আতঙ্কে রাত কেটেছে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারি রেস্তোরাঁর পাশে অবস্থিত লেক ভিউ ক্লিনিকের রোগীদের। শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ওই রেস্তোরাঁয় হামলার পর থেকেই প্রায় সারা রাত গোলাগুলি ও গ্রেনেড বিস্ফোরণ হয়। এসময় এক নবজাতককে নিয়ে সেখানে আটকা পড়েন এক দম্পতি।
গোলাগুলি, বোমা ও গ্রেনেড বিস্ফোরণের শব্দে আতঙ্কিত হয়ে ওই দম্পতি সারারাত খাটের নিচে শুয়ে কাটিয়েছেন নবজাতকের নিরাপত্তার আশায়।
নিরাপত্তার জন্য নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই দম্পতি জানালেন, ‘বুধবার আমাদের সন্তানের জন্ম হয়। শুক্রবার হাসপাতাল থেকে চলে যাওয়ার কথা ছিল। তবে রাতে গুলির শব্দ পেয়ে আমরা থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। কিন্তু, পরিস্থিতি এত খারাপ হবে বুঝতে পারিনি। খাটের নিচে শুয়ে রাত ভর দোয়া পড়েছি যাতে শিশুটি কোনও অনাহত পরিস্থিতিতে না পড়ে।
এদিকে সকাল ১০টা থেকে সবাইকে হাসপাতাল ছাড়তে বলে লেক ভিউ ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। ক্লিনিক ছেড়ে যাওয়া আতঙ্কিত রোগীরা কেউই কথা বলতে চাইছিলেন না।
এসময় আতঙ্কিত মনিরুজ্জামান নামে এক ব্যক্তি তার চাচাকে ক্লিনিক থেকে নিয়ে যাওয়ার সময় বলেন, ‘পরিস্থিতি দেখে আমরা একদিন আগেই চলে যাচ্ছি।’
এক নজরে গুলশানে রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলা:
শুরুর ঘটনা:
শুক্রবার রাত ৮টা ৪৫ মিনিট: ‘আল্লাহু আকবর’ বলে ৮-৯ জন বন্দুকধারী সন্ত্রাসী ঢাকার গুলশান এলাকার হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করে।
রাত ১০টা ৩০ মিনিট: সেখানে বড় ধরনের বিস্ফোরণ ও গোলাগুলির শব্দ পাওয়া যায়। পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সহকারী কমিশনার রবিউল ইসলাম ও বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাউদ্দিন গুরুতর আহত এবং ৫০ জনেরও বেশি আহত হন। হাসপাতালে নেওয়ার পর পুলিশের এই দুই কর্মকর্তার মৃত্যু হয়।
রাত ১১টা ৩০ মিনিট: গণমাধ্যমকে ঘটনাস্থল থেকে সরাসরি সম্প্রচার বন্ধের আহ্বান জানান র্যাবের মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ।
রাত ১টা ৩০ মিনিট: হামলার দায় স্বীকার করে আইএস।
শনিবার ভোর রাত ৪টা: কমান্ডো অভিযানের পরিকল্পনা
শনিবার ভোর ৫টা: আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী যৌথবাহিনী ‘থান্ডারবোল্ট’ নামে কমান্ডো অভিযান পরিচালনার জন্য প্রস্তুত হন। সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে অভিযানে ছিল বিমানবাহিনী, নৌ-বাহিনী, পুলিশ, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও ফায়ার সার্ভিস।
শনিবার সকাল ৭টা: সেনাবাহিনীর কমান্ডো ফোর্সকে জিম্মি এলাকায় মোতায়েন।
শনিবার সকাল ৭টা ৩০ মিনিট: জিম্মিদের উদ্ধারে যৌথ কমান্ডো অভিযান শুরু। অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত দলের সদস্যরা রেস্তোরাঁর ভেতরে প্রবেশ করে। বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, সোয়াত সদস্যদের নিয়ে এই কমান্ডো অভিযান চালানো হয়। এসময় গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়।
৮টা ১৫ মিনিট: রেস্টুরেন্ট থেকে প্রথম দফায় নারী ও শিশুসহ ৬ জনকে উদ্ধার করা হয়। একজনকে অ্যাম্বুলেন্সে নিয়ে যাওয়া হয়।
৮টা ৫৫ মিনিট: ভবনের নিয়ন্ত্রণ নেয় অভিযানকারীরা।
৯টা ১৫ মিনিট: অভিযান শেষের ঘোষণা। কমান্ডো অভিযানের মধ্য দিয়ে গুলশানের রেস্টুরেন্টে প্রায় ১২ ঘণ্টার রক্তাক্ত জিম্মি সংকটের অবসান।
৯টা ৩০ মিনিট: গুলশান এলাকা ছেড়ে বেরিয়ে যান পুলিশ মহাপরিদর্শক।
১০টা: ৪ জন বিদেশিসহ ১৩ জন জীবিত উদ্ধারের খবর জানানো হয়। রেস্টুরেন্টের ভেতরে অজ্ঞাত পাঁচজনের মৃতদেহ পাওয়ার কথা জানায় পুলিশ।
দুপুর ১টা: আইএসপিআর এর সাংবাদ সম্মেলন। ২০ বিদেশি, ৬ জঙ্গি ও ২ পুলিশ নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
ছবি: নাসিরুল ইসলাম
/ইউআই/এনএস/টিএন/
আরও পড়ুন-
গুলশানে রেস্টুরেন্ট থেকে ২০ জনের লাশ উদ্ধার, সবাই বিদেশি: সেনা সদর দফতর