বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বাদী এ এফ এম মুহিতুল ইসলাম মারা গেছেন। বৃহস্পতিবার বেলা ২টা ৫৫ মিনিটে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। নিহতের ভাতিজা মাহবুবুল ইসলাম পিটুল বাংলা ট্রিবিউনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তার মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শোক প্রকাশ করেছেন।
মাহবুবুল ইসলাম পিটুল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চাচার শেষ ইচ্ছা ছিল তার বাবা-মায়ের কবরের পাশে যাতে তাকে শায়িত করা হয়। তার ইচ্ছা অনুযায়ীই তাকে দাফন করা হবে। লাশ বুঝে পাওয়ার পরেই আমরা যশোরের উদ্দেশ্যে রওনা হব।’
তিনি আরও বলেন, ‘গত ২৮ দিন ধরে তিনি লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। গত মঙ্গলবার হঠাৎ তার অবস্থার আরও অবনতি হয়।’
পিটুল বলেন, ‘গোসল করানো শেষে বাদ আসর হাসপাতালে প্রথম এবং বাদ মাগরিব মিরপুর-১৪ নম্বরে চাচার বাড়ির কাছে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। আর আগামীকাল শুক্রবার যশোরের ঝিকরাগাছায় ১০টায় এবং জুম্মা বাদ গ্রামের বাড়িত জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকে আসা নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা কাজ করছেন।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর হরমান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান সংবাদ পেয়ে হাসপাতালে শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাতে আসেন। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘অনেকদিন ধরে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। গত মঙ্গলবার হঠাৎ করে তার অবস্থার আরও অবনতি হয়।’
সংবাদ পেয়ে হাসপাতালে আসেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘এএফএম মুহিতুল ইসলামের মৃত্যুতে ইতিহাসের একটি অধ্যায়ের সমাপ্তি হলো।’
বাদ আসর হাসপাতাল প্রাঙ্গণে মুহিতুল ইসলাম প্রথম জানাজার আগে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবীর নানক বলেন, ‘তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রত্যক্ষদর্শী। হত্যার পর তিনি যখন মামলাটি করতে যান তখন তৎকালীন মোশতাক-জিয়া সরকার মামলা গ্রহণ করেনি। মামলা করার জন্য তিনি এই থানা থেকে ওই থানা ঘুড়ে বেড়িয়েছেন। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করলে তিনি মামলাটি করেন। সেই মামলার কারণে ইতিহাসের নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের বিচার এবং তা কার্যকর দেশবাসী দেখতে পায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘দলের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী তার খোঁজ খবর নিয়েছিলেন। তার চিকিৎসার ব্যয় গ্রহণ করেছিলেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। দলের পক্ষ থেকে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। কিন্তু তিনি আমাদের ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন, ফলে একটি ইতিহাসের সমাপ্তি হলো।’
উল্লেখ্য, কিডনির জটিলতা দেখা দেওয়ায় গত ১১ জুলাই মুহিতুল ইসলামকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নেফ্রোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ রফিকুল আলমের অধীনে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে গত ১০ আগস্ট তাকে আইসিউতে লাইফ সাপোর্টে (কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে) রাখা হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
এছাড়াও তিনি দীর্ঘদিন ধরে ফুসফুসের সংক্রামক (নিউমোনিয়া) রোগে ভুগছিলেন।
১৯৯৬ সালের ২ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা দায়ের করেন বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত সহকারী এই এএফএম মুহিতুল ইসলাম।
/জেএ/এসএনএইচ/