X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

যুদ্ধ-অস্ত্র ব্যবসা বন্ধ হোক, শান্তি ফিরে আসুক: প্রধানমন্ত্রী

বাংলা ট্রিবিউন ডেস্ক
১৮ অক্টোবর ২০২২, ১৭:২৯আপডেট : ১৮ অক্টোবর ২০২২, ১৭:২৯

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিশ্বকে শিশুদের জন্য সুন্দর ও বাসযোগ্য করতে যুদ্ধ ও অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধ হয়ে শান্তি ফিরে আসুক, এটাই তার প্রত্যাশা। তিনি বলেন, ‘আমরা একটি শান্তিপূর্ণ পৃথিবী চাই। আমরা যুদ্ধ চাই না। ধ্বংসযজ্ঞ, অস্ত্র ব্যবসা, কোনও শিশুকে উদ্বাস্তুতে পরিণত করা এবং কাউকে গুলি করে হত্যা করা হোক, আমরা তা চাই না।’

মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) সকালে  জাতির পিতার কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেলের ৫৯তম জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত ‘শেখ রাসেল দিবস-২০০২’-এর উদ্বোধন এবং ‘শেখ রাসেল পদক-২০২২’ প্রদান অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণে তিনি একথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের এই আয়োজনে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ বিশ্বব্যাপী যুদ্ধ। কত শিশু এতিম হয়ে যাচ্ছে, কত শিশু কষ্ট পাচ্ছে। আমরা বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি। সেখানেও তো শিশুরা পরভূমে রিফিউজি হিসেবে মানুষ হচ্ছে। নিজের রিফিউজি থাকার এবং বন্দি অবস্থায় নিদারুণ কষ্টে দিন কাটানোর অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যুদ্ধ চাই না। কোনও সংঘাত চাই না। রাসেলের মতো আর কোনও শিশুকে যেন জীবন দিতে না হয়। আমরা চাই প্রত্যেকের ভবিষ্যত সুন্দর হোক, উন্নত হোক।’ আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক সম্পাদিত ‘দুরন্ত প্রাণবন্ত শেখ রাসেল’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘৭৫-এর পর দেশে ১৯টি ক্যু হয়েছে। আমাদের ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে হাজারও অফিসার-সৈনিক হত্যা করা হয়েছে। স্বজনরা তাদের লাশও পায়নি, গুম করে ফেলা হয়েছে। আমাদের আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতাকর্মী এদের হাতে নির্যাতিত হয়েছে, কারাভোগ করেছে, মৃত্যুবরণ করেছে। কাজেই আর আমরা এই স্বজন হারানোর বেদনা, কান্না শুনতে চাই না।’

তিনি বলেন, ‘আমরা চাই প্রত্যেকের ভবিষ্যৎ সুন্দর হোক, উন্নত হোক। আমরা পাঁচ হাজার কম্পিউটার ল্যাব এবং ৩০০টি স্কুল অব ফিউচার উদ্বোধন করলাম। এর আগে আরও আট হাজার করেছিলাম। প্রায়  ১৩ হাজার ডিজিটাল ল্যাব করা হয়েছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, সারা বাংলাদেশে আমাদের ছেলেমেয়েদের আধুনিক প্রযুক্তি শিক্ষা দেওয়া, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলা- এটাই আমাদের লক্ষ্য ছিল। শিশুদের যে মেধা সে মেধা বিকাশের যেন সুযোগ হয়, শিক্ষাদীক্ষায় তারা উন্নত হবে, প্রগতির সঙ্গে এগিয়ে যাবে, প্রযুক্তি শিক্ষা নেবে, বিজ্ঞান শিক্ষা নেবে এবং দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

তিনি বলেন, ‘আজকের শিশুরাই হবে আগামী দিনের কর্ণধার। আজকের শিশুরাই এ দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবে। কোনও মানবাধিকার যেন লঙ্ঘন না হয়। কোনও শিশু যেন নির্যাতিত না হয়। প্রত্যেকেই যেন সুন্দর জীবন পায় সেটাই আমরা চাই। আর সেই লক্ষ্য নিয়েই আমাদের কাজ আমরা করে যাচ্ছি।’

