বৈদেশিক অর্থায়নে পরিচালিত প্রকল্পগুলোর অর্থছাড় ও বাস্তবায়নে গতি বাড়াতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। এ লক্ষ্যে ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে অগ্রগতি পর্যালোচনায় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
বুধবার (৬ মার্চ) মুখ্য সচিবের সভাপতিত্বে ওই কমিটির প্রথম সভা পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় কমিটির সদস্য সচিব, প্রধান কার্যক্রম বিভাগ, পরিকল্পনা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব সত্যজিত কর্মকারসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগের সিনিয়র সচিব, সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরের এডিপিভুক্ত ৪৭টি মন্ত্রণাল, বিভাগের বৈদেশিক অর্থায়নপুষ্ট প্রকল্পগুলোর অর্থছাড়, অগ্রগতি পর্যালোচনা, গ্রিন অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট ডেভেলপমেন্ট (জিসিআরডি) নীতিমালার আলোকে প্রকল্প নির্ধারণ এবং পরিকল্পনা বিভাগ প্রণীত প্রজেক্ট প্ল্যানিং সিস্টেম (পিপিএস) সফটওয়্যারের মাধ্যমে অনলাইনে প্রকল্প প্রক্রিয়া করার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
সভায় এডিপি, আরএডিপি অননুমোদিত নতুন প্রকল্প তালিকায় অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানোর আগে মন্ত্রণালয়, বিভাগগুলো যথাযথভাবে পরীক্ষা করে পরিকল্পনা কমিশনে অনলাইনে পাঠানোর বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়। এছাড়া, বৈদেশিক অর্থায়ন প্রাপ্তির লক্ষ্যে যথাযথ যাচাই করে প্রকল্প পরিকল্পনা কমিশনে পাঠাতে সভায় নির্দেশনা দেওয়া হয়।
বৈঠকে বলা হয়, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত আরএডিপিতে প্রকল্প ঋণ/অনুদান খাতে ৪৭টি মন্ত্রণালয়/বিভাগের মধ্যে ১০টি মন্ত্রণালয়/বিভাগ (বিদ্যুৎ বিভাগ, স্থানীয় সরকার বিভাগ, রেলপথ মন্ত্রণালয়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, সেতু বিভাগ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়)- এর অনুকূলে বরাদ্দকৃত অর্থ আরএডিপিতে প্রকল্প ঋণ/অনুদানের মোট বরাদ্দের প্রায় ৮০ শতাংশ।
সভায় বলা হয় এই মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর বাস্তবায়ন অগ্রগতির ওপর আরএডিপি বাস্তবায়ন অগ্রগতি বহুলাংশে নির্ভর করে। মন্ত্রণালয়/বিভাগুলোর বাস্তবায়ন অগ্রগতি নিয়ে সভায় আলোচনা করা হয়। একইসঙ্গে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত আরএডিপিতে প্রকল্প ঋণ/অনুদান ব্যবহারে ৩৪ শতাংশের নিচে অগ্রগতিসম্পন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগগুলোর প্রকল্প নিয়ে আলোচনা করা হয়।
এছাড়া সভায় বৈদেশিক অর্থায়নপুষ্ট প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে ধীরগতির কারণ বা চ্যালেঞ্জ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে মুখ্য সচিব পরিপত্র অনুসারে পুল গঠন করে প্রকল্প পরিচালক দ্রুত নিয়োগ ও প্রকল্প ঋণ/অনুদান ব্যবহারসহ সংশ্লিষ্ট প্রয়োজনীয় বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান এবং প্রকল্প অনুমোদনের সময় যুগপৎভাবে পিডি (প্রকল্প পরিচালক) নিয়োগের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন। পাশাপাশি, বৈদেশিক অর্থায়নপুষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রকিউরমেন্ট প্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপে উন্নয়ন সহযোগীর কাছ থেকে সম্মতি/অনাপত্তি (এনওসি) গ্রহণের বিষয়টি সহজ করার লক্ষ্যে প্রয়োজনে রাষ্ট্রদূতরাসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে সভা করার বিষয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগকে (ইআরডি) অনুরোধ করেন।
একইসঙ্গে লাইন অব ক্রেডিটের (এলওসি) মাধ্যমে বাস্তবায়িত কিছু প্রকল্পে উদ্ভূত জটিলতা দ্রুত নিরসনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে ইআরডিকে নির্দেশনা দেন মুখ্য সচিব।
সভায় সবুজ ও জলবায়ু সহনশীল উন্নয়নে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন ও ব্যবহার বাড়ানোর বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়। নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের লক্ষ্যে কৃষিজমিতে (যে ফসলি হোক না কেন) কোনও সোলার প্ল্যান্ট স্থাপন করা যাবে না বলে অনুশাসন দেন মুখ্য সচিব। সেই অনুশাসন কঠোরভাবে প্রতিপালনের জন্য নির্দেশনা দেন তিনি।
পাশাপাশি মুখ্য সচিব জ্যেষ্ঠ সচিব বা সচিবদের প্রকল্প বাস্তবায়নে নিবিড়ভাবে সংযুক্ত থেকে নিয়মিতভাবে পরিবীক্ষণ করার জন্য অনুরোধ করেন। সর্বোপরি বৈদেশিক অর্থায়নপুষ্ট প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা করার জন্য গঠিত কমিটির সভা নিয়মিত আয়োজনের জন্য অনুরোধ করেন। এবং সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে বৈদেশিক অর্থায়নপুষ্ট প্রকল্পগুলোর অর্থছাড় ও বাস্তবায়ন অগ্রগতি বাড়বে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।