ভাষা আন্দোলন থেকেই স্বাধীনতা আন্দোলনের সূত্রপাত । এ কারণে ভাষা শহীদ ও মুক্তিযোদ্ধাদের পরম শ্রদ্ধার চোখে দেখে জাতি। কিন্তু, আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে মুক্তিযোদ্ধা বা শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবার সদস্যদের রাষ্ট্র যে সুযোগ সুবিধা দেয়, ভাষা শহীদদের পরিবার সদস্যরা সে সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এমনকি কাগজে-কলমে আর মুখের কথায় নেতা-নেত্রী ও সরকারি কর্মকর্তারা ভাষা শহীদদের প্রশংসা বৃষ্টিতে ভেজালেও বাস্তবে তাদের পরিবারের খোঁজ-খবর রাখেন খুবই কম। অভিমান ভরে এমন অনুযোগ করেছেন ভাষা শহীদ বরকতের স্বজনরা। শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রাক্কালে বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় এসব বিষয়ে কথা বলেন তারা।
ভাষাশহীদ বরকতের উত্তরসূরীদের মধ্যে জীবিত আছেন তার তিন জন ভাতিজা। তারা বলেন, শহীদ বরকতের সব স্মৃতিচিহ্ন এখনও সংরক্ষণ করা হয়নি। সংরক্ষণের জন্য যাদুঘর করা হলেও সেটির কার্যক্রম চালু না হওয়ায় সেখানে সব স্মৃতিচিহ্ন জমা দেননি তারা।আর বরকতের কেনা বন্দুকটা এখনও রয়ে গেছে মুর্শিদাবাদে।
তারা বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের মতো ভাষা শহীদ ও সৈনিকদের উত্তরসূরীদের চাকরি ও ভর্তি কোটাসহ অন্যান্য রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা দরকার। কিন্তু, রাষ্ট্র কখনোই তাদের এমন সুবিধা দেওয়ার কথা ভাবেনি। প্রতিবছর অমর একুশে গ্রন্থমেলার আয়োজন করা হয়, রাষ্ট্রীয় এই কর্মসূচিতে মাসজুড়ে থাকে নানা অনুষ্ঠান। কিন্তু এর কোনও অনুষ্ঠানে ডাকা হয় না ভাষা শহীদদের পরিবার সদস্যদের। শহীদ পরিবারটির অনুযোগ, দিবসটি উপলক্ষে শুধু সাংবাদিকরা তাদের খোঁজ নেন পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য। এমনকি দিবসটি উপলক্ষে গত কয়েক বছরে গাজীপুরের নলজানীতে শহীদ বরকতের মায়ের কবরে শ্রদ্ধা জানাতে আগতদের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করছে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
যেভাবে বাংলাদেশে এলেন ভাষা শহীদ বরকত ও তার পরিবার:
মহান ভাষা আন্দোলনের অন্যতম শহীদ পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের তরুণ আবুল বরকতের প্রিয় শহর ছিল ঢাকা। তাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষে এখানেই থাকার কথা ছিল তার। পড়াশোনা শেষ করতে না পারলেও তার সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি রাজপথে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে এ মাটিতেই তিনি অন্তিম শয়ান লাভ করেন। বরকতকে এদেশে চির নিদ্রায় রেখে স্থির থাকতে পারেননি তার পরিবার। তাই প্রিয়জনের মায়ায় জন্মভূমি ছেড়ে তারাও এদেশে চলে আসার সিদ্ধান্ত নন। ১৯৬৩ সালের ২১ জুলাই বরকতের বাবা শামসুজ্জোহা ভুলু মিয়া ভারতে মারা যান। পরের বছর বরকতের মা হাসিনা বানু আংশিক সম্পত্তি বিনিময় করে ভারত থেকে এদেশে চলে আসেন। নিবাস গড়েন গাজীপুর মহানগরের চান্দনা গ্রামের ‘বাবলা বিথী’তে। শহীদ বরকতের একমাত্র ভাই আবুল হাসনাত রোগাক্রান্ত হয়ে ১৯৬৮ সালের ২১ সেপ্টেম্বর এখানেই মারা যান। তার তিন ছেলে ও তিন মেয়ে। বরকতের চার বোনই মারা গেছেন ইতোমধ্যে। বরকতের ছোট ভাই আবুল হাসনাতের সন্তানরাই এখন আঁকড়ে ধরে আছেন ভাষাশহীদ বরকতের ব্যক্তিগত স্মৃতি। গাজীপুরের চান্দনা গ্রামে এখন বসবাস করছেন বরকতের তিন ভাতিজা এবং তাদের সন্তানরা। শহীদ বরকতের মা হাসিনা বানু ১৯৮২ সালের ২১ এপ্রিল এ বাড়িতেই মারা যান। বরকত ও তার মা, বাবা এবং ভাইয়ের মৃত্যু যেন একই সূত্রে গাঁথা। তাদের সবাই মারা গেছেন বিভিন্ন বছরের বিভিন্ন মাসের একই তারিখ একুশে তে।
ভাষা শহীদ বরকতের সংক্ষিপ্ত জীবনী:
শহীদ বরকতের আদি নিবাস পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার ভরতপুর থানার বাবলা গ্রামে। গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা শেষে ১৯৪৫ সালে তালিবপুর হাই স্কুল থেকে প্রবেশিকা এবং বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজ থেকে ১৯৪৭ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাসের পর সেবছরই তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৫১ সালে দ্বিতীয় শ্রেণিতে চতুর্থ স্থান লাভ করে অনার্স পাস করে তিনি এমএ শ্রেণিতে ভর্তি হন। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন শুরু হলে তিনি তাতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বিকালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হোস্টেলের সামনে আমতলায় সর্বদলীয় কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মী পরিষদের ডাকা সমাবেশে যোগ দেন বরকত। পাকিস্তান সরকারের জারি করা ১৪৪ ধারা ভেঙে ছাত্র-জনতার স্লোগানে কেঁপে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। পুলিশের সঙ্গে কয়েক দফা বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে পুলিশের গুলিতে হোস্টেলের ১২ নম্বর শেডের বারান্দায় লুটিয়ে পড়েন বরকত। গুলিবিদ্ধ বরকত ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি অবস্থায় রাত ৮টায় মারা যান। ওই রাতেই আজিমপুর গোরস্থানে শহীদ বরকতকে দাফন করা হয়। শহীদ হওয়ার দীর্ঘ সময় পর ২০০০ সালে শহীদ আবুল বরকতকে মরণোত্তর একুশে পদক দিয়ে সম্মানিত করা হয়।
ভাষা শহীদ বরকতের পরিবারের খোঁজ নেওয়া হয় যেভাবে:
পাকিস্তান শাসনামলে প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলগুলো সবসময় বরকতের মা হাসিনা বানুর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতো। স্বাধীনতা লাভের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসে হাসিনা বানু দেখা করতেন।
বরকতের ভাতিজা আলাউদ্দিন বরকত জানান, বঙ্গবন্ধু বরকতের মা হাসিনা বানুকে মা বলে সম্বোধন করতেন আর হাসিনা বানু বঙ্গবন্ধুকে বলতেন ‘শেখজী’। ১৯৭৩ এর ফেব্রুয়ারিতে হাসিনা বানু মুর্শিদাবাদে ছিলেন। বঙ্গবন্ধু ভিসা ও বিমানের টিকেট পাঠিয়েছিলেন তাকে আনতে। ১৯৮২ সালের ২১ এপ্রিল হাসিনা বানু মৃত্যু বরণের আগ পর্যন্ত কম বেশি সব রাষ্ট্রপ্রধান এই পরিবারের খোঁজ খবর নিতেন। এখন তেমন কেউ আসেন না গাজীপুরের চান্দনা গ্রামের ‘বাবলা বিথী’-তে। ইতোপূর্বে ২১ ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে সরকারি পর্যায়ে ভাষা শহীদদের খোঁজ-খবর নেওয়া হতো। কিন্তু এখন আর তেমনটা খোঁজ নেওয়া হয় না। এমনকি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে যাদের স্মরণে রাজধানীতে বই মেলা এবং রাষ্ট্রীয়সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় সেখানেও ভাষা শহীদদের কোনও পরিবারের কাউকে আমন্ত্রণ জানানো হয় না। ভাষা শহীদদের পরিবারের সদস্যরা এখন অনেকটাই অবহেলিত অভিমান ভরা কণ্ঠে এ অভিযোগ করেন শহীদ বরকতের ভাতিজা আলাউদ্দিন বরকত।
’বাবলা বিথী’তে থাকেন শহীদ বরকতের ভাই মরহুম আবুল হাসনাতের তিন ছেলে আলাউদ্দিন বরকত, আইন উদ্দিন বরকত ও জালাল উদ্দিন বরকত। তাদের মধ্যে একজন স্থানীয় একটি বোতাম ফ্যাক্টরিতে চাকরি করেন। আর বাকি দু’জন ব্যবসা করেন।
