X
বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫
১৯ আষাঢ় ১৪৩২

হত্যাকাণ্ডের ২ মাস পর ঢাবিতে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’

উদিসা ইসলাম
০৮ আগস্ট ২০২২, ০৮:০০আপডেট : ০৮ আগস্ট ২০২২, ০৮:০০

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট, দিনটি ছিল শুক্রবার। সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) যাওয়ার কথা ছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের। এ উপলক্ষে সাজ সাজ রবে শিক্ষার্থীরা প্রস্তুত প্রিয় নেতাকে অভিবাদন জানাতে। ভোরের সূর্য উঠেছে, কিন্তু তখনও ছাত্ররা জানেন না— প্রিয় নেতাকে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছে। সেদিনের সেই স্মৃতি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে শিক্ষার্থী ও ছাত্রনেতারা বলছেন—সেদিন খবর পেতে পেতেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্যাংক, মেশিনগান ঢুকে পড়ায় ছাত্ররা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এরপর টানা ৬৩ দিনের ছুটি শেষ করে অক্টোবরের ১৭ তারিখে ক্যাম্পাসে স্লোগান লেখা হয়—‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’।

বঙ্গবন্ধু তখন দেশের রাষ্ট্রপতি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য হিসেবে ১৫ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শনে যাওয়ার কথা ছিল তাঁর। এ নিয়ে সেদিন দৈনিক বাংলার শেষের পাতায় ছিল বিশেষ আয়োজন। বঙ্গবন্ধুকে স্বাগত জানাতে ঢাবি কী কী প্রস্তুতি নিয়েছিল, সেই বিবরণ ছিল পাতাটিতে। এরমধ্যে লেখা ছিল—‘আজ  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে একটি গৌরবোজ্জ্বল দিন। জাতির পিতা রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসবেন। বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জনের পর তিনি এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আরও একবার এসেছিলেন, সেদিন শুধু ভাষণ দিয়েছিলেন। সেই ঘটনার সঙ্গে আজকের সূচির অনেক তফাৎ রয়েছে। তিনি আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখবেন। তাঁর সম্মানে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভাষণ দেবেন। দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি ঘোষণার পর নতুনভাবে ছাত্রসমাজ যখন তাদের ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা সম্পর্কে ভাবছেন, তখন তাদের কাছে আসছেন জাতির পিতা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের দায়িত্ব ও কর্তব্যের কথা, দ্বিতীয় বিপ্লবের বিষয়ে ঢাবি’র সংগ্রামী ছাত্রসমাজের সামনে কথা বলবেন তিনি। আজ ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসছেন।’

সেসময় বঙ্গবন্ধুর গঠন করা জাতীয় ছাত্রলীগের ২১ সদস্যের মধ্যে একজন ছিলেন সাংবাদিক অজয় দাশগুপ্ত। তিনি সেদিনের স্মৃতি স্মরণ করতে গিয়ে বলেন, ‘‘জগন্নাথ ও ফজলুল হক হলের দায়িত্বে আমি ছিলাম। বঙ্গবন্ধুর সেদিন ফজলুল হক হলে প্রথম আসার কথা বলে সকাল সকাল আমি সেখানে চলে যাই। আমাদের প্রভোস্ট মহব্বত আলী রেডিওতে হত্যার কথা শুনে সেখানে এসে আমাদের জানান। আমরা হতবিহ্বল হয়ে বেরিয়ে যাই। ততক্ষণে ক্যাম্পাসে ট্যাংক, মেশিনগান ঢুকে পড়েছে। ১৫ আগস্ট থেকে আর কোনও ক্লাস হয়নি। ৩০ আগস্ট আনুষ্ঠানিকভাবে ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ১৮ অক্টোবর ঈদ ও পূজার ছুটি শেষ করে ক্যাম্পাস খোলা হয়। আমরা পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী, ১৭ অক্টোবর ক্যাম্পাসে স্লোগান লিখি—‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’, ‘এক মুজিবের রক্ত থেকে লক্ষ মুজিব জন্ম নেবে’। ২০ অক্টোবর ক্যাম্পাসে প্রথম মিছিল হয়। এবং ২১ তারিখ আমরা সিদ্ধান্ত নিই—২৯ অক্টোবর বঙ্গবন্ধুর বাড়ির অভিমুখে মিছিল বের করার। যদিও জাতীয় ছাত্রদল হামলা চালানোয় সেদিন মিছিল বের করা সম্ভব হয়নি। পরে ৪ নভেম্বর সকালে মিছিল বের করা হয়, সেই অর্থে প্রথম আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ। একইসঙ্গে সেদিনের সিনেট অধিবেশনে আমরা বঙ্গবন্ধুর হত্যার প্রতিবাদ ও ঘাতকের বিচার চেয়ে শোক প্রস্তাব আনি। কী দুর্ভাগ্য, তখনও আমরা জানি না, জাতীয় চার নেতাকে কারাগারে হত্যা করা হয়েছে।’’

অজয় দাশগুপ্ত বলেন, ‘একটা কথা না বললেই নয়, মোশতাক ক্যাম্পাসে প্রবেশের সাহস করেনি। ক্যাম্পাস কিছুটা হলেও শিথিল ছিল। কিন্তু জিয়াউর রহমান যখন ৬ নভেম্বর পুরোপুরি ক্ষমতা নিলো, তখন ভিন্নচিত্র দেখা গেলো। সেই সামরিক শাসন ছিল আইয়ুব খানের আমলের সামরিক শাসনের মতো।’

সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজকদের একজন ছিলেন বর্তমানে অনলাইন পোর্টাল বাংলাদেশ জার্নালের সম্পাদক শাজাহান সরদার। কখন জানলেন বঙ্গবন্ধু নেই প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘পরদিন ভোরে আমাদের নির্ধারিত দায়িত্ব পালনে বের হই। বঙ্গবন্ধু আসবেন ক্যাম্পাসে, কাজ ভাগাভাগি করা আছে। আমি হলের বাইরে চায়ের দোকানে গিয়ে নিজ কানে শুনতে পাই—বঙ্গবন্ধুকে হত্যার খবর। সে কী ভয়াবহ পরিস্থিতি। পুলিশ সদর দফতরের পাশে ছিল রেল কলোনি। সেখানে গিয়ে থাকি সেদিন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা যায়, এটা কারোর কাছে বিশ্বাসযোগ্য ছিল না। কিন্তু সবাই হতবিহ্বল হয়ে পড়ে।’

কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান উপদেষ্টা মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম সেদিনের স্মৃতি উল্লেখ করে বলেন, ‘ঘটনায় স্তম্ভিত হয়ে পড়লেও হতবিহ্বল না হয়ে কী করতে হবে, তা কলাভবন চত্বরে দাঁড়িয়েই স্থির করে ফেলি। মূল ছাত্রনেতারা যেন বিচ্ছিন্ন না হয়ে পড়ে এবং তারা যেন একটা যোগাযোগের মধ্যে থাকে—তার ব্যবস্থা করে গামা, মাহবুব, অজয়, রবিউলকে নিয়ে হাতিরপুল এলাকায় মফিদুল হকের বাসায় এসে উঠি। আমরা তখন ছাত্র সংগঠক-কর্মীদের সঙ্গে একটা সংযোগ দাঁড় করিয়ে তাদের নির্দেশের জন্য তৈরি থাকতে বলি। কিন্তু দুঃখের বিষয়, দুপুরের আগেই একে একে তিন বাহিনীর প্রধান খুনি সরকারের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করেন। দুপুরের মধ্যে পরিষ্কার হয়ে যায় যে তাৎক্ষণিক প্রতিরোধের সম্ভাবনা তেমন আর নেই।’ 

/এপিএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
পরীক্ষার প্রশ্নে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ, তদন্তে কমিটি
রাঙামাটিতে ভেঙে ফেলা হচ্ছে শেখ মুজিবের ভাস্কর্য
শেখ মুজিবকে স্বাধীনতার ঘোষক লিখে ফেসবুকে স্ট্যাটাস, এসিল্যান্ডকে অব্যাহতি
সর্বশেষ খবর
ভোট ছাড়াই চেয়ার দখল করতে বগুড়া চেম্বারের কার্যালয়ে তালা
বগুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিভোট ছাড়াই চেয়ার দখল করতে বগুড়া চেম্বারের কার্যালয়ে তালা
ফিরে দেখা: ৩ জুলাই ২০২৪
ফিরে দেখা: ৩ জুলাই ২০২৪
টিভিতে আজকের খেলা (৩ জুলাই, ২০২৫)
টিভিতে আজকের খেলা (৩ জুলাই, ২০২৫)
কার্যালয়ের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় এনসিপির তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ
কার্যালয়ের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় এনসিপির তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ
সর্বাধিক পঠিত
নবম পে-কমিশন গঠনের কার্যক্রম শুরুর আশ্বাস অর্থ উপদেষ্টার
সংযুক্ত কর্মচারী প‌রিষ‌দের জরু‌রি সভানবম পে-কমিশন গঠনের কার্যক্রম শুরুর আশ্বাস অর্থ উপদেষ্টার
বরখাস্ত হলেন সেই ম্যাজিস্ট্রেট তাবাসসুম ঊর্মি
বরখাস্ত হলেন সেই ম্যাজিস্ট্রেট তাবাসসুম ঊর্মি
পরীক্ষার প্রশ্নে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ, তদন্তে কমিটি
পরীক্ষার প্রশ্নে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ, তদন্তে কমিটি
কার দোষে শ্রমবাজার বন্ধ হয় জানালেন আসিফ নজরুল
কার দোষে শ্রমবাজার বন্ধ হয় জানালেন আসিফ নজরুল
কেমন কেটেছিল ডিবি হেফাজতে ছয় সমন্বয়কের সাত দিন
কেমন কেটেছিল ডিবি হেফাজতে ছয় সমন্বয়কের সাত দিন