X
বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪
১৮ বৈশাখ ১৪৩১

ইসি গঠনের আগেই আইন হলে সরকারের প্রতি আস্থা বাড়বে

এমরান হোসাইন শেখ ও গোলাম মাওলা
১২ জানুয়ারি ২০১৭, ২৩:১৫আপডেট : ১৩ জানুয়ারি ২০১৭, ০৬:৫৫

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের তিন বছর পূর্তি উপলক্ষে বৃহস্পতিবার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভাষণে তিনি নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে রাষ্ট্রপতির উদ্যোগের ওপর আস্থা রাখতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানান। তার এই আহ্বানকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন রাজনীতি বিশ্লেষক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের প্রতিক্রিয়ায় টিআইবির নির্বাহী পরিচালন ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি এমন ইতি গঠন করবেন, যার ওপর সত্যিই আস্থা রাখা যায়। আশা করি, তার উদ্যোগে একটি সুন্দর কমিশন গঠিত হবে। তবে ইসি গঠনের আগেই এ সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন করা উচিত। তাহলেই দীর্ঘস্থায়ী সমাধান হবে। এতে সরকারের প্রতিও জনগণের আস্থা বাড়বে।’

নির্বাচন কমিশন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী  সরকারের বিভিন্ন সেক্টরের উন্নয়নসহ আগামী দিনের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন। এ প্রসঙ্গে  ড. ইফতেখারুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী সেক্টর ভিত্তিক যে উন্নয়নের কথা তুলে ধরেছেন, সেটাই বাস্তবতা। এই নিয়ে সন্দেহের কোনও অবকাশ নেই। অবশ্যই দেশের উন্নয়ন অব্যাহত রয়েছে, প্রবৃদ্ধি প্রত্যাশিত হারে বেড়ে চলেছে। বাংলাদেশ মধ্যমআয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার যে লক্ষ্যমাত্রা, তার দিকেই যাচ্ছে।’

সামগ্রিক অর্থনৈতিক সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান খুবই ভালো মন্তব্য করে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘অথর্নৈতিকভাবে মজবুত অবস্থানের জন্য  সরকার অবশ্যই কৃতিত্বের দাবিদার। সরকারের নেতৃত্বে সেক্টরভিত্তিক জনগণের প্রচেষ্টায় এটা সম্ভব হয়েছে।  তবে আমরা আশা করব অগ্রগতির সূচকে আরও এগিয়ে যাবে।’

গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ঘাটতি রয়েছে মন্তব্য করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজ চাপের মধ্যে রয়েছে বলে আমার মনে হয়। বেশ কিছু আইন ও নীতিমালার কারণে স্বাধীন মত প্রকাশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে। এগুলোর দিকে সরকারের নজর দেওয়া উচিত।’ প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের জের ধরে তিনি দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েও কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এক ধরনের স্থিতিশীলতা কিন্তু ছিল। কারণ সম্প্রতি  জ্বালাও-পোড়াও বা ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড দেখিনি। এটা ইতিবাচক। তবে আমার মনে হয়েছে এটা চাপিয়ে দেওয়া স্থিতিশীলতা। কারণ বিরোধী দল কোনও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাতে গেলে সেখানে বাধা দেওয়া হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। হুমকি-ধামকি ছিল। অবশ্য রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাতে বিরোধী দলের পক্ষ থেকে জোরালো প্রচেষ্টা ছিল, এমনটাও বলেও বলা যাবে না।

জাতির উদ্দেশে দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক ড. জায়েদ বখত বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্যে যে অর্জনগুলোর কথা বলা হয়েছে, তার অধিকাংশই এখন বাস্তবতা। তবে আত্মতৃপ্তির খুব সুযোগ নেই। কারণ এখনও অনেক বড় বড় চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে।’ তিনি বলেন, ‘দারিদ্র্যের হার কমেছে। তবে সত্যিকার অতিদরিদ্র অনেক মানুষ দেশে এখনও রয়ে গেছে। এছাড়া বেসরকারি বিনিয়োগ পরিস্থিতি এখনও ভালো নয়। অবশ্য এই অবস্থার মধ্যেও এখন বাংলাদেশের অর্থনীতি সঠিক পথে রয়েছে।’

