X
সোমবার, ০৬ মে ২০২৪
২৩ বৈশাখ ১৪৩১

গৃহহীন-ভূমিহীনমুক্ত দেশের ২১ জেলা

সাদ্দিফ অভি, পাবনা থেকে
০৯ আগস্ট ২০২৩, ০৯:০০আপডেট : ০৯ আগস্ট ২০২৩, ০৯:৩১

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লক্ষ্য–দেশের একজন মানুষও থাকবে না গৃহহীন-ভূমিহীন। এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ পর্যায়ে সারা দেশে ২ লাখ ৩৮ হাজার ৮৫১টি পরিবারকে ২ শতাংশ করে খাসজমিতে ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। চতুর্থ পর্যায়ে অবশিষ্ট ২২ হাজার ১০১টি পরিবারকে ঘর দেওয়া হবে আজ।

এতে আরও ১২টি জেলার সব উপজেলাসহ সারা দেশের ১২৩টি উপজেলা গৃহহীন-ভূমিহীনমুক্ত হচ্ছে। আর দেশের ২১টি জেলার সব উপজেলাসহ ৩৩৪টি উপজেলার সব ভূমিহীন-গৃহহীন পুনর্বাসিত হচ্ছে। এর আগে দুই দফায় আরও ৯টি জেলা ভূমিহীন-গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বুধবার (৯ আগস্ট) সকালে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে দেশের তিনটি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর হস্তান্তর করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

খুলনার তেরখাদার বারাসাত সোনার বাংলা পল্লী আশ্রয়ণ প্রকল্প, পাবনার বেড়া উপজেলার চাকলা আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প এবং নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ আমানউল্যাহপুর আশ্রয়ণ প্রকল্প উদ্বোধনে যুক্ত হয়ে উপকারভোগীদের সঙ্গে কথা বলবেন প্রধানমন্ত্রী।

এদিন পাবনাসহ আরও ১২টি জেলা হচ্ছে ভূমিহীন-গৃহহীনমুক্ত। জেলাগুলো হলো মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, ময়মনসিংহ, শেরপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, নওগাঁ, নাটোর, পাবনা, কুষ্টিয়া, পিরোজপুর ও ঝালকাঠি। আর আগে দুই দফায় ভূমিহীন-গৃহহীনমুক্ত জেলাগুলো হলো মাদারীপুর, গাজীপুর, নরসিংদী, পঞ্চগড়, জয়পুরহাট, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, চুয়াডাঙ্গা ও মাগুরা।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, আশ্রয়ণ প্রকল্পসহ অন্যান্য প্রকল্পের মাধ্যমে এ পর্যন্ত ৪১ লাখ ৪৮ হাজার ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষ পুনর্বাসিত হয়েছে। শুধু আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে পুনর্বাসিত হয়েছে ২৮ লাখ মানুষ। আর মুজিববর্ষের বিশেষ কর্মসূচির মাধ্যমে পুনর্বাসিত হয়েছে ১১ লাখ ৯৪ হাজার ৩৫ জন ছিন্নমূল মানুষ, যাদের জন্য ২ লাখ ৩৮ হাজার ৮৫১টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে।

প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, ১৯৯৭ সালের ১৯ মে কক্সবাজার ও সংলগ্ন উপকূলীয় এলাকায় ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০ মে ঘূর্ণিঝড়ে আক্রান্ত কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার সেন্ট মার্টিন পরিদর্শন করেন এবং ঘূর্ণিঝড়ে আক্রান্ত গৃহহীন ও ছিন্নমূল পরিবারগুলোকে পুনর্বাসনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার দান করা জমিতে পুনর্বাসন কার্যক্রম শুরু করা হয়।

ঘূর্ণিঝড় ও নদীভাঙনকবলিত ভূমিহীন, গৃহহীন ও ছিন্নমূল পরিবারকে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তত্ত্বাবধানে ‘আশ্রয়ণ’ নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এ প্রকল্পের আওতায় ১৯৯৭ সাল থেকে চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত ৫ লাখ ৫৫ হাজার ৬১৭ ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে।

এ ছাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের ব্যারাক নির্মাণের কাজ সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের মাধ্যমে এবং ‘জমি আছে ঘর নেই’ প্রকল্পে দুই কক্ষবিশিষ্ট একক ঘর নির্মাণের কাজটি উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। দেশের সব উপজেলায় প্রায় ২৫ হাজার স্থানে এসব ঘর নির্মাণ করা হয়েছে।

শুধু গৃহহীন-ভূমিহীন নয়, সমাজে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকেও দেওয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর। এর মধ্যে মান্তা সম্প্রদায়, বেদে সম্প্রদায়, হিজড়া সম্প্রদায়, কুষ্ঠ রোগীদের জন্য রংপুরে বান্দাবাড়ী আশ্রয়ণ প্রকল্প, তিন পার্বত্য জেলায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী পরিবারের জন্য বিশেষ নকশার ঘর, দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলায় কয়লা খনির জন্য ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে পুনর্বাসন, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী (রাখাইন) পরিবারের জন্য বিশেষ নকশার টংঘর নির্মাণ, ভিক্ষুক পুনর্বাসন, হরিজন সম্প্রদায়, বাগদী সম্প্রদায়, প্রতিবন্ধী পরিবার, জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবারকে ঘর করে দেওয়া হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মোহাম্মদ তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্প বিশ্বের মধ্যে একটি অনন্য প্রকল্প। কারণ পৃথিবীর আর কোনও দেশে এত বিপুলসংখ্যক ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের মাঝে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ঘর বিতরণ করা হয়নি।

তিনি আরও বলেন, সরকার শুধু খাসজমিতে প্রকল্পের জন্য ঘর নির্মাণ করছে না, এর জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের কাছ থেকে জমি কেনা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকেও অনুদান পাওয়া যাচ্ছে।

যাদের জমি আছে ঘর নেই, তাদের জন্য সরকার কবে থেকে ঘর নির্মাণ শুরু করবে, এমন প্রশ্নের জবাবে তোফাজ্জেল হোসেন জানান, সরকার এখন আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় শুধু ভূমিহীন ও গৃহহীনদের বাড়ি দিচ্ছে। এই প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর যাদের জমি আছে ঘর নেই বা ঘর জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে, তাদের জন্য ঘর নির্মাণ শুরু করবে।

পাবনা জেলা প্রশাসন জানায়, মুজিববর্ষ উপলক্ষে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য নির্মিত চতুর্থ পর্যায়ের দ্বিতীয় ধাপে পাবনার পাঁচটি উপজেলায় ৬৪৬টি ঘর হস্তান্তর করা হবে। এর মধ্যে চাটমোহরে ৭৮টি, ভাঙ্গুড়ায় ৪১টি, ফরিদপুরে ১১৩টি, সুজানগরে ৫৩টি, বেড়ায় ৩৬১টি ঘর হস্তান্তর করা হবে।

জেলা প্রশাসক মু. আসাদুজ্জামান বলেন, চতুর্থ পর্যায়ের দ্বিতীয় ধাপে এবার পাবনার পাঁচটি উপজেলায় ঘর হস্তান্তর করা হবে। ইতোমধ্যে উপকারভোগী বাছাই করে তাদের কবুলিয়াত ও নামজারি সম্পন্ন হয়েছে। সেই সঙ্গে তাদের দখলও বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর আগে জেলার ঈশ্বরদী, আটঘরিয়া, সাঁথিয়া ও সদর উপজেলাকে ভূমিহীন-গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। এবার চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর, বেড়া ও সুজানগরকে ভূমিহীন-গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করা হবে।

বুধবার (৯ আগস্ট) খুলনায় ৯৮৭টি, নোয়াখালীতে ৪১৮, মানিকগঞ্জে ২২৭, কুষ্টিয়ায় ১৬০, নাটোরে ৫৬৭, নওগাঁয় ২০২, ঠাকুরগাঁয়ে ৭৫১, দিনাজপুরে ৪৪৫, ময়মনসিংহে ৭৯৫, শেরপুরে ১৩৫, রাজবাড়িতে ১৩, পিরোজপুরে ৬১৯ এবং ঝালকাঠিতে ১৮৫টি ঘর হস্তান্তরের মাধ্যমে দেশের ১২ জেলা হবে গৃহহীন-ভূমিহীনমুক্ত।

/এনএআর/
সম্পর্কিত
সংকটে পাশে দাঁড়িয়ে জনগণের আস্থা অর্জন করেছে সশস্ত্র বাহিনী: প্রধানমন্ত্রী
ঢাকা সেনানিবাসে এএফআইপি ও সেনাপ্রাঙ্গণ ভবন উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
বাজেটে প্রতিবন্ধীদের মাসিক ভাতা ৫ হাজার করাসহ ১১ দাবি
সর্বশেষ খবর
দুই বছর পর আবার একসঙ্গে...
দুই বছর পর আবার একসঙ্গে...
বৃষ্টি এবং প্রেম
বৃষ্টি এবং প্রেম
হামাসের রকেট হামলায় ৩ ইসরায়েলি সেনা নিহত
হামাসের রকেট হামলায় ৩ ইসরায়েলি সেনা নিহত
পরপারে আর্জেন্টিনাকে প্রথম বিশ্বকাপ জেতানো মেনোত্তি
পরপারে আর্জেন্টিনাকে প্রথম বিশ্বকাপ জেতানো মেনোত্তি
সর্বাধিক পঠিত
‘টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন, জানালেন হারুন
‘টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন, জানালেন হারুন
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন বৃষ্টি হবে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন বৃষ্টি হবে
কোন পথে এগোচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ?
কোন পথে এগোচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ?