X
বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪
১৮ বৈশাখ ১৪৩১
আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি

সনদের দাম মাত্র ১৩ হাজার টাকা

আমানুর রহমান রনি
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, ১৭:৪৯আপডেট : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, ১৭:৪৯




আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির লোগো মাত্র ১৩ হাজার টাকায় জাল সনদ বিক্রি করে আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি। আর এই সনদ তৈরি করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়টির কন্ট্রোলারের বাসায়। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই নারী রেজিস্ট্রারকে গ্রেফতারের পর এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে র‌্যাব।
কন্ট্রোলারের বাসা ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উদ্ধার করা হয়েছে বিপুল সংখ্যক জাল সনদ। বিশ্ববিদ্যালয়টি সিলগালা করে শাহজাহানপুর থানায় বিশ্ববিদ্যালয় চেয়ারম্যন, ভিসি ও কন্ট্রোলারের বিরুদ্ধে মামলা করেছে র‌্যাব। তবে আসামিরা সবাই পলাতক রয়েছেন। র‌্যাব-৩ ও শাহজাহানপুর থানা থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
বুধবার মালিবাগে আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটিতে অভিযান চালিয়ে বিবিএ, এমবিএ, এলএলবি, ইঞ্জিনিয়ারিং ও ফ্যাশন ডিজাইনসহ বিভিন্ন বিষয়ের, অনার্স, মাস্টার্সের বিপুল সংখ্যক জাল সনদ জব্দ করে র‌্যাব। এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মাকসুদা আক্তার (২৮) ও সহকারী রেজিস্ট্রার শালিকা সোহাগান জেরিনকে (২৬) গ্রেফতার করেন র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম তাদের যথাক্রমে তিন ও দুই মাস করে সাজা দেওয়া হয়েছে।
র‌্যাব-৩ এর এএসপি মোহাম্মদ রবিউল করীম বাংলা ট্রিবিউনকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
রবিউল করীম বলেন, ‘আমাদের কাছে তথ্য ছিল, এই বিশ্ববিদ্যালয়টি দীর্ঘদিন ধরে জাল সনদ বিক্রি করে আসছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে আমাদের কাছে অভিযোগ আসতো। এরপর আমরা এই চক্রের সদস্যদের ধরতে এক সপ্তাহের গোয়েন্দা নজরদারি করি। গত ১৩ জানুয়ারি র‌্যাবের এক গোয়েন্দা সদস্যের ছোটভাই শহীদুল ইসলামকে জাল সনদ কেনার জন্য ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ ১৩ হাজার টাকায় তাকে বিবিএ সনদ দিতে রাজি হয়। শহীদুল বিশ্ববিদ্যালয়কে ৪ হাজার টাকা দিয়ে আসেন। বাকি টাকা সনদ পাওয়ার পর দেবেন বলে চলে আসেন। ১৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের ওয়েব সাইটে শহীদুলের নাম এন্ট্রি করে। তার আইডি নম্বর দেয়। বুধবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) শহীদুলকে সনদ আনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় যেতে বলে। শহীদুল ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে যান। আমরা তাকে অনুসরণ করে তার পেছনে যাই। রেজিস্ট্রার মাকসুদা শহীদুলের কাছে বিবিএর সনদটি দেন। এ সময় জেরিনও সেখানে ছিলেন। এরপর তাদের গ্রেফতার করি। সনদে দেখা যায়, তার সনদটি ইস্যু করা হয়েছে ২৮ জানুয়ারি ২০১৩ সালে। এর দুইদিন পর অর্থাৎ ৩০ জানুয়ারি ২০১৩ তারিখে তার প্রশংসাপত্র ইস্যু করা হয়েছে। তাদের আটক করে বিশ্ববিদ্যালয় তল্লাশি চালিয়ে আরও ১১২টি জাল সনদ পাওয়া গেছে। এসব সনদের শিক্ষার্থীদের নাম কোনও রেজিস্ট্রার খাতায় নেই।’

র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সারোয়ার আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দুই রেজিস্ট্রারের কাছে আমরা জাল সনদ তৈরির বিষয় জানতে চাইলে তারা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের কান্ট্রোলার আদিল হোসেনের গোড়ানের বাসায় এসব প্রিন্ট করা হয়। এরপর আমরা আদিল হোসেনের পূর্ব গোড়ানের ১১৩ নম্বর বাসায় অভিযান চালাই। তবে তখন তিনি বাসায় ছিলেন না। তার বাসার কম্পিউটারে আরও ২০টি জাল সনদের ফরম্যাট পাওয়া গেছে। আমরা তার কম্পিউটারটি জব্দ করেছি।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর সরদার মজিবর রহমান, ভিসি মাসুদ হোসেন এবং কন্ট্রোলার চেয়ারম্যানের শ্যালক আদিল হোসেন। ভিসি মাসুদ হোসেনের প্রকাশনী সংস্থা রয়েছে। তিনি বইয়ের ব্যবসা করেন। তারা কেউ বিশ্ববিদ্যালয় আসেন না। মাঝে মধ্যে আসেন।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়টি ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়। ২০১১ সালে নানা অনিয়মের অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়টি বন্ধ করে দেয় মঞ্জুরি কমিশন। এর বিরুদ্ধে ২০১৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ হাইকোর্টে একটি রিট করে। যদিও ওই রিট আবেদেনের বিষয়ে কোনও শুনানি বা আদেশের কপি র‌্যাবকে দেখাতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তারা ওই আবেদনের কপি দেখিয়ে এতদিন বিশ্ববিদ্যালয়টি চালু রেখেছিল।

র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম বলেন, ‘রিটের আবেদনটি আমাদের কাছে জাল মনে হয়েছে। আমরা ওই আবেদনের কপিটি হাইকোর্টের রেজিস্ট্রারের কাছে পাঠিয়েছি। যদি এটি জাল প্রমাণিত হয়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা দায়ের করা হবে।’

এদিকে এই ঘটনায় র‌্যাব বাদী হয়ে শাহজাহানপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে। মামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর সরদার মজিবর রহমান, ভিসি মাসুদ হোসেন এবং কন্ট্রোলার আদিল হোসেনকে আসামি করা হয়েছে। তবে তারা সবাই পলাতক।

বিশ্ববিদ্যালয়টির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান, ভিসি ও কন্ট্রোলারের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।

১০৯, ডিআইটি রোড, রেল গেট, মালিবাগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে গিয়েও কাউকে পাওয়া যায়নি। র‌্যাব বিশ্ববিদ্যালয়টি সিলগালা করে দিয়েছে।

র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম বলেন, ‘ওই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সনদ নিয়ে অনেকে বেসরকারি ও সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন। অনেক প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ আমাদের সঙ্গে তাদের কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের সনদ ও শিক্ষাজীবন নিয়ে এখন শঙ্কা প্রকাশ করছেন। কেউ কেউ সনদ যাচাই করতেও আসছেন।’

শিক্ষাকে যারা পণ্য ও ব্যবসায়ীক পুঁজি করে জালিয়াতি করছে, তাদের বিরুদ্ধে এই অভিযান চলবে বলেও জানান তিনি।

/এআরআর/এজে/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ঘরের মাঠে পিএসজিকে হারিয়ে এগিয়ে থাকলো ডর্টমুন্ড
চ্যাম্পিয়নস লিগ সেমিফাইনালঘরের মাঠে পিএসজিকে হারিয়ে এগিয়ে থাকলো ডর্টমুন্ড
ইজিবাইক ছিনতাইয়ের সময় স্থানীয়দের পিটুনিতে একজনের মৃত্যু
ইজিবাইক ছিনতাইয়ের সময় স্থানীয়দের পিটুনিতে একজনের মৃত্যু
স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে শ্রমিকরাও অংশীদার হবে: এমপি কামাল
স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে শ্রমিকরাও অংশীদার হবে: এমপি কামাল
মোস্তাফিজের শেষ ম্যাচে চেন্নাইয়ের হার
মোস্তাফিজের শেষ ম্যাচে চেন্নাইয়ের হার
সর্বাধিক পঠিত
শিশু ঝুমুরকে ধর্ষণ ও হত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে চোখ মুছলেন র‌্যাব কর্মকর্তা
শিশু ঝুমুরকে ধর্ষণ ও হত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে চোখ মুছলেন র‌্যাব কর্মকর্তা
মিল্টন সমাদ্দার আটক
মিল্টন সমাদ্দার আটক
আজও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে, পথচারীদের জন্য শরবত-পানির ব্যবস্থা
আজও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে, পথচারীদের জন্য শরবত-পানির ব্যবস্থা
একজন অপরাধীর গল্প বলতে চেয়েছিলেন তিশা
একজন অপরাধীর গল্প বলতে চেয়েছিলেন তিশা
সিয়াম-পরীর গানের ভিউ ১০০ মিলিয়ন!
সিয়াম-পরীর গানের ভিউ ১০০ মিলিয়ন!