X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৫ বৈশাখ ১৪৩১

জীবন বদলে দিচ্ছে আশ্রয়ণ

সাদ্দিফ অভি
০২ এপ্রিল ২০২২, ১০:০০আপডেট : ০৩ এপ্রিল ২০২২, ০৮:১৯

বাবু মিয়া ছোট থেকেই বাক ও শারীরিক প্রতিবন্ধী। বাবা মারা যাওয়ার পর মাকে নিয়ে নানির বাড়িতে থাকতেন। ছিল না জায়গা-জমি। মাকে নিয়ে কোথায় থাকবে এই চিন্তা থেকেই তিনি প্রধানমন্ত্রীর মোবাইল ফোন নম্বর সংগ্রহ করেন এবং একটি ঘর চেয়ে এসএমএস পাঠান। তার এসএমএস প্রধানমন্ত্রীর নজরে আসে। পরে মাগুরা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে তাকে ঘর করে দেওয়া হয়। সদর উপজেলার হাজরাপুর ইউনিয়ন পরিষদের সামনে দুই শতক সরকারি খাসজমিতে সেমি পাকা দুই কক্ষের টিন শেডের ঘর করা হয় বাবুর জন্য। নিজের স্থায়ী আবাস পেয়ে আত্মবিশ্বাস জন্মেছে বাবুর। এখন তিনি স্নাতক ডিগ্রির অর্জনের পাশাপাশি চাকরিরও চেষ্টা করছেন।

শৈশবে ভ্যান চালিয়ে কঠিন সময় পার করেছেন মাগুরা সদর উপজেলার হাজরাপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা মুন্সী সোহাগ হোসেন। ছিল না মাথা গোঁজার ঠাঁই। কিন্তু গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পে ঘর পাওয়ার পর সেখানে থেকে লেখাপড়া করে ভারত সরকারের বৃত্তিও পান তিনি। আইটি গ্র্যাজুয়েট সোহাগ এখন সফটওয়্যার উদ্যোক্তা। কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে পরিচালনা করছেন নিজস্ব আইটি প্রতিষ্ঠান।

ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবার পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালে আশ্রয়ণ প্রকল্প নেওয়া হয়, যা প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে।

মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে ঘর নির্মাণ করা হয়েছে এক লাখ ১৭ হাজার ৩২৯টি। তৃতীয় পর্যায়ে আরও ৬৫ হাজার ৪৭৪টির নির্মাণকাজ চলছে। প্রকল্পের আওতায় এখন পর্যন্ত ৭ লাখ ৮ হাজার ৩টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। পাঁচ জনে এক পরিবার হিসাবে আশ্রয়ণের সুবিধা পাচ্ছেন ৩৫ লাখ ৪০ হাজার ১৫ জন।

সোহাগ জানান, ‘পারিপার্শ্বিকতার কারণে অনেক কটুক্তি শুনতে হতো। সবাই বলতো— ছেলেটা গুচ্ছগ্রামে জন্ম নিয়েছে। ভালো পরিবারের ছেলেমেয়ের চেয়ে যখন আমি রেজাল্ট ভালো করছি, তখনও অনেকে সমালোচনা করতো। কেউ কেউ উৎসাহও দিতো। পরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়নে ভর্তি হই। ঢাকায় একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করার পাশাপাশি ভারতের আইসিসিআর স্কলারশিপের জন্য চেষ্টা করি। ২০১৬ সালে ভারতে যাই। গুজরাট প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কাঙ্ক্ষিত বিষয়টি পাই— ইনফরমেশন অ্যান্ড টেকনোলজি। ২০২০ সালে গ্রাজুয়েশন শেষে দেশে ফিরে আসি।’

আশ্রয়ণ

এরপর প্রযুক্তি দিয়ে সমস্যা সমাধানে পল্লিটেকস নামে একটি আইটি প্রতিষ্ঠান করেন তিনি। মাগুরা জেলা প্রশাসনকে একটি ডাটা ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যারও বানিয়ে দিয়েছেন। যার মাধ্যমে ক্ষুদ্র- নৃগোষ্ঠীর মানুষদের ডাটাবেজ সংরক্ষণ করা যায় সহজেই।

সোহাগ বলেন, ‘এমন কিছু করতে চাই, যাতে আমার মাধ্যমে আরও ১০ জন উপকৃত হয়। প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল বাংলাদেশ কথাটি আমাকে খুব উৎসাহ দিতো।’

অন্যদিকে বাবু এখন প্রধানমন্ত্রীর উপহারের বাড়িতে একাই থাকেন। গার্মেন্টসে চাকরির সুবাদে তার মা থাকেন ঢাকায়। শারীরিক প্রতিবন্ধী হলেও রান্না-খাওয়াসহ নিজের সব কাজ নিজেই করেন বাবু মিয়া। সঙ্গে এগিয়ে নিচ্ছেন লেখাপড়াও। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ইসলামের ইতিহাস বিভাগে স্নাতক তৃতীয় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা দিচ্ছেন মাগুরা আদর্শ কলেজ থেকে।

