X
শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫
১৪ আষাঢ় ১৪৩২

বিশ্বমানের ‘স্মার্ট পুলিশ’ গড়ে তোলার অঙ্গীকার প্রধানমন্ত্রীর

বাংলা ট্রিবিউন ডেস্ক
০৩ জানুয়ারি ২০২৩, ১৪:২০আপডেট : ০৩ জানুয়ারি ২০২৩, ১৬:০১

বাংলাদেশ পুলিশকে সেবার মাধ্যমে জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে তিনি অঙ্গীকার ব্যক্ত করে বলেছেন, ‘আমাদের লক্ষ্য জ্ঞান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে একটি দক্ষ এবং বিশ্বমানের স্মার্ট পুলিশ গড়ে তোলা।’

মঙ্গলবার (৩ জানুয়ারি) সকালে রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে ছয় দিনব্যাপী ‘পুলিশ সপ্তাহ ২০২৩’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। করোনার কারণে দুই বছরের ব্যবধানে রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে সশরীরে উপস্থিত হয়ে পুলিশ সপ্তাহ উদ্বোধন করলেন তিনি। 

পুলিশ সম্পর্কে জনগণের ভীতি দূর করে বাহিনী হিসেবে জনগণের সেবা এবং ভালো কাজগুলো চালিয়ে যেতে বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘পুলিশের প্রতি জনগণের আস্থা অটুট রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করুন।’

তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিকল্পনা অনুযায়ী পুলিশ হবে জনগণের, শোষকের নয়।’

বিশ্বমানের ‘স্মার্ট পুলিশ’ গড়ে তোলার অঙ্গীকার প্রধানমন্ত্রীর

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সরকার পুলিশ বাহিনীকে ইতোমধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক যানবাহন সরবরাহ করেছে। পুলিশের গতিশীলতা ত্রিমাত্রিক পর্যায়ে উন্নীতকরণে ইতোমধ্যে রাশিয়া থেকে দুটি হেলিকপ্টার ক্রয়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পুলিশ বাহিনীর জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ এভিয়েশন ইউনিট গঠনের প্রক্রিয়া চলছে।’ 

সরকার প্রধান বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলেছি। তার সুফল জনগণ এখন ভোগ করছে। বঙ্গবন্ধু সর্বদা এ দেশের পুলিশকে জনগণের পুলিশ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য অনুপ্রাণিত করতেন এবং আমি ধন্যবাদ জানাই আমাদের পুলিশ বাহিনী এখন জনগণের পুলিশ হিসেবেই তাদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। আগে পুলিশের নাম শুনলে মানুষ ভয় পেতো, এখন জানে পুলিশ সেবা দেয় ও তাদের পাশে দাঁড়ায়।’

জনগণের আস্থা অর্জন করা যেকোনও বাহিনীর জন্যই গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা তা করে যাচ্ছেন। অত্যন্ত মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকেই আপনারা এই সেবা করে যাবেন। জনগণের মনে পুলিশের প্রতি যে আস্থা সৃষ্টি হয়েছে সেটা যেন অক্ষুণ্ণ থাকে। আমরা চাই আমাদের পুলিশ বাহিনী জনবান্ধব পুলিশ বাহিনী হিসেবেই জাতির পিতার সেই আকাঙ্ক্ষা পূরণ করবে।’

বিশ্বমানের ‘স্মার্ট পুলিশ’ গড়ে তোলার অঙ্গীকার প্রধানমন্ত্রীর

তিনি বলেন, ‘যে কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা বিপদ-আপদে পুলিশ সবসময় মানুষের পাশে আছে। পাশাপাশি মনুষ্য সৃষ্ট দুর্যোগেও পুলিশের ভূমিকা রয়েছে। মানুষের জান-মাল বাঁচাবার জন্য নিজের জীবনকেও উৎসর্গ করেন। যে কোনও ঝুঁকি নিতে পিছপা না হওয়াটাই পুলিশের কাজ এবং সেটা তারা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গেই করে যাচ্ছেন।’

এজন্য পুলিশ বাহিনীকে তিনি ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানিয়ে ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে অগ্নিসন্ত্রাসের মাধ্যমে বিএনপি-জামায়াতের ‘আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যার সময়’ পুলিশ সদস্যদের বলিষ্ঠ ভূমিকার প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘সে সময় প্রায় সাড়ে ৩ হাজার মানুষ অগ্নিদগ্ধ এবং ৫শ’ মানুষ নিহত হয়েছিল। পুলিশ বাহিনীও রেহাই পায়নি। ২৯ জন পুলিশ সদস্যও নির্দয় নির্যাতনের শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করেন এবং অনেকে আহত হন। খুব নির্দয়ভাবে পুলিশকে বিএনপি-জামাত-শিবিররা যেভাবে প্রকাশ্য দিবালোকে হত্যা করেছে তা কোথাও দেখা যায় না। এদের হামলায় সাড়ে ৩ হাজার বাস-ট্রাক, ১৯টি ট্রেন, ৯টা লঞ্চ পুড়ে ধ্বংস হয়। ৭০টি সরকারি অফিস ও স্থাপনা ভাংচুর করে এবং ৬টি ভূমি অফিস সম্পূর্ণ পুড়িয়ে দেয়।’

পুলিশের সদস্যরা জীবন বাজি রেখে দায়িত্ব পালন করে তাদের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড রুখে দিয়েছিল এবং জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধান করে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। এ ধরনের জঘন্য ঘটনা  বাংলাদেশে যেন আর না ঘটে সে বিষয়েও তিনি সকলকে সতর্ক করেন। জনগণের সাথে থেকে এটা প্রতিরোধ করার জন্য তিনি পুলিশ বাহিনীকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।

বিশ্বমানের ‘স্মার্ট পুলিশ’ গড়ে তোলার অঙ্গীকার প্রধানমন্ত্রীর

তিনি জঙ্গি প্রতিরোধে পুলিশ সদস্যদের ভূমিকার প্রশংসা করে হলিআর্টিজন বেকারির জঙ্গি হামলার ঘটনায় আত্মাহুতি দানকারী দুই পুলিশ সদস্যকেও শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তার সরকার দেশকে জঙ্গিবাদ থেকে রক্ষায় সবরকম ব্যবস্থা নিয়েছে এবং পুলিশ বাহিনী জঙ্গি, সন্ত্রাস, মাদক, চোরাচালানি বা মানুষ পাচারের বিরুদ্ধে কার্যকর ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। পাশাপাশি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনেও আমাদের পুলিশ বাহিনী বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। এজন্য পুলিশের বিশেষ করে মহিলা কন্টিনজেন্ট আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও ভূয়সী প্রশংসা পাচ্ছেন।’

তিনি বলেন, বাংলাদেশ পুলিশের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় জাতীয় জরুরি সেবা ‘৯৯৯’ ব্যবহার করে এখন খুব সহজেই বিপদাপন্ন মানুষজনকে উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে। জনগণ ফায়ার সার্ভিস, অ্যাম্বুলেন্স ও পুলিশের সেবা পাচ্ছে এই ‘৯৯৯’ ব্যবহার করে। কক্সবাজারে বেড়াতে গিয়ে হারিয়ে যাওয়া একদল ছাত্রকে ’৯৯৯’ এ ফোন করার পর উদ্ধারের প্রসঙ্গও উল্লেখ করেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের জন্য সেবা প্রদান সহজ করতে প্রতিটি থানায় নারী-শিশু-বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী ডেস্ক স্থাপন করেছে, নারীবান্ধব বিভিন্ন অ্যাপ চালু করেছে। এছাড়া, অনলাইন জিডি কার্যক্রম ও অন্যান্য অনলাইনভিত্তিক সেবা ও মোবাইল অ্যাপ প্রবর্তনের মাধ্যমে পুলিশের সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে যাচ্ছে। 

পুলিশের উন্নয়নে তার সরকারের নানা পদক্ষেপের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে ইতোমধ্যে পুলিশে এন্টি টেরোরিজম ইউনিট (এটিইউ) এবং কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) গঠন করেছি। 

বাংলাদেশ পুলিশে ইতোমধ্যে ডিএনএ ল্যাব, আধুনিক ফরেনসিক ল্যাব, অটোমেটেড ফিঙ্গার প্রিন্ট আইডেন্টিফিকেশন (এএফআইএস) এবং আধুনিক রাসায়নিক পরীক্ষাগার স্থাপন করা হয়েছে। ভবিষ্যতে প্রতিটি বিভাগীয় সদর দপ্তরে এ ধরনের ল্যাব স্থাপন করা হবে। 

বিশ্বমানের ‘স্মার্ট পুলিশ’ গড়ে তোলার অঙ্গীকার প্রধানমন্ত্রীর

তিনি বলেন, সাইবার অপরাধ মোকাবেবলায় আমরা সিআইডিতে একটি ‘সাইবার পুলিশ সেন্টার স্থাপন’ করেছি। এছাড়া, ডিএমপির ‘সিটিটিসি’-সহ পুলিশের অন্যান্য ইউনিটও সাইবার অপরাধ দমনে কাজ করছে। অচিরেই আমরা বাংলাদেশ পুলিশে একটি পূর্ণাঙ্গ সাইবার পুলিশ ইউনিট স্থাপন করব এবং জেলা পর্যায় পর্যন্ত এ ইউনিটের শাখা বিস্তৃত করা হবে। 

সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছে এবং দেশকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে তুলে আনতে সক্ষম হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, করোনার অভিঘাত, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং একে কেন্দ্র করে স্যাংশন ও পাল্টা স্যাংশনের ঘটনা না ঘটলে বাংলাদেশকে তার সরকার আরও অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারতো। তারপরও ২০৪১ নাগাদ সরকার এই বাংলাদেশকে জ্ঞান, বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি জ্ঞানে স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে লক্ষ্য নির্ধারণ করে কাজ করে যাচ্ছে।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী একটি খোলা জিপে করে বাংলাদেশ পুলিশের কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করেন। পুলিশের বিভিন্ন দল বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ প্রদর্শন করে।

বিশ্বমানের ‘স্মার্ট পুলিশ’ গড়ে তোলার অঙ্গীকার প্রধানমন্ত্রীর

পরে তিনি ১১৭ জন পুলিশ কর্মকর্তাকে বাংলাদেশ পুলিশ মেডেল (বিপিএম) সাহসিকতা, রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম) সাহসিকতা, বিপিএম সেবা এবং পিপিএম-সেবা প্রদান করেন। 

প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান এবং পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন তাকে স্বাগত জানান। এ সময় মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, সংসদ সদস্য ও ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। খবর বাসস।

/ইউএস/এমওএফ/
সম্পর্কিত
পুলিশের বিশেষ অভিযানে সারা দেশে গ্রেফতার ১৬১৬
সাবেক সিইসি নূরুল হুদার ১০ দিনের রিমান্ড চায় পুলিশ
থানায় বাদীকে ‘লাথি-জুতাপেটার’ অভি‌যোগ: তদন্তে সত্যতা মেলেনি
সর্বশেষ খবর
বিমানে যুক্ত হচ্ছে আরও দুটি এয়ারক্র্যাফট, যাচ্ছেও ২টি
বিমানে যুক্ত হচ্ছে আরও দুটি এয়ারক্র্যাফট, যাচ্ছেও ২টি
ইউপি সদস্য ও তার ভাবিকে কুপিয়ে হত্যা
ইউপি সদস্য ও তার ভাবিকে কুপিয়ে হত্যা
হ্যাজেলউডের বলে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ধসিয়ে অস্ট্রেলিয়ার জয়
হ্যাজেলউডের বলে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ধসিয়ে অস্ট্রেলিয়ার জয়
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ইসলামী আন্দোলনের মহাসমাবেশ আজ
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ইসলামী আন্দোলনের মহাসমাবেশ আজ
সর্বাধিক পঠিত
ভাঙা হলো বিজয় সরণির ‘মৃত্যুঞ্জয়ী প্রাঙ্গণ’, হবে জুলাই স্মরণে ‘গণমিনার’
ভাঙা হলো বিজয় সরণির ‘মৃত্যুঞ্জয়ী প্রাঙ্গণ’, হবে জুলাই স্মরণে ‘গণমিনার’
বিরোধীদের নিষিদ্ধ করা বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের পথ নয়: দ্য ইকোনমিস্ট
বিরোধীদের নিষিদ্ধ করা বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের পথ নয়: দ্য ইকোনমিস্ট
যমুনা সেতু থেকে সরিয়ে ফেলা হচ্ছে রেলপথ
যমুনা সেতু থেকে সরিয়ে ফেলা হচ্ছে রেলপথ
খিলক্ষেতে মণ্ডপ উচ্ছেদ নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য
খিলক্ষেতে মণ্ডপ উচ্ছেদ নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য
মিরপুরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়ক বিভাজকে উঠে গেলো বাস, একজন নিহত
মিরপুরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়ক বিভাজকে উঠে গেলো বাস, একজন নিহত