করা হতো, সেই এলাকায় স্থানীয়দের আত্মীয়স্বজনরাও দূর-দূরান্ত থেকে মাহফিল শুনতে এসেছেন এমন দৃশ্য ছিল। যদিও পর্যায়ক্রমে তা হারিয়ে গেছে।’ শায়রুল কবির খান

এর কারণ উল্লেখ করে শায়রুল কবির খান বলেন, ‘গত ২০-২৫ বছরে ধর্মনিরপেক্ষতার প্রপাগান্ডার ভেতর দিয়ে বা প্রতিযোগিতার কারণে মাদ্রাসা ও মসজিদ ভিত্তিক মাহফিল বাধাগ্রস্ত হলো। অন্যদিকে ধর্মীয় গোঁড়ামির বাইরে যাত্রাপালা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। মূল্যবোধ নষ্ট হয়েছে। অযৌক্তিক প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে এখানকার মানুষের ধর্মীয় চেতনা ও সাংস্কৃতিক বিকাশ বন্ধ হয়ে গেছে।’

ওয়াজ মাহফিলের বক্তব্যে ইসলাম ধর্মের বাইরে অন্যান্য ধর্ম নিয়েও আলোচনা করা হয়। এতে করে ভিন্নধর্মাবলম্বীদের মনোভাব খেয়াল রাখার পরামর্শ দিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস। তিনি বলেন, ‘সমাজে ২ শতাংশ মানুষও যদি অন্য ধর্মের হয়ে থাকে তাহলে তাদের অধিকারের বিষয়ে যত্নবান হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। আপনার ধর্মাচার আপনি করতেই পারেন, কিন্তু জনপরিসরে করতে গেলে অন্যের সুবিধা-অসুবিধা আপনাকে দেখতে হবে। এজন্য নির্দিষ্ট জায়গা ও নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করা যেতে পারে। প্রশাসন এ ব্যাপারে দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে পারে।’ ড. নেহাল করিম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. নেহাল করিমের প্রশ্ন, ‘ওয়াজ মাহফিল কারা করেন? কারা শোনেন? এই যে বিশ্ব ইজতেমা হয় তুরাজ নদীর তীরে, এতে করে কি শহর থেমে থাকে? তাহলে মানেটা কী, পৃথিবীতে কোনও কিছুই অত্যাবশ্যকীয় না। তারপরও মানুষ করে।’
আরও পড়ুন-

ওয়াজ মাহফিল কি পেশায় পরিণত হচ্ছে?
‘আল্লাহ বলেন নো-নো, মুসা বলেন ইয়েস-ইয়েস’
ওয়াজ মাহফিলের যত ধারা
ওয়াজ রাজনীতি একাকার

 

/জেএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
টিভিতে আজকের খেলা (২৮ জুন, ২০২৫)
টিভিতে আজকের খেলা (২৮ জুন, ২০২৫)
কেন্দ্রে পদত্যাগপত্র পাঠালেন এনসিপির রাজশাহী জেলার প্রধান সমন্বয়কারী
কেন্দ্রে পদত্যাগপত্র পাঠালেন এনসিপির রাজশাহী জেলার প্রধান সমন্বয়কারী
পড়াশোনার জন্য শাসন করায় স্কুলশিক্ষার্থীর ‘আত্মহত্যা’
পড়াশোনার জন্য শাসন করায় স্কুলশিক্ষার্থীর ‘আত্মহত্যা’
চীন সফর ছিল রাজনৈতিক: দেশে ফিরে মির্জা ফখরুল
চীন সফর ছিল রাজনৈতিক: দেশে ফিরে মির্জা ফখরুল
সর্বাধিক পঠিত
বিরোধীদের নিষিদ্ধ করা বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের পথ নয়: দ্য ইকোনমিস্ট
বিরোধীদের নিষিদ্ধ করা বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের পথ নয়: দ্য ইকোনমিস্ট
ভাঙা হলো বিজয় সরণির ‘মৃত্যুঞ্জয়ী প্রাঙ্গণ’, হবে জুলাই স্মরণে ‘গণমিনার’
ভাঙা হলো বিজয় সরণির ‘মৃত্যুঞ্জয়ী প্রাঙ্গণ’, হবে জুলাই স্মরণে ‘গণমিনার’
যমুনা সেতু থেকে সরিয়ে ফেলা হচ্ছে রেলপথ
যমুনা সেতু থেকে সরিয়ে ফেলা হচ্ছে রেলপথ
মিরপুরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়ক বিভাজকে উঠে গেলো বাস, একজন নিহত
মিরপুরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়ক বিভাজকে উঠে গেলো বাস, একজন নিহত
এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিজ দফতরে উপস্থিতি ও সেবা নিশ্চিতের নির্দেশ
এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিজ দফতরে উপস্থিতি ও সেবা নিশ্চিতের নির্দেশ