X
শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫
২০ আষাঢ় ১৪৩২

জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হলে আমি মারা যাবো: প্রধানমন্ত্রী

বাংলা ট্রিবিউন ডেস্ক
২৬ জুন ২০২৪, ১৯:০৯আপডেট : ২৬ জুন ২০২৪, ১৯:৩২

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তিনি জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হলে মারা যাবেন। কাজেই তিনি যেন জনবিচ্ছিন্ন হয়ে না পড়েন সেদিকে লক্ষ রাখার জন্য স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ) সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। শেখ হাসিনা বলেন, জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হলে কিন্তু আমাকে আর গুলি বোমা লাগবে না, এমনিতেই শেষ হয়ে যাবো। কাজেই এরাই আমার প্রাণশক্তি। এটুকু মনে রাখতে হবে।

আজ বুধবার (২৬ জুন) এসএসএফের ৩৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে নিজ কার্যালয়ের (পিএমও) শাপলা হলে আয়োজিত দরবারে দেওয়া ভাষণে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

এসএসএফের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (ছবি: ফোকাস বাংলা)

শেখ হাসিনা বলেন, একটি বিষয় আমি নিশ্চয়ই বলবো, আমরা রাজনীতি করি। আমার আর কোনও শক্তি নেই। শক্তি একমাত্র জনগণ। সেই জনগণের শক্তি নিয়েই আমি চলি। কাজেই জনবিচ্ছিন্ন যাতে না হয়ে যাই। আমি জানি এটা কঠিন দায়িত্ব। তারপরও এদিকেও নজর রাখতে হবে যে এই মানুষগুলোর জন্যই তো রাজনীতি করি। মানুষদের নিয়েই তো পথচলা। আর যাদের নিয়েই দেশের মানুষের কাজ করি তাদের থেকে যেন কোনোমতে বিচ্ছিন্ন হয়ে না যাই।

এটা সবসময়ই এসএসএফ সদস্যদের বলেন এবং মাঝে মধ্যে রাগও করেন– এ কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কাজেই এই বিষয়গুলো একটু সংবেদনশীলতার সঙ্গে দেখা দরকার। কারণ আমি যখন সরকারে ছিলাম না, এই দেশের মানুষ এবং দলীয় লোক, তারাই আমার পাশে ছিল।

এসএসএফের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (ছবি: ফোকাস বাংলা)

তিনি এ সময় এক দরিদ্র রিকশাওয়ালার উপার্জনের সামান্য জমানো অর্থে তাদের দুই বোনের ঢাকায় যেহেতু কোনও বাড়ি নেই এবং ধানমন্ডির বাড়িটিও তারা দান করেছেন সেজন্য তার নামে একটি জমি কেনার এবং তার কাছে হস্তান্তর করতে চাওয়ার একটি ঘটনাও উল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেকবার তাকে নিষেধ করা সত্ত্বেও সে শোনে নাই। সেই রিকশাওয়ালার মৃত্যুর পর তার স্ত্রী সেই দলিলটা আমার কাছে হস্তান্তর করতে চাইলে আমি নিজে সেখানে গিয়ে তাদের বাড়ি তৈরি করে তার স্ত্রীর হাতে দলিল দিয়ে বলি, এটা মনে করবেন আমারই বাড়ি। এখন আপনারা থাকবেন। অন্যদিকে জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর খালেদা জিয়ার জন্য দুটি বাড়ি, গাড়ি, ক্যাশ টাকা অনেক কিছু রেখে যান।

জাতির পিতার কন্যা বলেন, এই সাধারণ মানুষগুলোর জন্যই আমার রাজনীতি। এদের ভাগ্যের পরিবর্তন ও জীবনমান উন্নত করাই আমার লক্ষ্য। তাই এই মানুষগুলোর কাছ থেকে আমি বিচ্ছিন্ন হতে পারি না। কারণ এরাই আমার চলার সব শক্তি জোগায়। এটা সবাইকে মনে রাখার জন্য আমি অনুরোধ করছি।

প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিকী এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। এসএসএফ মহাপরিচালক মেজর জেনারেল একেএম নাজমুল হাসান অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন।

এসএসএফের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (ছবি: ফোকাস বাংলা)

বাঙালি জাতি যাতে বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলতে পারে সেদিকে লক্ষ রেখেই তার সরকার কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসএসএফের প্রতিটি সদস্য সার্বক্ষণিক সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে প্রশংসনীয় কর্মদক্ষতা প্রদর্শন করে আসছে এবং বাংলাদেশে আগত বিদেশিরাও তাদের নিরাপত্তা প্রদানের প্রশংসা করেছেন।

গুলি, বোমা, গ্রেনেড হামলার শিকার হয়ে বারবার বেঁচে যাওয়া প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা তার নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকছেন তাদের জীবনও ঝুঁকিতে পড়ছে। আল্লাহ আমাকে হয়তো একটা কাজ দিয়ে পাঠিয়েছেন, ততক্ষণ আমি বেঁচে থাকবো। কিন্তু আমার সঙ্গে যারা কাজ করে এবং যারা আমার নিরাপত্তায় নিয়োজিত তাদের জন্য আমি চিন্তায় থাকি। কারণ যতবার আমার ওপর আক্রমণ হয়েছে প্রতিবারই আমার কিছু না কিছু নেতাকর্মীকে জীবন দিতে হয়েছে। তারা ‘মানববর্ম’ রচনা করে আমাকে গ্রেনেড হামলা থেকে রক্ষা করেছেন। কাজেই এসএসএফ যেহেতু আমার সবচেয়ে কাছে থাকে, আমি সবসময় তাদের নিয়ে আমি চিন্তিত।

কাজেই তিনি যখন নামাজ পড়েন তখন পরিবারের সদস্য, দেশবাসী এবং তার আশপাশে যারা থাকেন এবং নিরাপত্তায় এসএসএফসহ যারা নিয়োজিত থাকেন, তাদের জন্যও দোয়া করেন বলে জানান।

এসএসএফের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে কেক কাটেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (ছবি: ফোকাস বাংলা)

এসএসএফের জন্য যা যা করণীয় তার সরকার করবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ৯৬ সালে সরকারে আসার পরই তিনি তাদের তেজগাঁওয়ে শুটিং প্র্যাকটিসের জায়গা করে দেন। এখন আধুনিক ও উন্নতমানের শুটিং রেঞ্জ তৈরি হচ্ছে। তাদের অফিসার্স মেস থেকে শুরু করে সবকিছুই কিন্তু ধীরে ধীরে তার হাতে গড়া। লোকবলও তিনিই বৃদ্ধি করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গাড়ি থেকে শুরু করে আধুনিক সরঞ্জামাদি যা যা দরকার সবই কিন্তু আমরা ব্যবস্থা করে দিয়েছি। শুধু এসএসএফ নয়, সব প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নেই তার সরকার কাজ করেছে। এমনকি শান্তিরক্ষায় নিয়োজিত শান্তিরক্ষীদের সুরক্ষায় যা যা দরকার তার ব্যবস্থাও করেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমি এসএসএফের সবাইকে বলবো যে অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের নিরাপত্তা প্রদানে সবসময় পেশাগত দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি প্রত্যেকেই দৃঢ়তা, উন্নত শৃঙ্খলা, সততা, দায়িত্বশীলতা এবং মানবিক গুণাবলি নিয়েই নিজেদের তৈরি করে অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে হবে।

এসএসএফ সদস্যদের সঙ্গে ফটোসেশনে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (ছবি: ফোকাস বাংলা)

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, এসএসএফ এমন একটি সংগঠন, যেখানে আমাদের সব বাহিনীরই প্রতিনিধি রয়েছে। পুলিশ ও আনসার বাহিনী থেকে শুরু করে নৌ, বিমান ও সেনাসহ সব বাহিনীর সমন্বয়ে এই বাহিনী গঠিত। একইসঙ্গে কাজ করার এটাও একটা অভিজ্ঞতা। যে অভিজ্ঞতা আমি মনে করি আগামী দিনেও আমাদের দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে বিশেষ করে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে অভিযানের যে সাফল্য সেটাও ধরে রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। নতুন যারা কাজ করতে আসেন তাদের মধ্যে এই অভিজ্ঞতা সঞ্চারিত হয় এবং আমি দেখেছি অত্যন্ত দায়িত্বশীলতার সঙ্গে প্রত্যেকেই স্ব-স্ব দায়িত্ব পালন করে চলেছেন।

প্রধানমন্ত্রী এসএসএফের সব সদস্য ও তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য দোয়া-আশীর্বাদ জানিয়ে আশাবাদ প্রকাশ করেন, শৃঙ্খলা, আনুগত্য ও পেশাগত মান বিচারে এই বাহিনী হয়ে উঠুক একটি আদর্শ নিরাপত্তা বাহিনী। সূত্র: বাসস।

/এফএস/এমওএফ/
সম্পর্কিত
আদালত অবমাননাট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার ৬ মাসের কারাদণ্ড
থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সাময়িক বরখাস্ত
শেখ হাসিনাসহ ২৩ জনকে আদালতে হাজির হতে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ
সর্বশেষ খবর
বাংলাদেশি ২০ পাসপোর্টসহ ভারতীয় ট্রাকচালক আটক
বাংলাদেশি ২০ পাসপোর্টসহ ভারতীয় ট্রাকচালক আটক
করবিন-সুলতানার দল কি ব্রিটিশ রাজনী‌তি‌তে ভূমিকা রাখ‌তে পার‌বে?
করবিন-সুলতানার দল কি ব্রিটিশ রাজনী‌তি‌তে ভূমিকা রাখ‌তে পার‌বে?
সারা দেশে আগামী কয়েকদিন বাড়তে পারে বৃষ্টির প্রবণতা
সারা দেশে আগামী কয়েকদিন বাড়তে পারে বৃষ্টির প্রবণতা
যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক, এখনও শঙ্কায় পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা
যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক, এখনও শঙ্কায় পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের দ্বিতীয় সংশোধন উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের দ্বিতীয় সংশোধন উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন
এনবিআর নিয়ে ‘কঠোর’ সরকার, আতঙ্কে শীর্ষ কর্মকর্তারা
এনবিআর নিয়ে ‘কঠোর’ সরকার, আতঙ্কে শীর্ষ কর্মকর্তারা
মুরাদনগরে দুই সন্তানসহ মাকে পিটিয়ে হত্যা
মুরাদনগরে দুই সন্তানসহ মাকে পিটিয়ে হত্যা
সচিবালয়ে দখলের দ্বন্দ্ব : আন্দোলনের নেতৃত্বে বিভক্তি
সচিবালয়ে দখলের দ্বন্দ্ব : আন্দোলনের নেতৃত্বে বিভক্তি
প্রশ্নপত্রে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ির গল্প, পরীক্ষা বাতিল
প্রশ্নপত্রে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ির গল্প, পরীক্ষা বাতিল