X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

সংবিধানের পর্যালোচনা চান মেনন

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২৬ জানুয়ারি ২০২২, ১৬:০২আপডেট : ২৬ জানুয়ারি ২০২২, ১৬:০২

দেশের সংবিধান রচনার ৫০ বছরে এসে সংবিধান পর্যালোচনার কথা বললেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছরে এই সংবিধানের পর্যালোচনা হওয়া প্রয়োজন। সংসদ নেতাকে অনুরোধ জানাই তিনি যেন এই সংসদের আগামী অধিবেশনে সংবিধান পর্যালোচনার জন্য বিশেষ কমিটি গঠন করে দেন। যেখানে ধর্মীয় রাজনীতি থেকে শুরু করে সব বিষয়ে আমরা নতুন করে ভাবতে পারবো। সংবিধানের ৭০ বিধি প্রশ্নে সংবিধান সংশোধন অতীব জরুরি বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

বুধবার (২৬ জানুয়ারি) জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।

বিভিন্ন সময়ে দেশের সংবিধানের মৌলিক চরিত্র বদল হয়েছে উল্লেখ করে সাবেক মন্ত্রী মেনন বলেন, বঙ্গবন্ধু সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে যে সংবিধান দিয়েছিলেন তা সংসদীয় ব্যবস্থার অন্যতম শ্রেষ্ঠ সংবিধান। দুর্ভাগ্যজনকভাবে তাঁর আমলেই এই সংবিধানের মৌল বিষয়গুলোর পরিবর্তন ঘটেছিল। আর সামরিক শাসকরা নিজেদের ক্ষমতার স্বার্থে এবং পাকিস্তানি রাজনীতি ফিরিয়ে আনতে ওই সংবিধানকে ভোতা ছুরি দিয়ে জবাই করেছিল। সংবিধানের দ্বাদশ ও পঞ্চদশ সংশোধনীতে সংবিধানের মৌল চরিত্র কিছুটা ফিরিয়ে আনলেও এমন সব বিধি বর্তমানে রয়ে গেছে যা সরকার পরিচালনায় প্রধান নির্বাহীর একক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত করেছে। এবং সংবিধানকে ধর্মীয় রূপ দিয়েছে।

তিনি বলেন, বিএনপির দ্বাদশ সংশোধনীর সময় রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য মরহুম আবদুস সামাদ আজাদের নেতৃত্বে যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল তারা তা মানেনি। যার কারণে সম্প্রতি অলি আহমেদ ক্ষমা চেয়েছেন।

১৪ দলের শরিক দলের অন্যতম এই সদস্য বলেন, নির্বাচন নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। বিএনপি সুষ্ঠু নির্বানের জন্য নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে কেবল সরবই নয়, সরকার উৎখাতের  স্লোগান দিচ্ছে। কিন্তু এসব নিয়ে কথা বলার সময় তারা নিজেদের দিকে তাকিয়ে দেখে না। ২০০৬ সালে দেড় কোটি ভুয়া ভোটার ও নিজের লোককে প্রধান উপদেষ্টা করার জন্য যে ষড়যন্ত্র করেছিল তারই পরিণতিতে এদেশকে আরেকটি সেনাশাসন দেখতে হয়েছে। জানিনা এবার বিএনপির লক্ষ্য কী? কী তাদের উদ্দেশ্য? তারা নিশ্চয়ই খোলসা করে বলছে না। কিন্তু কার্যাবলিতে স্পষ্ট তারা একটি অস্বাভাবিক সরকার এখানে চায়। তারা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য একটি স্বাধীন নির্বাচন কমিশন, মনোনয়ন বাণিজ্য, অর্থ, ধর্ম ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপমুক্ত নির্বাচনি ব্যবস্থার কথা বলেন না। কারণ তারা এই ব্যবস্থাই বহাল রাখতে চায়। আমাদের বাম দাবিদার বন্ধুরা নির্বাচনি সংস্কারের কথা বললেও তাদের মূল দাবি এখন নির্বাচনকালীন সরকার। তাদের মধ্যে কেউ কেউ সরাসরি, কেউ বা যুগপৎ সমন্বিত আন্দোলনের নামে তাদের সঙ্গে শরিক হবে সেই আলামতও স্পষ্ট।

চলমান ইউপি নির্বাচন প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়ন বাণিজ্য, অর্থ ও পেশী শক্তি এবং প্রশাসন ও ইসির নিশ্চেষ্ট ভূমিকা সমগ্র নির্বাচনে জনগণের আস্থা নষ্ট করেছে। নারায়ণগঞ্জের মতো ব্যতিক্রমী নির্বাচন মানুষকে আশা দেখিয়েছে। মানুষ নারায়ণগঞ্জের মতো ব্যতিক্রমী নির্বাচন জাতীয় নির্বাচনেও দেখতে চায়। সেটাই নিশ্চিত করতে হবে। আর এই সরকারকে বহাল রেখেই সেটা সম্ভব। এজন্য প্রয়োজন সুদৃষ্টি। নির্বাচনি আইন ও আচরণ বিধি মানা, অর্থ, পেশী শক্তি ও প্রশাসনের ভূমিকা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা।

তিনি বলেন, সরকার দেরিতে হলেও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের আইন এনেছে। কিন্তু আইনটি অসম্পূর্ণ এবং এটা সংশোধন করতে হবে। না হলে বিতর্ক অব্যাহত থাকবে।

মেনন খান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি’র নিয়োগকর্তা হিসেবে তাদের কুকর্মের দায় রাষ্ট্রপতির ওপর এসে পড়ে। এই উপাচার্যরা (ভিসি) কী ধরণের স্বৈরশাসক  ও দুর্নীতিবাজ হয়ে ওঠেন এবং চাকরি বাণিজ্যে লিপ্ত হন সেটা আমরা দেখেছি। বর্তমানে সব ভিসি শাহজালালের পক্ষে দল পাকিয়েছেন। সরকারকে বলবো, শিক্ষামন্ত্রীকে বলবো, ছাত্রদের দাবি মেনে নিন। একজন ভিসির জন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংস হতে পারে না। শিক্ষার্থীদের জীবন নষ্ট হতে পারে না।

রাষ্ট্রপতির ভাষণের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি সরকারের উন্নয়নের বিশদ বর্ণনা করেছেন। সরকারের প্রণীত এই ভাষণে প্রশাসন, রাষ্ট্র ও জনজীবনের সমস্যা নিয়ে রাষ্ট্রপতির সরস মন্তব্যে কঠিন সত্যগুলো থেকে মানুষ বঞ্চিত হয়েছেন। ভাষণে ক্রমবর্ধমান বৈষম্যের কোনো কথা উল্লেখ নেই। করোনার সময়েও আমাদের দেশে বিপুল সংখ্যক মানুষ ধনী হয়েছেন। আবার বিপুল সংখ্যক দরিদ্র হয়েছেন।

ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি বলেন, দুর্নীতিতে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার নিচের দিকে থেকে কেবল আফগানিস্তানের ওপরে আছে। এজন্য নিশ্চয়ই আমরা লজ্জিত। প্রধানমন্ত্রী এই সংসদে বলেছিলেন, ফুয়েল না দিলে ফাইল নড়ে না। এখন সেই দুর্নীতির ফুয়েলের দাম এতই বেড়েছে যে ফাইল নড়ানো মুশকিল হয়ে পড়েছে। অর্থমন্ত্রীর কাছে অর্থ পাচারকারীর তালিকা চাওয়ার পর উল্টো উনি এই তালিকা এমপিদের কাছে চেয়েছেন। যেন এমপিরা অসত্য কথা বলেছেন।

তিনি বলেন, এটা সত্য করোনা মোকাবিলায় প্রতিবেশীদের চেয়ে সফল কিন্তু টিকা প্রদানে আমরা দক্ষিণ এশিয়ায় আফগানিস্তানের ওপরে মাত্র। টিকা সংগ্রহ নিয়ে যে কেলেঙ্কারি হয়েছিল তার হিসাব কিন্তু আমরা পাইনি। দেশে টিকা উৎপাদনের চুক্তির বাস্তবায়ন দেখছি না।

তিনি বলেন, গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতনের দাবিতে রাস্তায় দেখি। তাদের আন্দোলনের পেছনে ষড়যন্ত্র দেখি কিন্তু সমস্যা সমাধানের বিষয়টি খুঁজে দেখার চেষ্টা দেখি না। নারী শ্রমিকরা সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যে যৌন নির্যাতনসহ মৃত্যুর সম্মুখীন হয়- সেই বিষয়ে সরকার ও সমাজ উদাসীন।

তিনি বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে র‍্যাবের ৭ জন প্রাক্তন ও বর্তমান কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবস্থা গ্রহণ এবং বাইডেনের গণতন্ত্র সম্মেলনে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ না জানানো নিয়ে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো উল্লসিত। এই বিষয়ে সরকারের মূল্যায়ন রাষ্ট্রপতির ভাষণে থাকলে ভালো হতো। কারণ এই বিষয়ে পররাষ্ট্র ও অন্যান্য মন্ত্রীদের বক্তব্যে মনে হয় আমরা যেন অপরাধী। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করে সব ঠিকঠাক হয়ে যাবে। সামনের সম্মেলনে আমাদের ডাকা হবে। এতে মনে হয় বিষয়টি নিয়ে সরকারের মধ্যে নিশ্চয়ই অস্বস্তি সৃষ্টি হয়েছে।

সাবেক মন্ত্রী বলেন, মার্কিন মুলুকে প্রতিদিন মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটে চলছে। যারা একাত্তরে ইতিহাসের ঘৃণ্যতম মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় পাকিস্তানিদের পক্ষে দাঁড়িয়েছিল। যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসি আটকাতে প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করেছিলো। তারা বাংলাদেশের মানবাধিকার লঙ্ঘনের কথা বলার অধিকার রাখে না। বাংলাদেশের মানুষই এই সমস্যা মিটিয়ে নিতে সক্ষম।

বিএনপির সমালোচনা করে তিনি বলেন, যে র‍্যাব সম্পর্কে বিএনপি বদনাম দিচ্ছে এটা তারাই সৃষ্টি করেছিল। র‌্যাব যাতে একটি নিপীড়ক বাহিনী না হয়ে ওঠে এজন্য তখনই আমরা কথা বলেছি। আওয়ামী লীগও বলেছিল। এখনো যখন এই সরকারের সময়ে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও গুমের ঘটনা ঘটছে তখন জোট শরিক ওয়ার্কার্স পার্টিসহ (নিজ দল) বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন তার প্রতিবাদ করেছে এবং এখনো করছে। মেজর সিনহা হত্যাকাণ্ডের পরে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড আপাতত কমেছে মনে হয়। এই বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড কোন যুক্তিতেই সমর্থন করার নয়। এটাকে বন্ধের ব্যবস্থা নিতে হবে।

/ইএইচএস/এমএস/
সম্পর্কিত
সংরক্ষিত আসনের ১৬ শতাংশ এমপির পেশা রাজনীতি
বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় সংসদীয় কূটনীতিকে কাজে লাগাতে হবে: স্পিকার
‘বয়কট ইন্ডিয়া স্লোগানে দেশে পাকিস্তানি রাজনীতি চালুর চেষ্টা চলছে’
সর্বশেষ খবর
ধারণার চেয়ে কম সেনা প্রয়োজন ইউক্রেনের: সিরস্কি
ধারণার চেয়ে কম সেনা প্রয়োজন ইউক্রেনের: সিরস্কি
ফিরেই ফর্টিসকে বিধ্বস্ত করলো মোহামেডান
ফিরেই ফর্টিসকে বিধ্বস্ত করলো মোহামেডান
লঞ্চঘাটের পন্টুন থেকে পদ্মা নদীতে পড়ে যুবকের মৃত্যু
লঞ্চঘাটের পন্টুন থেকে পদ্মা নদীতে পড়ে যুবকের মৃত্যু
রাশিয়ায় বন্ধ হলো জাতিসংঘের নজরদারি সংস্থার কার্যক্রম
রাশিয়ায় বন্ধ হলো জাতিসংঘের নজরদারি সংস্থার কার্যক্রম
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা