(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ২৯ জানুয়ারির ঘটনা।)
কায়রোর প্রভাবশালী ‘দৈনিক আল আহরাম পত্রিকার’ সম্পাদকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান পরলোকগত প্রেসিডেন্ট নাসের এর রাজনৈতিক উপদেষ্টা মুহাম্মদ হাসনাইন হেইকল এসেছিলেন বাংলাদেশ সফরে। তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন। উপমহাদেশের দেশগুলোর পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে তাদের মধ্যে আলাপ হয়। বাংলাদেশ থেকে তিনি কায়রো ফেরার পথে ভারত ও পাকিস্তানও সফর করেছিলেন।
বাংলাদেশ সফরের শেষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, আপনাদের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক অসামান্য ব্যক্তিত্বের অধিকারী।। এশিয়ায় এমন ব্যক্তিত্বসম্পন্ন লোকের সঙ্গে আমার দেখা হয়নি।
বাংলাদেশে চারদিন সফরের পর নয়াদিল্লি যাত্রার প্রাক্কালে হেইকল বিপিআই এর সঙ্গে আলোচনা করছিলেন। তিনি বলেন, ‘আপনারা খুবই ভাগ্যবান যে আপনাদের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পেয়েছেন।’ তিনি আশা করেন, ‘বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সম্ভাব্য স্বল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ তার সব সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারবে।’ তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতা যুদ্ধকালে ব্যাপক ধ্বংসলীলার পরও মাত্র এক বছরের মধ্যে আপনারা যে সাফল্য অর্জন করেছেন তা দেখে আমরা বিস্মিত হয়েছি।’ কায়রো ফেরার পথে তারা ভারত ও পাকিস্তান সফর করবেন বলেও তিনি জানান।
সেখানে ভারতের ইন্দিরা গান্ধী পররাষ্ট্রমন্ত্রী সদস্যসহ অন্যান্য মন্ত্রী ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করবেন। এছাড়া পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলী ভুট্টোর সঙ্গেও দেখা করে আটক বাঙালিদের দেশে প্রত্যাবর্তনসহ দেশের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনা করবেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
বঙ্গবন্ধুকেই ক্ষমতায় চায়
‘শত অসুবিধার পরও বঙ্গবন্ধুকে ক্ষমতায় দেখতে চাই। আমাদের সব রকম অসুবিধা ও সমস্যা বঙ্গবন্ধু ক্ষমতায় থাকলেই সবচেয়ে বেশি ভালো ভাবে সমাধান হবে’—কথাগুলো বলছিলেন ৬৫ বছরের বৃদ্ধ আবদুস সাত্তার। ঢাকা থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরের এক গ্রামে বিবিসির বিশেষ প্রতিনিধির এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। ১৯৭৩ সালের শুরুতেই চারপাশে যখন বাংলাদেশের প্রথম নির্বাচনের ডামাডোল তখন তার বাসভবনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর সম্পর্কে তার মনোভাব জিজ্ঞাসা করলে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘দেশের স্বাধীনতার পর তিনি নিজে গুরুতর সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন কিন্তু এসব সমস্যাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে জড়িত করা যায় না।’ তিনি আরও বলেন, তার তিন একর কৃষিজমির জন্য নিয়মিত সার, পাওয়ার পাম্প সরবরাহ নেই; তিনি কাপড় খাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের অত্যধিক মূল্য সম্পর্কে অভিযোগ করেন। তার মতে স্বাধীনতার পর এত স্বল্প সময়ের মধ্যে বঙ্গবন্ধু সব অসুবিধা দূর করবেন বলে তিনি আশা করেন না। তিনি মনে করেন, বর্তমানে তিনি যেসব অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন তা কেবল মাত্র জাতির পিতা সমাধান করতে পারবেন।
মুক্তিযোদ্ধার কণ্ঠেও একই সুর
বিবিসির এই সাংবাদিক একজন মুক্তিযোদ্ধার সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন। ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (মোজাফফর) কালিয়াকৈর থানা সাংগঠনিক সম্পাদক আসন্ন সাধারণ নির্বাচন সম্পর্কে তার অভিমত ব্যক্ত করেন। এই মুক্তিযোদ্ধা অভিমত দেন, বঙ্গবন্ধু ও তার পার্টি বাংলাদেশ পার্লামেন্টের তিনশ আসনে জয়লাভ করবে। সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বলে স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন। তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু আরও নানা কারণে ব্যস্ত থাকার পরও বিশেষ সাক্ষাৎকার দান করায় তিনি খুবই খুশি হয়েছেন। ১০ মিনিট সাক্ষাৎকারে তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশের স্বাধীনতা উত্তরকালে দেশের বিভিন্ন অগ্রগতি ও অপরাপর বিষয়ে আলোচনা করেন।
যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার চেষ্টা শুরু
দুদিনের যুদ্ধবিরতি আরও শত শত বার লঙ্ঘনের খবরের মধ্য দিয়ে ভিয়েতনামে শান্তি স্থাপন প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে। চারদলীয় যৌথ সামরিক কমিশন সায়মনে এক বৈঠকে মিলিত হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, উত্তর ও দক্ষিণ ভিয়েতনাম এর সমন্বয়ে এ যৌথ সামরিক কমিশন গঠিত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও উত্তর ভিয়েতনাম ও অস্থায়ী বিপ্লবী সরকারপক্ষ সকালে ও বিকালে অধিবেশন বৈঠকে মিলিত হয় কিন্তু তাতে কোনও লাভ হয়নি। এসব বৈঠকে কথোপকথন ছাড়া আর কিছুই হয়নি।