তিনি বলেন, খেলাধুলা, সংস্কৃতি চর্চা, লেখাপড়া, আধুনিক বিজ্ঞান-প্রযুক্তি শিক্ষা এবং বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা, প্রতিনিয়ত যেসব প্রযুক্তির পরিবর্তন হচ্ছে সেসব পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা- সেভাবেই বাংলাদেশ গড়ে উঠুক। বাংলাদেশের সব শিশুর মেধা বিকাশের সুযোগ হোক।

‘আজরাসেল নেই, আমরা তো সবই হারিয়েছি। কিন্তু বাংলাদেশটা যেন সামনের দিকে এগিয়ে যায়,’ যোগ করেন তিনি।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক সম্পাদিত ‘দুরন্ত প্রাণবন্ত শেখ রাসেল’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লেখা ‘আমাদের ছোট রাসেল সোনা’ অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্রের ট্রেলারও প্রদর্শিত হয়।

প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক বিজয়ীদের মধ্যে ‘শেখ রাসেল পদক-২০২২’ বিতরণ করেন

আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এমপি’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আইসিটি বিভাগের সিনিয়র সচিব এনএম জিয়াউল আলম, বাংলাদেশ জাতীয় শিশু কিশোর পরিষদের মহাসচিব কে এম শহীদুল্লাহ ও শিশু বক্তা  আফসা জাফর সৃজিতা।

প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক বিজয়ীদের মধ্যে ‘শেখ রাসেল পদক-২০২২’ বিতরণ করেন। শেখ রাসেল দিবস-২০২২ উপলক্ষে দেশব্যাপী কুইজ, ক্রীড়া, শিল্পকলা ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মাঝেও পুরস্কার বিতরণ করা হয়।

অনুষ্ঠানে শেখ রাসেলের উপর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি এবং আইসিটি বিভাগ কর্তৃক নির্মিত শেখ রাসেল দিবস-২০২২ উপলক্ষে একটি থিম সং পরিবেশিত হয়। পরে শিশুদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতি অনুষ্ঠানও উপভোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘৭৫ এর ১৫ আগস্ট নিরাপরাধ নারী ও শিশু হত্যার বিচার বন্ধে ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করা হয়, কেউ খুনীদের বিচার করতে পারবে না। অর্থাৎ আমি আমার বাবা, মা, ভাই ও যে স্বজনদের হারিয়েছি তাদের জন্য বিচার চাইতে পারবো না, মামলা করতে পারবো না।’ সে সময় তিনি ও তার ছোট বোন শেখ রেহানার বিদেশে থাকার প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, তাদের সেসময় দেশে ফিরতে না দেওয়ায় তারা হয়ে পড়েন রিফিউজি। ছয়টি বছর সেই রিফিউজি হয়েই বিদেশে কাটাতে বাধ্য করা হয় তাদের। এরপর ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগ তাকে তার অবর্তমানে সভাপতি নির্বাচিত করলে সামরিক জান্তার রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে একরকম জোর করে দেশে ফেরেন শেখ হাসিনা।

 

তিনি বলেন, ফিরে এসে আমি যখন মামলা করতে যাই বা তার আগেও চেষ্টা করেছি, কিন্তু সেই মামলা করা যায়নি। কারণ আইনে বাধা। আমার প্রশ্ন- আজ তো অনেক মানবাধিকারের কথা বলা হয়। কারও অস্বাভাবিক মৃত্যুতে বিচার চাওয়া হয়। তাহলে ‘৭৫ এর ১৫ আগস্ট আমরা যারা আপনজন হারিয়েছি, তারা কি অপরাধ করেছিলাম?

শেখ হাসিনা বলেন, আজ আন্তর্জাতিকভাবে মানবাধিকারের কথা, মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিবাদ- কত কিছুই তো হয়। সেখানে আমার একটা প্রশ্ন- তখন কেউতো আমাদের পাশে দাঁড়ায়নি। হ্যাঁ, আমার দল ও বাংলার জনগণ ছিল। কিন্তু যারা এই ঘাতকদের সঙ্গে ছিল, তাদের সহযোগিতা করেছিল, এই চক্রান্তের সঙ্গে ছিল এবং হত্যাকাণ্ডের পর যারা এই ঘাতকদের পুরস্কৃত করেছে, বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়েছে, এমনকি যে ঘাতক মরে গেছে তাকেও প্রমোশন দিয়ে পুরস্কৃত করেছে, এই অবিচারগুলোতো আমি এসে (দেশে ফিরে) নিজের চোখে দেখেছি। তাহলে আমরা মানবতার, মানবাধিকারের এত গালভরা কথা শুনি কেন? আমার প্রশ্নের জবাব কি কেউ দিতে পারবে?

তিনি বলেন, বিচার করতে পেরেছি তখনই, যখন অনেক ঘাত-প্রতিঘাত, চড়াই-উৎড়াই পেরিয়ে আমি সরকার গঠন করতে পেরেছি এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হতে পেরেছি তখনই। সেই ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স বাতিল করে সেই বিচার করতে হয়েছে। সে বাতিলের পথেও অনেক বাধা ছিল।

 

প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক বিজয়ীদের মধ্যে ‘শেখ রাসেল পদক-২০২২’ বিতরণ করেন

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা জানি এবং শুনি ‘বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে’ ঠিক সেটাই হয়েছিল আমাদের বেলায়। উচ্চ আদালতে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্সের রায়ের শুনানিতে বিচারকদের কারও কারও ‘বিব্রত বোধ’ করার করার কথাও তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, ‘৯৮ সালের ৮ নভেম্বর যখন জাতির পিতা হত্যা মামলার বিচারের রায় ঘোষণা করা হবে, সেদিন বিএনপি হরতাল ডেকেছিল। এরপর যখন আমরা সরকারে ছিলাম না তখন বিচার প্রক্রিয়াটাকেই বন্ধ করে রাখা হয়।’

সরকারপ্রধান বলেন, ৭৫ এর পর যারা ক্ষমতায় এসেছে, সেনাশাসক জিয়াউর রহমান, জেনারেল এরশাদ বা খালেদা জিয়া- প্রত্যেকেই এই খুনিদের মদদ দিয়েছে, পুরস্কৃত করেছে। এমনকি, ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন সেই খুনি পাশা ও হুদাকে নিয়ে ‘প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক শক্তি (প্রগশ)’ নামে রাজনৈতিক দলও করেছেন। অর্থাৎ রাজনৈতিকভাবেই তাদের পুনর্বাসিত করা হয়। জেনারেল এরশাদ খুনি ফারুককে রাষ্ট্রপতি প্রার্থী করেছে। আর খালেদা জিয়া রশিদ ও হুদাকে জনগণের ভোট চুরি করে ‘৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোটারবিহীন নির্বাচনে নির্বাচিত করে সংসদে বিরোধী দলের আসনে বসায়। আর আজ তারা ভোটের কথা বলে।

তিনি বলেন, ‘৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার দুই দিনের মাথায় জিয়াউর রহমান সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে নেয়। সেনা প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নিয়েই আবার নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করে। আর এই খুনিদের ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স করে বিচারের হাত থেকে মুক্তি দিয়ে যায়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের মুখেই আজ গণতন্ত্রের কথা, ভোটের কথা, মানবাধিকারের কথা শুনতে হয়।

তিনি বলেন, সত্যকে মুছে ফেলার যে অপচেষ্টা এবং দেশে বিচারহীনতার যে সংস্কৃতি শুরু হয়েছিল, জাতির পিতা হত্যাকাণ্ডের বিচার হওয়ার মাধ্যমে আজ জাতি তার থেকে মুক্তি পেয়েছে। সূত্র: বাসস।

/এফএস/
সম্পর্কিত
উপজেলা নির্বাচনে পলকের হস্তক্ষেপ ঠেকাতে হাইকোর্টে রিট
যুদ্ধ কোনও সমাধান আনতে পারে না: প্রধানমন্ত্রী
থাইল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা
সর্বশেষ খবর
ভারতে লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপের ভোট শুরু
ভারতে লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপের ভোট শুরু
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
টিভিতে আজকের খেলা (২৬ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২৬ এপ্রিল, ২০২৪)
ট্রাকেই পচে যাচ্ছে ভারত থেকে আনা আলু, বাজারে ৫৫ টাকা কেজি
ট্রাকেই পচে যাচ্ছে ভারত থেকে আনা আলু, বাজারে ৫৫ টাকা কেজি
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