অচিরেই জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। তিনি বলেন, সরকারের অন্যান্য সংস্থার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন চলমান থাকায় বর্তমানে কমলাপুর ও গ্রিন রোড এলাকার মতো সুনির্দিষ্ট কয়েকটি স্থানে এবং নিউমার্কেট এলাকা, পুরান ঢাকা ও শহরের গুটিকয়েক এলাকা ছাড়া অন্য কোথাও জলাবদ্ধতা হয় না। সেসব এলাকায় জলাবদ্ধতা নিরসনে আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। অচিরেই ওই সব স্থানে জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান হবে।
রবিবার (১৯ মে) ডিএসসিসির নগর ভবনে এক সংবাদ সম্মেলন তিনি এ সব কথা বলেন। ডিএসসিসি মেয়র হিসেবে শেখ তাপসের দায়িত্বভার গ্রহণের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ‘উন্নত ঢাকার উন্নয়ন অগ্রযাত্রার ৪ বছর’ শীর্ষক ওই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ডিএসসিসি।
মেয়র তাপস বলেন, ‘দায়িত্বভার গ্রহণের প্রথম দিন থেকেই করপোরেশনের সব স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গাফিলতি, অনিয়ম, দুর্নীতি দূর করার মাধ্যমে সুশাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আমি শূন্য সহনশীলতার নীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে চলেছি। প্রশাসনিক সংস্কারের আওতায় এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। পালনে অবহেলা, গাফিলতি ও দুর্নীতির দায়ে বিগত চার বছরে বিভিন্ন স্তরের ৩৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। একইসঙ্গে করপোরেশনের প্রাত্যহিক কার্যক্রম সম্পাদনে জনবলের যে তীব্র সংকট ছিল তা উত্তরণে বিগত চার বছরে ভারি গাড়ির ১৪৩ জন চালক, ৬৬ জন উপ-সহকারী প্রকৌশলী, ৭৭ জন হিসাব সহকারী, ২৭ জন রেভিনিউ সুপারভাইজার, ৩১ জন পরিচ্ছন্ন পরিদর্শক, ২০ জন স্প্রেম্যান সুপারভাইজারসহ বিভিন্ন বিভাগে সর্বমোট ৮৭৯ জন জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ২১৭ জনের নিয়োগ কার্যক্রম চলমান।’
তিনি বলেন, ‘মেয়র নির্বাচনের প্রাক্কালে আমি ঢাকাবাসীর ওপর কোনোরকমের করের বোঝা না চাপিয়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করেছিলাম। সেই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, বিগত চার বছরে আমরা কোনও খাতে কোনও কর বৃদ্ধি করিনি বরং এ সময় ২৫টি নতুন খাত সৃষ্টি করা হয়েছে এবং ১৪টি নতুন খাত থেকে আমরা রাজস্ব আদায় শুরু করেছি। ফলে করোনা মহামারির মতো বৈশ্বিক সংকটের মাঝেও রাজস্ব আদায়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ইতিহাস সৃষ্টি করে চলেছে, যা আজ পর্যন্ত অগ্রসরমান।’
ডিএসসিসি মেয়র জানান, ২০১৯-২০ অর্থবছরে করপোরেশনের রাজস্ব আদায় ছিল মাত্র ৫১৩ দশমিক ৯৬ কোটি টাকা, যা ২০২০-২১, ২০২১-২২ ও ২০২২-২৩ অর্থবছরে যথাক্রমে ৭০৩ দশমিক ৩১ কোটি, ৮৭৯ দশমিক ৬৫ কোটি ও ১০৩১ দশমিক ৯৭ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের এপ্রিল মাস পর্যন্ত যে রাজস্ব আদায় হয়েছে, তা আগের অর্থবছরের তুলনায় ৫৪ কোটি টাকা বেশি। চলমান অর্থবছরে আগেকার মাইলফলক অতিক্রম করতে পারবে বলে ডিএসসিসি আশাবাদি।
মেয়র বলেন, ‘খেলাধুলার জন্য পর্যাপ্ত মাঠ ও গণপরিসর সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে খেলার মাঠ বা উদ্যান প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছিলাম। সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে বিগত চার বছরে ১১টি খেলার মাঠ সংস্কার ও প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। পাঁচটি ওয়ার্ডে নতুন খেলার মাঠ প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম চলমান।’
তিনি বলেন, ‘জলজট ও জলাবদ্ধতা এই শহরের পুঞ্জিভূত সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম। সামান্য বৃষ্টিতেই তলিয়ে যেত এই শহরের প্রায় ৭০ শতাংশ এলাকা। এই সমস্যা নিরসনে খাল, বক্স কালভার্ট ও নর্দমা থেকে বাৎসরিক সূচি অনুযায়ী বর্জ্য ও পলি অপসারণ করে চলেছে ডিএসসিসি। এছাড়া জলাবদ্ধতাপ্রবণ মোট ১৬১টি স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। ২৫২ কোটি টাকা ব্যয়ে নিজস্ব অর্থায়নে ১০৯টি স্থানে জলাবদ্ধতা নিরসনে অবকাঠামো নির্মাণ ও উন্নয়ন করা হয়েছে। ২৬টি স্থানে অবকাঠামো নির্মাণ ও উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। বাকি ২৬টি স্থানে অবকাঠামো নির্মাণ ও উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে শ্যামপুর বাণিজ্যিক এলাকা, মিডফোর্ড রোড, নটরডেম কলেজের সামনের সড়ক, বঙ্গভবনের দক্ষিণ ও পশ্চিম অংশের রাস্তা, বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে সড়ক, বাংলাদেশ সচিবালয়, লালবাগ রোড, আজিমপুর মোড়সহ অনেক এলাকায় জলাবদ্ধতা ও জলজট সমস্যার সমাধান হয়েছে। ফলে জলাবদ্ধতা সমস্যা ৭০ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নেমে এসেছে।’
বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়ে মেয়র বলেন, ‘এক সময় ঢাকা শহরের অলিগলি থেকে শুরু করে মূল সড়ক পর্যন্ত সর্বত্রই যত্রতত্র উপচে পড়া বর্জ্যে সয়লাব ছিল। কিন্তু গত চার বছরে আমরা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমে আমূল পরিবর্তন এনেছি। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম আধুনিকায়নে অন্তর্বর্তীকালীন বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্র অন্যতম একটি অনুষঙ্গ। কিন্তু গত ৫০ বছরে ডিএসসিসির আওতাধীন এলাকায় মাত্র ২৪টি অন্তর্বর্তীকালীন বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছিল। গত চার বছরে আমরা নতুন ৪১টি অন্তর্বর্তীকালীন বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্র নির্মাণ করেছি। বাকি ওয়ার্ডগুলোতেও আমাদের কার্যক্রম চলমান।’
তিনি বলেন, ‘বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম আধুনিকায়নে গত চার বছরে আমরা নতুন ২৫টি ডাম্প ট্রাক ক্রয়, প্রতিটি ওয়ার্ডে প্রাথমিক বর্জ্য সংগ্রহকারী নিবন্ধন (পিসিএসপি), পুরাতন পাঁচটি অঞ্চলে চিকিৎসা বর্জ্য সংগ্রহকারী নিবন্ধন করেছি। নতুন পাঁচটি অঞ্চলে চিকিৎসা বর্জ্য সংগ্রহকারী নিবন্ধন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। সর্বোপরি সূচি অনুযায়ী নিয়মিতভাবে বিভিন্ন সড়ক, অলিগলি এসভিও দেওয়া এবং রাতের মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্র হতে মাতুয়াইল কেন্দ্রীয় ভাগাড়ে বর্জ্য স্থানান্তর নিশ্চিত করা হয়েছে। পাশাপাশি নতুন ১৫টি ডাম্প ট্রাক ও ১০টি পে-লোডার ক্রয়ের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ফলে সামষ্টিকভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমে আধুনিকায়ন নিশ্চিত হয়েছে। এতে শহরের সৌন্দর্য যেমন বেড়েছে তেমনই নগরবাসীকে এখন আর যত্রতত্র উপচে পড়া বর্জ্যের উৎকট গন্ধে পথ চলতে হয় না।’