এই অর্থনীতিবিদ  আরও বলেন, ‘বেসরকারি বিনিয়োগকে যদি তরান্বিত করতে না পারি, তাহলে প্রবৃদ্ধির হারকে ৮ শতাংশে নিতে পারব না। আর প্রবৃদ্ধি যদি ৮ শতাংশ না হয় তাহলে সেই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যেও পৌঁছাতে পারব না।’ তার মতে, ‘বিনিয়োগের প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করতে হবে। বিশেষ করে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা দুর করে অবকাঠামোগত সমস্যা, গ্যাস ও বিদ্যুতের সমস্যার সমাধান করতে হবে।’

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, আমরা অর্থনৈতিক দিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছি। বিভিন্ন সূচকে দেশ আজ এগিয়ে। এগুলো প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে উঠে এসেছে। মানবতাবিরোধী অপরাধাদের বিচার হচ্ছে। এগুলো নিঃসন্দেহে সরকারের সফলতা। তবে আমরা দেখতে পাই ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ মোটাদাগে তিনটি অগ্রাধিকার চিহ্নিত করেছিলো। সেগুলো হলো গণতন্ত্রায়ণ, সুশাসন ও স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালীকরণ। এক্ষেত্রে সরকারের পদক্ষেপ পর্যালোচনা করলে দেখতে পাব গণতন্ত্রায়নের দিক থেকে আমরা তো একটুও এগুইনি। বরং আমরা একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে পেছনে গিয়েছি। পক্ষপাতদুষ্ট নির্বাচন কমিশনের বদৌলতে নির্বাচন ব্যবস্থার ওপর জনগণের আস্থাহীনতা সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের অনেক অধিকার সংকুচিত হয়েছে। মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়নি। দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়ন অনেক ক্ষেত্রে প্রকট আকার ধারণ করেছে। স্থানীয় সরকারে যে নির্বাচন হয়েছে, তাতে এসব প্রতিষ্ঠানকে আরও কলুষিত করেছে। সরকারের নিরঙ্কুশ আধিপাত্য এখানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এটা স্থানীয় সরকার শক্তিশালী করার পথ নয়। মূল অগ্রাধিকারের খাতগুলোতে তেমন কোনও অগ্রগতি হয়নি বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

 আরও পড়ুন: ‘সব রাজনৈতিক দল আগামী নির্বাচনে অংশ নেবে’

/এমএনএইচ/

 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ঘরের মাঠে পিএসজিকে হারিয়ে এগিয়ে থাকলো ডর্টমুন্ড
চ্যাম্পিয়নস লিগ সেমিফাইনালঘরের মাঠে পিএসজিকে হারিয়ে এগিয়ে থাকলো ডর্টমুন্ড
ইজিবাইক ছিনতাইয়ের সময় স্থানীয়দের পিটুনিতে একজনের মৃত্যু
ইজিবাইক ছিনতাইয়ের সময় স্থানীয়দের পিটুনিতে একজনের মৃত্যু
স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে শ্রমিকরাও অংশীদার হবে: এমপি কামাল
স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে শ্রমিকরাও অংশীদার হবে: এমপি কামাল
মোস্তাফিজের শেষ ম্যাচে চেন্নাইয়ের হার
মোস্তাফিজের শেষ ম্যাচে চেন্নাইয়ের হার
সর্বাধিক পঠিত
শিশু ঝুমুরকে ধর্ষণ ও হত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে চোখ মুছলেন র‌্যাব কর্মকর্তা
শিশু ঝুমুরকে ধর্ষণ ও হত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে চোখ মুছলেন র‌্যাব কর্মকর্তা
মিল্টন সমাদ্দার আটক
মিল্টন সমাদ্দার আটক
আজও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে, পথচারীদের জন্য শরবত-পানির ব্যবস্থা
আজও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে, পথচারীদের জন্য শরবত-পানির ব্যবস্থা
একজন অপরাধীর গল্প বলতে চেয়েছিলেন তিশা
একজন অপরাধীর গল্প বলতে চেয়েছিলেন তিশা
সিয়াম-পরীর গানের ভিউ ১০০ মিলিয়ন!
সিয়াম-পরীর গানের ভিউ ১০০ মিলিয়ন!