(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ৬ আগস্টের ঘটনা।)
প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, লক্ষ লক্ষ মানুষের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের স্বাধীনতাকে কোনও শক্তি নস্যাৎ করতে পারবে না। ১৯৭৩ সালের এদিন তার সম্মানে কানাডাস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনারের প্রদত্ত এক সংবর্ধনা সভায় বক্তৃতা করছিলেন বঙ্গবন্ধু।
তিনি বলেন, স্বাধীনতাবিরোধীরা ষড়যন্ত্র করছে। কিন্তু বাংলাদেশ টিকে থাকবে স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসেবে। এ সময় বাংলাদেশে পাকিস্তানি ধ্বংসযজ্ঞ এবং বাংলাদেশ সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রমের কথা উল্লেখ করেন তিনি। বঙ্গবন্ধু বলেন, পাকিস্তানি ধ্বংসযজ্ঞের কারণে পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় অসুবিধা হলেও কাউকে অনাহারে মরতে দেওয়া হয়নি।
দেশের বাইরে থাকা বাঙালিদের জাতি গঠনে সরকারকে সাধ্যমতো সাহায্য করার আহ্বানও জানান প্রধানমন্ত্রী। এ সময় বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘পাকিস্তানিরা শুধু বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে নাই, কিছু লোকের নীতিবোধও নষ্ট করেছে।’
চরিত্র গঠনের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, ‘কোনও জাতির প্রগতির জন্য চরিত্রবল অপরিহার্য।’ সরকারের ওপর আস্থা রাখতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানান বঙ্গবন্ধু। তিনি আরও বলেন, ‘যারা গত ২৫ বছর কষ্ট ভোগ করেছে, ত্যাগ স্বীকার করেছে, জনগণের সমস্যাগুলো তাদের অজানা নয়। জনসাধারণের কল্যাণই তাদের কাছে সবচেয়ে বড়।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, স্বাধীনতার পরবর্তী ১৮ মাস তিনি দেশে স্থায়ী সরকার প্রতিষ্ঠা করেছেন, সংবিধান দিয়েছেন, আইনশৃঙ্খলার নিশ্চয়তা বিধান করেছেন এবং সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় পদক্ষেপ নিয়েছেন। সরকার ব্যাপক তৎপরতা চালিয়ে পাকিস্তানি সেনাদের হাতে ধ্বংসপ্রাপ্ত সেতু-সড়ক ও খাদ্য গুদাম বিনির্মাণ করেছেন।
বঙ্গবন্ধু বলেন, সোনার বাংলা গঠনের জন্য সোনার মনের মানুষ দরকার। এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব তোফায়েল আহমেদও বক্তৃতা করেন। তিনি বলেন, সরকার শূন্য অবস্থা থেকে শুরু করে স্বাধীনতার পর অনেক কিছু করেছে। এ সরকার সংবিধান পাস করেছে, ব্যাংক, বিমা ও বড় বড় শিল্প জাতীয়করণ করেছে।
কমনওয়েলথ সম্মেলন সমঝোতা সৃষ্টি করবে
প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আশা প্রকাশ করেন, কমনওয়েলথ সম্মেলন বিভিন্ন জাতির মধ্যে সমঝোতা সৃষ্টি করবে এবং বিশ্বের সমস্যাগুলো সমাধানে সহায়তা করবে।
এদিন রাতে এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে তিনি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় শান্তির নিশ্চয়তা বিধানের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, একে অন্যের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি গোষ্ঠী-নিরপেক্ষতা ও স্থায়ী শান্তি নীতির কথা আবারও ঘোষণা করেন। উন্নয়নকামী দেশগুলোকে সাহায্য করতে উন্নত দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানান বঙ্গবন্ধু।
খাদ্য ঘাটতি পূরণে উদ্যোগ
বাংলাদেশ সরকার দেশের খাদ্য ঘাটতি পূরণে ২৪ লাখ ৫০ হাজার টন খাদ্যশস্য সংগ্রহের ব্যবস্থা করেছে। এরমধ্যে ১১ লাখ ২০ হাজার টন খাদ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের সচিব বলেন, অস্ট্রেলিয়া থেকে খাদ্য আমদানি করা হচ্ছে এবং চলতি সালের ডিসেম্বর নাগাদ তা বাংলাদেশে পৌঁছাবে।
তিনি বলেন, ১১ লাখ ২০ হাজার টন খাদ্যশস্য বাংলাদেশ সরকার নগদ অর্থ দিয়ে কিনেছে। পাঁচ লাখ ২০ হাজার টন খাদ্যশস্য বিভিন্ন দেশের সরকারি সংস্থার কাছ থেকে সাহায্য হিসেবে পাওয়া যাবে।
বিপুল বকেয়া বিল আদায়
সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সহযোগিতায় একদিনে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে কারফিউ দিয়ে বিদ্যুৎ, পানি ও টেলিফোনের বকেয়া বিল আদায় করেছে বলে খবরে বলা হয়।
এদিন বিকালে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগ আয়োজিত জনসভায় ভাষণদানকালে সমাজবিরোধীদের উৎখাতে আইন প্রয়োগকারীকে তথ্য দেওয়ার আহ্বান জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মালেক উকিল।