১৯৮১ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ঢাকা-জয়দেবপুর সড়কের চান্দনা গ্রাম সংলগ্ন নলজানী মৌজায় হাসিনা বানুকে ৬৮ শতাংশ জমি দান করেন। এই জমির একাংশে পরিবারের সদস্যরা নিজ উদ্যোগে শহীদ বরকত স্মরণে বরকত স্মৃতি পাঠাগার ও একটি মসজিদ নির্মাণ করেন এবং অপর অংশে দোকান নির্মাণ করে তা দেখাশোনা করেন আবুল হাসনাতের ছোট ছেলে জালাল উদ্দিন বরকত। এ জমিরই একপাশে (পূর্ব-দক্ষিণে) চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন শহীদ মাতা হাসিনা বানু। প্রতি বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি শাহাদাৎ বার্ষিকীতে শহীদ বরকত স্মরণে এখানেই পরিবারের পক্ষ থেকে আয়োজন করা হয় মিলাদ ও দোয়া মাহফিল, কাঙালি ভোজ ও আলোচনা সভা। এবছরও সেসব কর্মসূচির আয়োজন করেছে বরকত পরিবার। অথচ সম্প্রতি স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহলের নজর পড়ে এ জমিটির ওপর। বরকত পরিবারকে ওই জমি থেকে উচ্ছেদ করতে উদ্যত হয় তারা। মাসখানেক আগে আদালতের মাধ্যমে বিষয়টির নিষ্পত্তি হলে ভোগ দখলে রয়ে যান বরকত পরিবার।
বর্তমানে ২১ ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কয়েকজন কর্মকর্তা এসে নিজেদের দায়িত্ব পালন করছেন। বরকতের আত্মীয়দের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ডাকা হতো অতিথি হিসেবে। কিন্তু এখন কালের ব্যবধানে সব আবেগ যেন থিতিয়ে পড়েছে।
বরকতের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শহীদ পরিবারের সদস্য হিসেবে তাদের যেমন গর্ব আছে, তেমনি কিছু ক্ষোভ এবং অভিমানও রয়েছে। কারণ পারিবারিক উদ্যোগে বরকতের স্বজনরা চান্দনা গ্রামে তাদের বাসার সামনের রাস্তাটির নাম রেখেছেন ‘শহীদ বরকত সরণী’। স্থানীয় লোকজন এ ব্যাপারে সহযোগিতার হাত বাড়ালেও প্রশাসনিকভাবে সহযোগিতা করা হয়নি বলে আক্ষেপ করলেন ভাতিজা আলাউদ্দিন বরকত।
অনুযোগের সুরে আরেক ভাতিজা আইন উদ্দিন বরকত টুটু বলেন, বরকত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হওয়া সত্ত্বেও দীর্ঘদিনেও তার নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও হল কিংবা কোনও কিছুর নামকরণ করা হয়নি। তবে গত তত্ত্বাবধায়ক সরকার সাত বীরশ্রেষ্ঠ ও চার ভাষাশহীদের নামে স্মৃতি জাদুঘর, গ্রন্থাগার নির্মাণ এবং এগুলো তাদের নামে নামকরণের সিদ্ধান্ত নিয়ে নির্মাণ কাজ শুরু করেন। শহীদ বরকতের নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোল ঘেঁষে রাজধানীর পলাশীর মোড়ে ‘ভাষাশহীদ আবুল বরকত স্মৃতি জাদুঘর ও সংগ্রহশালা’ নির্মিত হয়। এছাড়াও বিগত তত্ত্ববধায়ক সরকারের সময়ে তৎকালীন জেলা প্রশাসক মিজানুর রহমানের প্রচেষ্টায় গাজীপুর জেলা শহরে নির্মিত স্টেডিয়ামটির নামকরণ করা হয় ভাষা শহীদ আবুল বরকতের নামে।
তিনি বলেন, আমরা চাই অন্তত গাজীপুরে শহীদ বরকতের নামে কোনও বড় প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করা হোক।
শহীদ আবুল বরকতের কবরওস্মৃতি জাদুঘর:
আজিমপুর গোরস্থানে ভাষা শহীদ আবুল বরকতকে দাফন করা হয়। ২০০০ সালে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এবং ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিকে ধরে রাখতে পলাশী মোড়ে শহীদ আবুল বরকত স্মৃতি জাদুঘর ও সংগ্রহশালা গড়ে তুলেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সেখানে এই ভাষাশহীদের ব্যবহৃত কাপ-পিরিচ, ঘড়ি, হাতে লেখা চিঠি, ভাষা আন্দোলনের ওপর প্রামাণ্যচিত্র, একুশে পদক (মরণোত্তর) ও তার ছবি সংরক্ষণ করা হয়েছে। জাদুঘরের দ্বিতীয় তলায় রয়েছে একটি পাঠাগার যেখানে ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের ওপর তিন শতাধিক বই রয়েছে।
বরকতের প্রিয় বন্দুকটি আনতে সরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন:
শহীদ বরকতের ভাতিজা আইন উদ্দিন বরকত বলেন, ভাষাশহীদ বরকতের ব্যবহৃত কাপ-পিরিচ ও ঘড়ি তার পরিবারের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে বরকত স্মৃতি জাদুঘর ও সংগ্রহশালায় দেওয়া হলেও সেগুলো এখনও সর্বসাধারণের প্রদর্শনের জন্য ‘ উন্মুক্ত করা হয়নি। এ কারণে আমাদের সংরক্ষণে থাকা বরকতের হাতে লেখা চিঠিসহ তার ব্যবহৃত কিছু জিনিসপত্র এখনও সেখানে দেওয়া হয়নি। এছাড়াও মুর্শিদাবাদের কাগ্রামে যে খাটে বরকত ঘুমাতেন সেই খাটটি এখনও সেখানেই রয়েছে। বরকতের কেনা বেলজিয়ামের তৈরি তার প্রিয় দো’নলা বন্দুকটিও উপযুক্ত লোক না থাকায় কাগ্রামের বাসিন্দা আলাউদ্দিন ওরফে আলু’র হেফাজতে রয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে বরকত স্মৃতি জাদুঘর ও সংগ্রহশালার জন্য খাটটি এদেশে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে আগ্নেয়াস্ত্র বহন ও সংরক্ষনের ব্যাপারে রাষ্ট্রীয় আইনের কারণে উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব হয়নি। তাই সরকারিভাবে এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়ার অনুরোধ করেন তিনি।
বরকতের পরিবারের আবেদন:
শুধু সম্মানী ভাতা নয়। আমরা শহীদদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও মর্যাদা চাই বলে দাবি জানিয়েছে শহীদ বরকতের পরিবার। শহীদ বরকতের পরিবার জানান, দেরিতে হলেও একুশের ভাষাশহীদ বরকত পরিবারকে ২০০৬ সাল থেকে সরকারিভাবে প্রতিমাসে পাঁচ হাজার টাকা করে সম্মানী ভাতা দেওয়া শুরু হয়। পরবর্তীতে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে ২০১৪ সাল থেকে তা দ্বিগুণ করে প্রতিমাসে ১০ হাজার টাকা করে সম্মানী ভাতা দিচ্ছে। কিন্তু এ ভাতার টাকা পেতে সংশ্লিষ্টদের তাগাদা দেওয়াসহ নানা ধরনের তদবির করতে হয়। ভাষা শহীদ বরকত পরিবারের সদস্যরা মুক্তিযোদ্ধাদের মতো ভাষাশহীদ ও সৈনিকদের উত্তরসূরীদের চাকরি ও ভর্তি কোটাসহ অন্যান্য রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধার দাবি করেছেন। এছাড়াও যে ক’জন ভাষা সৈনিক বর্তমানে বেঁচে আছেন মৃত্যুর পর তাদেরকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফনের জন্যও সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন তিনি।
বরকত পরিবার সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করে জানান, ঢাকা-জয়দেবপুর সড়ক সংলগ্ন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নলজানী এলাকায় সরকারের বরাদ্দকৃত জমিতে শহীদ আবুল বরকতের মা হাসিনা বানুর কবর রয়েছে। হাসিনা বানুর মৃত্যুর পর প্রতি বছর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ২১ ফেব্রুয়ারি ভোররাত থেকেই শহীদ মাতার কবরে শ্রদ্ধা জানাতে বিভিন্ন এলাকা থেকে শিক্ষার্থী, শিশু ও নারী-পুরুষসহ অসংখ্য মানুষ এসে ভিড় জমায়। স্থানটি সড়কের পাশে হওয়ায় নানা দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। অথচ আগত এসব মানুষের নিরাপত্তা দিতে গত কয়েক বছর ধরে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েনের আবেদন জানিয়েও কোনও সাড়া পাওয়া যায়নি।
শহীদ বরকতের ভাতিজা আলাউদ্দিন বরকত বলেন, শহীদ পরিবারের কাছে ভাতার টাকাটাই মুখ্য নয়। এখন ভাষাশহীদদের পরিপূর্ণ স্বীকৃতি ও মর্যাদা দরকার। তার চাচা বরকতসহ অন্য ভাষা শহীদদের স্বাধীনতা পদকসহ রাষ্ট্রীয় অন্যান্য পদক বা স্বীকৃতি দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
/বিটি/এমপি/টিএন/
আপ-এমপি