রোজার ঈদের মতো কোরবানির ঈদেও নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা কর্মজীবীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। যাত্রীদের অতিরিক্ত চাপ, গণপরিবহন সংকট এবং মোটরসাইকেল বন্ধের কারণে নাকাল ঘরমুখো মানুষ। এটিকে পুঁজি করে বিভিন্ন ধরনের যানবাহনে ভাড়া বহুগুণ বেশি নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
শুক্রবার (৮ জুলাই) ঢাকার মহাখালী, গাবতলী, মিরপুর, মালিবাগ, সায়েদাবাদ, গুলিস্তান ঘুরে এমন অভিযোগ পাওয়া যায়। এ সময় অনেক যাত্রীকে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে, পরিবহন মালিক শ্রমিকদের আচরণে।
বাড্ডা থেকে সিএনজি অটোতে সায়েদাবাদে আসা গাউসুল আজম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অন্য সময়ের চেয়ে তিনগুণ বেশি ভাড়ায় এখানে আসতে বাধ্য হয়েছি। সংকটকে পুঁজি করে এভাবে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় একটি অমানবিক বিষয়। প্রতিটি ঈদেই এমন ঘটনা ঘটছে। কিন্তু এই অসঙ্গতি দেখার কেউ নেই, নেই কোনও প্রতিকার।
গণপরিবহন না পাওয়ায় রাজমিস্ত্রি রইস উদ্দিনকে মিরপুর থেকে গুলিস্তানে আসতে বেশ কয়েকটি যান পাল্টাতে হয়েছে। তিনি বলছিলেন, অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে সিএনজিতে আসতে পারেননি। কখনও রিকশা কখনও লেগুনায় আবার কখনও হেঁটে এই পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। তার আক্ষেপ ঈদের সময় মানুষের আনন্দ কেন মাটি করে দেওয়া হয় এভাবে!
আরও বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গণপরিবহনে ৩০ টাকার ভাড়া ৩০০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে এখন। তারপরও উঠতে পারছেন না যাত্রীরা। সিএনজি অটোরিকশা, রিকশা ও লেগুনায় ভাড়া নেওয়া হচ্ছে আরও অনেক বেশি। নিরুপায় হয়ে তারা অতিরিক্ত টাকা দিয়েই স্বজনদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে ছুটছেন নিরন্তর।
শাওন নামের আরেকজন যাত্রী জানান, দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করেও বাস না পেয়ে বাধ্য হয়ে মানুষ সিএনজিতে যাচ্ছে। কয়েকগুণ বেশি ভাড়া নেওয়ার কারণে আমার মতো ঘরমুখো অনেক মানুষ বিপাকে পড়েছেন। বিষয়টি যাদের দেখার কথা তারা কি আমাদের কথা শুনতে পাবেন! এসব বলে আর লাভ কী?
একই ধরনের অভিযোগ উঠে এসেছে যাত্রী কল্যাণ সমিতির শুক্রবারের (৮ জুলাই) এক বিবৃতিতে। তাতে বলা হয়, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে রাজধানীর সিটি সার্ভিসের বাসের ভাড়া কোনও কোনও পথে ৫ থেকে ৬ গুণ পর্যন্ত বাড়তি আদায় করা হচ্ছে। উত্তরা থেকে সায়েদাবাদে ৫০ টাকার বাস ভাড়া ৩০০ টাকা নিতে দেখা গেছে। শ্যামলী থেকে গুলিস্থানে ৩০ টাকার বাস ভাড়া ২০০ টাকা আদায় করতে দেখা গেছে। ধানমন্ডি থেকে সদরঘাট ২৫ টাকার বাস ভাড়া ২০০ টাকা নেওয়া হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, টার্মিনালকেন্দ্রিক নয় এমন পথে যাত্রীপ্রতি ওঠা-নামা ভাড়া কোনও কোনও বাসে ৫০ টাকা আবার কোনও কোনও বাসে ১০০ টাকা আদায়ের নৈরাজ্য চলছে। নগরীর প্রতিটি লেগুনা সার্ভিসের ভাড়া কোথাও দ্বিগুণ আবার কোথাও তিনগুণ আদায় করা হচ্ছে। কেরানীগঞ্জের কদমতলী ও সদরঘাট থেকে গুলিস্থান পথে মাত্র ৩ কিলোমিটার দূরত্বে লেগুনা ভাড়া ১৫ টাকা আদায় করা হলেও এখন কখনও ৩০ টাকা কখনও ৫০ টাকা আদায় করা হচ্ছে।
একই চিত্র নগরীর সব লেগুনা রুটে দেখা যাচ্ছে। রিকশা ভাড়া ৩ থেকে ৪ গুণ বাড়তি আদায় করা হচ্ছে। সিএনজিচালিত অটোরিকশা গুলশান, বনানী, বারিধারা থেকে স্বাভাবিক সময়ে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায় সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল বা কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে যাতায়াত করে। কিন্তু গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে এই পথে ২০০০ থেকে ৩০০০ টাকা পর্যন্ত সিএনজি ভাড়া গুণতে হচ্ছে যাত্রীদের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গণপরিবহনের লোকজন বলছেন, প্রত্যেক ঈদের সময়ই যাত্রীদের এমন চাপ বাড়ে। পরিস্থিতি অনুযায়ী কিছু ভাড়া বেশি নিতে হয়। সব মানুষকে তো আর পরিবহন করা তাদের পক্ষে সম্ভব না। এ ক্ষেত্রে তাদের কিছুই করার নেই।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েতুল্লাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সব পরিবহনের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ভাড়ার অভিযোগ সঠিক নয়। কোনও কোনও পরিবহন বিচ্ছিন্নভাবে এমনটি করতে পারে, সেটি ভিন্ন কথা। এটি দেখার জন্য তো লোক রয়েছে।
এদিকে, সকালে যাত্রীর চাপ সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে। জুমার নামাজের আগে-পরে চাপ তুলনামূলক কম ছিল। সকাল থেকে গাড়ির চাপ অনেক বেশি দেখা গেছে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে যানজটও দেখা যায় সিগন্যালগুলোতে। তবে এখন গাড়ির সংখ্যা সড়কে কিছুটা কমে এসেছে। সড়ক ফাঁকাও দেখা গেছে কোথাও কোথাও।
ছবিগুলো তুলেছেন নাসিরুল ইসলাম