X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভারতের কাছে ভারসাম্যমূলক সামরিক সহযোগিতা চায় বাংলাদেশ

শেখ শাহরিয়ার জামান
০৩ ডিসেম্বর ২০১৬, ১০:১৩আপডেট : ০৩ ডিসেম্বর ২০১৬, ১০:১৩

ভারত ও বাংলাদেশ সব দেশের সঙ্গে কৌশলগত ভারসাম্য রেখে সামরিক সহযোগিতার সম্পর্ক বজায় রেখেছে বাংলাদেশ। আর এ কারণেই পৃথিবীর কোনও দেশের সঙ্গে সামরিক সহযোগিতা চুক্তি করেনি ঢাকা। ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিকরের বাংলাদেশ সফরের সময় সামরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব থাকলেও সতর্কতার সঙ্গে বিষয়টি বিবেচনা করছে সরকার। মেরুকরণের প্রভাবকে বিবেচনায় নিয়ে এবং একটি নির্দিষ্ট রাষ্ট্রের বন্ধু হিসেবে যাতে পরিচয় তৈরি না হয় সে কারণে এ বিষয়ে ভারসাম্যমূলক সামরিক সহযোগিতার পথই বেছে নিয়েছে সরকার।

একই মত পোষণ করে বিশেষজ্ঞরা বলেন, ভারতের সঙ্গে সামরিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে বাংলাদেশকে কৌশলগত ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে।

তাদের মতে, এ অঞ্চলে ভারত ও চীনের সঙ্গে বাংলাদেশ সফলতার সঙ্গে  ভারসাম্য রেখে সুসম্পর্ক বজায় রেখেছে। দীর্ঘমেয়াদের কথা বিবেচনা করে এ ভারসাম্যকে ঠিক রেখে, বাংলাদেশকে সতর্কতার সঙ্গে সামরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিৎ বলে মনে করেন তারা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আব্দুর রশীদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সামরিক সহযোগিতা একটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয়। কারণ, কোনও দেশ এক মেরুতে যোগ দিলে অন্য মেরুতে এর কী প্রভাব পড়বে, সেটিও বিবেচনায় নিতে হবে।’ বাংলাদেশ সামরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে সবসময় কৌশলগত ভারসাম্য বজায় রেখেছে এবং এটি রক্ষা করতে হবে বলেও মনে করেন তিনি।

বাংলাদেশের সঙ্গে পৃথিবীর কোনও দেশের সামরিক সহযোগিতা চুক্তি নেই।ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিকরের ঢাকা সফরের বিষয়ে জেনারেল রশীদের বিশ্লেষণ হচ্ছে, দিল্লি ভারত মহাসাগর অঞ্চলে প্রতিরক্ষা বাড়াতে চায় এবং ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানের কারণেই বাংলাদেশে মনোহর পারিকরের এ সফর।

পারিকর দুদিনের সফরে গত ৩০ নভেম্বর ঢাকায় আসেন এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামরিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে তিনি বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর প্রচেষ্টার সামর্থ্য ও ক্ষমতা বৃদ্ধিতে নতুন কিছু উদ্যোগ গ্রহণের প্রস্তাব করেন।

আব্দুর রশীদ বলেন, ‘যৌথ মহড়া, প্রশিক্ষণ, সামরিক সরঞ্জামাদি ক্রয়, সমুদ্র অর্থনীতি, মানবিক বিপর্যয় সহায়তা ইত্যাদি বিষয়গুলো সামরিক সহযোগিতার অংশ। এর কতটুকু কার সঙ্গে হবে সেটি নির্ভর করবে বাংলাদেশের প্রয়োজনীয়তা এবং সহযোগিতার উপযোগিতার ওপর।’

রশীদ বলেন, ‘সামরিক সরঞ্জামাদি ক্রয় সামরিক সহযোগিতার একটি অংশ এবং বাংলাদেশ এক্ষেত্রে অনেকটা একদেশ নির্ভর।বাংলাদেশ বেশিরভাগ সমরাস্ত্র চীন থেকে সংগ্রহ করে থাকে এবং এর অন্যতম প্রধান কারণ আর্থিক বিবেচনা।’

অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল রশীদ বলেন, ‘চীন আমাদের সহজ শর্তে সামরিক সরঞ্জামাদি সরবরাহ করে এবং এর ফলে আমরা অনেকটা তাদের ওপর নির্ভরশীল।’

তিনি মনে করেন, ‘ভারত সামরিক সরঞ্জামাদি সংগ্রহের একটি উৎস হতে পারে আমাদের জন্য। কারণ, বিপদকালীন সময়ের কথা বিবেচনা করে বাংলাদেশের বিভিন্নমুখী উৎস থাকা উচিৎ।’

বাংলাদেশ ও ভারত উভয়ই একই ধরনের অনেকগুলো ঝুঁকির সম্মুখীন এবং এক্ষেত্রে তাদের সহযোগিতার অনেক সুযোগ আছে বলে তিনি মনে করেন।

আব্দুর রশীদ বলেন, ‘সামরিক সহযোগিতার বিভিন্ন ক্ষেত্রগুলোতে কাজ করার সুযোগ আছে এবং এখানে যতবেশি কাজ হবে, তত বেশি সম্পর্কের গভীরতা বাড়বে।’

দিল্লিতে বাংলাদেশ দূতাবাসে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন এমন একজন কূটনীতিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং এর সফরের পরে ভারত বাংলাদেশকে নতুন চোখে দেখছে।

তিনি বলেন, আমি অবাক হবো না, যদি যৌথ ইশতেহারে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ককে কৌশলগত সম্পর্ক হিসাবে অভিহিত করা হয়।

গত অক্টোবরে চীনের রাষ্ট্রপতি শি চিনপিং এর ঢাকা সফরের সময়ে বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ককে কৌশলগত সম্পর্কে উন্নীত করা হয়।

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক আরও বেশি গভীর হলেও কখনও এর কোনও নামকরণ করা হয়নি।

এই কূটনীতিক বলেন, ভারত অনেকদিন থেকে সরঞ্জামাদি বিক্রয়সহ সামরিক সহযোগিতার কথা বলছে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন ভারত সফরের সময়ে এ বিষয়ে কোনও চুক্তি স্বাক্ষর হতে পারে, অথবা যৌথ ইশতেহারে সামরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনও প্যারা থাকতে পারে।

তিনি মনে করেন, সরঞ্জামাদি সংগ্রহের বিষয়টি নির্ভর করবে ভারত বাংলাদেশকে কী প্রস্তাব দেয় এবং এর শর্তগুলো কী কী। 

এদিকে বাংলাদেশে ভারতীয় দূতাবাসের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী তার সফরের সময়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রদর্শিত স্বয়ম্ভরতা অর্জনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিশন বাস্তবায়নে ভারতের পূর্ণ সমর্থনের কথা জানান। তিনি বিভিন্ন আলোচনায় প্রশিক্ষণ কর্মসূচি, যৌথ মহড়া অনুষ্ঠান, এইচএডিআর (মানবিক সহায়তা ও দুর্যোগ মোকাবিলা) কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি এবং ‘ব্লু ইকোনমি’র উদ্যোগ স্থান পায়।

/এসএসজেড/এপিএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
মেরিনার ইয়াংসে নতুন গভর্নিং বডি
মেরিনার ইয়াংসে নতুন গভর্নিং বডি
বানিয়ে ফেলুন ৪ স্বাদের লাচ্ছি
বানিয়ে ফেলুন ৪ স্বাদের লাচ্ছি
১১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান পেলো স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড-চ্যানেল আই কৃষি পুরস্কার
১১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান পেলো স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড-চ্যানেল আই কৃষি পুরস্কার
ফালুর বিরুদ্ধে দুদকের চার্জশিট অনুমোদন
ফালুর বিরুদ্ধে দুদকের চার্জশিট অনুমোদন
সর্বাধিক পঠিত
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
ভেসে আসা ‘টর্পেডো’ উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড
ভেসে আসা ‘টর্পেডো’ উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