বাবু বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাকে ঘর দিয়েছেন। তাকে ধন্যবাদ দিলেও কম হয়। আমি আজীবন তার জন্য দোয়া করে যাবো। এখন একটা চাকরি হলেই আমার জীবন সুন্দর হয়ে যাবে।’

মাগুরার জেলা প্রশাসক ড. আশরাফুল আলম বলেন, ‘সমাজের মূল স্রোতে চলে এলে মানুষ অসাধ্য সাধন করতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর যে ভিশন ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ— সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে সফল উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলেছে সোহাগ। বাবুর মতো প্রতিবন্ধী যুবকরাও এখন ঘুরে দাঁড়াতে চায়। তাকে দেখে অনুপ্রাণিত হচ্ছে অন্য অনেকে।’

একইভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে পটুয়াখালীর চরাঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত মানতা সম্প্রদায়ের লোকেরাও। প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর ও বিদ্যুৎ পেয়ে তাদের জীবনমান বদলে গেছে। ঘর পাওয়া এসব মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জন্মের পর থেকেই তারা ভাসমান ছিল। নৌকায় ছিল সংসার। তাদের সন্তানরা কখনও সমতলে খেলার সুযোগ পায়নি। এমনকি তাদের অনেক শিশু পানিতে ডুবেও মারা গেছে। প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়ে এখন সমতলে থাকার স্বাদ পাচ্ছেন তারা। দীর্ঘদিন কুপিবাতির আলোয় জীবন কাটালেও এখন বিদ্যুতের আলো পাচ্ছেন তারা। তাদের ছেলেমেয়েরাও যাচ্ছে স্কুলে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এই আশ্রয়ণের মাধ্যমে মানুষের জীবনযাত্রার উন্নতি করা, মানুষের জীবনের পরিবর্তন করা, তাদের সন্তানের লেখাপড়া নিশ্চিত করা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা , ভূমির মালিকানা, সামাজিক উন্নয়ন করা প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন। সিরাজগঞ্জে দেখেছি অনেকে গরু পালন করছে, কৃষি করছে। যেসব গৃহহীন সমাজে আগে নিগৃহীত ছিল, এমনকি বাবা মাও যোগাযোগ রাখতো না, তারা এখন সন্তানদের দেখতে আসছে। সমাজে তারা তুচ্ছতাচ্ছিল্যর শিকার হতো , এখন তাদের একটি কালেক্টিভ বারগেনিং পাওয়ার হয়েছে। তারা সমাজে এখন মিশে গেছে। তাদের স্থানীয়রাও পজিটিভলি নিয়েছে। সমাজে তাদের গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে।

নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, এক পুনর্বাসিত পরিবারের ঘরে গিয়ে দেখি তার সন্তানের জন্ম নিবন্ধন সনদ দেয়ালে ফ্রেম করে টানিয়ে রাখা। জানতে চাইলাম এমন কেন। সে উত্তর দিলো— স্যার এত বছর রাস্তায় রাস্তায় ঘুরেছি। লেখাপড়ার চিন্তা ছিল না। এখন আমার বাচ্চার লেখাপড়ার কথা তো ভাবতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘নীলফামারীতে গিয়ে দেখলাম রাইস কুকারে ভাত রান্না হচ্ছে। জানতে চাইলে বললো, হিসাব করে দেখেছে যে, মাসে মাত্র ১২০ টাকার বিদ্যুৎ খরচ হয়। তাছাড়া এতে সময়ও বাঁচে। এ সময়ে বাইরে কাজ করে বেশি টাকা কামানো যায়।’

/এফএ/
সম্পর্কিত
কোথাও যাতে ভোক্তাদের হয়রানি না হয়, নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
দেশের অর্ধেক জেলা সম্পূর্ণ ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত
বিএনপি-জামায়াতের সুমতি হোক, অগ্নিসন্ত্রাস বন্ধ করুক: প্রধানমন্ত্রী
সর্বশেষ খবর
শিশুকে পালাক্রমে ধর্ষণের অভিযোগে ৪ কিশোর সংশোধনাগারে
শিশুকে পালাক্রমে ধর্ষণের অভিযোগে ৪ কিশোর সংশোধনাগারে
পাঞ্জাবের আশুতোষের ঝড়ও যথেষ্ট হলো না, মুম্বাইয়ের তৃতীয় জয়
পাঞ্জাবের আশুতোষের ঝড়ও যথেষ্ট হলো না, মুম্বাইয়ের তৃতীয় জয়
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন