X
মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪
১৭ বৈশাখ ১৪৩১
বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস

বন্দিদশা থেকে স্বাধীন দেশে যেভাবে ফেরেন বঙ্গবন্ধু

মাহবুব হাসান
১০ জানুয়ারি ২০২১, ১৩:০০আপডেট : ১০ জানুয়ারি ২০২১, ১৬:১৬

মুক্তিযুদ্ধের পুরোটা সময় পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি ছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ২৫ মার্চ, ১৯৭১ সালে তাঁকে গ্রেফতার করে পাকিস্তান সরকার। তাঁর দেশে ফেরার প্রক্রিয়া শুরু হয় ১৯৭১ সালের ২৪ ডিসেম্বর থেকে। ১৯৭২ সালের সাত জানুয়ারি ভোররাতে তাকে নিয়ে একটি উড়োজাহাজ যাত্রা করে লন্ডনে। ৮ জানুয়ারি লন্ডনে পৌঁছান বঙ্গবন্ধু। সেখানে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথের সঙ্গে বৈঠক করে পরদিন দেশের উদ্দেশে রওনা দেন তিনি। ফেরার পথে ভারতে যাত্রাবিরতি দিয়ে অবশেষে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে পৌঁছান বাঙালির মহানায়ক।

১০ জানুয়ারি দুপুর ১টা ৪১ মিনিটে তেজগাঁও বিমানবন্দরে নামেন জাতির জনক। সেখানকার জনসমুদ্র সাঁতরে রাজনীতির মহাকবি পৌঁছে যান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। লাখো জনতা সেখানে তাঁকে স্বাগত জানায়। আবেগঘন বক্তব্য দিয়ে দীর্ঘদিন পর বাসায় পৌঁছান, পরিবারের সান্নিধ্যে।

১৯৭২ সালের ১৬ জানুয়ারি নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর সাংবাদিক সিডনি শ্যানবার্গকে বঙ্গবন্ধু একটি সাক্ষাৎকার দেন। সেখানে তিনি তুলে ধরেন তার বন্দিজীবনের বৃত্তান্ত। ১৮ জানুয়ারি নিউ ইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত সেই সাক্ষাৎকারের শিরোনাম ছিল, ‘তিনি নিজের গ্রেফতার ও বন্দিদশার পূর্ণ বিবরণ দিলেন।’

বন্দিদশা থেকে স্বাধীন দেশে যেভাবে ফেরেন বঙ্গবন্ধু বঙ্গবন্ধুর উদ্ধৃতি দিয়ে শ্যানবার্গ লেখেন, ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়ি ঘেরাও করে পাকিস্তানি সেনারা অবিরাম গুলিবর্ষণ করে। পরে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একজন মেজর বঙ্গবন্ধুকে জানান, তাঁকে গ্রেফতার করা হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর অনুরোধে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বিদায় জানাতে তাঁকে কয়েক মুহূর্তের অনুমতি দেওয়া হয়। পরিবারের সবাইকে ডেকে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘ওরা আমাকে হত্যা করতে পারে। কিন্তু জানবে, একদিন আমার মানুষ মুক্ত হবে। আমার আত্মা তা দেখে শান্তি পাবে।’

শ্যানবার্গ আরও লেখেন, ‘তাঁকে জাতীয় পরিষদ ভবনে আনার পর বসার জন্য একটি চেয়ার দেওয়া হলো। “তারপর তারা আমাকে চা খেতে অনুরোধ করলো”, তা শুনে বঙ্গবন্ধু ঠাট্টার সুরে বললেন, ‘চমৎকার, এখনই তো আমার জীবনের চা খাওয়ার সেরা সময়।’

এরপর তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় সামরিক ছাউনির একটি স্কুলের নোংরা ও অন্ধকার ঘরে। ছয় দিন সেই ঘরে কাটান। মধ্যরাত থেকে সকাল ছয়টা পর্যন্ত তাঁকে থাকতে দেওয়া হলো জেনারেল টিক্কা খানের একটি ঘরে।

সাক্ষাৎকারে বঙ্গবন্ধু শ্যানবার্গকে আরও জানান, ১ এপ্রিল তাঁকে বিমানে করে নিয়ে যাওয়া হয় রাওয়ালপিন্ডিতে। তারপর তাঁকে সরিয়ে আনা হয় মিয়ানওয়ালির কারাগারে। থাকতে দেওয়া হয় ফাঁসির আসামিদের জন্য নির্ধারিত সেলে। মুক্তি পাওয়ার আগ পর্যন্ত তাঁকে সেখানে ও পাঞ্জাবের উত্তরে লায়ালপুর ও শাহিওয়ালের দুটি কারাগারে কাটাতে হয়। এই সময় পাকিস্তান সামরিক সরকার তাঁর বিরুদ্ধে ১২টি অভিযোগ এনে ‘বিচার’ শুরু করে। ১২টি অভিযোগের ছয়টির দণ্ড ছিল মৃত্যু এবং অভিযোগগুলোর একটি ছিল ‘পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা’।

বন্দিদশা থেকে স্বাধীন দেশে যেভাবে ফেরেন বঙ্গবন্ধু টাইমসে লেখা হয়, এই বিচার শেষ হয় চার ডিসেম্বর। ‘ইয়াহিয়া তার সেনা কর্তাদের রাওয়ালপিন্ডি ডেকে পাঠিয়ে গুলি করে শেখ মুজিবকে হত্যার দ্রুত প্রস্তুতির নির্দেশ দিলেন। কিন্তু যুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ায় তাঁকে ব্যস্ত হয়ে পড়তে হলো।’

৭ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধুকে মিয়ানওয়ালিতে ফিরিয়ে আনা হয়। ১৫ ডিসেম্বর, ঢাকায় পাকিস্তান বাহিনীর আত্মসমর্পণের একদিন আগে, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার জন্য ইয়াহিয়ার যে পরিকল্পনা ছিল তা বাস্তবায়নের চূড়ান্ত উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৫ ডিসেম্বর জেলখানার দায়িত্বরতদের জানানো হয়, নিয়াজিকে পূর্ব পাকিস্তানে বাঙালিরা হত্যা করেছে, তার প্রতিশোধ হিসেবে পরদিন সকালেই মুজিবকে হত্যা করা হবে। সে প্রস্তাবে সবাই এককথায় রাজি হয়। পরদিন ভোররাত চারটায় বঙ্গবন্ধুকে হত্যার জন্য নির্ধারিত সময়ের দুই ঘণ্টা আগে জেলের সুপার বঙ্গবন্ধুর সেলের দরজা খুলে ঢোকেন। বঙ্গবন্ধু জানতে চান, ‘আমাকে কি ফাঁসির জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে?’ তিনি আগেই দেখেছিলেন তাঁর সেলের বাইরে কবর খোঁড়া হয়েছে। তাঁকে বলা হয়েছিল, তাঁর নিরাপত্তার জন্য পরিখা খনন করা হয়েছে। জেল সুপার জানালেন, তাঁকে ফাঁসির জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে না। তবু সন্দেহ যায় না বঙ্গবন্ধুর। তাঁর ভাষ্যে, ‘আমি তাঁকে বললাম, যদি ফাঁসিই দেওয়া হয়, তাহলে আমাকে প্রার্থনার জন্য কয়েক মিনিট সময় দিন।’ সুপার বললেন, ‘না না, একদম সময় নেই। আপনাকে এখনই আমার সঙ্গে আসতে হবে, জলদি।’

বঙ্গবন্ধুকে কয়েক মাইল দূরে এক অজ্ঞাত স্থানে কয়েক দিনের জন্য সরিয়ে নেন জেল সুপার। সেখানে নয় দিনের মতো কাটান তিনি। জেলের কর্মকর্তারা জেল সুপারকে বঙ্গবন্ধুর ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি কিছু জানেন না বলে জানান। এরপর এক পুলিশ অফিসার সেই সুপারকে জানান, বঙ্গবন্ধুকে লুকিয়ে রাখার আর প্রয়োজন নেই, জুলফিকার আলি ভুট্টো ১৯ ডিসেম্বর পাকিস্তানের শাসনভার গ্রহণ করেছেন, তিনি মুজিবের সঙ্গে কথা বলতে চান।

গোপন আস্তানা থেকে বেরিয়ে আসার পর রাওয়ালপিন্ডিতে নিয়ে যাওয়া হয় বঙ্গবন্ধুকে। সেখানে রাষ্ট্রপতির ভবনে তাঁকে গৃহবন্দি করা হয়। ২৪ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে আসেন ভুট্টো।

বঙ্গবন্ধুর উদ্ধৃতি দিয়ে শ্যানবার্গ বলেন, ভুট্টোর মনে হয়েছিল, মুজিবকে হত্যা করা হলে বাংলাদেশে আটকে পড়া প্রায় এক লাখ পাকিস্তানি সেনাদের হত্যা করা হতে পারে। এ কাজের জন্য সবাই তাঁকে অর্থাৎ ভুট্টোকেই দায়ী করবে। তাই তাকে হত্যা করা হয়নি।

“মুজিব জানালেন, ভুট্টো তাঁকে পাকিস্তানের দুই প্রদেশের মধ্যে কোনও রকম একটা সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্য জোরাজুরি করেন। মুজিব বলেন, ‘আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, আমি কি মুক্ত না এখনও বন্দি? আমি যদি মুক্ত হই তাহলে আমাকে যেতে দিন। আর যদি বন্দি হই তাহলে কোনও কথা বলতে প্রস্তুত নই’।”

ভুট্টো তাঁকে জানালেন তিনি মুক্ত, তবে ফেরত পাঠাতে আরও দিনকয়েক লাগবে। একপর্যায়ে ভুট্টো দাবি করেন, পাকিস্তানের দুই অংশ তখন পর্যন্ত আইনের চোখে একই রাষ্ট্রের অন্তর্গত। জবাবে বঙ্গবন্ধু তাঁকে মনে করিয়ে দেন, বিগত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়ী হয়েছিল, কিন্তু সে ফলাফল মানা হয়নি। ‘পাকিস্তান যদি এখনও অবিভক্ত দেশ হয় তাহলে আপনি দেশের প্রেসিডেন্ট ও প্রধান সামরিক শাসক নন, আমি।’

৭ জানুয়ারি তৃতীয় ও শেষবারের মতো বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করেন ভুট্টো। বঙ্গবন্ধু তাঁকে বলেন, ‘আজ রাতেই আমাকে মুক্তি দিতে হবে, এ নিয়ে অযথা বিলম্বের সময় নেই। হয় আমাকে মুক্তি দিন অথবা মেরে ফেলুন।’ ভুট্টো তাঁকে বলেন, এত দ্রুত সব আয়োজন করা কঠিন। শেষ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুকে লন্ডনে পাঠাতে সম্মত হন ভুট্টো।

বাংলাদেশ স্বাধীনের পর বঙ্গবন্ধুর মুক্তির জন্য পাকিস্তানের সামরিক জান্তাকে চাপ দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ৬৭টি দেশের সরকার প্রধানকে চিঠি দেন। ৮ জানুয়ারি সকাল ৭টায় বিবিসির ওয়ার্ল্ড সার্ভিসে প্রচারিত খবরে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতা শেখ মুজিবুর রহমান বিমানযোগে লন্ডনে আসছেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই উড়োজাহাজটি লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দরে অবতরণ করবে।’

বন্দিদশা থেকে স্বাধীন দেশে যেভাবে ফেরেন বঙ্গবন্ধু অবতরণের পরপরই ব্রিটিশ বৈদেশিক দফতরের কর্মকর্তারা রাষ্ট্রীয় অতিথির মর্যাদা দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে স্বাগত জানান। ব্রিটিশ সরকারের সম্মানিত অতিথি হিসেবে লন্ডনের ক্ল্যারিজেস হোটেলে নিয়ে আসা হয় তাঁকে। বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতির কথা জেনে হাজার হাজার বাঙালি ‘জয় বাঙলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগানে লন্ডনের আকাশ-বাতাস মুখর করে তোলে। দুপুরের দিকে এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘এক মুহূর্তের জন্য আমি বাংলাদেশের কথা ভুলিনি। আমি ধরে নিয়েছিলাম ওরা আমাকে হত্যা করবে। আমি আপনাদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাবো না। কিন্তু আমার জনগণ মুক্তি অর্জন করবে।’

বঙ্গবন্ধু যখন লন্ডনে পৌঁছান, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী অ্যাডওয়ার্ড হিথ তখন ছিলেন লন্ডনের বাইরে। বঙ্গবন্ধুর পৌঁছানোর কথা শুনে পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি বাতিল করে প্রধানমন্ত্রী হিথ ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে ছুটে আসেন এবং বঙ্গবন্ধুকে নজিরবিহীন সম্মান দেখান। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তার কার্যালয়ের বাইরে এসে গাড়ির দরজা খুলে ততক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলেন, যতক্ষণ না বঙ্গবন্ধু গাড়ি থেকে বেরিয়ে না এলেন। ৮ জানুয়ারি রাতে ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথের সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে স্বীকৃতির বিষয়টি উত্থাপন করেন।

৯ জানুয়ারি সকালে লন্ডনে বসেই টেলিফোনে ইন্দিরা গান্ধী-বঙ্গবন্ধুর মধ্যে আধাঘণ্টা আলোচনা হয়। বঙ্গবন্ধুকে অভিনন্দন জানান ইন্দিরা গান্ধী এবং অনুরোধ করেন, ঢাকার পথে যেন তিনি দিল্লিতে যাত্রাবিরতি করেন। বঙ্গবন্ধু আমন্ত্রণ গ্রহণ করলেন এবং দিল্লির উদ্দেশে রওনা হন।

দিল্লির ‘এক্সপ্রেস’ পত্রিকার বিবরণ অনুযায়ী, ‘কালো-ধূসর ওভারকোট পরে বঙ্গবন্ধু উড়োজাহাজের সিঁড়ি বেয়ে নামলেন। প্রেসিডেন্ট ভি. ভি. গিরি বঙ্গবন্ধুকে আলিঙ্গন করলেন। পাশে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী স্বাগত জানাচ্ছিলেন। তখন ২১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে অভিনন্দন জানানো হয়। শুভেচ্ছা পর্ব শেষে বঙ্গবন্ধু তিন বাহিনীর ১৫০ সদস্যের গার্ড অব অনার পরিদর্শন করেন এবং পরে ভিআইপি প্যান্ডেলে যান। সেখানে তাঁকে ফুল ছিটিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়।

১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু ঢাকা ফিরে আসেন বেলা ১টা ৪১ মিনিটে। বিমানবন্দর ও রাস্তার দুপাশে তখন অপেক্ষমাণ লাখো জনতা। সবার কণ্ঠে ‘জয় বাঙলা, জয় বঙ্গবন্ধু।’

অবতরণের আগে কমেট বিমানটি বঙ্গবন্ধুর ইচ্ছের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে প্রায় ৪৫ মিনিট বিমানবন্দরের ওপর চক্রাকারে ঘুরতে থাকে। উপর থেকে সোনার বাংলাকে অবলোকন করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন তিনি।

মাটিতে পা রেখেই আবেগে কেঁদে ফেলেন বঙ্গবন্ধু। বিমানবন্দরে অস্থায়ী সরকারের সদস্য, মুক্তিযোদ্ধাসহ মুক্তিকামী সব বাঙালি অশ্রুসজল নয়নে বরণ করেন ইতিহাসের বরপুত্রকে। সেখান থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গিয়ে দেশবাসীর সামনে প্রায় ৩৫ মিনিট দিকনির্দেশনামূলক গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ শেষে বাড়ি ফেরেন জাতির জনক।

ভারতীয় কূটনীতিক শশাঙ্ক শেখর ব্যানার্জি লন্ডন থেকে বঙ্গবন্ধুর সহযাত্রী হয়েছিলেন। তিনি লিখেছেন, ‘৯ জানুয়ারি ১৯৭২, ভোর ছয়টা। লন্ডন হিথরো বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে পৌঁছান বঙ্গবন্ধু। তাঁকে স্বাগত জানালেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্র ও কমনওয়েলথ বিভাগের কর্মকর্তা ইয়ান সাদারল্যান্ড ও লন্ডনে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার আপা বি পন্থ। আমাকে দেখে আবেগাপ্লুত শেখ মুজিব বলেন, ‘ব্যানার্জি, এখানেও আছেন!’

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হিথের সঙ্গে শেখ মুজিবের বৈঠকের ব্যবস্থা করে দেন ইয়ান। আর ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ করিয়ে দেন আপা বি পন্থ।

বন্দিদশা থেকে স্বাধীন দেশে যেভাবে ফেরেন বঙ্গবন্ধু ব্যানার্জি লিখেন, “ফেরার পথে বিমানের সিটে সামনের টেবিলে বঙ্গবন্ধুর প্রিয় সুগন্ধময় এরিনমোর তামাক, আর সেই বিখ্যাত পাইপ রাখা ছিল। দেশে ফেরার জন্য উৎফুল্ল মুজিবের তখন তর সইছে না’। আপ্লুত কণ্ঠে তিনি বলে উঠলেন, ‘স্বাধীন বাংলাদেশ, আমার বাংলাদেশ।’ তিনি ধন্যবাদ জানালেন দীর্ঘদিন তাঁকে সহযোগিতার জন্য। বললেন, ‘ব্যানার্জি, এবার একটি বিশেষ সহযোগিতা চাই।” শশাঙ্ক বললেন, ‘আয়ত্তের মধ্যে হলে অবশ্যই চেষ্টা করবো।’ বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘দিল্লিতে ইন্দিরার সঙ্গে বৈঠকের আগেই তাঁর কাছে একটি খবর পৌঁছানো দরকার। বাংলাদেশ থেকে ভারতীয় মিত্রবাহিনী সদস্যদের ৩১ মার্চ ১৯৭২ সালের মধ্যে ভারতে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি চূড়ান্ত করতে হবে।’ তিনি বলেন, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর এ বিষয়ে কথা হয়েছে। ভারতীয় মিত্রবাহিনী চলে গেলে ব্রিটিশ সরকারের স্বীকৃতি পেতে বাংলাদেশের আর বাধা থাকবে না।

শশাঙ্ক ব্যানার্জি বলেন, “উড়োজাহাজ আকাশে থাকতেই বঙ্গবন্ধু দাঁড়িয়ে গাইতে লাগলেন, ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি’। এরপর বঙ্গবন্ধু চোখের পানি লুকানোর চেষ্টা করে বললেন, ‘যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য আরও কঠোর সংগ্রাম অপেক্ষা করে আছে। বুকে শুধু একটাই বল, আমার দেশের আপামর মানুষ।’

 

/এফএ/

/এফএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ইন্দোনেশিয়ার রুয়াং আগ্নেয়গিরিতে আবারও অগ্ন্যুৎপাত,সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি
ইন্দোনেশিয়ার রুয়াং আগ্নেয়গিরিতে আবারও অগ্ন্যুৎপাত,সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি
ধর্ষণের পর ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ, ৩ জন গ্রেফতার
ধর্ষণের পর ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ, ৩ জন গ্রেফতার
রাজধানীতে মাদকদ্রব্যসহ গ্রেফতার ২০
রাজধানীতে মাদকদ্রব্যসহ গ্রেফতার ২০
লেভার হ্যাটট্রিকে দুইয়ে ফিরেছে বার্সা
লেভার হ্যাটট্রিকে দুইয়ে ফিরেছে বার্সা
সর্বাধিক পঠিত
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
এসি কেনার আগে মনে রাখতে হবে এই ৭ বিষয়
এসি কেনার আগে মনে রাখতে হবে এই ৭ বিষয়
জালিয়াতির মামলায় সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তার ২৬ বছরের কারাদণ্ড
জালিয়াতির মামলায় সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তার ২৬ বছরের কারাদণ্ড
মঙ্গলবার দুই বিভাগের সব, তিন বিভাগের আংশিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে
মঙ্গলবার দুই বিভাগের সব, তিন বিভাগের আংশিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে
খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি বন্ধের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসছে সরকার
খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি বন্ধের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসছে সরকার