ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নিম্ন কক্ষ হাউস অব কমন্সের অল পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপের বাংলাদেশ বিষয়ক চেয়ার অ্যান মেইন এমপি বলেছেন, ভবিষ্যতে তিনি নিশ্চিত করবেন জামায়াতের কোনও প্রতিনিধি যেন ব্রিটিশ পার্লামেন্টে প্রবেশ করতে না পারে।
মঙ্গলবার হাউস অব কমন্সে বাংলাদেশ বিষয়ক বিতর্ক অনুষ্ঠানে জামায়াতে ইসলামীর ইউরোপের মুখপাত্র আবু বকর মোল্লাকে হাউস থেকে বের করে দেওয়ার রুলিং দিয়ে এমন মন্তব্য করেন। আয়োজকদের পক্ষ থেকে বাংলা ট্রিবিউনকে বলা হয়, জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধিকে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হলেও তার কোনও বক্তব্য দেওয়ার কথা ছিল না। কিন্তু তিনি বক্তব্য প্রদান করায় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানানো হয়। ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম তার বক্তব্যে বলেন, জামায়াত একটি সন্ত্রাসী সংগঠন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের রায়ে জামায়াতকে জঙ্গি সংগঠন হিসেবে উল্লেখ করেছে। এমন একটি সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গ ত্যাগ করতে বিএনপিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নও পরামর্শ দিয়েছে। কিন্তু বিএনপি জামায়াতকে ছেড়ে যাওয়া তো দূরের কথা, বরং তারা জঙ্গিবাদকে পৃষ্ঠপোষকতা করে যাচ্ছে। জামায়াত ইসলামীর ইউরোপের মুখপাত্র আবু বকর মোল্লাহ তারানা হালিমের বক্তব্য মিথ্যা দাবি করে বক্তব্য দিতে গেলে, আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিরা হৈ-চৈ শুরু করেন। এক পর্যায়ে জামায়াতের প্রতিনিধিকে থামাতে রুলিং দেন স্পিকারের দায়িত্বে থাকা এমপি অ্যান মেইন। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিরা স্পিকারকে বলেন, জামায়াতের প্রতিনিধি থাকলে আওয়ামী লীগের সকল সদস্য পার্লামেন্ট থেকে বেরিয়ে যাবেন। পরবর্তীতে অ্যান মেইন এমপি জামায়াতের ইউরোপের মুখপাত্রকে ‘আউট‘ ‘আউট‘ বলে রুলিং দিয়ে পার্লামেন্ট থেকে বেরিয়ে যেতে বললে, তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ এসে আবু বকর মোল্লাকে হাউস অব কমন্সের কমিটি রুম থেকে বের করে দেয়।
তবে এ ধরনের ঘটনাকে অগণতান্ত্রিক বলছেন, জামায়াতের ইউরোপের মুখপাত্র আবু বকর মোল্লা। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তাকে হাউস অব কমন্সের সেমিনার থেকে বের করে দেওয়ার কোনও অধিকার অ্যান মেইন এমপির নেই। তিনি একজন ব্রিটিশ ব্যারিস্টার, এই সিদ্ধান্তকে তিনি চ্যালেঞ্জ করবেন এবং ভবিষ্যতে পার্লামেন্টের অনুষ্ঠানে আবারো অংশ নেবেন। বাংলাদেশ বিষয়ক বিতর্কে তিনি আমন্ত্রিত হয়ে পার্লামেন্টে গিয়েছিলেন। লর্ড কার্লাইল তাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন এবং তাকে বক্তব্য দিতে দেওয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে বলেও দাবি করেন মোল্লা। তবে বাংলা ট্রিবিউনের পক্ষ থেকে লর্ড কার্লাইলের অতিথি তালিকায় এবং বক্তব্য প্রদানকারীর তালিকায় তার নাম রয়েছে এমন প্রমাণপত্র দেখতে চাইলে জামায়াতের প্রতিনিধি বক্তব্য প্রদানকারীদের তালিকায় তার নাম রয়েছে এমন তথ্য প্রমাণ বাংলা ট্রিবিউনকে দেখাতে পারেন নি। তিনি দাবি করেন, তালিকায় নাম নেই এমন অনেক বক্তা সেখানে বক্তব্য রেখেছেন।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম এমপি বাংলা ট্রিবিউনকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে বলেছেন, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল, যারা জঙ্গিবাদের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত, তাদের এধরনের কোনও স্বাধীন দেশের পার্লামেন্টে এসে কোনও বিতর্কে অংশগ্রহণ করার অধিকার নেই। জামায়াতের প্রতিনিধি এ ধরনের কোনও বিতর্কে আসলে আমাদের পক্ষে অন্তত সেখানে থাকা সম্ভব নয়। এ কারণে জামায়াতকে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট থেকে চলে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। জাতীয় সংহতি আসলে হয়ে গেছে। যেটি প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, স্বাধীন বাংলাদেশের কোনও নাগরিক কেউ জঙ্গিবাদ চায়না। জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে একটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। ভবিষ্যতে বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামির রাজনীতি করার সুযোগ থাকবে কিনা এবিষয়ে আদালত সিদ্ধান্ত দেবে।
পুনশ্চ: এই প্রতিবেদন হাউস অব কমন্সের চাটহ্যাম হাউজ ‘ল’ অনুসরণ করে লেখা হয়েছে। হাউস অব কমন্সে বাংলাদেশ বিষয়ক বিতর্কের মূল অনুষ্ঠানের কোনও তথ্য প্রকাশ করার নিয়ম না থাকায়, হাউস অব কমন্সের বাইরে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দেওয়া সাক্ষাতকারের ওপর ভিত্তি করে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।
এপিএইচ/
আরও পড়ুন:
হাউস অব কমন্স থেকে বের করে দেওয়া হলো জামায়াত নেতাকে
নিখোঁজ ২৬২ জনের তালিকায় আছে ডাক্তার, প্রকৌশলী ও পাইলট