X
মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫
৩০ বৈশাখ ১৪৩২

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে পুলিশ হত্যার দায় শেখ হাসিনার: নাহিদ ইসলাম

বাংলা ট্রিবিউন ডেস্ক
২১ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:৫৩আপডেট : ২১ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:৫৩

ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম বলেছেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যত পুলিশ মারা গেছেন, এর দায় শেখ হাসিনার। রবিবার (২০ অক্টোবর) ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।

আন্দোলনকারীরা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের আহ্বান জানিয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, কিন্তু তিনি (শেখ হাসিনা) তা না করে দেশে রক্তের বন্যা বইয়ে দিয়েছেন। ৫ আগস্ট দুপুর পর্যন্ত আন্দোলনকারী ছাত্রজনতার ওপর স্নাইপার দিয়ে গুলি চালানো হয়েছে। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা তার সব নেতাকর্মী এবং পুলিশ বাহিনীকে মাঠে থাকার নির্দেশ দিয়ে দেশ থেকে পালিয়ে যান। শেখ হাসিনার এই সিদ্ধান্তের কারণে সেদিন অনেক পুলিশ সদস্য মারা যায়। এ আন্দোলনে যত পুলিশ মারা গেছে এর দায় শেখ হাসিনার’।

নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের গণমাধ্যম এবং সাংবাদিকদের বিভিন্ন লড়াই সংগ্রামের কথা জানি। আবার এর উল্টোদিকে বিভিন্ন ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরাচারের দালালির কথাও জানি। আমরা জুলাই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। বর্তমানে গণমাধ্যম যে স্বাধীনতা উপভোগ করছে, তা এর আগে বাংলাদেশ কখনও এরকম চর্চা করেছে, সেই ইতিহাস আমার জানা নেই।

তিনি বলেন, গণমাধ্যম থেকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিট এবং আকাঙ্ক্ষা পরিকল্পিতভাবে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এটা অত্যন্ত দুঃখের, কারণ এখনও আমাদের অনেক ভাই-বোনেরা আহত অবস্থায় হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন। এখনও অনেকে শহিদ হচ্ছেন, অথচ আমাদের গণমাধ্যমগুলোতে সেই শহিদ এবং আহতদের কথা দিনকে দিন কমে আসছে। জনগণের স্মৃতি থেকে তাদের সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

তথ্য উপদেষ্টা বলেন, বেশ কিছু গণমাধ্যম জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহিদদের নিহত হিসেবে উল্লেখ করছে যা অত্যন্ত দুঃখজনক। যেখানে অন্তর্বর্তী সরকারের সকল প্রজ্ঞাপনে তাদের শহিদ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, দেশবাসী তাদের শহিদ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে, সেখানে গণমাধ্যম তাদের শহিদ বলতে কার্পণ্য করছে। গণমাধ্যমে তাদের মৃত এবং নিহত হিসেবে দেশবাসীর কাছে উপস্থাপন করছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, এই গণঅভ্যুত্থান রক্তের মাধ্যমে ঘটেছে, রক্ত দিয়েই নতুন ইতিহাস তৈরি হয়েছে। যতই ষড়যন্ত্র করা হোক না কেন, এই ইতিহাস মুছে যাওয়ার নয়।

নাহিদ ইসলাম বলেন, 'আমরা দেখেছি গণঅভ্যুত্থানের সময় অনেক সাংবাদিক শহিদ হয়েছেন, আহত হয়েছেন। প্রেসক্লাবের অনেক সদস্য আমাদের গণঅভ্যুত্থানের সমর্থন জুগিয়েছেন। তাদের সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। সেই সময় আমরা শুনেছি, আমাদের সংবাদ প্রচার করতে দেওয়া হয়নি, সংবাদ সংগ্রহের কারণে মিডিয়া হাউজগুলোতে সাংবাদিকরা নির্যাতিত হয়েছেন। এখনও সেই সাংবাদিকদের নানা প্রকার চাপের মধ্যে রাখা হয়েছে বলে আমরা জেনেছি। সে হাউজগুলোতে ফ্যাসিবাদের এজেন্টরা রয়ে গেছে। তাদের বিতাড়িত করতে হবে।

তিনি বলেন, আমরা স্বাধীন গণমাধ্যমের কথা বলছি, সেই গণমাধ্যমের মধ্য থেকে ফ্যাসিবাদের দোসরদের বিতাড়িত করে জনগণের সামনে চিহ্নিত করতে হবে। কারণ আমরা ফ্যাসিবাদমুক্ত গণমাধ্যম চাই। ফ্যাসিবাদমুক্ত গণমাধ্যম ছাড়া নতুন বাংলাদেশ গঠন করা সম্ভব হবে নয়।

তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা বলেন, আমি টাইম ম্যাগাজিনকে বলেছিলাম, শেখ হাসিনা একজন সাইকোপ্যাথ ও রক্তচোষা; তাই প্রমাণিত হলো। আমরা প্রথমে নিয়মতান্ত্রিকভাবেই একটা আন্দোলন করছিলাম। সর্বপ্রথম সরকারের পেটোয়া বাহিনী আমাদের ওপর আক্রমণ করে। আমরা বারবার আমাদের দাবি মেনে নেওয়ার কথা বলেছি, কিন্তু তারা আমাদের বন্দুকের সামনে দাঁড় করিয়েছে। আপনারা দেখেছেন কীভাবে আমাদের গুম করা হয়েছে এবং তুলে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে।

নাহিদ ইসলাম বলেন, শেখ হাসিনা দেশে থাকা তার সমর্থকদের সরকারবিরোধী আন্দোলন করার জন্য উসকানি দিচ্ছে। তাদের বলতে চাই, শেখ হাসিনা বাংলাদেশে রাজনীতি করার জন্য আর ফিরতে পারবে না, শুধু ফাঁসির কাষ্ঠে দাঁড়ানোর জন্যই ফিরবে। যারা এখনও পলাতক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের উসকানিতে জনজীবন দুর্বিষহ করার চেষ্টা করছেন, তাদের সাবধান করে দিতে চাই।

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এক জিনিস আর ফ্যাসিবাদের পক্ষে কথা বলা ‘অন্য জিনিস’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'আবারও বলতে চাই সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করুন। কিন্তু জনগণের বিপক্ষে দাঁড়াবেন না, ছাত্র-জনতার রক্তের বিপক্ষে দাঁড়াবেন না।'

উপদেষ্টা প্রেসক্লাবের লড়াকু সাংবাদিকদের শুভেচ্ছা জানান এবং যারা গণতন্ত্রের পক্ষে কথা বলতে গিয়ে শহিদ হয়েছেন তাদের গভীর শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ ও তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন। জুলাই অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাকে সামনে রেখে জাতীয় ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম।

অনুষ্ঠানে জাতীয় প্রেসক্লাবের ৭০ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কেক কাটেন উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম।

এসময় জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি কবি হাসান হাফিজ, সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব ভূঁইয়া, আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক ও বর্তমান নেতৃবৃন্দসহ অসংখ্য সাংবাদিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। খবর বাসস।

/ইউএস/
সম্পর্কিত
ক্যাপশন দেখলে মনে হবে আমিই দুর্নীতি করছি: আসিফ মাহমুদ
সাবেক রাষ্ট্রপতির বিদেশ গমন তদন্তে তিন উপদেষ্টার কমিটি
নতুন সংবিধান ছাড়া নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রয়োজন নেই: নাহিদ ইসলাম
সর্বশেষ খবর
কাশ্মীর নিয়ে ট্রাম্পের মধ্যস্থতার প্রস্তাবে অস্বস্তিতে ভারত
কাশ্মীর নিয়ে ট্রাম্পের মধ্যস্থতার প্রস্তাবে অস্বস্তিতে ভারত
রাজধানীতে ৩০০ লিমিটেডের যাত্রা শুরু
রাজধানীতে ৩০০ লিমিটেডের যাত্রা শুরু
এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে ধর্ষণ: সাক্ষ্য দিতে আসেননি ভিকটিম-বাদী
এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে ধর্ষণ: সাক্ষ্য দিতে আসেননি ভিকটিম-বাদী
গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ, সেমিফাইনালে পেলো নেপালকে
গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ, সেমিফাইনালে পেলো নেপালকে
সর্বাধিক পঠিত
হাইকোর্টের রায়ে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাতিল ইতিহাসে এটাই প্রথম: প্রধান বিচারপতি
হাইকোর্টের রায়ে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাতিল ইতিহাসে এটাই প্রথম: প্রধান বিচারপতি
বিমানবন্দরে তিন উপদেষ্টা, জেরার মুখে দায়িত্বরতরা
সাবেক রাষ্ট্রপতির দেশত্যাগবিমানবন্দরে তিন উপদেষ্টা, জেরার মুখে দায়িত্বরতরা
নটর ডেম কলেজের আরেক শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার
নটর ডেম কলেজের আরেক শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার
‘আমার মা মারা গেছে, গ্রেফতার করবেন না, একদিন সময় দেন’
‘আমার মা মারা গেছে, গ্রেফতার করবেন না, একদিন সময় দেন’
এনবিআর ভেঙে দুই ভাগ হলো, অধ্যাদেশ জারি
এনবিআর ভেঙে দুই ভাগ হলো, অধ্যাদেশ জারি