চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এর সফর উপলক্ষে ২৩ ধারা সম্বলিত এক যৌথ বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। বিবৃতিতে দুই দেশের সম্পর্ককে কৌশলগত পর্যায়ে উন্নীত হওয়ার ঘোষণা দিয়ে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ভবিষ্যৎ রুপরেখা দেওয়া হয়। সোমবার রাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এই যৌথ বিবৃতি পাঠানো হয়।
বেল্ট ও রোড উদ্যোগ, দ্বিপক্ষীয় সফর, ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধি, বাণিজ্য বৈষম্য হ্রাস, বাস্তব সহযোগিতার ক্ষেত্র চিহ্নিতকরণ, উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধি, প্রকল্প অর্থায়ন, মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল গঠন, সমুদ্র সহযোগিতা, সন্ত্রাসবাদ, দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতা কাঠামোর বিষয়ে বিবৃতিতে আলোকপাত করা হয়। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন, মানবসম্পদ উন্নয়ন, প্রশিক্ষণ, শিক্ষা সহযোগিতা ও স্কলারশিপ, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, আঞ্চলিক সহযোগিতা, সংস্কৃতি, মানুষে মানুষে যোগাযোগসহ দ্বিপক্ষীয় সব বিষয়ে ভবিষ্যৎ সম্পর্কের রুপরেখা বিবৃতিতে দেওয়া হয়েছে।
বিবৃতিতে বিদ্যুৎ, তথ্য-প্রযুক্তি, নদী ব্যবস্থাপনা, অবকাঠামো এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে ২২টি প্রকল্পে চীনের সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ এবং বেইজিং তাদের এন্টারপ্রাইজদের এ প্রকল্পগুলিতে সহযোগিতা করার জন্য উৎসাহিত করার বিষয়ে সম্মত হয়েছে। বৃহৎ প্রকল্পে চীনের আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থায়নকেও স্বাগত জানিয়েছে দুইপক্ষ।
বিবৃতিতে বলা হয়, চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগকে স্বাগত জানায় বাংলাদেশ। কারণ, ঢাকা বিশ্বাস করে এ উদ্যোগ ২০২১ সালে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালে উচ্চ আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ এনে দেবে।
বিসিআইএম অর্থনৈতিক করিডর প্রতিষ্ঠার জন্য তাগিদ দেওয়ার বিষয়েও উভয়পক্ষ একমত হয়। দুইপক্ষই তাদের উন্নয়ন কৌশলের মধ্যে সমন্বয়ের মাত্রা বাড়াবে, সহযোগিতার যে ক্ষেত্রগুলি আছে তার সম্ভাব্যতাকে বাস্তবে রুপ দেবে, বেল্ট ও রোড উদ্যোগে কাজ করবে যাতে করে টেকসই উন্নয়ন এবং দুইদেশের আপামর সবার সমৃদ্ধি হয়।
এছাড়া বাংলাদেশ ও চীন একমত হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার প্রচুর সম্ভাবনা আছে এবং একটি শান্তিপূর্ণ, স্থিতিশীল, উন্মুক্ত, উন্নয়নশীল ও সমৃদ্ধ দক্ষিণ এশিয়ার জন্য পুনরায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছে। সার্ক এবং অন্যান্য আঞ্চলিক সহযোগিতার মধ্যে সমন্বয় ও সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য দুইপক্ষ সম্মত হয়েছে।
মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল গঠনের বিষয়ে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য একটি স্টাডি করার বিষয়ে উভয়পক্ষ একমত হয়েছে। এছাড়া চীন তার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলি বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার জন্য উৎসাহিত করবে এবং বাংলাদেশ চীনা প্রতিষ্ঠানগুলিকে ব্যবসা করার জন্য সহায়তা দেবে।
চীন বাংলাদেশের ব্লু অর্থনীতি উন্নয়নে সহায়তা করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে এবং বাংলাদেশ সেটিকে স্বাগত জানিয়েছে। এছাড়া সামুদ্রিক সহযোগিতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে দুই দেশ একমত হয়েছে এবং এজন্য একটি সংলাপের আয়োজন করার বিষয়ে ঐক্যমতে পৌঁছেছে।
বাংলাদেশ ও চীনের বাস্তব সহযোগিতার ক্ষেত্র হিসাবে ২৩ ধারা সম্বলিত এ বিবৃবিতে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য দুই দেশ সম্মত হয়েছে। অবকাঠামো, শিল্প সক্ষমতা সহযোগিতা, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ, পরিবহন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, কৃষি ক্ষেত্রকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রগুলির সঙ্গে জড়িত দুই দেশের সরকারের বিভিন্ন বিভাগগুলি দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা, বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও মানব সম্পদ উন্নয়নের জন্য একে অপরের সঙ্গে পরিকল্পনা ও পথপ্রদর্শন করবে।
দুইপক্ষ যেকোনও ধরনের সন্ত্রাসবাদকে নিন্দা জানায় এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের যুদ্ধ, স্থিতিশীলতা রক্ষা ও জাতীয় নিরাপত্তা বজায় রাখার উদ্যোগকে সমর্থন জানায় চীন।
পাশাপাশি, ১৩২০ মেগাওয়াট পায়রা থার্মাল বিদ্যুৎ প্রকল্প, কর্ণফুলি নদীর নিচে টানেল, দাসেরকান্দি সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্রকল্প, ছয়টি জাহাজ ক্রয়, পদ্মা ব্রিজ, চতুর্থ স্তর জাতীয় ডাটা সেন্টারসহ বিভিন্ন প্রকল্পের সন্তোষজনক বাস্তবায়নে সন্তুষ্টি প্রকাশ করা হয়।
এছাড়াও, উভয়পক্ষ সামরিক সহযোগিতা বজায় রাখা এবং প্রশিক্ষণ, যন্ত্রপাতি, প্রযুক্তি ও জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সহযোগিতা গভীর করার বিষয়ে একমত হয়।
/এসএসজেড/এমও/